১
দুদুর দাঁত
দে’জ পাবলিশিং প্রকাশিত গৌতম সেনগুপ্তের উপন্যাস সংগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে কলকাতা বইমেলা ২০২৩-এ। এ বইয়ের উপন্যাসগুলিকে লেখক তিনটি ভাগে সংখ্যা দিয়ে পৃথক করেছেন। বইটিতে মোট দশটি উপন্যাস রয়েছে। প্রথম ভাগে ৬টি, দ্বিতীয় ভাগে ৩টি ও তৃতীয় ভাগে একটি উপন্যাস। লেখক শুরুতেই জানিয়েছেন, “উপন্যাস, প্রায় উপন্যাস বা উপন্যাস হিসেবে শুরু করে মাঝপথেই দম ফুরিয়েছে এমন ১০টা লেখা নিয়ে এই বই”।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
আকারের দিক থেকে বিবেচনা করলে লেখকের কথা যথাযথ। এই উপন্যাসগুলির পৃষ্ঠাসংখ্যা বিবেচনা করলেই তা দেখা যাবে। প্রথম উপন্যাসটি ডিমাই সাইজের এই বইয়ে ১৩ পৃষ্ঠার, দ্বিতীয়টিও তা-ই, তৃতীয়টি ১৭ পৃষ্ঠার, চতুর্থটি ২৩ পৃষ্ঠার, পঞ্চমটি ২১ পৃষ্ঠার, ষষ্ঠটি ২৬ পৃষ্ঠার। সর্ববৃহৎ উপন্যাসটির দৈর্ঘ্য ১২৬ পৃষ্ঠা। উপন্যাসগুলির নামকরণে গৌতমবাবু যে একধরনের আধুনিক মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন, তা স্বীকার করতেই হয়।
তপ্ততর্পণ পত্রিকা, রবীন্দ্রসংখ্যা, বৈশাখ, ১৪৩০
গৌতম সেনগুপ্ত দীর্ঘদিন লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু তাঁর লেখা একধরনের পচাগলা অবক্ষয়কেই সূচিত করে থাকে। রাশিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের পতন ও চিনের আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকার পরে, এ দেশের লেখকদের মধ্যে যে মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা যায়, গৌতমের উপন্যাস তার জাজ্জ্বল্যমান উদাহরণ। যৌনতার বাড়াবাড়ি শুধু নয়, অপ্রাকৃত (যথা মানুষের সঙ্গে মনুষ্যেতর জীবের যৌনতা ও তা থেকে সন্তানোদগম – যা বিজ্ঞানে অসম্ভব) ও অবৈধ (মেয়ের ওপর বাবার যৌন হেনস্থা, যা কখনও কখনও ঘটে থাকলেও যেগুলি প্রকাশ্যে আনা অনুচিত) যৌনতার যে সোল্লাস প্রদর্শনকামিতা এই লেখক তাঁর উপন্যাসে ক্রমাগত, বারংবার এনেছেন, তা থেকে বোঝা যায় এ লেখক মনোগতভাবেই অসুস্থ।
নারা-এ স্তালিন ডট কম, লেনিন জন্মদিবস সংখ্যা, ২০২৩
কল্পনার সঙ্গে ইতিহাসকে মিলিয়ে উপন্যাস লেখার যে উত্তর-আধুনিক দস্তুর বর্তমানে শুরু হয়েছে, তা অতীব ক্ষতিকর। যে কোনো ইতিহাসবিদকে এভাবে ধন্ধের মধ্যে ফেলে দেওয়া নিন্দার্হ। আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী ইতিহাসচর্চাকারীদের তরফ (নিম্ন স্বাক্ষরকারী বলতে নিম্নবর্গের নয়) থেকে এ ধরনের উপন্যাস প্রকাশ বন্ধের জন্য সমস্ত প্রকাশকদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
ইতিহাসবিদ গবেষণাকারদের লিফলেটের অংশ
এই লেখকের প্রতিটি উপন্যাস থেকেই পিতৃতন্ত্রের ও অবদমিত যৌনতার দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। বিশিষ্ট নারীবাদী তাত্ত্বিক হাসিনা বাঙ্গালি সিন্দুরওয়ালি তাঁর ইংরেজি প্রবন্ধ ‘প্রিটেনশন ইজ মরাল, ডোন্ট গো ফর এথিক্যাল’ প্রবন্ধে বলেছেন, এ ধরনের বই আদৌ না পড়তে, তাই আমরা কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অনবরোধবাসিনীরা এ বই পড়িনি ও এঁনাকে সামাজিকভাবে, এবং অতি অবশ্যই এঁনার সমস্ত অতীত ও ভবিষ্যৎ লেখাদেরকে বয়কট করার আহ্বান জানাচ্ছি।
কেট মিলেটপন্থী বিদ্যোৎসাহিনী সমাজ ফেসবুক পেজের ৮ মার্চ, ২০২৩-এর পোস্ট
বইয়ের ওইটুকু ছোট ভূমিকায় একবার ভগবান ও একবার ঈশ্বরের নাম নেওয়া থেকে বোঝা যায়, চালাক গৌতম এবার কমলকুমার মজুমদারের ভেক ধরেছেন।
চক্ষুষ্মান
(বানান ও ভাষায় বদল ঘটানো হয়নি – আলোচক)
২
কল ফর পেপার্স
পূর্বপাঠ শেষ। এই অংশে, কোনো একজন বাবু ধরে, গৌতম সেনগুপ্তের উপন্যাসের আলোচনা করা হবে। সীমিত ক্ষমতা বিধায়, বাবু হিসাবে একজনের বেশিকে বসানো যাবে না। বাবুর নাম পরে আসবে। তার আগে উপন্যাস।
এখানে, ত্রিভাগে বিভক্ত প্রতিটি ভাগের একটি করে উপন্যাস নিয়ে আলোচনা করা হবে।
Plucking pubic hair
Fucking maverick mare
My horse doesn’t care
To stabilize.
Punching bottom mores
My ram is wham
And a bit offsize.
অন্য দুটি বয়ানে বাকিটা এক হলেও শেষের আগের লাইনটি হল:
My prick has a trick, My rod is the God.
গৌতম সেনগুপ্তের ঔপন্যাসিক বয়ানে, এটি বিটলস-এর গান। উপন্যাসে প্রসঙ্গটির উল্লেখ আরও বেশি কার্যকর। তিনি জানাচ্ছেন, ১৯৫৯ সালের পর, জাতীয় কন্ডোম নিরোধ-এর প্রচারকল্পে যে নৃত্যনাট্যটি পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু অনুমোদন করেন, তাতে এই গানটি গাওয়া হয়। কয়েক লাখ নৃত্যনাট্যের স্ক্রিপ্ট জমা পড়েছিল। “একটি প্রমাণ সাইজের লিঙ্গ, সাত সুন্দরী যোনিকে পরপর তিন মিনিট ধরে দম্ভভরে ও পরের সাড়ে তিন মিনিট সানুনয়ে অনুরোধ জানায় লিপ্ত হবার জন্য। প্রত্যাখ্যান করে সাতজনই। এরপর সে ধারণ করে নিরোধ। ব্যালেন্স ৬ মিনিট ধরে চলে রমণ-তাণ্ডব।” “লিঙ্গের ভূমিকায় শাম্মি কাপুর ছিলেন অনবদ্য।” এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য, শাম্মি কাপুরের নাচ নিয়ে এক বিশিষ্ট ভারতীয় তাত্ত্বিক (অবাঙালি) লিখেছেন, মহিলাদের মধ্যে শাম্মি কাপুরের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হল, তাঁর নাচের ভঙ্গি উচ্ছ্রিত লিঙ্গের নর্তনের মত। যে অংশটুকু উদ্ধৃত হল, তা বান্টি-বাবলি উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদ থেকে। আমরা প্রথম বর্গের এই উপন্যাসটি নিয়েই আলোচনা করব। কেন এই উপন্যাসটিই? কারণ, বুক ক্রিকেটের ঢংয়ে একটি পৃষ্ঠা খুলতে গিয়ে এই উপন্যাসটিই বেরোল। এই পরিচ্ছেদের শেষাংশে আসছে অরুণিমার কথা, যার নাম দেওয়া হয়েছিল জ্যানেট।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে জ্যানেটের বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে সে অতীব সুন্দরী, এবং অতি অল্প বয়স থেকে পুরুষের স্পর্শের শিকার। তার নিজের বাবা তার “ঘেমো হাতে আমার ডানহাতটা ধরে নিজেরটা নাড়ানো শুরু। পুরোটা ফ্রকে ফেলে বলল, ধুয়ে নিস, তখন কান্নাটা প্রাণপণ বেরিয়ে আসতে চাইছে। চেপে ছিলাম। বেরোয়নি। … ডেলি প্রে করতাম বোকাচোদাটা যেন মরে।”
‘রাজনীতি’র ক্রমাগত অর্থব্যাপ্তি ঘটছে ঠিকই; তবু কথাটার তো একটা মূল মানেও আছে, যা কেন্দ্রবিন্দুর মতন এই প্রসরণশীল নানার্থকে আঁটো করে ধরে রাখে একটি বলয়ক্ষেত্রের মধ্যে। সেটা কী? রাজনীতির সারাৎসার হচ্ছে: ক্ষমতা। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার ব্যাকরণ।
উপরিউক্ত দুটি পরিচ্ছেদের যে সামান্য অংশ উদ্ধৃতি সহযোগে ও উদ্ধৃতি ব্যতিরেকে আলোচিত হল, তা থেকে ক্ষমতার বয়ান ও বয়ন সুস্পষ্ট। তারপর যে উদ্ধৃতি দেওয়া হল, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে আমরা এ উপন্যাসকে রাজনৈতিক বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছি।
‘রাজনীতি’ এই প্রত্যয়টা স্পঞ্জের মতন অবিরল নানা অর্থ শুষে নেয়। উদাহরণ হিশেবে বলতে পারি: মনস্তত্ত্ববিদ্ ল্যাঙ্গ (Laing) যেই ‘অভিজ্ঞতার রাজনীতি’ (‘পলিটিক্স অব এক্সপেরিয়েন্স’: 1967) এই নতুন পরিভাষা তৈরি করলেন, তখনই প্রসারিত হয়ে গেল রাজনীতির সীমান্ত। আবার নারী-মুক্তির প্রবক্তা কেট মিলেট, যখন জার্মান মনস্তত্ত্ববিদ্ রাইখ-এর অনুসরণে ‘যৌনতার রাজনীতি’ (‘সেক্সুয়াল পলিটিক্স’: 1969) নিয়ে আলোচনা তুললেন, তখন আরও ছড়িয়ে পড়ল রাজনীতির লক্ষণার্থ। আর এ কথা কে না বোঝে, রাজনৈতিক উপন্যাসে একাধারে এই অভিজ্ঞতার রাজনীতি আর যৌনতার রাজনীতি, দুই-ই, বড়ো জায়গা জুড়ে নিতে পারে, বেকসুর?
কাট্ টু
কহো না পেয়ার হ্যায়
“এই গল্পটা কোনওভাবেই আমাদের নয়।
এই গল্পটা যেন কোনওভাবেই আমাদের না হয়।
এই গল্পটা যেন শুধু মুন আর তার ফুলকাকার গল্পই হয়ে ওঠে।
জিন্দেগিভর আমরা শুধুই লাথ খেয়েছি। শায়দ ইসবার ঠিক তরাসে শুনবাই হোগা। শায়দ ইসবার উপরওয়ালা কোই দুগ্গি নেহি করেগা।”
কেন আমরা এই আখ্যানটি বেছে নিচ্ছি, তার সরল উত্তর হল – এ আখ্যানটি প্রেমের। যে প্রেম ঠিক সমাজোচিত নয়, কোনোভাবেই।
“মুনের তখন ক্লাস নাইন, আমাদের তিরিশ। জওয়ানির রৌনক না থাকলেও তখনও আমাদের দেদার দম ছিল। পলক ঝপকানোর আগেই তখনও আমরা সির্ফ তুড়িতে ঘুরিয়ে আনতাম পুরো শহর।”
এই আখ্যান, ক্লাসিক প্রেমের বলা চলে (না)। এখানে অপ্রেমের চূড়ান্ত শৈলটি দেখা যাবে, দেখা যাবে সরোজিনী এইখানে শুয়ে আছে। কেউ এখানে সোচ্চারে বলে উঠবে না, অই যুবকের কাছে না যেতে। এ সব থাকবে, এরকম কোনো উদ্ধার ছাড়াই। এবং থাকবে পাপের কথা। গৌতম সেনগুপ্তের প্রায় সব লেখার মতই। তাঁর কোনো আখ্যানই অপাপবিদ্ধ নয়। এ কাহিনিতে একের অপরাধে অন্যে জেল খেটে আসবে, কারণ, ওই একই – ভালবাসা। সে ভালবাসা নিখাদ, কারণ সে প্রেম যৌনতাহীন। একের পর এক যৌনতাহীন প্রেমে ও প্রেমহীন যৌনতার অংশভাগী হতে গিয়ে আমরা সাক্ষী হয়ে পড়ব বিকৃত যৌনতার অতুল বর্ণনায়। অতুল, কারণ তার ভাষা। এ আখ্যানও, গৌতমের অন্য যে কোনো আখ্যানের মতই, ভাষা দ্বারা সৃষ্ট।
গৌতম সেনগুপ্ত একটি ভাষা আবিষ্কার করেছেন, যা তাঁর নিজস্ব। গৌতম সেনগুপ্ত একটি ফর্ম আবিষ্কার করেছেন, যা বহুকালব্যাপী রয়েছে, শুধু তার অনুশীলন নেই। গৌতম সেনগুপ্তের লেখালেখিকে খুব সহজে কল্পনাশ্রয়ী বলে চিহ্নিত করে দেওয়া সম্ভব, কিন্তু তা হবে সম্পূর্ণ ভুল, সম্পূর্ণ উল্টো। আসলে গৌতম সেনগুপ্তের কল্পনা আখ্যানাশ্রয়ী।
এই দ্বিতীয় উপন্যাস নিয়ে কথাবার্তার শুরুতে কয়েকটি পংক্তি আমরা তুলে এনেছি, যেখানে গৌতম হিন্দির মিশেল দিচ্ছেন। কলকাত্তাইয়া ও বোম্বাইয়া হিন্দির। এরকম হিন্দি এই উপন্যাসগ্রন্থে বারংবার আসবে। কেউ একটা প্রতর্ক জুড়তে পারেন, যে এ হিন্দি এসেছে তাঁর যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। এ প্রতর্কের শেষ হবে না। গৌতমের এই নানাবিধ উচ্চারণভেদ, খুব উথালপাথাল আবেগের দমবন্ধ করা প্রতিবেশ থেকে লেখাকে ও লেখককে মুক্তি দেবার জন্য ব্যবহৃত। যা আমরা ফের দেখতে পাব এর পরের আলোচ্য উপন্যাস সহস্র এক বিনিদ্র রজনীতেও।
উপন্যাস সংগ্রহের সর্ববৃহৎ এই উপন্যাসটি কাল নিয়ে খেলা করে। মিথকে ঢুকিয়ে দিতে থাকে জীবনে। এবং ভাষা।
“পেলুকা ভাবে, অচেনা শহরে নিচ্ছি উড়াল, কেন আজকাল? খুচরো ছোঁয়াতে ইচ্ছে-ধোঁয়াতে করছি তাকেই আড়াল, কেন আজকাল? তার নানান কথা আর নীরবতা, আমার সন্ধ্যা সকাল, কেন আজকাল?”
এ কাহিনি, অজস্র প্রতারণা ও একটি পাণ্ডুলিপির। কিন্তু আমরা জানি, বিষয় বিষ। তাই বৈষয়িক আলোচনা বরং থাক। আমরা এই উপন্যাসের পরিচ্ছেদনামগুলি এ আলোচনায় বিবৃত করে যাই, পরপর। পাঠকের আঁতে ঘা দেবার নিমিত্ত।
হিসট্রির মা মাসি
ওহ! ক্যালকাটা
লরেন্স অফ বার্লিন
রোড টু পার্ডিশন্
ধ্বজা ভঙ্গ
লাভার নাম্বার ওয়ান
ফ-এ ফাঁড়া, ব-এ…
প্রিন্স অফ বিবিবাগ
লে ছক্কা
পেয়ারে লাল রে, ইয়ারে লাল রে
কমবখত্ ইশক
মার কৈলাশ, দ্দে চাবি
চপে চুল
এ প্রসঙ্গে আমরা ফিরে আসব। তার আগে বাবু বসানোর যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া ছিল, যার কিছুটা পালিত হয়েছে এ অধ্যায়ে, এবং এ অধ্যায়েই যার সমাপন ঘটানো হবে, তার আর একটু।
জ্ঞানচর্চায় সংজ্ঞা জিনিসটার যে প্রয়োজন আছে, তা খুবই মানি। কিন্তু কবুল করছি, যাকে সংজ্ঞা বেঁধে-দেওয়া বলে, তাতে আমার কিঞ্চিৎ দ্বিধাও আছে। অষ্টাদশ শতকের যুক্তিবাদ সংজ্ঞা ব্যাপারটাকে যে-শিরোপা দিয়েছিল, আধুনিক দর্শন তা আর দিতে নারাজ। তীব্র আলোয় চোখ ধাঁধায়; খুব স্পষ্ট সংজ্ঞা অনেক সময়ে জ্ঞেয়-র চারপাশে অন্ধকার ঘনিয়ে আনে। বিশেষতঃ, রাজনৈতিক উপন্যাসের মতন একটি বিষয়, যা ক্রমাগত বেড়ে উঠছে, নতুন-নতুন রূপ নিচ্ছে, সেখানে বাঁধা সংজ্ঞা চোখের ঠুলি হয়ে উঠতেই পারে। এক-একটা আনকোরা জ্বলজ্বলে নভেল, আসলে, নভেলের এক-একটা নতুন সংজ্ঞা।
…
এই সংজ্ঞার সমস্যাকে জটিলতর করে তুলেছে আরেকটা ঘটনা: রাজনৈতিক আর অরাজনৈতিক উপন্যাসের মধ্যেকার সীমারেখা অনেক সময়েই বেশ ঝাপসা। উপন্যাসের পাঠ একই থাকে; কিন্তু তার পঠন পাল্টে যায়, বদলে যায় তার তাৎপর্য। যে লেখার গায়ে ‘রাজনৈতিক’ এই লেবেলটা মারা যাবে নেহাতই কষ্টকল্পনায়, বহু ক্ষেত্রে দেখি, সেইরকম লেখাও প্রবল, নিগূঢ় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছে।
আজকের সান্ধ্য মেহফিলে, এবার বলেই নেওয়া যাক, আমাদের আসরবাবু হিসাবে বাঁকা অক্ষরে বসেছিলেন প্রয়াত প্রদ্যুম্ন ভট্টাচার্য, তাঁর রাজনৈতিক উপন্যাস: স্বারূপ্যের সন্ধানে? প্রবন্ধটি নিয়ে, যা তাঁর টীকাটিপ্পনী বইয়ের অন্তর্ভুক্ত, যে বইটির ভারতীয় সংস্করণ বর্তমানে অমিল। উদ্ধৃতিগুলি ঢাকার নবযুগ প্রকাশনীর ২০১৬ সালের সংস্করণ থেকে নেওয়া।
৩
হস্তিদর্শন
আগের পর্বে শেষ আলোচ্য উপন্যাসের পরিচ্ছেদনাম উল্লেখ করা হয়েছে। তার কারণ, খেলুড়িয়া পাঠক, যাঁরা নানা বিষয়ে অবগত নেই, কিন্তু হতে চান, তাঁদের প্রলুব্ধ করা। বইয়ের এই আলোচনাটি, শেষ পর্যন্ত, বইটি বিক্রির উদ্দেশ্যে, আপন জ্ঞান ও বিশ্লেষণশৈলী প্রদর্শনের জন্য নয় বা অর্থান্তর ঘটানোর কোনো প্রকল্প, ডিকনসট্রাক্ট করার কোনো লক্ষ্য এ লেখার নেই। সেসব অ্যাকাডেমিয়ার কাজ। আমরা যা লিখব, অ্যাকাডেমিয়া সেখান থেকে টুকবে (অজিত চৌধুরী, প্যারাফ্রেজিত)।
আরো পড়ুন মিস শেফালি নামক দর্পণে সমাজ, রাষ্ট্র, সংস্কৃতি ও নারী
ফলে, যেসব পুরুষ ও নারী, যে কোনো বয়সের, মধ্য ও পশ্চিম কলকাতার এবং মুম্বইয়ের খিস্তি, যৌনতার বর্ণনা, ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের রকমফের জানতে চান, তাঁরা এ বই অবশ্যই কিনুন। কথা দিচ্ছি, বিফল হবেন না। এর সঙ্গে পাবেন নানারকম মদ, মদের গ্লাস ও ডিকান্টারের বর্ণনা, জানতে পারবেন স্কচ তৈয়ারির প্রক্রিয়া ও সেগুলির নামফারাকের কারণ।
৪
লিপসার্ভিস
এই বই প্রকাশের জন্য, দে’জ প্রকাশনকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। শুধু বই যত এগিয়েছে, প্রুফের ভুল তত বেড়েছে, এ কথার উল্লেখ করতে হল স্রেফ এই কারণে, যে তা পাঠের বিঘ্ন ঘটিয়েছে। এ যদি কেবল টাইপোগ্রাফিকাল এরর হত, তাহলে তা আলোচ্য হত না।
এ বই বিক্রি হবে। প্রকাশককে বলার, এ মাল বিক্রির সংকট দেখা দিলে একটি জলচৌকি দিয়ে আমাকে কলেজ স্ট্রিট মোড়ে দাঁড় করিয়ে দেবেন, বইয়ের মোক্ষম জায়গাগুলি থেকে পাঠ করে বিক্রি করে দেব, বিনিময়ে জল দিলেই হবে।
উপন্যাস সংগ্রহ
লেখক: গৌতম সেনগুপ্ত
প্রকাশক: দে’জ পাবলিশিং
মূল্য: ৫৫০ টাকা
মতামত ব্যক্তিগত
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।