Everything returns, but in a different form!

~ Gautama Buddha

নকশালবাড়ি আন্দোলনের দিকে যদি ফিরে দেখা যায় আজ ৫৪ বছর পর, কী বুঝব আমরা? কী অবস্থায় রয়েছে আজকের নকশালপন্থী আন্দোলন, বা খোদ নকশালবাড়ি জায়গাটা, যেখানে সূচনা হয়েছিল এই মহতী আন্দোলনের? সব কি শেষ হয়ে গেছে, নাকি এখনও রয়ে গেছে তার কিছু অবশেষ যা থেকে আবার কোনও উপযুক্ত সময়ে ফের জ্বলে উঠতে পারে ঐ আন্দোলনের শিখা? এসব প্রশ্ন আজ খুব স্বাভাবিকভাবেই ঘোরাফেরা করে তাঁদের মনে, যাঁরা কোনও না কোনওভাবে এই আন্দোলনকে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে বুঝতে চেয়েছেন বা তার সংস্পর্শে এসেছেন। এই নিয়েই আজ দু চার কথা।

রাজনীতি বিষয়টা আমাদের মধ্যে প্রবেশ করে যে যে পথে তার মধ্যে একটা হল পারিবারিক উৎস বা অনুপ্রেরণা। আমার পরিবারের একাংশ ছিলেন কমিউনিস্ট। বেলেঘাটা, যেখানে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা বা পড়াশুনো ইত্যাদি, তা চিরকালই ছিল প্রখর রাজনীতির জায়গা। স্কুল মাস্টার থেকে কেরানি, বেকার যুবক বা যুবতী, দোকানদার থেকে বুদ্ধিজীবী — রাজনীতি নিয়ে ভাবতেন সবাই, সাধ্যমত রাজনৈতিক কাজকর্মে যুক্তও থাকতেন। “আমি রাজনীতি টাজনীতি বুঝি না”, এমন কথা বলতে আমার ছোটবেলায় আমার অঞ্চলে কাউকেই দেখিনি। তা এহেন পরিমন্ডলে আমার কমিউনিস্ট পরিবারের প্রভাবে আমিও কমিউনিস্ট পার্টির দ্বারা প্রভাবিত হই। কিন্তু তখন তো তিনটে কমিউনিস্ট পার্টি! যে বছর আমার জন্ম সেই, বছরই নকশালবাড়ি আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় নতুন পার্টি তৈরি হয়েছে, সিপিআই (এমএল)। আর স্কুলে ভর্তি হতে হতে সে পার্টির প্রথম সারির গোটা নেতৃত্ব হয় শহীদ, না হয় জেলবন্দী। পার্টি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে তার মধ্যেই। সুতরাং বোঝা অসম্ভব নয় যে, কী পরিমাণ রাজনৈতিক গলতি তাঁরা করেছিলেন তাঁদের রাজনৈতিক তত্ত্বে এবং প্রয়োগে। আমার মামারা সিপিআই (এম), আমার শিক্ষকরা সিপিআই(এম), আমিও সিপিআই(এম)-ই যুক্ত হই ছাত্রাবস্থায়। পার্টি ক্ষমতায় এসে গেছে তার সাত বছর আগে। কিন্তু খুব বেশিদিন এই পার্টি করা আমার পক্ষে সম্ভব হল না। আমি চলে গেলাম সেই রাজনীতিতেই যে রাজনীতির জন্ম হয়েছিল নকশালবাড়ি আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়। ততদিনে অবশ্য সে রাজনীতিতে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

কিন্তু অনেক পরিবর্তন ঘটলেও একটা বিষয় কিন্তু অক্ষুণ্ণ ছিল এবং সেই জিনিসটাই আমাকে আমার পুরনো পার্টি ছেড়ে এখানে টেনে এনেছিল। সেটা কী? সেটা হল বিপ্লব করার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা। ঠিক এই জিনিসটাই সিপিআই(এম) হারিয়ে ফেলেছিল তখনই। সিপিআই (এমএল)-এর শত ভুলভ্রান্তি সত্ত্বেও এঈ পার্টি এবং তার ধারাবাহিকতা যারা মেনে চলে তারা এই জিনিসটাকে বুক দিয়ে রক্ষা করেছিল। আমার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই জায়গাটা।

সিপিএমে আমরা কী দেখতাম? দেখতাম সব কিছুই ঘুরছে সরকারকে কেন্দ্র করে। কে “সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে” তাই নিয়ে বেজায় আলোচনা, মিছিল ইত্যাদি। “সরকারকে কীভাবে চোখের মণির মত রক্ষা করতে হবে” তাই নিয়ে ব্রাঞ্চ মিটিং, পার্টি ক্লাস ইত্যাদি। আর কী দেখতাম? দেখতাম পার্টি সংগঠনকে মজবুত করার জন্য ব্যাপক প্রয়াস। গণসংগঠনগুলির সদস্য সংগ্রহের জন্য বাড়ি বাড়ি অভিযান। গণসংগঠনগুলির আগুয়ান কর্মীদের পার্টিতে নিয়ে আসার রুটিন কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা, পার্টি ক্লাসে শুধুই সংগঠন নিয়ে আলোচনা, পার্টি সদস্যদের সক্রিয়ভাবে পার্টির কাজে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করা ইত্যাদি। আর ছিল নির্বাচন। প্রবল নিষ্ঠার সঙ্গে নির্বাচনী কাজ, নির্বাচনী রিভিউ ইত্যাদি। এক নির্বাচন শেষ হতে না হতে আরেক নির্বাচন। পার্টির রাজনীতি বলতে সে সময়ে ছিল শুধুই কংগ্রেস বিরোধিতা। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মিছিল, মিটিং ইত্যাদি। আর ছিল সম্মেলন। আঞ্চলিক সম্মেলন, রাজ্য সম্মেলন, কেন্দ্রীয় সম্মেলন, পার্টি কংগ্রেস ইত্যাদি। এইসব নিয়েই আমাদের ২৪×৭ ব্যস্ততা।

যেটা আমার মাথায় ঢুকত না সেটা হল এই সমস্ত কিছুর সঙ্গে বিপ্লবের সম্পর্ক কী? কখনও কোথাও কোনওভাবে আমরা বুঝতে পারতাম না, এই সমস্ত কর্মযজ্ঞ আদৌ কোনও বিপ্লবী লক্ষ্যে ধাবিত হচ্ছে কিনা। চাইলেই তো আর বিপ্লব করা যায় না, বা যে কোনও সময়ে বিপ্লব করা যায় না। কিন্তু বিপ্লবের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, বিপ্লবের জমি তৈরি করা হচ্ছে, এ কথাও আমাদের মনে হত না। বিপ্লব জিনিসটা নিয়ে কেউ যে আদৌ ভাবিত তাও দেখতে পেতাম না। যেমন ধরুন, আমরা সে সময়ে নিত্যদিন জনগণের কাছে কংগ্রেসকে ভিলেন প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কংগ্রেস যে শ্রেণিটাকে প্রতিনিধিত্ব করে সেই পুঁজিপতি-জমিদারদের বিরুদ্ধে পার্টিকে জনমত তৈরি করতে দেখিনি। পার্টিকে দেখিনি পুঁজিবিরোধী, পুঁজিবাদবিরোধী, ব্যক্তিমালিকানাবিরোধী মানসিকতা বা সংস্কৃতি জনগণের মধ্যে বা পার্টির মধ্যে গড়ে তোলার কোন চেষ্টা করতে।

নকশালপন্থী রাজনীতির শত সমস্যা সত্ত্বেও সেই রাজনীতিতে সরে যাবার পিছনে এই ছিল আমার কারণ। গত শতাব্দীর আশির দশকের দ্বিতীয়ার্ধে নকশালপন্থীদের অবস্থা যদিও আজকের মত খারাপ ছিল না, তথাপি মোটের উপর তাঁরা জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন। কিছু পকেট অবশ্যই ছিল, যেমন আজও আছে। তবে আজকের মত তা অতটা শুকিয়ে যায় নি। ভারতীয় বিপ্লবের সাধারণ লাইন কী হবে, তাই নিয়ে তীব্র বিতর্ক সে সময়ে নকশালপন্থী শিবিরে ভালো রকম ছিল। ১৯৬৯-৭৩ এই চার বছরের বিপর্যয়ের রেশও অবশ্য তখনও প্রবল মাত্রায় উপস্থিত ছিল। সাইকিতে এক ধরণের হতাশা বিদ্যমান ছিল। সর্বোপরি নকশালবাড়ির রাজনীতি বলতে ঠিক কী বোঝায়, কোন উপাদান বর্জিত হবে আর কোন উপাদান রক্ষিত হবে তা নিয়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি এবং মতপার্থক্য ছিল।

ছাত্র রাজনীতি করতে করতেই আমি দলবদল করি। নকশালপন্থী রাজনীতিতে আসার পর বুঝতে পারলাম মার্কসবাদ-লেনিনবাদ নিয়ে আমার যা জ্ঞানগম্যি তাতে কিছুই কুলকিনারা করা যাবে না। সিপিএমের সঙ্গে বিতর্কের কিছু ছিল না। তাঁরা এমনিতেই সেই সময় থেকেই রাজনৈতিক বিতর্ককে এড়িয়ে চলতেন, ভাল চোখে দেখতেন না। বিশেষত, নকশালদের সাথে বিতর্কে তাঁদের এক প্রকার আতঙ্ক ছিল। পার্টির মধ্যে যারাই একটু এগিয়ে ভাবতে গেছে, পার্টি লাইনকে ক্রিটিক্যালি বিশ্লেষণ করতে গেছে তারাই “নকশালপন্থী অনুপ্রবেশকারী”-র তকমা পেয়েছে, এ অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। গোর্খাল্যান্ড নিয়ে নকশালপন্থীদের সঙ্গে বিতর্ক করতে গিয়ে সিপিএমের ল্যাজে গোবরে অবস্থা হয় সর্বত্র। সে সময়ে কলেজ ইউনিয়নগুলি প্রকাশ্য বিতর্কের আয়োজন করত। এই রেওয়াজ ছিল। বিতর্ক হত মূলত নকশালপন্থীদের সাথেই। এইসব বিতর্কে উত্তরোত্তর সিপিএমের অবস্থা খুব খারাপ হয়। ধীরে ধীরে ইউনিয়নগুলি বিতর্ক তুলে দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বেশি করে করতে থাকে। কিন্তু নকশালপন্থীদের আভ্যন্তরীণ বিতর্ক তো ছিল তীব্র। এখনকার মত অবস্থা নয়। এখন তো নকশালপন্থীরাও আর বিতর্কে যায় না, সম্পর্ক খারাপ হবে ভেবে। সেই সময়ে কিন্তু সম্পর্ক খারাপ হত না তীব্র বিতর্ক সত্ত্বেও।

মোটের উপর যে ধারাগুলি নকশালপন্থীদের মধ্যে বিরাজ করত তা হল, ১. “শুরু থেকেই যুদ্ধ” এই লাইন যাঁরা মানতেন; ২. সংসদীয় এবং অসংসদীয় উভয় সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই জনতাকে প্রস্তুত করতে হবে, কিন্তু জোর দিতে হবে গ্রামাঞ্চলে এবং কৃষকদের মধ্যে — এই লাইন যাঁরা মানতেন; ৩. সংসদীয় এবং অসংসদীয় উভয় সংগ্রামই করতে হবে, কিন্তু জোর দিতে হবে শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে এবং শহরাঞ্চলে — এই লাইন যাঁরা মানতেন।

মূলত এই তিন লাইনের সংগঠন ছিল। এছাড়াও আরও বহু বিতর্ক ছিল। ভারতীয় বিপ্লব কি শুধুই শ্রেণিগুলিকে সংগঠিত করেই হবে, নাকি শ্রেণির পাশে নিপীড়িত জাতিসত্তা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, তথাকথিত “পিছড়ে বর্গ” বা দলিত প্রভৃতির কোনও ভূমিকা থাকবে? এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক ও অনুশীলনের জায়গা। সন্তোষ রানা, ভাস্কর নন্দী পরিচালিত পিসিসি, সিপিআই (এমএল) ব্যাপকভাবে এই অনুশীলন শুরু করে এবং এই সংক্রান্ত বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু দলিল তৈরি করে, তত্ত্বগত কাজকর্ম চালায়। সিপিআই (এমএল) লিবারেশন তখনো প্রকাশ্য পার্টি ছিল না। আইপিএফ নামে কাজ হত। অসীম চ্যাটার্জি সিপিআই (এমএল)-কে “সামাজিক সন্ত্রাসবাদী” অ্যাখ্যা দেন এবং বামফ্রন্টের মধ্যে গিয়ে “ঐক্য ও সংগ্রাম” চালাতে থাকেন। এই সমস্ত নিয়েও প্রভূত বিতর্ক চলতে থাকে।

আশির দশকের দ্বিতীয়ার্ধে নকশালপন্থীদের নেতৃত্বে সারা দেশে বেশ কতগুলি বিরাট বিরাট লড়াই চলছিল। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং বিহার ছিল এই লড়াইগুলির কেন্দ্র। বিহারে আইপিএফ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বেশ ভালো সাফল্য পায়। এক সময়ে তাদের সাংসদও ছিল। আবার একই সাথে সামন্ত ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে এবং তাদের পরিচালিত বিভিন্ন প্রাইভেট সশস্ত্র বাহিনীর (ব্রহ্মর্ষি সেনা, লোরিক সেনা প্রভৃতি) বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াইও চালায়। লড়াইয়ের সংসদীয় ও অসংসদীয় রূপকে তাঁরাই সফলভাবে সমন্বিত করেছেন, সেই সময়ে একথা অনেকেই মনে করত। ১৯৯২ সালে লিবারেশন প্রকাশ্যে আসার পর ধীরে ধীরে তাঁরা সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে সরে আসেন। বিহারে আরও দুটি সংগঠনের নেতৃত্বে ব্যাপক সশস্ত্র সংগ্রাম চলে — এমসিসি (মাওবাদী কমিউনিস্ট কেন্দ্র) এবং সিপিআই (এমএল) পার্টি ইউনিটি। এই সশস্ত্র সংগ্রামগুলি মূলত পরিচালিত হত সামন্ত ভূস্বামীদের প্রাইভেট সেনাগুলির বিরুদ্ধে। অন্ধ্রপ্রদেশে সামন্ত শ্রেণির বিরুদ্ধে যাঁরা সশস্ত্র সংগ্রাম মূলত চালাচ্ছিলেন তাঁরা সিপিআই (এমএল) জনযুদ্ধ নামে পরিচিত ছিলেন। এই শক্তিগুলিই মূলত ছিল “শুরু থেকেই যুদ্ধ” লাইনের প্রবক্তা। এঁরাই পরবর্তীকালে সিপিআই (মাওবাদী) গঠন করেন।

১৯৯০-এর দশক ভারতীয় রাজনীতিতে এবং বাস্তবতায় একটা মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। প্রথমত, এই দশকটা শুরু হল সমাজতন্ত্রের বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেল, পূর্ব ইউরোপের সমাজতন্ত্র বলে কথিত একের পর এক দেশে “সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা” এবং “সমাজতান্ত্রিক সরকার”-এর পতন হল। ব্যাপক গণ-অভ্যুত্থান হল সব জায়গায়। গোটা পৃথিবীতে বিপুলভাবে কমিউনিজম বিরোধী মনোভাব ও আবহাওয়া তৈরি হল। আর দ্বিতীয়ত, এই দশকেই পাকাপাকিভাবে ভারতে বিশ্বায়ন, উদারীকরণ ইত্যাদির সূচনা হল। এই পরিবর্তনগুলি ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলল। সিপিএম আরও বেশি বেশি করে বিপ্লববিহীন উপযোগবাদী রাজনীতিতে ডুবে যেতে লাগল। বিশ্বায়নের নয়া উদারবাদী নীতির কাছে ধীরে ধীরে আত্মসমর্পণ করতে লাগল। প্রচলিত অর্থনৈতিক সামাজিক কাঠামোর মধ্যেও “বিকল্প নীতি” র যে কথা তারা গোটা আশির দশক জুড়ে শুনিয়ে এসেছে, তা থেকে নব্বইয়ের দশকে তারা দূরে সরতে লাগল। ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে জ্যোতি বসু, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী, নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করলেন, যার মুখ্য বিষয় ছিল রাজ্যে প্রাইভেট ক্যাপিটাল এবং বিদেশী পুঁজির জন্য দরজা উন্মুক্ত করা। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একবগ্গা লড়াই থেকে ক্রমশ সরে এসে তাঁরা বেশকিছু নীতিগত ঐক্য গড়ে তুলতে লাগলেন।

অন্যদিকে নকশালপন্থী শিবিরে নতুন বিতর্ক উত্থাপিত হল। পুরনো বিতর্কগুলির সমাধান হল না, এর মধ্যে সমাজতন্ত্র নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত চর্চা এবং বিতর্ক হাজির হল। একে সত্তরের পরাজয়ের হতাশা তো ছিলই, তার উপর “সমাজতন্ত্রের পরাজয়” জনিত নতুন হতাশা এই বিতর্কগুলিকে কিন্তু খুব একটা ফলদায়ী হতে দিল না। জায়গায় জায়গায় সংগঠনগুলি বসে যেতে থাকল, নিষ্ক্রিয়তার মাত্রা ভয়ানকভাবে বেড়ে চলল। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সমস্ত নকশালপন্থী সংগঠন বেশ ভালো রকম সমস্যার মুখে পড়ল।

পাশাপাশি আর একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটল। পুঁজির অনুপ্রবেশের শর্ত যেহেতু হল পুঁজির পক্ষে যথাযথ কাজ করার উপযোগী পরিকাঠামো নির্মাণ, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক পরিকাঠামো, তাই এই নির্মাণের অংশ হিসাবে বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশের মত জায়গায় ভারতীয় রাষ্ট্রই ভূস্বামী শ্রেণিকে ক্ষমতাচ্যুত করল। প্রাইভেট আর্মি নিষিদ্ধ করা হল। তথাকথিত আইনের শাসনের উপর জোর দেওয়া হল। ফলে সামন্ত শ্রেণি বনাম নিপীড়িত কৃষক-ভূমিহীন কৃষক-গ্রামীণ মজুর-দলিত, এই যে দ্বন্দ্ব তা আর থাকল না। ধীরে ধীরে ভারতের গ্রামাঞ্চলে সামন্ততন্ত্র আর প্রধান শত্রু রইল না, সেই জায়গাটা নিল বহুজাতিক পুঁজি। ফলে প্রধান দ্বন্দ্বটা তৈরি হল সাম্রাজ্যবাদের সাথে। এই নয়া দ্বন্দ্বের উপযুক্ত রাজনৈতিক সংগ্রামের রূপ খুঁজে বের করতে নকশালপন্থীরা ব্যর্থ হলেন। ফলে বিহার, অন্ধ্রে যে বিরাট সংগ্রাম চলছিল তা স্তিমিত হয়ে আসে।

এইভাবে গোটা নব্বইয়ের দশকে নকশালপন্থী রাজনীতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, তা আরও প্রান্তিক অবস্থানে চলে যায়।

এই অবস্থা সারা পৃথিবীতেই চলেছে, শুধু আমাদের দেশে নয়। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই পরিস্থিতিতে একটা বদল ঘটতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ২০০৮ সালের মহামন্দার সময় থেকে। পুঁজিবাদকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মার্কস বলেছিলেন, পুঁজিবাদ একটা চক্রের মধ্যে দিয়ে চলে। তার যেমন একটা সমৃদ্ধির পর্যায় আছে তেমনি আছে সংকটের পর্যায়। সমৃদ্ধি-সংকট-গতানুগতিকতা-সমৃদ্ধি, এই চক্রে সে আবর্তিত হয়। সমৃদ্ধি যখন চরমে পৌঁছয়, যখন মনে করা হয় বোধহয় অনন্ত সমৃদ্ধির পর্যায় শুরু হয়েছে, তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত আছড়ে পড়ে সংকট। ২০০৮-এ ঠিক তাই ঘটল। নব্বই দশকের এবং ২০০০-২০০৭ পর্বের সমৃদ্ধি সহসা সংকটের তীব্র চোরাবালিতে নিমজ্জিত হল। এর ধাক্কায় দেশে দেশে বিরাট বিরাট গণ-আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকল। হতাশ, বিচ্ছিন্ন, ভেঙে পড়া কমিউনিস্ট শক্তি নতুন উদ্যমে এই গণ-আন্দোলনগুলিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমাদের দেশেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, কলিঙ্গ, মহা-মুম্বাই প্রভৃতি লড়াইগুলি ছিল এই বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠা গণ আন্দোলনের অংশ।

কিন্তু আমাদের দেশে দু ধরণের “কমিউনিস্ট পার্টি” এই আন্দোলন দ্বারা সম্পৃক্ত হতে ব্যর্থ হয়। উভয়েরই নাম সিপিআই (এম)। “মার্কসবাদী পার্টি” এই সময়ে আমাদের রাজ্যে ক্ষমতায়। শুধু তাই নয়, ১৯৯৪ সালে শিল্পনীতি, কৃষিনীতি এবং আর্থিক নীতিতে তারা যে পরিবর্তনের সূচনা করেছিল তার ধারাবাহিকতায় তারা তখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। নয়া উদারবাদের কাছে তখন তাদের আত্মসমর্পণ চূড়ান্ত হয়েছে। বিশ্ব জুড়ে যে নীতিগুলো মুখ থুবড়ে পড়ছে রাজ্যে সেই নীতিগুলিই কেন্দ্রীয় সরকারের মদতে তারা জোরজার করে লাগু করার চেষ্টা করতে লাগল। ফলত, তারা গণ-আন্দোলনগুলির দ্বারা সম্পৃক্ত হবার বদলে তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল। ফলাফল হল ২০১১-র বিপর্যয়।

অন্যদিকে, নকশালপন্থীদের মধ্যে যাঁরা “শুরু থেকেই যুদ্ধ” লাইনের প্রবক্তা ছিলেন তাঁরা ২০০৪ সালে গঠন করেছিলেন আর এক সিপিআই(এম), অর্থাৎ সিপিআই (মাওবাদী)। ভারতবর্ষের বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামোতে একদিকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ এবং অন্যদিকে আবার গণ-আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া যে সম্ভব নয় তা উত্তরোত্তর প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছিল। অন্ধ্রপ্রদেশে এক সময়ে জনযুদ্ধ গোষ্ঠী ভালো রকম গণ-আন্দোলন, গণসংগ্রাম চালিয়েছে, কিন্তু সে সময়ে মিলিটারি লাইন প্রাধান্য বিস্তার করেনি এবং সামন্ত ভূস্বামীদের প্রাইভেট আর্মির বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের একটা যৌক্তিকতাও ছিল। কিন্তু বিশ্বায়ন পরবর্তী নয়া পরিস্থিতিতে মিলিটারি লাইনের কার্যকারিতা কমে যায়। কিন্তু নবগঠিত “মাওবাদী” পার্টি মিলিটারি লাইনকেই প্রধান করে তোলার ফলে বহুজাতিক বিরোধী তথা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী গণ-আন্দোলনগুলিতে তাদের কোনও কার্যকরী ভূমিকা থাকেনি। জঙ্গল-যুদ্ধে কিছু চমকপ্রদ অ্যাকশন ছাড়া মোটের উপর তারা ক্রমশ কিছু পকেটে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। আগে যেরকম বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাদের সক্রিয়তা ছিল তা বর্তমানে সংকুচিত হচ্ছে।

এর মানে কিন্তু এই নয় যে, এই দুই উভয় চরমের মাঝখানে যাঁরা রইলেন তাঁরা এই পর্বে যথেষ্ট সফল হয়েছেন। তাঁদেরও নিজস্ব সংকট রয়েছে। সেখানে প্রধানত দুটি সমস্যা রয়েছে। প্রথমটি হল বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত এই অংশের ঐক্যবদ্ধ হতে না পারা। একদিকে “মাওবাদী”-রা ঐক্যবদ্ধ পার্টি গঠন করেছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরে শত বিতর্ক সত্ত্বেও “মার্কসবাদী”-রা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পেরেছে। কিন্তু এই মাঝের অংশটি নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারে নি। এটি প্রথম সমস্যা।

দ্বিতীয় সমস্যাটি আরও সুগভীর এবং প্রথম সমস্যাটির পিছনে বেশ কিছুটা ইন্ধন জুগিয়ে থাকে। সেটি হল, গণ-আন্দোলনে তো ঝাঁপিয়ে পড়া গেল। কিন্তু গণ-আন্দোলনের সঙ্গে বিপ্লবী সংগ্রাম, বিপ্লব এবং ক্ষমতা দখলের যোগসূত্র কী? গণ-সংগ্রাম থেকে বিপ্লবী সংগ্রামে উত্তরণ ঘটবে কী করে? এ ব্যাপারে এই অংশের কোনও পরিষ্কার ধারণা নেই। যেটা আছে তা হল একপ্রকার আশাবাদ, একদিন অলৌকিক কিছু ঠিক ঘটে যাবে এরকম বিশ্বাস, অর্থাৎ ব্যাপারটাকে স্বতঃস্ফূর্ততার উপর ছেড়ে রাখা হয়েছে। এর ফল হয়েছে এই যে, গণ-আন্দোলন, গণ-আন্দোলন এবং গণ-আন্দোলন, এর মধ্যেই সামগ্রিক রাজনীতি হাবুডুবু খাচ্ছে। রাজনীতি অবৈপ্লবিক প্রাত্যহিকতায় সমাচ্ছন্ন হয়েছে। ফলত, এক ধরণের লাসালবাদ বিপ্লবী শক্তিগুলির মধ্যে ভালরকম জাঁকিয়ে বসেছে, যা সংশোধনবাদেরই একটা রূপ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই প্রাত্যহিকতার আধিপত্যের দরুন কমিউনিস্ট বিপ্লবী শক্তিগুলির মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হবার তাগিদও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না, তার প্রয়োজনও পড়ছে না।

এইসবই বর্তমান সময়ের কমিউনিস্ট বিপ্লবী রাজনীতির সংকট। এদিকে বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। দক্ষিণপন্থী বাড়বাড়ন্ত চলছে। বাস্তব রাজনীতিতে যে তীব্র শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে তা যদি বাম দিক থেকে ভরাট না করা হয়, তবে তা ডানদিক থেকে ভরাট করা হবে। এর অনিবার্য ফলাফল হল দেশে ফ্যাসিবাদী প্রবণতার বৃদ্ধি, ফ্যাসিবাদী শক্তির বিকাশ ঘটা।

আজ থেকে ৫৪ বছর আগে নকশালবাড়ি একটা স্ফুলিঙ্গ তৈরি করেছিল, যা অত্যন্ত দ্রুত দাবানল হয়ে ওঠে। সারা দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নকশালবাড়ির অনুপ্রেরণায় কৃষক সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সাবজেকটিভ শক্তির (পার্টির) ব্যর্থতা শেষ পর্যন্ত এই মহতী লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেয়নি। যদিও তার পার্শ্বফল হিসাবে কৃষি অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটেনি। ফলে যে কারণগুলি, বা সংকটগুলি, বা দ্বন্দ্বগুলির জন্য নকশালবাড়ির লড়াই ঘটেছিল তার রূপ বদল হলেও কোনও মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি। তাই বারবার নকশালবাড়ি ঘটার বস্তুগত কারণ বিদ্যমান।

ভারতের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে আজও কৃষকদের একটা বড় অংশ ভূমিহীন। যাঁদের জমি রয়েছে তাঁরা নানা কারণে জমি ধরে রাখতে পারছেন না। কৃষিকাজকে পরিকল্পনামাফিক অলাভজনক করে তোলা হচ্ছে, যাতে কৃষক জমি ধরে রাখার উৎসাহ না পান। বহুজাতিক কোম্পানিগুলি বড় আকারে কৃষিক্ষেত্রে প্রবেশ করছে সরকারি মধ্যস্থতায়। আগে তারা কীটনাশক, সার, বীজ এইসব, অর্থাৎ এগ্রিকালচারাল ইনপুটের ব্যবসা দখল করেছিল। ভারতের কৃষিব্যবস্থার চরিত্র বদলে দিয়ে উত্তরোত্তর রাসায়নিক সার, তথাকথিত উচ্চ ফলনশীল বীজ এবং কীটনাশকের উপর কৃষিকে নির্ভর করিয়ে দিয়েছিল। এখন তারা উৎপাদিত ফসলের উপরও, অর্থাৎ এগ্রিকালচারাল আউটপুটের উপর, দখলদারি বাড়াতে চাইছে। চুক্তি চাষ প্রবর্তন করতে চাইছে। সম্প্রতি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এই লক্ষ্যেই তিনটি কালা কৃষি আইন পাশ করেছে। লক্ষণীয় বিষয় হল, এর বিরুদ্ধে কিন্তু আজ এক অভূতপূর্ব কৃষক আন্দোলন চলছে। নকশালবাড়ি যে অতীত হয়ে যায়নি তার এর থেকে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে?

নকশালবাড়িতে কৃষককে লড়তে হচ্ছিল সামন্ত ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে এবং তার সহযোগী রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে। আর আজ কৃষককে লড়তে হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিকদের বিরুদ্ধে, এবং তার সহযোগী রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে। লড়াইয়ের রূপ বদল হয়েছে, কিন্তু ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ আছে। আজ খোদ নকশালবাড়িতেও কৃষক সংগ্রাম মরে যায়নি, তার রূপের বদল ঘটেছে মাত্র। কেউ যদি এটা আশা করে থাকেন আজকের “নকশালবাড়ি” ৫৪ বছর আগের মতই হুবহু সেই একই চেহারায় দেখা যাবে, তা হবে না। একই চেহারায় দেখা না গেলে তা আর নেই, এই ধারণাও ভুল। দ্বন্দ্ববাদী দর্শন আমাদের এটাই শেখায় যে, সব কিছুই ফেরত আসে কিন্তু অন্য রূপে, অন্য ডিগ্রিতে, অন্য চেহারায়। কিন্তু মর্মবস্তুতে তার ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়। আজকের কৃষক আন্দোলন নকশালবাড়িরই ধারাবাহিকতা।

আর রাজনৈতিক কুশীলবদের ক্ষেত্রেও ওই একই কথা প্রযোজ্য। নকশালপন্থী রাজনীতিও আর একই চেহারায় ফিরবে না। যাঁরা অতীতকে নকল করার চেষ্টা করছেন, তাঁরা বৃথা গর্ভপাত ঘটাবেন। সমগ্র কমিউনিস্ট আন্দোলন, তথা নকশালবাদী রাজনীতির পুনর্জাগরণ ঘটবে অন্য চেহারায়, অন্য রূপে। তার তাত্ত্বিক এবং দার্শনিক প্রস্তুতি যাঁরা নিতে পারবেন, তাঁরাই এ কাজে সফল হবেন। কেউ কেউ এই কাজে ব্যর্থ হতেই পারেন। কিন্তু কেউ কেউ যে সফল হবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

নকশালবাড়ি আন্দোলন ও ভারতে বামপন্থার অতীত ও ভবিষ্যত – ছবি উইকিপেডিয়া থেকে।

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

1 মন্তব্য

  1. শঙ্করদা, নকশালপন্থী রাজনীতির সীমাবদ্ধতা নিয়ে পারস্পেক্টিভটা ভাল লাগল। ভবিষ্যতে আরও বড় লেখার, প্রতিটি পয়েন্ট ধরে ধরে, উদাহরণ সহযোগে, দাবি রাখলাম। একটা তথ্যগত ত্রুটি ধরিয়ে দিই। আই পি এফ এর ৫ জন সাংসদ কোনদিন ছিল না। ১৯৮৯ সালে ১ জনই সাংসদ হয়েছিলেন। ১৯৯০ এর বিহার বিধানসভায় ৭ জন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.