মানসিক প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন রত্নাবলী রায়। সে কাজের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলল নাগরিক ডট নেট।
এই মুহূর্তে ভারতে মানসিক প্রতিবন্ধীদের অধিকারের জন্য লড়াইটা ঠিক কতটা কঠিন?
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
আমার ধারণা কোনো একটি নির্দিষ্ট সামাজিক অংশের অধিকারের লড়াই আলাদা করে কঠিন বা সহজ হয় না। সামগ্রিক অধিকার আন্দোলন, তাতে অংশবিশেষ বা বিভিন্ন অংশের মানুষের যোগদান, আন্দোলনের দাবিদাওয়াগুলোর স্বীকৃতি ও অর্জন অনেকটাই এক তারে বাঁধা। ক্ষমতাকেন্দ্রের থেকে অনেক দূরে থাকা একজন মানুষের অধিকার সম্পর্কে ক্ষমতাকেন্দ্র কতটা দরদ দেখায়, কতটা যত্ন নেয়, সেটা সেই ক্ষমতা কাঠামোর গণতান্ত্রিক বোধের পরিচায়ক। কোনো নির্দিষ্ট সময় ও স্থানের ক্ষমতাকেন্দ্র যদি মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে সংবেদনশীল না হয়, সেটা আলাদা করে শ্রমিক, কৃষক, নারী, অন্যতর লিঙ্গ-যৌন পরিচয়, ছিন্নমূল উদ্বাস্তু, দুর্নীতির শিকার সামাজিক অংশ, নাগরিক পরিচয়, রাজনৈতিক বন্দী, শিশু বা বয়স্ক নাগরিকদের অধিকার সম্পর্কে সহানুভূতিশীল হবে, এরকমটা আমার মনে হয় না। তাই বাকি সামাজিক অংশের দাবিগুলোর ন্যায্যতা এবং সেই দাবি আদায়ের লড়াই যতটা কঠিন, মানসিক স্বাস্থ্যের ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের অধিকার আন্দোলনও ততটাই কঠিন।
রাজনৈতিক দলগুলো কি আদৌ মানসিক প্রতিবন্ধীদের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন?
মানসিক প্রতিবন্ধীদের অধিকার আন্দোলনে অনেক সময়েই একটা এজেন্সির প্রয়োজন হয়। কারণ রাষ্ট্র নিজে সেই এজেন্সিটা নিচ্ছে না। কিন্তু সেটাই মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকার আন্দোলনের পুরোটা নয়। মানসিক প্রতিবন্ধীর অধিকার এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকার – এই দুটো ব্যাপারই সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এবং আন্তঃসম্পর্ক থাকলেও এই দুটো ব্যাপার পুরোপুরি এক নয়। মানসিক প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে সহমর্মিতা না দেখানো বোকামো – এই বোধে সরকার গঠনে উদ্যোগী যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলো মৌখিক সহমর্মিতা যতটা দেখান, সমস্যা সমাধানে ততটা উদ্যোগী হন না। মানসিক প্রতিবন্ধীদের ভোট সাংঘাতিক নির্ণায়ক কিছু নয়। তাঁদের দাবিদাওয়ার এজেন্সিটা যাঁরা নেন, তাঁদের সন্তুষ্ট করা বা তাঁদের ভোট টানার জন্য অন্য নানা উপায় আছে। তাই সবমিলিয়ে খানিক “আহা রে” গোছের সংবেদনশীলতা দেখানো গেলেই দলগুলোর চলে যায়। সেটাকে কখনো কখনো সচেতনতার মতন দেখতে লাগে বটে, কিন্তু সেই দেখাটা সবসময়ে ঠিক নাও হতে পারে।
মূলধারার সংবাদমাধ্যম কি আগের চেয়ে মানসিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি খানিকটা সংবেদনশীল হয়েছে?
পাঠক-দর্শক-শ্রোতাদের কাছে নিজেকে সংবেদনশীল প্রমাণ করার দায়টা বেড়েছে। তাই কালার্ড সফট ফিচারের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু সংবেদনশীলতা মানে যদি মানসিক প্রতিবন্ধীদের ও মানসিক স্বাস্থ্যের দাবিদাওয়াকে ক্ষমতাকেন্দ্রের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং যতক্ষণ না দাবিগুলোর সুরাহা হচ্ছে প্রশ্ন করে যাওয়া হয়, তাহলে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাপারটা অনেকটাই সীমিত। ওই আহা উহু করা, মানসিক প্রতিবন্ধীদের করুণার পাত্র হিসাবে দেখাতেই বেশিরভাগটা আটকে আছে।
বছরের পর বছর আপনারা একটানা, ক্লান্তিহীন লড়াই লড়ছেন। কিন্তু মানসিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কি আদৌ সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে?
আমার ধারণা, এটাই একমাত্র আলোর আভাস। সামাজিক সচেতনতার উপরে দাঁড়িয়েই এই এতদিনের লড়াইটা সম্ভব হয়েছে। আরও বেশি বেশি করে মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত পরিসরেও মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে যে উদ্যোগগুলো নিচ্ছেন, সেটা আমাদের বড় পাওনা। আর এটাই এতদিনের লড়াইয়ের সবথেকে বড় চালিকা শক্তি। এটাই আমাদের ক্লান্ত হতে দেয় না। সমস্যার দায় সাধারণ মানুষের চেতনাহীনতার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মধ্যে এক ধরনের চালিয়াতি আছে। ভোটবাক্সের রাজনীতিতে সেটা একটা সুবিধে দেয় বলে অনেকের ধারণা। ক্ষমতাকেন্দ্র এবং তার অংশীদার দলগুলো (বিরোধী দলগুলোও, যারা কখনো না কখনো অংশীদার হওয়ার প্রত্যাশী) সাধারণ মানুষের সংঘবদ্ধ মতপ্রকাশের অসুবিধার সুযোগ নিয়ে এই চালিয়াতিটা করতে চান এবং প্রায়শই ধরা পড়ে যান।
আরো পড়ুন প্রতিবন্ধী মানুষের উপর আঘাত নামছে কলকাতার বুকে
আগামী দিনগুলো কেমন হবে বলে মনে হচ্ছে? লড়াইটা কি আরও কঠিন হবে, নাকি আশা করার মত কিছু দেখছেন?
ফ্যাসিবাদ ও তার আগ্রাসন নিয়ে যে কথাগুলো আমরা মুখে বলি সেগুলো যদি বিশ্বাস করি, তাহলে অবশ্যই আগামী লড়াইটা খুব কঠিন। কিন্তু তার সঙ্গে এটাও ঠিক, ক্ষমতাকেন্দ্র যদি আমার প্রতিপক্ষ হয়, তাহলে লড়াইটা কখনোই সহজ হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোর উপর যে সার্বিক আক্রমণ চলছে, সেটা অধিকার আন্দোলনগুলোর জন্য কাছাকাছি আসার, কাঁধে কাঁধ মেলানোর একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। শাসকের সংকটে গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর হামলা বাড়ার কথা, বাড়বেও। উল্টোদিকে আমরা যারা আলাদা আলাদা সামাজিক অংশের অধিকার আন্দোলন নিয়ে কথা বলছি, তারা কতটা কাছাকাছি আসতে পারব তার উপর নির্ভর করবে আলো কতটা বাড়বে।
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।