জয় গোস্বামী

প্রজাতন্ত্র দিবস বলতেই ছয়ের দশকের স্মৃতি ভিড় করে আসে। সকালে আমাদের স্কুলে আসতে হত। মাস্টারমশাইরা থাকতেন। প্রধানশিক্ষক মশাই এই দিনটির গুরুত্ব নিয়ে কিছু কথা বলতেন। কয়েকজন ছাত্র, যাদের গানের গলা ভাল, জনৈক শিক্ষক তাদের দিয়ে দুটি দেশাত্মবোধক গান তোলাতেন। আমি এখনও গানগুলি মনে করতে পারি। একটি ‘বঙ্গ আমার জননী আমার..’, অন্যটি ‘যে দিন সুনীল জলধি হইতে উঠিল জননী ভারতবর্ষ..’। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তখনো আমাদের চেতনা থেকে সম্পূর্ণ মুছে যাননি। আরেকটি গানও গাইতাম আমরা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল..’। একটি টেবিলের উপর পরিপাটি করে কাপড় পাতা হত। তার উপরে হারমোনিয়াম। শিক্ষক গাইতেন। ছাত্ররা তাঁর সঙ্গে গলা মেলাত।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

আস্তে আস্তে যত বড় হয়েছি, ততই এই দিনটিকে কেবলই একটি ছুটির দিনে পরিণত হতে দেখেছি। আমার স্কুলের দিনগুলিতে, ‘৬৫-‘৬৬ সালে এমন ছিল না। ধীরে ধীরে প্রজাতন্ত্র দিবসে ছাত্রদের স্কুলে যাওয়া কমে এল। আটের দশকে এসে দেখলাম, ছাত্ররা আর তেমন স্কুলে জড়ো হচ্ছে না এই দিনে। স্বাধীনতা দিবসে অবশ্য এখনো ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়।

প্রজাতন্ত্র দিবসের কথা বললে দেশের কথা আসে। সেই সূত্রেই মনে পড়ে ক্রিকেট খেলার স্মৃতি৷ আমি ছয়ের দশক থেকে ক্রিকেট অনুসরণ করছি। তখন পতৌদি অধিনায়ক ছিলেন। এখন যেমন ক্রিকেট খেলা জাতীয়তাবাদী আস্ফালনের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে, তখন সেইরকম ছিল না৷ সেই সময় বিদেশে তো বটেই, ভারতীয় দল নিজের দেশেও সিরিজ হারত। আমার মনে পড়ছে, ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে ভারত ৩-০ হেরে গেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ২-০ হারল দেশের মাঠে। ১৯৬৭-৬৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ৪-০ হারল। এই রকমই চলত। তবে এই সময়েই আমাদের সেই বিখ্যাত চারজন স্পিনার উঠে এলেন। হঠাৎ মনে পড়ল, নিউজিল্যান্ডকে একবার ৩-১ ম্যাচে হারিয়ে পতৌদি রাবার জিতেছিলেন।

তখন ভারতের কোন ফাস্ট বোলার ছিল না। রঞ্জি ট্রফিতে যে বোলাররা খেলতেন, তাঁদের সামলানোর পর দুর্দান্ত গতির বোলারদের মোকাবিলা করতে হত ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা মুশকিলে পড়তেন। এরপর গাভাসকার, বিশ্বনাথেরা আসার পর অবস্থা কিছুটা বদলাল। তারপর এলেন কপিল দেব। ভারতও জোরে বল করতে শুরু করল। আর নয়ের দশকে তো ভারতীয় ক্রিকেট অনেকটাই বদলে গেল। আমার মনে হয়, ভারতীয় রাষ্ট্র এবং প্রজাতন্ত্রের বদলটাও খানিকটা এই রকম। ঢিমে তালের যে রাষ্ট্র কাঠামোয় আমরা বড় হয়েছি, তা হঠাৎ অনেকখানি বদলে গিয়েছে। এখন সেই বদলের গতি আরো তীব্র।

এই প্রসঙ্গে রেডিওর কথাও বলা দরকার। খেলা, নির্বাচনের খবর, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা – সবই আমরা রেডিওর মাধ্যমে শুনতাম। আমাদের কাছে প্রজাতন্ত্রের নির্মাণে রেডিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

গত কয়েক বছর যাবৎ ২৬শে জানুয়ারি বা ১৫ই অগস্ট নিয়ে আমার মধ্যে কোন সদর্থক বোধ কাজ করে না। কেন্দ্রীয় সরকারে যে দলটি ক্ষমতায় রয়েছে, যারা দেশ পরিচালনা করছে, তারা ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার উপর নানাবিধ বিধিনিষেধ আরোপ করতে চাইছে। খাদ্যরুচিকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। আমি মনে করি, এটি অত্যন্ত নঞর্থক ভবিষ্যৎ নির্দেশ করে।

এখন যিনি প্রধানমন্ত্রী, আজ থেকে ১৯ বছর আগে তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেই সময়ে গুজরাটে নরমেধ যজ্ঞ এবং ধর্ষণলীলা চলেছিল। আমি যখন তাঁকে এই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখি, তখন প্রজাতন্ত্র দিবস নিয়ে আমার যাবতীয় আলোকিত বোধ নির্বাপিত হয়ে যায়।

অনুলিখন – অর্ক ভাদুড়ি

চিত্র সৌজন্য : Wikimedia

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.