একজন মানুষ ছমাস কোনো এক জায়গায় বসবাস করলে সেখানকার ঠিকানায় আধার তৈরি করাতে পারেন। আধার তৈরি করার উদ্দেশ্য আগে কী ছিল? যেসব মানুষের কোনো পরিচয়পত্র নেই, তাঁদের একটি সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া। এখন আধার তৈরি করার উদ্দেশ্য কী? যে কোনো সরকারি সুযোগসুবিধা পাওয়ার জন্য প্রমাণপত্র হিসাবে ব্যবহার করা। নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আধার কার্ডের বিরোধিতা করেছিলেন।
On Aadhaar, neither the Team that I met nor PM could answer my Qs on security threat it can pose. There is no vision, only political gimmick
— Narendra Modi (@narendramodi) April 8, 2014
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
কিন্তু তিনিই ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে সমস্ত সরকারি সুবিধা পেতে আধার লাগবে – এই ব্যবস্থাকে প্রায় বাধ্যতামূলক করে দিলেন।
একজন ব্যক্তির আধার তৈরি করাতে কী লাগে? অন্তত দুটো পরিচয়পত্র দেখিয়ে হাতের ছাপ, চোখের মণির স্ক্যান, মুখের ছবি তুলে একজন একটি নম্বর পান। আধার কোনো কার্ড নয়, একটি নম্বর। একজন মানুষ যখন ভোটার কার্ড বা প্যান কার্ড দেখিয়ে আধার পাচ্ছেন, তাহলে ওই কার্ডগুলোর সঙ্গে আবার আধারকে যুক্ত করার অর্থ কী? আসলে সরকার জানতে চাইছে, কে বা কারা সরকারি সুযোগসুবিধা নিচ্ছেন। সেই অনুযায়ী তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার যুক্ত করা গেলে, সঙ্গে মোবাইল নম্বরও থাকলে একটা ত্রিভুজ তৈরি হয়। ইংরেজিতে যাকে বলে JAM (জনধন-আধার-মোবাইল)। এই ত্রিভুজে যদি সমস্ত মানুষকে এনে ফেলাই উদ্দেশ্য।
এখন ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগের কথা উঠছে কেন?
যে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল যখন নির্বাচনের গণনা কক্ষে তাদের প্রতিনিধি পাঠায়, তাঁরা ১৭সি ফর্ম পেয়ে থাকেন। সেই ফর্ম দেখে বোঝা যায় কোন কোন অঞ্চলের নির্বাচকেরা কোন কোন দলকে ভোট দিয়েছেন। এখন যদি আধার আর ভোটার কার্ড লিঙ্ক করা থাকে, তাহলে বোঝা সম্ভব হবে কে বা কারা সরকারি সুবিধা পেয়েও বিরোধী দলকে ভোট দিয়েছেন। এরপর কোনো বিরোধী দলের পক্ষেই কি ভোটে জেতা সম্ভব হবে?
দ্বিতীয়ত, আধারে বায়োমেট্রিক তথ্য জমা আছে। যদি বলা হয় ভোটের সময়ে সেই বায়োমেট্রিক মিলিয়ে দেখা হবে, তাহলে অনেক মানুষের তথ্য এমনিতেই না মিলতে পারে। সেই জন্যেই কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতি দশ বছর অন্তর একজন মানুষের বায়োমেট্রিক আপডেট করা হবে। এতে শাসকের বেশ কতকগুলো সুবিধা হবে:
১। প্রত্যেকবার আপডেট করার জন্য যে টাকা লাগবে তা আপনাকেই দিতে হবে।
২। আগামী দিনে যখন শুধুমাত্র আধার দেখিয়েই ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হবে, তখন বলা হবে প্রযুক্তির কারণে মিলছে না। সুতরাং সেদিন সেই মানুষটি আর ভোট দিতে পারবেন না।
৩। যেহেতু অনেক মানুষই সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করেন মোবাইল থেকে, তাই কে কী পোস্ট করেন অর্থাৎ কে কোন রাজনৈতিক মতের লোক, কোন দলের সমর্থক তা-ও জেনে যাবে শাসক দল। তারপর ভোটের দিন যদি বলা হয় যে কোনো কারণেই হোক আপনার আধার ব্লক করা আছে, ফলে আপনি ভোট দিতে পারবেন না, আপনার কিছু বলার থাকবে না।
৪। আধার-ভোটার লিঙ্ক করা হল এনপিআরের প্রথম ধাপ। আজ যদি এনপিআর তৈরি করে রাখা যায়, ভবিষ্যতে তা দিয়ে যে এনআরসি করা হবে না, তা কি নিশ্চিত করে বলা যায়?
৫। আধার হল একটি প্রমাণপত্র। একজন মানুষ যে তিনিই তা প্রমাণ করার জন্য আধারের প্রয়োজন। যদি একজন মানুষের বায়োমেট্রিক না মেলে, তখন সেই মানুষটির অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে।
মমতা ব্যানার্জিও আধারের সুবিধা বুঝতে পেরে গেছেন। একসময় তিনি এর প্রবল বিরোধী ছিলেন। নিচের টুইটগুলি তার জলজ্যান্ত প্রমাণ।
In the name of Aadhaar, privacy is being lost and there is extortion. Why is this Govt so negative? As a nation, we must condemn this 3/3
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) March 4, 2017
#Aadhaar has serious issues about privacy. Govt must not make it mandatory before 100% coverage is achieved 2/2
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) June 16, 2017
কিন্তু এখন আগেকার বিরোধিতা ছেড়ে এখন তাঁর সরকারের সব প্রকল্পের সঙ্গেই আধার লিঙ্ক করা হচ্ছে। আসলে সব শাসকেরই এই ব্যবস্থা পছন্দের, তাই কোনো শাসকই এর বিরোধিতা করে না। নাগরিকদের নিজেদেরই এর বিরোধিতা করতে হবে। না পারলে প্রত্যেক নাগরিকই রক্তকরবী নাটকের যক্ষপুরীর শ্রমিকদের মত ৪৭ফ বা ৬৯ঙ হয়ে যাবেন, তাঁর বাঁচা মরা নির্ভর করবে রাষ্ট্রের ইচ্ছার উপর।
আসলে ভারতীয় রাষ্ট্র নজরদার রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। সে নাগরিকদের প্রতিটি পদক্ষেপের উপর কড়া নজর রাখতে চায়। সে চায় না কোনো নাগরিক কোনোভাবেই রাষ্ট্রের বিরোধিতা করুক। তাই নাগরিকদের হাত-পা বেঁধে দিতে চায়। আধার-ভোটার লিঙ্ক সেই পথেই আরও এক পা এগোনো। আজ এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা না করলে তাহলে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের দাসে পরিণত হওয়া আটকানো যাবে না।
আরো পড়ুন সার্বভৌমত্ব রক্ষার মানে কি সামাজিক মাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করা?
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একথা বোঝানো এখন জরুরি। এই কাজে ইতিমধ্যেই দেরি হয়ে গেছে। তবু এখনো এ কাজ করতে পারলে ভাল। নইলে আগামী দিনে প্রতিটি রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে বহু মানুষকে বাদ দেওয়া হবে। যেভাবে তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে হয়েছে, ঠিক সেভাবেই। যাঁরা সত্যিই নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিকভাবে বিরোধিতা করতে চাইছেন তাঁরা কি এই বিপদটা আদৌ বুঝতে পারছেন?
মতামত ব্যক্তিগত
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।