আমাদের দেশের অলিখিত প্রাচীন নিয়ম – দূত অবধ্য। সাহেবরাও একই মেজাজে বলে থাকে – দূতকে গুলি করবেন না (Don’t shoot the messenger)। দুটো কথার পিছনে যুক্তিটা একই – দূত কোনো পক্ষের লোক নয়, অতএব তাকে প্রতিপক্ষ হিসাবে আক্রমণ করা অন্যায়। সে এক পক্ষের কাছে অন্য পক্ষের বার্তাবাহকমাত্র। ফলে সে নিরস্ত্রও বটে। কিন্তু ধরুন, একজন দূত প্রতিপক্ষের শিবিরে বার্তা দিতে ঢুকল ছত্রপতি শিবাজীর মত বাঘনখ পরে। বার্তা দেওয়ার নাম করে শিবিরে ঢুকে যিনি বার্তা নেবেন তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়ে চলে গেল। এরপর কি তার আর দূত হিসাবে ছাড় প্রাপ্য? একেবারেই নয়। সে যে ক্ষতি করল তা কিন্তু স্রেফ একজনকে খুন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তার এই আচরণের ফলে অন্য দূতেরাও বিপদে পড়বে, কারণ তাদের আর কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। ফলে দূতীয়ালি ব্যাপারটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০১৪ সালের পর থেকে (আসলে তার কিছু আগে থেকেই) ভারতের সাংবাদিকতা যেদিকে মোড় নিয়েছে তাকে এইভাবে দেখাই শ্রেয়। বেশিরভাগ মূলধারার সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা হয়ে গেছে বাঘনখ পরা দূতের মত। ইদানীং অবশ্য দূত সেজে থাকার নাটকটুকুও ত্যাগ করেছে অনেক সংবাদমাধ্যমই, অথচ দূত হওয়ার সুবিধাগুলো নিয়েই চলেছে। এমতাবস্থায় ইন্ডিয়া জোট ১৪ জন অ্যাঙ্করের তালিকা প্রকাশ করেছে, যাদের শোতে এই দলগুলোর প্রতিনিধিরা যাবেন না। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারতের স্থান যতই নেমে যাক, যত সাংবাদিকই গ্রেফতার হয়ে যান না কেন, এই অ্যাঙ্কররা কিন্তু দিনরাত দর্শকদের বলে থাকে ভারতের সব ক্ষেত্রেই দারুণ অগ্রগতি হচ্ছে। এমনকি গণতান্ত্রিক অধিকারের দিক থেকেও। সেই অ্যাঙ্কররাই এই তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর একে গণতন্ত্রের উপর আঘাত, বাকস্বাধীনতা হরণ ইত্যাদি আখ্যা দিচ্ছে। এরা অবশ্য রবীশ কুমার কথিত গোদি মিডিয়ার লোক। কিন্তু যাঁদের কেউ গোদি মিডিয়ার লোক মনে করে না, তেমন কয়েকজনও এই বয়কটের বিরোধিতা করেছেন। যেমন করণ থাপার, রাজদীপ সরদেশাই, সাগরিকা ঘোষ। সুতরাং ব্যাপারটাকে নানা দিক থেকে দেখা প্রয়োজন।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
প্রথমেই নিরপেক্ষতার ধারণাটা পরিষ্কার হওয়া দরকার। আসলে কেউ নিরপেক্ষ নয়। সাংবাদিক দূরে থাক, ক্রিকেট খেলার আম্পায়ার পর্যন্ত নিরপেক্ষ নন। বোল্ড আর দিনের আলোর মত পরিষ্কার ক্যাচ আউট ছাড়া আর সব আউটের ক্ষেত্রেই ফিল্ডিং দল আম্পায়ারের কাছে আবেদন করে। তিনি আইন মেনে নিজের বিবেচনা মত আউট দেন, প্রয়োজনে অন্য আম্পায়ারের পরামর্শ নেন, কখনো বা প্রযুক্তির সাহায্য নেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত এক দলের পক্ষে যায়, অন্য দলের বিপক্ষে। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে তাঁকে একটা পক্ষ বাছতেই হয়। বিশেষ করে লেগ বিফোর উইকেটের মত আউটের ক্ষেত্রে শেষ কথা বলে আম্পায়ারের ব্যক্তিগত মত। আগে এই মতের গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল, এখন বিপুল পরিমাণ প্রযুক্তির ব্যবহারে অনেকখানি কমেছে। তবু দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে প্রযুক্তিও শেষ কথা বলতে পারছে না। তখন টিভি আম্পায়ারের বিবেচনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে ছাড়ে না, অনেকসময় পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার অভিযোগও ওঠে। ক্রিকেট খেলার দৃষ্টান্ত এই কারণেই দেওয়া, যে জীবনের মত ক্রিকেট খেলাতেও বহু জিনিস মানবিক বিবেচনার উপরেই শেষপর্যন্ত নির্ভরশীল। যেমন বৃষ্টি হওয়ার পরে মাঠ খেলার উপযুক্ত হয়েছে কিনা সেই সিদ্ধান্ত অন্তত এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র দুই আম্পায়ারের বিবেচনার ভিত্তিতেই ঠিক হয়। যেখানেই এই অবকাশ আছে সেখানেই নিরপেক্ষতা বজায় থাকল কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে। এ তো গেল খেলার বিচারকদের কথা। একই কথা আদালতের বিচারকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। একই আইনে একই মামলার বিচারে বিচারক বদলালে রায়ও বদলে যায় অনেক সময়। এমনটাই যে স্বাভাবিকতা আইনও তা বিশ্বাস করে। সেই কারণেই নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদন জানানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিচারকের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হয়, কিন্তু রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলা আইনসম্মত। বিচারকের রায়ের যে ভালমন্দ আছে তাও সর্বজনস্বীকৃত। তাই রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন “…দণ্ডিতের সাথে/দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে/সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।” এই বিচারে বিচারকের ব্যক্তিগত আদর্শ, মতামত – সবই প্রভাব ফেলে। ফেলতে বাধ্য। সুতরাং আক্ষরিক অর্থে নিরপেক্ষতা সোনার পাথরবাটি।
এ তো গেল বিচারকদের কথা। সাংবাদিকরা বিচারক নন, হওয়া অন্যায়ও বটে। খোদ সুপ্রিম কোর্ট সংবাদমাধ্যমের বিচারক হয়ে বসা নিয়ে অসন্তুষ্ট। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের বেঞ্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছে, পুলিস ব্রিফিং যেন মিডিয়া ট্রায়ালের সুযোগ না করে দেয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকদের বরং দূত হওয়ারই কথা। কার দূত? এই প্রশ্নের উত্তরটাই সম্পূর্ণ উলটে দেওয়া হয়েছে আজকের ভারতে।
ইন্ডিয়া জোটের তালিকায় যে ১৪ জন অ্যাঙ্করের নাম রয়েছে তাদের একজন রুবিকা লিয়াকত। তাকে পাশে দাঁড় করিয়ে ‘হিন্দি নিউজ’ চ্যানেলের সিইও জগদীশ চন্দ্র প্রকাশ্যে বলেছে, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নেই। কিন্তু আমরা দেশের জনপ্রিয় সরকারের পক্ষে আছি। কেন থাকব না? আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি গ্লোবাল লিডার হয়ে থাকেন, পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা বলে গণ্য হয়ে থাকেন, যদি অমিত শাহ ৩৭০ তুলে দিয়ে কাশ্মীরের পরিবেশ বদলে দিয়ে থাকেন… তাহলে তাঁকে অগ্রাহ্য করব কী করে? তাঁকে তাঁর জনপ্রিয়তা অনুযায়ী গুরুত্ব দিতেই হবে। দেশের উপর রাজত্ব করলে আমাদের নেটওয়ার্কের পর্দাতেও রাজত্ব করবেন। এ নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিধা নেই। যাঁরা আমাদের গোদি মিডিয়া বলেন আমি তাঁদের খুব বিনীতভাবে বলছি, আমরা গোদি মিডিয়া নই। কিন্তু যা বাস্তব তাকে কী করে অস্বীকার করি? এই তো ২০২৪ নির্বাচন এসে গেল। কাল আপনারা সরকারে আসুন; প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে যান। কথা দিচ্ছি যতখানি কভারেজ আর লাইভ টেলিকাস্ট মোদী আর অমিত শাহের করেছি ততটাই আপনাদেরও করব।
অন্য এক অ্যাঙ্কর ‘আজ তক’ চ্যানেলের চিত্রা ত্রিপাঠী। সে এক টক শোতে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে ইদানীং সোশাল মিডিয়ার সূত্রে বিপুল জনপ্রিয় ব্যঙ্গাত্মক গানের শিল্পী নেহা সিং রাঠোরকে ডেকে কেন তিনি বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীদের ব্যঙ্গ করে গান করেন তা জিজ্ঞেস করেছিল। নেহা পালটা পক্ষপাতের প্রশ্ন তোলায় চিত্রা বলে, আপনি যাঁদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা কিন্তু ৫-৭ লাখ ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছেন। জনগণ ভোট দিয়েছে, নিজের পকেট থেকে তো আর ভোট বার করেননি।
You can see frustration on the face of BJP anchor Chitra Tripathi.
— Mahua Moitra Fans (@MahuaMoitraFans) September 16, 2023
Well done @nehafolksinger 👏🏻👏🏻 pic.twitter.com/WFf2G5dUvz
দুজনেরই বক্তব্য আসলে এক। যে জিতেছে তার পক্ষে আছি, তার পক্ষে থাকাই আমাদের কাজ। আসলে দুজনেই জানে, গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যমের হওয়ার কথা দর্শকের, অর্থাৎ নাগরিকদের, দূত। সেই ভানটা বজায় রাখার জন্যেই একজন যোগী আদিত্যনাথ আর শিবরাজ সিং চৌহান কত বড় ব্যবধানে জিতে এসেছেন তা উল্লেখ করেছে। অন্যজন বলেছে যারা জনপ্রিয় হবে তাদেরই কভারেজ দেব। এই ভানের সরটুকু আলাদা করে নিলে যা পড়ে থাকে তা হল, যে ক্ষমতায় থাকবে তার পক্ষেই থাকব। আমি তার দূত।
এই ভাবনাই ভারতের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে সর্বব্যাপী হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোদি মিডিয়া বলা যায় না যাদের, সেইসব সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ও প্রতিবেদকরাও অনেকে এরকমই মনে করেন। ক্ষমতার সমর্থনে দাঁড়ানো নয়, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করাই যে সংবাদমাধ্যমের কাজ — তা বিস্মৃত। ভারতে একসময় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মাস কমিউনিকেশন, এশিয়ান কলেজ অফ জার্নালিজমের মত দু-একটা জায়গা ছাড়া কোথাও সাংবাদিকতা ও গণসংযোগ আলাদা করে পড়ানো হত না। গত কুড়ি বছরে ব্যাঙের ছাতার মত অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বছর বছর পাস করে বেরিয়ে অনেকে সাংবাদিকও হচ্ছেন। অথচ দেখা যাচ্ছে প্রথাগতভাবে লেখাপড়া না করা সাংবাদিকদের আমলেই সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা ঠিক ছিল। এর পিছনে আসলে ক্লাসরুমের দায় তত নয়, যতটা পাস করে সকলে যেখানে কাজ করতে যায় তার। ডাক্তারির মত সাংবাদিকতাও সবটা শেখা হয় না ‘প্র্যাকটিস’ না করলে। সেখানেই গলদ। ডাক্তাররা তবু প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন। সাংবাদিকতায় প্রাইভেট প্র্যাকটিস বলে কিছু এখনো সেভাবে নেই। এতকাল উপায়ও ছিল না। আগে রবীশ কুমারের মত সাংবাদিককে চাকরি ছাড়তে হলে একেবারে চুপ হয়ে যেতে হত। কারণ অন্য কোনো সংবাদমাধ্যম জায়গা না দিলে নিজের সাংবাদিকতা লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উপায় ছিল না। এখন ইউটিউব চ্যানেল, টেলিগ্রাম চ্যানেল, ফেসবুক পেজ ইত্যাদি নানা ব্যবস্থা হয়েছে। ফ্রিলান্স সাংবাদিকতা আগেও ছিল, এখনো আছে বটে। কিন্তু সেই সাংবাদিকের কাজ প্রকাশ করতে রাজি এমন সংবাদমাধ্যম তো দরকার। সরকারবিরোধী কাজ করতে উৎসাহী ফ্রিলান্স সাংবাদিকদের ভরসা কিন্তু এখন বিকল্প সংবাদমাধ্যম। মূলধারার সংবাদমাধ্যমে তাঁদের জায়গা ক্রমশ কমে আসছে। আর কেউ যদি মূলধারার চাকুরে সাংবাদিক হন, তাহলে তিনি সত্যিকারের সাংবাদিকতা করতে চাইলেও পারবেন না। মালিকরা জগদীশ চন্দ্রের মত সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বসে আছে। যেহেতু টিভি দেখেন অনেক বেশি মানুষ, সেহেতু ইন্ডিয়া জোট আপাতত অ্যাঙ্করদের বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এমন নয় যে খবরের কাগজের চিত্রটা একেবারে আলাদা।
এখানেই এসে পড়ে ইন্ডিয়া জোটের সিদ্ধান্তের সার্থকতার প্রশ্ন। সাংবাদিকের স্বাধীনতা আর সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কিন্তু এক নয়। সাংবাদিক নিজের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে পারেন না। আজকের ভারতে তো আরওই পারেন না। বহু সম্পাদক, প্রতিবেদকের চাকরি গেছে বিজেপির ঢাক বাজাতে রাজি না হওয়ায়। মাত্র কয়েকদিন আগে জানা গেছে এনডিটিভির ব্যুরো চিফ সোহিত মিশ্রের পদত্যাগের খবর। তাঁকে নাকি বলা হয়েছিল গৌতম আদানির সম্পর্কে অভিযোগ নিয়ে রাহুল গান্ধীর সাংবাদিক সম্মেলন ভেস্তে দিতে। তিনি রাজি হননি, তাই পদত্যাগ করতে হয়।
এই পরিস্থিতিতে আস্ত চ্যানেল বয়কট না করে শুধুমাত্র কয়েকজন অ্যাঙ্করকে বয়কট করে কী লাভ, সে প্রশ্ন তোলা সঙ্গত। কিন্তু বয়কটের সিদ্ধান্তটাই ভুল — এ কথা আদৌ বলা চলে না। কারণ একাধিক, যদিও ইন্ডিয়া জোট প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কোনো কারণ নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। জোটের বিভিন্ন নেতা ব্যক্তিগতভাবে নানা কারণ দর্শিয়েছেন।
প্রথমত, এই চ্যানেলগুলোর প্রধান আকর্ষণ ওই অ্যাঙ্করদের ঘৃণা বর্ষণকারী তথাকথিত বিতর্ক সভা। সেখানে বিতর্ক হয় না, হয় অ্যাঙ্করের মদতে ভারতের সংখ্যালঘু এবং সমস্তরকম বিজেপিবিরোধী মানুষের প্রতি অবিরাম ঘৃণার চাষ। সে কাজে প্রয়োজন মত ভুয়ো খবর, নির্জলা মিথ্যাভাষণ – সবই ব্যবহার করা হয়। অ্যাঙ্করের যে বক্তব্য পছন্দ তার বিপরীতে যে মুখপাত্ররা বলতে আসেন তাঁদের প্রায় কিছুই বলতে দেওয়া হয় না। হয় ধমকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়, নয়ত তাঁর মত যে ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’, ‘দেশদ্রোহী’, ‘জেহাদি’ তা চিৎকার করে বারবার বলা হয়। ফলে এই শোগুলোতে যাওয়ার যে যুক্তি রাজনৈতিক দলগুলো দেখিয়ে থাকে – নিজেদের মত জনপরিসরে জানানো – বিজেপিবিরোধীদের ক্ষেত্রে তা ভোঁতা হয়ে গেছে। এইসব শোতে যাওয়া মানে বরং বিজেপির সুবিধা করে দেওয়া। তার চেয়েও বড় কথা, ১৯৯০-এর দশকে আফ্রিকার দেশ রোয়ান্ডার গৃহযুদ্ধে রেডিও রোয়ান্ডা সংখ্যালঘু হুটুদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ঘৃণাভাষণ চালিয়ে তাদের যেভাবে অবমানবে পরিণত করেছিল টুটসিদের চোখে, ঠিক সেই কাজ এই অ্যাঙ্কররা করে চলেছে। সুতরাং এদের শোতে গিয়ে বসা মানে সেই কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া, পরোক্ষে মদত জোগানো।
দ্বিতীয়ত, এই অ্যাঙ্করদের সঙ্গে অন্য সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের তো বটেই, ওই চ্যানেলগুলোরই আর পাঁচজন সাংবাদিকেরও তফাত আছে। এরা প্রত্যেকে মহার্ঘ মাইনে পায় এবং অনেকেই কোম্পানির ডিরেক্টর হয়ে বসেছে। অর্ণব গোস্বামী তো ‘টাইমস নাও’ চ্যানেলে এই অসভ্যতা চালিয়ে এত জনপ্রিয় হল যে নিজস্ব চ্যানেলই খুলে ফেলল। সুতরাং এরা নেহাত ঠেকায় পড়ে একপেশে সরকারি প্রচার চালায় না, ঘৃণাভাষণ দেয় না। বরং এরাই চ্যানেলের এজেন্ডা তৈরি করে। ফলে এদের ঘৃণা ছড়াতে বাধা দেওয়া যথেষ্ট না হলেও আবশ্যিক। বহু ভাসমান ভোটার এবং বিজেপিবিরোধী ভোটারও হাঁ করে এইসব চ্যানেল দেখে থাকেন। এই বয়কট তাঁদেরও এক প্রচ্ছন্ন বার্তা দেবে যে এই অ্যাঙ্কররা যা করে তা যথার্থ নয়, কারোর জন্যে ভাল নয়। এতে ভাসমান ভোটারদের কেউ কেউ হয়ত বিজেপির দিকে ঢলে পড়বেন, কিন্তু উলটোটাও ঘটবে। ইন্ডিয়া জোটের দলগুলোর সমর্থক যে ভোটাররা, তাঁদের উপর তো এই সিদ্ধান্তের স্পষ্ট প্রভাব পড়া উচিত।
তৃতীয়ত, এই বয়কট কোনোভাবেই সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকের স্বাধীনতা হরণ নয়। এখানে কোনো সাংবাদিককে তার মতামতের জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হচ্ছে না, তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, খুন করা হচ্ছে না। এর প্রত্যেকটাই ভারতে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে বিজেপি আমলে (ইন্ডিয়া জোটের কোনো কোনো দলের শাসনে থাকা রাজ্যেও ঘটছে। খড়্গপুরের সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচীর কথা স্মর্তব্য), অথচ তার বিরুদ্ধে কোনোদিন টুঁ শব্দ করেনি এই অ্যাঙ্কররা। সে না হয় তাদের স্বাধীনতা। কথা হল এই বয়কট সত্ত্বেও তারা শো চালিয়ে যেতে পারে, শুধু কয়েকটা রাজনৈতিক দল সেই শোয়ে অংশগ্রহণ করবে না। আপনার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন মাতাল চিৎকার করে আপনাকে, আপনার পরিবারকে অকথ্য গালিগালাজ করছে। আপনি যদি বাড়ির জানলা বন্ধ করে দেন, তাহলে মাতালরা কি বলতে পারে, বাকস্বাধীনতা হরণ করা হল? এ প্রসঙ্গে বাকস্বাধীনতার প্রশ্ন তোলা একইরকম হাস্যকর।
চতুর্থত, সরকার তথা বিজেপির বিজ্ঞাপনের লোভে এবং/অথবা সরকারি চাপে যেসব সংবাদমাধ্যম বিজেপির মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা আর সাংবাদিকতার বিশেষ ছাড়গুলো দাবি করতে পারে না। কারণ সরকারবিরোধীদের সেই ছাড় এরা নিজেরাই দেয়নি। যে কোনো দেশে সরকারের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমের অন্যতম প্রধান রক্ষাকবচ হল একতা। পাঠক/দর্শকদের অবাক লাগতে পারে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বাম আমলে বর্তমানের সাংবাদিককে প্রশাসনের কেউ কিছু বললে গণশক্তির সাংবাদিকও বর্তমানের সাংবাদিকের পাশে দাঁড়াবেন – এটাই ছিল নিয়ম। সারা পৃথিবীতেই তাই হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনে অপছন্দের প্রশ্ন করার জন্যে একজন সাংবাদিককে আক্রমণ করলে অন্য সব সাংবাদিক একজোট হয়ে তাঁর পাশে দাঁড়াতেন। প্রায় সব পেশাতেই এটাই নিয়ম। কারণ পেশাদারি প্রতিদ্বন্দ্বিতা যতই তীব্র হোক, নিজেদের মধ্যে একতা না থাকলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যায় না। আর সাংবাদিকতা করা মানেই রাষ্ট্রের ত্রুটিবিচ্যুতির দিকে আঙুল তোলা। ভারতে এই একতা কিন্তু যত্ন করে নষ্ট করেছে গোদি মিডিয়া। অর্ণবই প্রথম টাইমস নাওয়ের স্টুডিও থেকে সরকারবিরোধী খবর করে এমন চ্যানেলের অ্যাঙ্কররা পাকিস্তানের মদতপুষ্ট, শহুরে নকশাল – এমন সব অভিযোগ করতে শুরু করে। দর্শকরা মুসলমান, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, রাহুল গান্ধী-সোনিয়া গান্ধী, কমিউনিস্ট ইত্যাদির মত ওইসব সাংবাদিকদেরও যেন ঘৃণা করে – এই কামনা অর্ণব সরাসরিই করত। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অন্যান্য চ্যানেলের অ্যাঙ্কররাও। এখন ঝাঁকের কই হতে চাইলে চলবে কেন?
এবার একটু নিরপেক্ষতার বিচারে ফেরত আসা যাক। গোদি মিডিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই অনেকে বলেন, অন্য মিডিয়াগুলো নিরপেক্ষ নাকি? চাকরিজীবনে সিনিয়র সহকর্মীদের সঙ্গে বিজেপির সংবাদমাধ্যমকে করতলগত করা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দেখেছি, তাঁরা এর সপক্ষে যুক্তি খাড়া করেই রেখেছেন – “এসব চিরকালই হয়”। বস্তুত পৃথিবীর সমস্ত অন্যায়ই চিরকাল হয়। রামায়ণ-মহাভারত খুললেই তা টের পাওয়া যায়, কোনো প্রবীণ সাংবাদিকের প্রজ্ঞার প্রয়োজন নেই। ইদানীং অন্যায়ের কোন দিকটা নতুন তা চিহ্নিত করতে হয় এবং তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়। নইলে ঝাড়ে বংশে বিনষ্ট হতে হয়।
গত কয়েক বছরে যা নতুন তা হল বিজেপির বিপুল আর্থিক ক্ষমতা। ইলেক্টোরাল বন্ডের সুবাদে বিজেপি যে টাকার পাহাড়ে বসে আছে তা ভারতের কোনো দল কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। এর প্রমাণ বিজেপির পার্টি অফিসের কলেবর থেকে শুরু করে তাদের নির্বাচনী প্রচারের জাঁকজমক – সবেতেই টের পাওয়া যায়। সেই টাকার ভাগ পাওয়ার জন্য, সরকারি বিজ্ঞাপনের জন্য, বিজেপির সঙ্গে খাতিরের সুবাদে নিজের অন্য ব্যবসাগুলোর শ্রীবৃদ্ধি করার জন্য সংবাদমাধ্যমগুলোর মালিকরা দিনকে রাত, রাতকে দিন করছেন। অর্থাৎ সাংবাদিকতায় দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে কিছু সাংবাদিক দুর্নীতিগ্রস্ত হতেন বা বিশেষ কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হতেন। মালিকেরও বিলক্ষণ পক্ষপাত থাকত। কিন্তু অন্তত বাজারের স্বার্থে, দর্শক/পাঠক ধরে রাখতে তাঁকে কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হত। একই সংবাদমাধ্যমে নানা দলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট সাংবাদিক থাকতেন। তাঁদের মধ্যে আলাপ আলোচনা, ঝগড়াঝাঁটি, লেঙ্গি মারা, হাসিঠাট্টা সবই চলত। এই দ্বন্দ্বের ফলে দর্শক/পাঠক যা পেতেন তাতে শেষমেশ এক ধরনের সাম্যবিধান হত। তিনটে চ্যানেল দেখলে হয়ত একটা ঘটনাকে তিনরকম দেখাত। কিন্তু তা থেকে দর্শক সত্যের অনেক কাছাকাছি পৌঁছতে পারতেন। এখনকার মত সর্বত্র একই মিথ্যা বয়ান চলত না। কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলেই আগে নিউজরুমগুলোকে মনে হত মাছের বাজার, এখন মনে হয় কল সেন্টার। দারুণ নিয়মানুবর্তী, দারুণ শান্তিপূর্ণ। শ্মশানের শান্তি। এই শান্তি যে সাংবাদিক ভাঙেন তাঁর চাকরি যায় বা তাঁকে চাকরি ছাড়তে হয়। যেমন রবীশ ছেড়েছেন, সোভিত ছেড়েছেন।
আরো পড়ুন সাংবাদিকতাকে বন্দি করেছে বিজ্ঞাপন
আগেই বলেছি কেউ নিরপেক্ষ নয়। আক্ষরিক অর্থে নিরপেক্ষ হওয়া প্রার্থনীয়ও নয়। কয়েকজন মানুষ মিলে একজনকে সাংবাদিকের চোখের সামনে পিটিয়ে মারল। সাংবাদিক যদি প্রতিবেদনে বলেন ‘এরা মেরে অন্যায় করেছে, তবে লোকটাও প্ররোচনা দিয়েছিল’, তাহলে তিনি তো আসলে খুনীদের পক্ষে দাঁড়ালেন। তাঁকে বলতেই হবে খুনীরা অন্যায় করেছে, কোনো প্ররোচনা থাকুক আর না-ই থাকুক। অর্থাৎ তাঁকে সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে হবে, এক্ষেত্রে যার অর্থ হবে যে খুন হয়েছে তার পক্ষে দাঁড়ানো। এলবিডব্লিউ আবেদন নাকচ করে দেওয়ার সময়ে যেমন আম্পায়ার ব্যাটারের পক্ষের লোক হয়ে যান ক্ষণিকের জন্য। সুতরাং সংবাদমাধ্যম সত্যের পক্ষে দাঁড়াক – এটুকুই ন্যায্য দাবি। সংবাদমাধ্যম নিরপেক্ষ হোক – এ দাবি অর্থহীন। বিশেষত আজকের ভারতে সংবাদমাধ্যমকে পক্ষ নিতেই হবে এবং তার মূল্যও চোকাতে হবে। বিজেপিবিরোধী সাংবাদিকরা বহুকাল ধরেই বিরাট মূল্য দিচ্ছেন, বিজেপির ধ্বজাধারীরাই বা দেবেন না কেন? যুক্তি দিয়ে বিচার করলে তো এই ১৪ জনকে সাংবাদিক বলে ধরাই যায় না। তাদের নরেন্দ্র মোদীর গুণমুগ্ধ বলা যেতে পারে, সরকারের মুখপাত্রও বলা যেতে পারে। এগুলো তো গালাগালি নয়। এরা নিজেরা বা এদের চ্যানেলের মালিকরা নিজমুখেই তো অন্য সময় এগুলো বলে। এখন হঠাৎ রেগে যাওয়ার যুক্তি নেই। কিন্তু রেগে যাচ্ছে, এই বয়কটে জরুরি অবস্থার মানসিকতার প্রমাণ দেখা যাচ্ছে বলছে।
অর্ণবভক্তরা শুধু নয়, অর্ণবের শো দেখেন না এবং পছন্দ করেন না এমন অনেকেরও ধারণা এই বয়কটে অর্ণবের কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু তেমন হলে এ নিয়ে সে এত উত্তেজিত হত না। অর্ণব এবং তার দর্শকদের যে ধর্ষকাম মানসিকতা বিপক্ষের লোকেদের ডেকে এনে ধমকে তৃপ্তিলাভ করে, এই বয়কটের ফলে তাতে অসুবিধা হবে। ধর্ষকাম মানুষ কামনা চরিতার্থ না হলে কতটা রিপাবলিক টিভি দেখবেন তা নিশ্চিত নয়। টিআরপি পড়ে যেতে পারে। তা যদি না-ও হয়, কানাঘুষো যা শোনা যাচ্ছে তা যদি সত্যি হয় তাহলে ১৪ জন অ্যাঙ্করের চ্যানেলেরই সমূহ বিপদ। শোনা যাচ্ছে ইন্ডিয়া জোটের দলগুলো যেসব রাজ্যে আছে সেখানকার সরকারগুলো নাকি এই চ্যানেলগুলোকে বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। আগেও লিখেছি যে এখন সকালে যে কাগজটা হাতে পান সেটা আসলে আপনার কথা ভেবে তৈরি নয়, ওটা বিজ্ঞাপনদাতার রসিদ। কারণ কাগজ ছাপার খরচটুকুও আপনার দেওয়া কাগজের দামে ওঠে না। তেমনই টিভি চ্যানেলও চলে বিজ্ঞাপনদাতার টাকায়। সেখানে অতগুলো রাজ্যের সরকারি বিজ্ঞাপন আসা বন্ধ হয়ে গেলে টানাটানির সংসার হয়ে যাবে। অতএব অর্ণবের উত্তেজনার মধ্যে চাপা ভয়ও লুকিয়ে আছে।
তবে ইন্ডিয়া জোটের এই ব্যবস্থা সম্পর্কে কয়েকটা প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।
১) এই কজন অ্যাঙ্করের বাইরে কি আর কেউ নেই যে একই দোষে দুষ্ট?
২) হিন্দি বাদে অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার চ্যানেল এবং তাদের অতি উদ্ধত, অপছন্দের মুখপাত্রকে “কে তুমি” বলে ধমকানো, অ্যাঙ্করদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন নেই?
৩) ভোটের আর ৭-৮ মাস বাকি। এখন এই ব্যবস্থায় কতটা আটকানো যাবে গণমাধ্যমে ঘৃণাভাষণ আর মিথ্যার বেসাতি?
৪) এই অ্যাঙ্করদের বাদ দিয়ে বিকল্প সংবাদমাধ্যমগুলোকে বেশি কভারেজের সুযোগ দেবে কি ইন্ডিয়া জোট? যেমন ধরা যাক, রবীশ কুমারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে রাহুল গান্ধী।
বিকল্প পথের সন্ধান করতে না পারলে কিন্তু এই সদুদ্দেশ্যে নেওয়া সিদ্ধান্ত সফল হবে না। দেশের সংবাদমাধ্যমের ভোল পালটানোর কাজ শুরু হবে না।
মতামত ব্যক্তিগত
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।
মাননীয় মহাশয়।
আপনার লিখা বক্তব্যের প্রায় প্রতিটি যুক্তির সাথে আমার ব্যক্তিগত মতামত অনেকাংশেই সহমত ও অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন। কিন্তু বুঝিনা আপনারা “ইন্ডিয়া জোট” শব্দবন্ধটা কোন অধিকারে করছেন। আমি যতটুকু জানি, এই নবগঠিত গোঠের নাম, ইন্ডি গোষ্ঠী বা ইন্ডি জোট। সংক্ষেপে বলতে পারেন, I.N.D.I.A. বা I.N.D.I. Alliance। আপনারা কোনো ভেবেই “ইন্ডিয়া জোট” বলতে পারেন না। ইন্ডিয়া জোট ভেঙে বললে হবে, “ইন্ডি জোট জোট।” শুনতে নিশ্চয়ই ভালো লাগে না। আমার ধারণা, আপনারা নিজেদের দূর্বলতা ঢাকতে, মহান ভারতের নামকে চুরি করে, ইন্ডিয়া নামের নামাবলী আপনাদেরই কিছু কলঙ্কিত সঙ্গীর গায়ে চড়িয়ে দিয়ে মানুষকে বোকা বানারার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। INDIA নামের মুখোশ না লাগিয়ে, ক্ষমতা থাকলে ইন্ডি গোষ্ঠীর সবাই বলার ক্ষমতা রাখুন I.N.D.I.A. বা I.N.D.I. Alliance অথবা বলুন, ইন্ডি জোট বা ইন্ডি গোষ্ঠী।
I love my India