“পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল।/কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল।।” – মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ঘুমভাঙানি পাখির কলরবের জায়গা নিয়েছে সেলফোনের অ্যালার্ম। এই কবিতা এবং তার চিত্রকল্প আমাদের ছোটবেলার মধুর স্মৃতি। শৈশব থেকে যৌবন হয়ে বার্ধক্য – জীবনচক্রের সব পর্বেই পাখির আনাগোনা। শহুরে আধুনিক জীবনে আকাশছোঁয়া বাড়ির জানলা দিয়ে পাখপাখালির কলতান আর শোনা যায় না। কংক্রিটের জঙ্গলে কোথাও তাদের জায়গা হয় না
স্টেট অব ইন্ডিয়াজ বার্ডস রিপোর্ট, ২০২০ অনুসারে গত ২৫ বছরে ২৬৫টি প্রজাতির পাখির মধ্যে ৫২ শতাংশের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান এবং শেষ পাঁচ বছরের রিপোর্ট অনুসারে ১৪৬টি প্রজাতির মধ্যে ৮০ শতাংশের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১০১টি প্রজাতিকে জরুরি ভিত্তিতে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
রং বেরংয়ের নাম জানা বা না জানা যে সব পাখি আমরা দেখতে পেতাম, যাদের ডাক শুনতে পেতাম, তাদের অনেকেই এখন শুধু স্মৃতি। জীববৈচিত্র্যের এই সংকট মোকাবিলায় পাখিদের ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের থাকার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে ইদানীং বহু সংগঠন উদ্যোগ নিচ্ছে।
তেমনই এক উদ্যোগে যুক্ত হয়ে সিঙ্গুরের হোটেল নবান্ন ৪০০ পাখির বাসা বিতরণ করল ২৫ সেপ্টেম্বর। ‘পাখি বাঁচাও’ অভিযানের সমর্থনে সিঙ্গুরের এই রেস্তোঁরাটি কলকাতার পিস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের সাথে যুক্ত হয়েছে।
কৃত্রিম পাখির বাসা বসানোর মধ্যে দিয়ে পাখিদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে। বাড়ির বারান্দা থেকে ছাদ, এমনকি গাছেও বসানো যায় এই হাতে বানানো বাসা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হয়ে যাওয়া বাসার জায়গায় এই নতুন বাসা বসিয়ে পাখিদের রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। ২০২০ সালের সাইক্লোনের পর হাওড়া জেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল। মাটি, পাইন কাঠ থেকে সাধারণ খড়কুটো – যে কোনো জিনিস দিয়েই এই বাসাগুলো বানানো যায়।
পিস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের সচিব দেবজ্যোতি সিনহা বলেন “আমরা সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মিলে এই কাজটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব বলে আশা রাখি। আমরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাখির বাসা বসিয়েছি, স্কুল কলেজেও এই বাসাগুলো বিলি করেছি। কলকাতা এবং শহরতলির পার্কগুলোতেও এরকম বাসা বসানোর পরিকল্পনা আছে”।
ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে যে ভাবে বন এবং জলাশয় নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে তার ফলে পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র এবং জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশে একই সঙ্গে বাড়ছে টক্সিনের পরিমাণ। সেইসঙ্গে বেড়েছে পাখি শিকার এবং শৌখিন পাখিদের বন্দি করার প্রবণতা। কাজেই পাখিদের বাসস্থান হারানোর ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। বাঁচতে হলে পাখিদের বাঁচিয়ে রাখা যে জরুরি, সে কথা মানুষকে বোঝাতে প্রয়োজন পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সচেতনতা আর শিক্ষামূলক প্রচার।
আরো পড়ুন পরিবেশবান্ধব নগরায়নের সন্ধানে
পিস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টকে এই কাজে সাহায্য করছেন বাংলা ও বাংলার বাইরের আদিবাসী সম্প্রদায়ের বেশকিছু কারিগর। কৃত্রিম বাসা তৈরি করা ছাড়াও তাঁরা এই বাসাগুলো বসাতে সাহায্য করেন। এই কাজের মাধ্যমে তাঁদের কর্মসংস্থানও হয়।
ট্রাস্ট স্কুল, কলেজে কর্মশালার আয়োজন করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এই ধরনের বাসা তৈরি করা শেখানোর কাজও করে।
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।