শান্তনু ব্যানার্জি

রবীন্দ্রগান যেমন সর্বজনীন তেমনই গান শোনার স্মৃতি, অনুভূতি একান্ত ব্যক্তিগত। শ্রোতার, গায়কের কল্পনায়, মননে রবীন্দ্রনাথের কথা, সুর তাঁর একান্ত নিজস্ব রূপে ধরা দেয়। রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ধরা থাকে বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসের খণ্ডাংশ। অনিশ্চয় চক্রবর্তী রবীন্দ্রনাথের গানের জ‍্যামিতি নামে ১১২ পাতার ক্ষুদ্র পুস্তিকায় তাঁর ব্যক্তিগত রবীন্দ্রগানের ভুবনটি চিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যেভাবে অনিশ্চয়বাবু তাঁকে ছুঁয়ে যাওয়া রবীন্দ্রগানের অনুভূতিগুলি বিবৃত করতে থাকেন, ক্রমশ তাঁর অচেতনেই ছোট্ট বইটি হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক ইতিহাসের পাশাপাশি আবেগ ও সংবেদনশীলতার (Emotion and Sensibility) ইতিহাসের একটি পাঠ।

ছয়, সাতের দশকে লেখাপড়া জানা মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বহু বাঙালি গৃহস্থ বাড়িতেই পাঠ‍্যপুস্তকের বাইরে রবীন্দ্রনাথের বই-টই বিশেষ থাকত না। মূল কারণ অবশ্যই অর্থাভাব। তা বলে এই পরিবারগুলি রবীন্দ্র সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের বাইরে ছিল ভাবলে ভুল হবে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গান নিয়ে সেখানে থাকতেন। রবীন্দ্রনাথ আসতেন ট্রানজিস্টরে; প্রতিদিন সকাল সাতটা চল্লিশে তিনটি গান নিয়ে কুড়ি মিনিটের জন্য। শনিবার রাত সাড়ে নটায়, রবিবার দুপুর একটা বা দেড়টায় আধঘন্টা রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনত রেকর্ড প্লেয়ার বঞ্চিত অধিকাংশ বাঙালি। আর ছিল রবিবার সকালের সঙ্গীতশিক্ষার আসর, যাকে এক যুগে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক। আমার স্মৃতিতে আছে অশোকতরু, কণিকার ক্লাস শোনার অভিজ্ঞতা। কণিকা শেখাচ্ছিলেন, “আজি গোধূলিলগনে এই বাদলগগনে”। শান্ত গলায় বোঝাচ্ছিলেন, “সে আসিবে আমার মন বলে” চরণটি তিনবার গাওয়া হয়েছে। “সে” শব্দটির শুধু স্বর বদলে যাচ্ছে না, অর্থও পাল্টে যাচ্ছে প্রতিবার।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

প্রথমবার নিষাদে, সংহত উত্তেজনা। দ্বিতীয়বার তারসপ্তকে প্রতীক্ষার তীব্র উত্তেজনা। তৃতীয় উচ্চারণ মধ্যসপ্তকে, “সে” আসবেই এই দৃঢ় প্রত‍্যয়। অশোকতরু শিখিয়েছিলেন “আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে”। তাঁর ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর মনে পড়ে, “সদা নাচত হৃদয় অশান্ত”; “কথাটা কিন্তু ‘নাচত’, তাই এখানে ছোট্ট কাজটা ভুলো না, সেটা গলায় এনো।” আর ছিল ছোট ছোট স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আসানসোলে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও বিমা সংস্থার অনুষ্ঠানে লেখক নিজেই কিংবদন্তি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের গান শুনেছেন। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা আমন্ত্রণ জানালেই পৌঁছে যেতেন সুচিত্রা, কণিকা, দেবব্রত, সুবিনয়, ঋতু, প্রমুখ। সিডি, ক‍্যাসেটের প্লাবন নেই। ইউটিউব পৃথিবীতেই আসেনি। ঘরে ঘরে গীতবিতানও নেই। মধ্যবিত্ত বাঙালির কাছে রবীন্দ্রনাথ পৌঁছে যেতেন এই পথে। অনিশ্চয়বাবুর হাতে গীতবিতান আসে তাঁর কুড়ি বছর বয়সে। বর্তমান নিবন্ধকারকে একত্রিশ বছর বয়সে তাঁর স্ত্রী গীতবিতান কিনে দেন। অথচ গীতবিতানহীন এই বাঙালিরা নিজের মত করে তাদের রবীন্দ্রগানের ভুবন গড়ে নিয়েছিল। অনিশ্চয়বাবুর বাবা তীব্র আবেগে ঘরে বসে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। বাবার ওই আবেগটুকুই তাঁর স্মৃতিতে ধরা ছিল। পরবর্তীতে গীতবিতান হাতে আসায়, বিখ্যাত শিল্পীদের গান শুনে তাঁর যে পরিণতি এসেছে, প্রেক্ষাপটে ওই আবেগের স্মৃতি নিঃসন্দেহে অবচেতনে গভীরভাবে কাজ করে গেছে এবং হয়ত এখনো যাচ্ছে। আমার মামাবাড়ি ছিল এইরকম গীতবিতানবিহীন রবীন্দ্রসঙ্গীতপ্রেমী বাড়ি। মা, বড়মামা পরিচিত কারো বাড়ির গীতবিতান থেকে খাতায় গান টুকে আনতেন। দীর্ঘদিন সেই গানের খাতা বাড়িতে ছিল। মামাবাড়ির উঠোনে রবীন্দ্রজয়ন্তী হত। পাড়ার একটি ছোট্ট মেয়ে নাচতে শুরু করল “ধিতাং ধিতাং বোলে”! সকলে হাঁ হাঁ করে উঠেছে। এক বর্ষিয়সী বললেন “থাক থাক ছোট মেয়ে, করছে করুক; এ তো খারাপ গান না।” এখন এমন ভুল কেউ ভুলেও করবে না। তখন এমন ঠিক ভুল নিয়েই নিম্নবিত্ত বাঙালি, উদ্বাস্তু বাঙালির মাঝখানে রবীন্দ্রনাথ বসবাস করতেন।

বাঙালির আর এক রবীন্দ্রনাথ ছিলেন চলচ্চিত্রে। কাবুলিওয়ালা, খোকাবাবুর প্রত‍্যাবর্তন ছাড়া আর কোন রবীন্দ্রনাথ আধারিত চলচ্চিত্র সর্বজনীন হয়েছিল, সেটা বলা শক্ত। চারুলতা, তিনকন্যা এলিট দর্শকের মননের ছবি হয়েই ছিল বহুদিন; ওইসব মননশীল সিনেমার দর্শক হওয়ার যোগ্য হয়ে উঠতে বাঙালির সময় লেগেছিল। সত‍্যজিৎ, ঋত্বিকের ছবিতে রবীন্দ্রনাথের গানের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়নি বলাই বাহুল্য। চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রনাথকে বাঙালি পেয়েছিল আদিযুগে পঙ্কজ মল্লিক, কানন দেবীর গানের মধ্যে। পাঁচের দশক থেকে চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রগানের সম্রাট হয়ে বসলেন হেমন্ত মুখোপাধ‍্যায়। সুমিত্রা সেনের ম্যানারিজমবিহীন, আধুনিক গানের টেক্সচারের গলাকে মাঝে মাঝে ব্যবহার করা হত। পঙ্কজ মল্লিক, হেমন্ত দারুণ ঝুঁকি নিয়ে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাণিজ্যিক ছবিতে গাইয়ে যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলটির পরিসীমা এর বেশি বিস্তৃত ছিল বলে মনে করি না। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত লেখাপড়া করা পরিবারগুলিই ছিল রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ভাবনার নিম্নতম অর্থনৈতিক বর্গ। বিচ্ছিন্ন দু-একটি উদাহরণ ছাড়া রবীন্দ্রসঙ্গীত নিম্নবর্গের (subaltern) গান কোনোদিনই ছিল না। অনিশ্চয়বাবুর আলোচনার কিছুটা বাইরে চলে গেলেও কথাগুলো হয়ত বলা দরকার, কারণ আলোচ‍্য বইয়ের লেখক অর্থনৈতিকভাবে এই শ্রেণিতেই প্রথম জীবন কাটিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ভালবাসার উৎস সন্ধান করেছেন।

এই শ্রেণির বাঙালির রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার আর একটি মজার ধরন ছিল। ঘটি-বাঙাল, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের মত রবীন্দ্রনাথও সুচিত্রা-কণিকা, দেবব্রত-হেমন্তে বিভাজিত ছিলেন। বইটির তৃতীয় প্রবন্ধে (‘রমাদির গান’) অনিশ্চয়বাবু লিখছেন,

“ এমন তো হতেই পারে …, বিশেষ একজন বা দুজনের স্বরের, উচ্চারণের, নিবেদনের নির্ভরতা ছাড়া রবীন্দ্রনাথের গানের ভাষার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না সে [শ্রোতা]। কলেজের জিজ্ঞাসু, সংশয়ী, পিপাসু দিনগুলোতে দেবব্রত, কণিকা, রমাদি [মন্ডল] আর সুবিনয় রায়ের গান, আমার কাছে, সেই বিশেষের স্বর আর উচ্চারণ। যার অভিঘাত থেকে আমি আজও মুক্তি পাই নি। এই বন্ধনই আমার শিরোধার্য, আমার নিয়তি, আমার জীবন। বিশেষজ্ঞ, প্রাজ্ঞ, বোদ্ধা ও নিন্দুকেরা এই নির্ভরতাকে কটাক্ষ করলেও আমি নিরুপায়, আমি অক্ষম।”

আবার শেষ প্রবন্ধে (‘যে গানে বাঁচি’) বলছেন পীযূষকান্তি সরকার, শর্মিলা রায় পোমোর গানের নাটকীয়তা তাঁকে চমকে দেয়।

“একই নৌকার যাত্রী সংঘমিত্রা গুপ্তও, তাঁর গানে বড় বেশি সংবেদন। নীলিমা সেন, অর্ঘ্য সেন, পূর্বা দাম, সাগর সেন, স্বপন গুপ্তদের গাওয়া কত কত গানেও কি নেই রবীন্দ্রনাথের গানের কোনো পাঠান্তরের প্রয়াস? এসব শুনতে শুনতেই তো বড় হওয়া, বড় হতে হতে শোনা।”

দুটি উদ্ধৃতিতে স্পষ্টতই স্ববিরোধ আছে। প্রথম উদ্ধৃতি থেকে তাঁকে কণিকা-দেবব্রত-সুবিনয়-রমা বনাম অন্য শিল্পীরা – এরকম বিভাজনপন্থী মনে হতে পারে। শেষ প্রবন্ধের বক্তব্যে ভারসাম্য এসেছে।

লেখকের মত বর্তমান নিবন্ধকারও একদা কণিকা ও দেবব্রতবাদী উগ্রপন্থী ছিলেন। ছাত্রজীবনেই সুচিত্রা মিত্রর লাইভ রেকর্ডিং শুনলাম “পূর্বাচলের পানে তাকাই”। “মাঝে মাঝে কোন বাতাসে চেনা দিনের গন্ধ আসে, হঠাৎ বুকে চমক লাগায়” – চমক শব্দটার গায়নের আবেগ সুচিত্রা সম্পর্কে আর উদাসীন থাকতে দেয়নি। সুচিত্রার উচ্চারণের শুদ্ধতা, ছন্দবিভাজন (scansion), তালের ওপর অসাধারণ দখল – কিচ্ছু আমার জানার দরকার পড়ে না, যখন তিনি গেয়ে ওঠেন

দুয়ার মোর পথপাশে, সদাই তারে খুলে রাখি।
কখন তার রথ আসে ব‍্যাকুল হয়ে জাগে আঁখি।

শুধুই ব্যাকুল, উৎকর্ণ করে শ্রোতার অন্য সব সত্তাকে তিনি ভাসিয়ে নিয়ে চলে যান। অনিশ্চয়বাবু অকাল প্রয়াত রমা মণ্ডলের গান নিয়ে একটি আলাদা প্রবন্ধ লিখেছেন। রমা ছিলেন সম্ভবত কণিকা-সুচিত্রা-নীলিমা-ঋতু-গীতা পরবর্তী যুগের সবচেয়ে প্রতিভাবান রবীন্দ্রগানের শিল্পী। রমার প্রতিভার মূল্যায়ন এখনো হয়নি, তিনি আজও ‘আন্ডাররেটেড’ শিল্পী হয়ে রয়েছেন। যন্ত্রানুষঙ্গ ছাড়া গীত ষোলোটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের যে অ্যালবামটি তাঁর আছে (নমি নমি চরণে) সেটি শোনা আমার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাঙ্গীতিক অভিজ্ঞতা। যন্ত্রের বিন্দুমাত্র কোলাহল না থাকায় রমার মখমলের মত মসৃণ, ঈষৎ ‘husky tone’ যেন নির্জন পাহাড়ি পথে দূরাগত বৌদ্ধ মন্দিরের ঘন্টাধ্বনির মত ভেসে আসে। অনিশ্চয়বাবুর মত আমারও সন্দেহ নেই রমা ব্যতিক্রমী।

সুচিত্রা মিত্র ছাড়াও যাঁদের নাম অনিশ্চয়বাবুর মনের কাছাকাছি থাকা শিল্পীদের তালিকায় অনুল্লিখিত রয়ে গেল, অবশ্যই তাঁদের অন্যতম ঋতু গুহ। আমার শ্রবণে “কেন জাগে না জাগে না অবশ পরান –”, “বেদনা কী ভাষায় রে” প্রভৃতি গানের সর্বোত্তম শিল্পী ঋতু। আর নীলিমা সেনের গানকে ভালবেসে একটি প্রবন্ধ নয়, বোধহয় একটি গোটা বইই লিখে ফেলা যায়, অথবা লেখা দিয়ে তাঁকে হয়ত বোঝানোই যাবে না।

অধুনা প্রমিতা মল্লিক, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, জয়তী চক্রবর্তীও অনুভব করি কিছু কিছু গানে রবীন্দ্রনাথকে খুঁজেছেন। হেমন্তর বিপুল জনপ্রিয়তা অবশ্যই তাঁর কণ্ঠসম্পদের জন্য। রবীন্দ্রনাথের লিরিকের ব্যাখ্যার প্রত‍্যাশা তাঁর কাছে কমই করি। অথচ “প্রাঙ্গণে মোর শিরিষ শাখায়”, “আজি শরততপনে প্রভাতস্বপনে” হেমন্তকণ্ঠ ছাড়া আজও ভাবতে পারি না। শান্তিদেব ছাড়া কে বোঝাতো অমলধবল পালে মন্দমধুর হাওয়া লাগলে অমন করে তরণী বাওয়া যায়! কবীর সুমনের গাওয়া, “ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে”, “তুমি সন্ধ‍্যার মেঘমালা” গান দুটি অতীতের সব পরিবেশনকে ম্লান করে দিয়েছে। মোহন সিংকে ভুলে গেলে নিঃসন্দেহে রবীন্দ্রনাথের গানের সবশেষ সাধক এবং নক্ষত্রের নাম অনুল্লিখিত থেকে যাবে। তবে এইসব নামোল্লেখ করে তালিকা বাড়ানোর একটাই উদ্দেশ্য; এটা বলতে চাওয়া যে রবীন্দ্রনাথের একেকটি গান একেকজনের গলায় আশ্চর্যরকম খুলে যায়। প্রিয়তম শিল্পী অমুক গানটি গেয়েছেন, তাই ওই গায়নে বন্দী হয়ে থাকলে হয়তো অন্যের কণ্ঠে রবীন্দ্র লিরিকের অনেক ব্যাখ্যা, ভাব অধরা মাধুরী হয়ে থেকে যাবে। অনিশ্চয়বাবুর শেষ প্রবন্ধ থেকে মনে হয়, তিনি নিজেকে আগের বন্দীদশা থেকে মুক্তি দিয়েছেন।

অনিশ্চয়বাবু মার্কসবাদে বিশ্বাসী মানুষ। মার্কসবাদের নাস্তিক‍্য আর রাবীন্দ্রিক আস্তিক‍্য কি তাঁর মধ্যে কোনো সংকট সৃষ্টি করে? তাঁর সংকটের সহজ উত্তরণ ঘটে যখন তিনি মার্কসের মধ্যে আস্তিক‍্যের সন্ধান পান।

“রবীন্দ্রনাথের গানের অপরিহার্য সান্নিধ্য কি তবে নেহাত-ই এক ভাবসর্বস্বতা বা ভাবালুতা…? মার্কসবাদের নন্দিত আধুনিকতার সঙ্গে এই গানের কোনো বিরোধ আমি অন্তত অনুভব ও উপলব্ধি করি না যে কিছুতেই, কেমন যেন এই দুই আস্তিক‍্যের আত্মগত যুগপৎ চর্চাকে আমার মনে হয় পরস্পরের পরিপূরক, সে কি কোনো বৃহত্তর ভুল?”

অনিশ্চয়বাবুর কাছে তাঁরা পরিপূরক কারণ মার্কস চেয়েছিলেন সমাজের সামগ্রিক বদল, রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন প্রতিটি ব্যক্তির অন্তর্গত বদল।

প্রথমত, মার্কসের আস্তিক‍্য প্রমাণ করার মত তথ্যের সন্ধান আজও আমি পাইনি। আর মার্কস কি ব্যক্তি মানুষের সংকট সম্পর্কে উদাসীন থেকে শুধুই অর্থনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজ বদলের কথা বলেন? বিচ্ছিন্নতার তত্ত্বে (Theory of Alienation) মার্কস দেখান পুঁজি ও রাষ্ট্র কিভাবে শ্রম, মেধা, সৃজনশীলতার অধিকারী মানুষকে গোটা উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে; উৎপাদনের একটি খণ্ড প্রক্রিয়ার মধ্যে দিনের পর দিন যুক্ত রেখে সামান্য নাট-বল্টু-ইঞ্জিনসদৃশ যন্ত্রে পরিণত করে। ধীরে ধীরে মানুষ বিচ্ছিন্ন হতে থাকে প্রকৃতি থেকে, তারপর মানবিক সম্পর্ক থেকে; একসময় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে নিজের সত্তা থেকেই (Self- alienation)। মার্কস যে সমাজ গড়ার স্বপ্নে বিপ্লবের আহ্বান জানান, সেই সমাজে মানুষ আবার তার আপন সত্তার সঙ্গে মিলিত হবে (De-alienation), প্রকৃতির কোলে ফিরবে, মানুষ ফিরবে মানুষের কাছে। বস্তুবাদী মার্কসের বিপরীতে রবীন্দ্রনাথ ভাববাদী মরমিয়া (Mystic) কবি। রবীন্দ্রনাথ জীবনদেবতার কথা বলেন। রবীন্দ্রনাথের গানে, কবিতায় সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি প্রকৃতির। ঋতুচক্রে ফুল ফোটে, পাতা ঝরে, বৃষ্টি পড়ে, গ্রীষ্মের দহনজ্বালায় জীবনের সব আবর্জনা পোড়ে। মানুষের জন্ম, কর্ম, নর্ম, মৃত্যু চলে। প্রকৃতি তার নিয়মে জ‍্যোৎস্নায় ভাসে, বিপুল অন্ধকারে মগ্ন হয়ে থাকে। মহাবিশ্বের মধ্যে যে প্রকৃতিকে আমরা দেখি তার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে, সে তার কক্ষপথে চলে। গানের ধ্রুবপদের মত ঋতুগুলি বয়ে যায়, আবার নির্দিষ্ট সময়ে ফিরে আসে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বীক্ষা দিয়ে উপলব্ধি করেন প্রকৃতির সঙ্গে গাছপালা, নদী, পাহাড়, মানুষের একটি গভীর ঐক্য আছে। প্রকৃতির নিজের নিয়মে সবকিছু বাঁধা। প্রকৃতির এই নিয়মের সঙ্গে নিজের জীবনকে তিনি মিলিয়ে দিতে চান

যে ধ্রুবপদ দিয়েছ বাঁধি, বিশ্বতানে
মিলাব তায় জীবনগানে।
গগনে তব বিমল নীল – হৃদয়ে লব তাহারি মিল,
শান্তিময়ী গভীর বাণী নীরব প্রাণে।
বাজায় ঊষা নিশীথকূলে যে গীতভাষা
সে ধ্বনি নিয়ে জাগিবে মোর নবীন আশা।
ফুলের মতো সহজ সুরে প্রভাত মম উঠিবে পূরে,
সন্ধ‍্যা মম সে সুরে যেন মরিতে জানে।

এই বিশ্বপ্রকৃতিই রবীন্দ্রনাথের জীবনদেবতা। এর সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দিতে পারলে মৃত্যুশোকও উত্তীর্ণ হওয়া যায়।

“শমী যে রাত্রে চলে গেল তার পরের রাত্রে রেলে আসতে আসতে দেখলুম জ‍্যোৎস্নায় আকাশ ভেসে যাচ্ছে। কোথাও কিছু কম পড়ছে তার লক্ষণ নেই। মন বলল, পড়েনি – সমস্তের মধ্যেই সবাই রয়ে গেছে। আমিও তার মধ্যে।”

যে মানুষ এই বোধে উত্তীর্ণ হতে পারে সে অশেষ।

“ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ জীবন নব নব।”

রবীন্দ্রনাথ এই উন্নত ঔপনিষদিক মানুষের কথা বলেন। মার্কস বুঝেছিলেন মানুষ এই প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। হয়ত বা রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে মার্কস জন্মালে, রবীন্দ্রনাথের ভাববাদী দর্শনের সমালোচক হতেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এই মানুষকে তাঁর কল্পিত সমাজে চাইতেন।

অনিশ্চয়বাবুর সবচেয়ে মৌলিক ভাবনা তাঁর প্রথম প্রবন্ধে। সুর ও বাণীর পারস্পরিক সম্পর্ক মাথায় রেখেও তাঁর কাছে রবীন্দ্রনাথের গানের কবিতাই জীবনের অভ্রান্ত আশ্রয়। সেই সুরাশ্রিত বাণীর গভীরে পৌঁছনোর প্রয়াসে তিনি কেবলই খুঁজে বেড়ান লিরিকের ঠিক কোন চরণটির অভিঘাত তাঁকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিল, অথবা কোন কথাগুলি তাঁর বোধ অনুযায়ী গানটির প্রাণভোমরা। গানের সেই পংক্তি বা চরণটিকে তিনি বলছেন গানের শীর্ষবিন্দু। সেটিকে শীর্ষবিন্দু ধরলে, গানের একটি জ‍্যামিতিক নকশা বা ছবি কল্পনা করা যেতে পারে। ধরা যাক, রমা মণ্ডলের অসাধারণ গায়নে, “তরুণ প্রাতের অরুণ আকাশ শিশির-ছলোছলো, নদীর ধারের ঝাউগুলি ওই রৌদ্রে ঝলোমলো” গানটির কথা। অসামান্য এক দৃশ্যকল্প রচিত হতে থাকে এক শরতের সকালের। অনিশ্চয়বাবু বলছেন, কিন্তু শুধুই কি দৃশ্যে মন ভরেছে রবীন্দ্রনাথের? পরের চরণেই, রবীন্দ্রনাথ ওই দৃশ্যের গভীরে অব্যর্থ খুঁজে পান উপলব্ধির উত্তরণ

এমনি নিবিড় ক’রে    এরা    দাঁড়ায় হৃদয় ভ’রে —
তাই তো আমি জানি    বিপুল    বিশ্বভূবনখানি
অকূল-মানস-সাগর-জলে কমল টলোমলো।

আবার, সেখানেই শেষ করে দেওয়া যেন রবীন্দ্রনাথের সাজে না, শেষ তিনটি লাইন চলে যায় আরও এক উপলব্ধির উচ্চতায়।

তাই তো আমি জানি – আমি    বাণীর সাথে বাণী
আমি    গানের সাথে গান, আমি    প্রাণের সাথে প্রাণ,
আমি    অন্ধকারের হৃদয়-ফাটা    আলোক জ্বলো জ্বলো

গানটির স্তবক ও স্বরবিন্যাস যেন উপলব্ধির শীর্ষবিন্দুর দিকে এক ক্রমযাত্রা। শেষ স্তবকে এসে গানটি তার মর্মবিন্দু স্পর্শ করে। জ‍্যামিতিক আকৃতিতে দেখলে গানটি যেন উল্টোনো সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ, যার ভূমি উপরে শীর্ষবিন্দু নীচে।

rabindrasangeet geometry 1

অবশ্যই রবীন্দ্রনাথের গানের এই জ‍্যামিতিক নকশার কোনো সর্বজনগ্রাহ্যতা নেই, নেই কোনো পিথাগোরাস বা ইউক্লিডের সূত্র। শ্রোতা, গায়ক তাঁর চেতনার স্তর দিয়ে নিজের মতো করে কোনো রবীন্দ্র লিরিকের চরম মর্মস্পর্শী চরণটি চিহ্নিত করে নিতে পারেন। তাঁরা নিজেরাই সেখানে পিথাগোরাস, ইউক্লিড।

ধরা যাক “আমি    স্বপনে রয়েছি ভোর,    সখী,    আমারে জাগায়ো না” গানটি। প্রথম বাক‍্যের আচ্ছন্নতার আবেশ ভেঙে না দেওয়ার আর্তিকে কিছুতেই অতিক্রম করতে পারে না পরের এগারোটি লাইন। গানটির শীর্ষবিন্দু পেয়ে যাচ্ছি শুরুতেই। এটি যেন আদর্শ সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ।

rabindrasangeet geometry 2

অনিশ্চয়বাবুর কল্পনার আরেকটি জ‍্যামিতিক নকশা দেওয়া যাক…

“নাথ হে, প্রেমপথে সব বাধা ভাঙিয়া দাও” গানটিতে যেমন প্রথম বাক‍্যটির নিবেদনের উপর ভরসা রাখতে না পেরেই যেন পরের দুটি লাইন বেরিয়ে আসা

মাঝে কিছু রেখো না, রেখো না —
থেকো না, থেকো না দূরে।

উচ্চারণের এই পুনরুক্তি যেন বুঝিয়ে দেয় প্রথম নিবেদন যথেষ্ট নয়, তাই পরের পর আর্তি।

শেষ দুটি চরণের কথাগুলি ছবিতে প্রত‍্যক্ষ করুন। প্রথম চরণটিই যেন বিশদে বলা হয়েছে। এই গানে সেভাবে শীর্ষবিন্দু নেই, গানটি যেন অনুভূমিক (horizontal)।

অনিশ্চয়বাবুর ভাষায় “দূরে কোথায় দূরে দূরে” গানটি এই বিস্তীর্ণ অনুভূমিকতার আর এক উদাহরণ। মন কোথায় ঘুরে বেড়ায় তার হদিশ না দেওয়া বা পাওয়া পর্যন্ত যেন সুরের সঙ্গতিটাই গড়ে ওঠে না। এই গানের পরবর্তী লাইনগুলি তাই অনেক বেশি গুরুত্ব বা দায়িত্ব বয়ে বেড়ায়।

তবে লেখক সঠিকভাবেই বলেছেন, গানগুলি যতবার শোনা যায়, ততই বিভ্রান্তি বাড়ে, নতুন অর্থ উঠে আসে, জ‍্যামিতিক নকশা বদলে যেতে থাকে।

জ‍্যামিতিক নকশার বাইরে হয়ত অন্যভাবেও রবীন্দ্রনাথের গানের অনুভূতি ধরা দিতে পারে। রবীন্দ্রসঙ্গীত কি কল্পনায় গানের ছবি তৈরি করে না? মগ্ন শ্রোতার মনে কি অবিরাম চিত্রকল্প তৈরি হয়ে চলে না?

১৯২২ সালে শিলাইদহে লেখা “নিদ্রাহারা রাতের এ গান” আমার কাছে প্রহেলিকার মত। শেষ কয়েকটি পংক্তি পড়া যাক

…এই পথে কার পায়ের তলে
নাম-না-জানা তৃণকুসুম শিউরেছিল শিশিরজলে।
অলকে তার একটি গুছি   করবীফুল রক্তরুচি,
নয়ন করে কী ফুল চয়ন নীল গগনে দূরে দূরে

কার পায়ের স্পর্শে তৃণকুসুম শিউরে উঠছে? কোমল গান্ধার ছবিতে “আকাশ ভরা সূর্য তারা” গানটির অসাধারণ প্রয়োগ হয়েছিল। কেবল “ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি” গাওয়ার সময়ে অনিল চট্টোপাধ্যায়ের ওই ঘাস মাড়িয়ে চলা পায়ের পাতা না দেখালেও বোধহয় চলত। চিত্রায়নের ওই বাস্তবতা ঋত্বিকসুলভ নয় বলেই মনে করি।

তাহলে? এই গানটিকে কীভাবে কল্পনা করব? বিমূর্ত কিছু মাথায় আসছিল। শিল্পী অনুরাগ দত্ত নীচের ছবিটি পাঠাল। বিমূর্ততা নেই, কিন্তু পুরো গানটি ধরা আছে। সোজা করে ভাবা যাক। রক্তকরবীর গুচ্ছ কালো চুলে গাঁথা একটি মেয়ের রূপ বর্ণনা তো লিরিকে স্পষ্ট। তার আগে গান বলছে

সুরের কাঙাল আমার ব্যথা    ছায়ার কাঙাল রৌদ্র যথা
সাঁঝ-সকালে বনের পথে উদাস হয়ে বেড়ায় ঘুরে॥

এত কাঙাল হয়ে রয়েছে কে? ওই যে ছবিতে রক্তকরবীর গুছি মাথায় গায়িকাকে ঘিরে যারা বসে আছে, তারা? সুরের স্পর্শে তারা কেউ মগ্ন, মুগ্ধতার কোনো তারে ঘা লাগায় কেউ শিউরে উঠেছে। “নাম না জানা তৃণকুসুম শিউরেছিল শিশিরজলে” তার পায়ের তলে।

তাহলে এটা কি গায়িকা-শ্রোতার অনুভূতির আদানপ্রদানের গান? প্রথম পংক্তিতে গায়িকার নিদ্রাহারা রাতে যে গান আসে, শেষ পংক্তিতে দূর আকাশে চেয়ে যেন তার সুর খুঁজে পান।

লিরিকের চলনটাও তাই অত্যন্ত আধুনিক; আধুনিক সাহিত্য বা চলচ্চিত্রের মত। ঘটনার পারম্পর্য ভেঙে দিচ্ছেন কবি। প্রথম পংক্তিতে সুর না পাওয়ার বেদনা, সমাপ্তিতে সুরের আকাশে স্বচ্ছন্দ বিচরণ। অথচ মাঝখানে সঞ্চারীতেই কিন্তু শ্রোতাকে সুরে মগ্ন হয়ে পড়তে দেখছি।

প্রেম পর্যায়ের গান এটি। গায়কের কণ্ঠ আর শ্রোতার শ্রুতি এক তারে বেজে উঠেছে বলেই কি এই গান প্রেম পর্যায়ের? এই প্রেক্ষিতে দেখলে আধুনিকতার আর একটি জানলা খুলে যায়। যে মগ্নতার কথা এখানে বলা হচ্ছে, তা কিন্তু পূজা পর্যায়ের গানের ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক।

অনুরাগের ছবির ভাবনা, আমার সংযোজন সবমিলিয়ে গানটার এই কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। হয়তো আরও গভীরে বিমূর্ত কিছু ভাবতে পারতেন রামকিঙ্কর। আর্তনাদের ছবি এঁকেছিলেন এডভার্ড মুঙ্ক। সুরের বিমূর্ততা তাঁদের তুলিতেই সম্ভব। আর এই লেখাটা পড়ার ক্লান্তি দূর করার শ্রেষ্ঠ উপায় হল সুবিনয় রায়ের গলায় গানটা শুনে নেওয়াrabindrasangeet geometry 4

“সকরুণ বেণু বাজায়ে কে যায়” গানটি অনিশ্চয়বাবুর জ‍্যামিতিক নকশায় চতুষ্কোণ। আমার কল্পনায় এখানে তিনটি চরিত্রের ছবি আসে। নৌকোয় ভৈরবীতে বাঁশি বাজিয়ে কেউ যাচ্ছে, আর বাঁশির টানে উতলা কোনো মেয়ে নদীতে জল আনতে চলেছে। পুরো দৃশ্যটি দেখছেন তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে কবি নিজে। গানটির শেষ অংশটুকু পড়া যাক। বাঁশিতে ভৈরবী শুনে কবির মনে ছবি তৈরি হচ্ছে

ছবি মনে আনে আলোতে ও গীতে – যেন জনহীন নদীপথটিতে
কে চলেছে জলে কলস ভরিতে    অলস পায়ে
বনের ছায়ে॥

তাহলে কি আদৌ তিনটি চরিত্র থাকল? অলস পায়ে যে জল আনতে চলেছে সে কি সত‍্যিই আছে, নাকি কবির কল্পনার ছবি? বাঁশির সুর কি কবিকে রাধিকার অভিসারযাত্রা মনে পড়াচ্ছে? এই ছবি কে আঁকবে? মনেই আঁকা থাক।

আর একটি গানের ছবি দিয়ে আলোচনা শেষ করা যাক। “আজ জ‍্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে” গানটিকে খণ্ড করে দেখলে গানটি শোনার ধ্যানমগ্নতা নষ্ট হয়। তবুও, সুর ছাড়া বাণীটিকে নিয়ে ভাবলে অবধারিতভাবে “আমারে যে জাগতে হবে” এই চরণে এসে থমকে যেতে হয়। যেন ওই বাণীকটি নিয়ে গানটি তার সমগ্রতায় আবর্তিত হতে থাকে। কত গায়ক, কত শ্রোতা কত অফুরান প্রতীক্ষায় জেগে থাকেন সারাজীবন! গানটি জ‍্যামিতিক নকশায় তাই আলম্ব গোত্রের। একটি চরণকে স্থিরবিন্দু করে গানটি ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। গানটির ছবি কল্পনায় আনার চেষ্টা করলে ওই চরণের বাইরে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। এই গানটির উল্লেখ অবশ্য লেখক করেননি। অনিশ্চয়বাবুর চিন্তার সঙ্গে সবসময় একমত না হতে পারলেও, এই বিশেষ গানটিতে আশা করি তাঁর জ‍্যামিতিক নকশা আর আমার গানের চিত্রকল্প এক বিন্দুতে এসে মিলবে।

rabindrasangeet geometry 5

রবীন্দ্রনাথের গানের জ‍্যামিতি-র মত আরও বই দরকার। যাঁরা রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনেন তাঁরা তাঁদের অনুভূতি, অভিজ্ঞতাগুলি প্রকাশ্যে আনুন। তৈরি হোক রবীন্দ্রনাথের গান শোনার ইতিহাস।

সূত্র:

১) রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনদেবতা’ ধারণাটি নিয়ে দূরভাষে এক আলোচনায় সমৃদ্ধ করেছেন আমার শিক্ষক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপিকা ডক্টর সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

২) গীতবিতান; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৩) গীতবিতানের জগৎ; সুভাষ চৌধুরী

৩) গীতবিতান তথ্যভান্ডার; সংকলন ও সম্পাদনা পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার

৪) A Dictionary Of Marxist Thought, Edited by Tom Bottomore, Lawrence Harris, V G Kiernan and Ralph Miliband

৫) The Thought of Karl Marx: An Introduction, David McLellan

অলঙ্করণ: অনুরাগ দত্ত, রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী এবং ডিজিটাল পেইন্টার

 

রবীন্দ্রনাথের গানের জ্যামিতি

অনিশ্চয় চক্রবর্তী

প্রকাশক: একুশ শতক

দাম: ৬০ টাকা

আরো পড়ুন

অপর ভুবনের গবেষণা, গবেষণার অপর ভুবন

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.