আমরা সবাই জানি কয়েকদিন আগেই ভারত ইতিহাস রচনা করে ফেলেছে চতুর্থ দেশ হিসাবে চাঁদে ‘সফট/সেফ ল্যান্ডিং’ করে এবং অবশ্যই পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসাবে চাঁদের অপেক্ষাকৃত বিপদসঙ্কুল ও অজানা অপর প্রান্তে (far end or south pole) সেফ ল্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে। ইসরোর সৌজন্যে আপামর ভারতবাসীর মুকুটে এ এক নতুন পালক বৈকি। এই প্রবন্ধের প্রকাশকালে চন্দ্রযান-৩ মিশনের বিক্রম ল্যান্ডার ও তার পেট থেকে বেরোনো প্রজ্ঞান রোভার চাঁদের ওই দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি অঞ্চল জুড়ে বৈজ্ঞানিক কার্যকলাপ ও অনুসন্ধানে সচেষ্ট। চলুন, এই অভিযানকে কেন্দ্র করে একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক।

চন্দ্রাভিযান

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক হল আমাদের প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ। বিগত শতাব্দীর ছয় এবং সাতের দশক থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের আবহে চাঁদে অভিযান নিয়ে যে রেষারেষির সূত্রপাত তার ফলশ্রুতিতে পরপর নাসা ও রসকসমস-এর যথাক্রমে অ্যাপোলো ও লুনা মিশনগুলোর চাঁদে পাড়ি দিতে থাকা। এই মহাকাশযানগুলোকে মোটামুটিভাবে পাঁচটা শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

(১) ফ্লাইবাই মিশন: চাঁদের প্রায় গা ঘেঁষে এই মহাকাশযানগুলো উড়ে চলে যাওয়ার সময়ে চাঁদের ছবি ও অন্যান্য নানা বৈজ্ঞানিক তথ্যাবলী সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠায়। যেমন লুনা ৩। এরকম আরও উদাহরণ আছে যারা বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুনের পাশ দিয়ে চলে যেতে যেতে এরকম অনেক ছবি আমাদের পাঠিয়েছে এবং ক্রমশ সৌরমণ্ডলের বাইরের দিকে ধাবমান হয়েছে বা হচ্ছেও।

(২) অরবিটার মিশন: এদের কাজ হল চাঁদের চারপাশে পরিক্রমণকালে চাঁদের ছবি ও অন্যান্য নানা বৈজ্ঞানিক তথ্যাবলী সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠানো। যেমন চন্দ্রযান-১, LRO, GRAIL, Chang’e 5, সেলেনে।

(৩) ল্যান্ডার মিশন: এরা সাধারণত চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে থাকে। যেমন Chang’e 3, চন্দ্রযান-৩।

(৪) রোভার মিশন: এই গোত্রের মহাকাশযানগুলো আদতে ল্যান্ডার মিশনেরই অঙ্গ। এক্ষেত্রে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পর যানগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে চলাফেরা করে এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে থাকে। যেমন Chang’e 3, Chang’e 5, চন্দ্রযান-৩।

(৫) স্যাম্পল কালেকশন অ্যান্ড রিটার্ন মিশন: এরা চাঁদের মাটি বা রিগোলিথ, পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই মিশনগুলোতে মানুষ থাকতেও পারে আবার নাও পারে। যেমন Chang’e 5, অ্যাপোলো গোত্রের মহাকাশযানসমূহ।

ভারতের চন্দ্রাভিযান: চন্দ্রযান-১

১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এবং ২০০৩ সালে ইন্ডিয়ান অ্যাস্ট্রোনমিকাল সোসাইটির সভায় চাঁদের উদ্দেশে ভারতীয় মহাকাশযান পাঠানো নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ইসরো একটা ন্যাশনাল লুনার মিশন টাস্ক ফোর্স গঠন করে, যার উদ্দেশ্য ছিল ভারতের নিজস্ব চন্দ্রাভিযানের পক্ষে মত প্রকাশ করা এবং গবেষণা ত্বরান্বিত করা। দেশের ৫৬তম স্বাধীনতা দিবসে (১৫ অগাস্ট, ২০০৩) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এই প্রকল্প অনুমোদনকালে ঘোষণা করেন, মহাকাশ প্রযুক্তি ও মহাকাশ গবেষণায় ভারত এখন প্রথম সারিতে। ২০০৮ সালেই ভারতের নিজস্ব মহাকাশযান উৎক্ষিপ্ত হবে চন্দ্র পরিক্রমায়, যার নাম হবে চন্দ্রযান। এর পাশাপাশি আগামী কয়েক বছরে ভারত আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের মিশনের অগ্রদূত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান লঞ্চ স্টেশন থেকে ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর ভারতীয় সময় সকাল ৬টা ২৫ মিনিটে PSLV 11 রকেটের সহায়তায় চন্দ্রযান-১ মহাকাশযানকে চাঁদের উদ্দেশে পাঠানো হয়। মানববিহীন এই মিশনে ছিল একটা চাঁদকে প্রদক্ষিণকারী যান এবং একটি সংঘাতকারী প্রোব বা Impactor। ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর থেকে এটা চাঁদের চারপাশে ১০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের কক্ষপথে পরিক্রমণ করতে শুরু করে।

চন্দ্রযান-১ মোট এগারোটা পেলোড বা যন্ত্র নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল চাঁদের পথে। তার মধ্যে চারটে যন্ত্র এবং সংঘাতকারী প্রোবটা ছিল ভারতের নিজস্ব এবং বাকি ছটা যন্ত্র ছিল নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং বুলগেরিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সে তৈরি।

চন্দ্রযান-২

চন্দ্রযান-১ দ্বারা চাঁদের পৃষ্ঠে জলের অণুর উপস্থিতির আবিষ্কারসহ অন্যান্য সাফল্য এর উত্তরসূরী মিশনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে অনুপ্রেরণা যোগায়। ফলস্বরূপ চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে জলীয় বরফ অনুসন্ধানের জন্য চন্দ্রযান-২-এর পরিকল্পনা এগোতে থাকে।

পূর্ববর্তী চন্দ্রাভিযানগুলোর দ্বারা তুলনামূলকভাবে অনাবিষ্কৃত চাঁদের দক্ষিণ মেরু বা ‘ফার সাইড’-এ নেমে জলীয় বরফ অনুসন্ধান ও চন্দ্রপৃষ্ঠের উপাদান-গঠন প্রকৃতি অন্বেষণের লক্ষ্য নিয়ে শেষমেশ ২২ জুলাই, ২০১৯ সে যাত্রা করে।

চাঁদের ‘ফার সাইড’ বা দূরের দিক আর তার দক্ষিণ মেরু নিয়ে মহাকাশবিজ্ঞানীদের কৌতূহলের শেষ নেই। ছোট করে একটু বুঝে নেওয়া যাক চন্দ্রপৃষ্ঠের এই অংশটার বিশেষত্ব। চাঁদের এই ‘ফার এন্ড’ হল সেই অপর গোলার্ধ যা সবসময় পৃথিবী থেকে দূরে রয়েছে, অর্থাৎ আমাদের কাছে অনেকটা পরিচিত ও দৃশ্যমান চাঁদের কাছের দিকের (near end) ঠিক বিপরীতে। চাঁদের কক্ষপথের সমকালীন ঘূর্ণন (synchronous rotation) এর জন্য দায়ী। চাঁদের এই অজানা দক্ষিণ মেরুর উঁচু নিচু জমি মহাকাশযানের জন্য বড় কঠিন ঠাঁই। ছোট বড় অসংখ্য পাথর, অজস্র খানাখন্দ, অন্ধকার ‘লুনার মারিয়া’ ও গহ্বরে ভরা চাঁদের এই প্রান্ত সৌরজগতের অন্যতম দুর্গম স্থান। এই গোলার্ধকে কখনো কখনো চাঁদের অন্ধকার দিক (dark side of the moon) নামে ডাকা হলেও উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল ‘অন্ধকার’ মানে এখানে ঠিক সূর্যরশ্মির অভাব নয়, বরং ‘অজানা’। চাঁদের দুটো দিকই দু সপ্তাহ করে সূর্যালোক পেয়ে থাকে। তখন উল্টোদিকে দু সপ্তাহ রাত। তবে এই অংশের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি অঞ্চল সত্যিই সূর্যের আলো থেকে অনেকটা বঞ্চিত (পুরোটা নয়)। চাঁদের অ্যাক্সিয়াল টিল্ট বা অক্ষ বরাবর কাত হওয়ার পরিমাণ প্রায় শূন্য (অথচ পৃথিবী তার নিজের অক্ষের সাপেক্ষে ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকে)। এর অর্থ হল চাঁদের দুই মেরু অঞ্চল সারা বছরই খুব কম সূর্যালোক পায়। তার মধ্যে দক্ষিণ মেরুতে স্থায়ীভাবে ছায়াযুক্ত গভীর বড় বড় গর্তের মধ্যে এমন অঞ্চল রয়েছে যেখানে কোটি কোটি বছর ধরে সূর্যের আলো পৌঁছতে পারেনি। তাই এই অত্যন্ত ঠান্ডা অঞ্চলগুলোতে জল বরফকণার আকারে লুকিয়ে আছে কিনা সেটাই আবিষ্কারের বিষয়।

চন্দ্রযান
ছবি: আর কে সিনহা ও তাঁর দল

চন্দ্রযান-২-এর প্রধান তিনটে অংশ হল

অরবিটার: আজও চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চাঁদের বহির্মণ্ডল অধ্যয়ন, চন্দ্রপৃষ্ঠে উপাদান এবং খনিজ পদার্থগুলোর বিতরণ ম্যাপিং এবং মেরু অঞ্চলে উপস্থিত জলের বরফ অধ্যয়নসহ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চলেছে।

বিক্রম ল্যান্ডার ও প্রজ্ঞান রোভার: ল্যান্ডারের উদ্দেশ্য ছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য নিরাপদে অবতরণ করে তার ভিতরে থাকা প্রজ্ঞান রোভারকে চন্দ্রপৃষ্ঠে অনুসন্ধানের কাজে লাগানো। দুর্ভাগ্যবশত, ৬ সেপ্টেম্বর অবতরণকালে ল্যান্ডার ইসরোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে চন্দ্রপৃষ্ঠের মাত্র ৩৩৫ মিটার উপর থেকে ক্র্যাশ-ল্যান্ড করে ফেলে।

যদিও বিক্রম ল্যান্ডারের অবতরণ পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি, তবুও চন্দ্রযান-২ অরবিটার সফলভাবে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে তার বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য সফল করার কাজে লেগে আছে। চাঁদের পৃষ্ঠ এবং বহির্মণ্ডল সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে। নাসা বা রসকসমস বা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) তুলনায় অনেক কম খরচে নির্মিত চন্দ্রযান-২ মহাকাশ প্রযুক্তি এবং গবেষণায় ভারতের অল্প সময়ে ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা প্রদর্শন করে।

আরো পড়ুন জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ বিস্ময়: বহু যুগের ও পার হতে

চন্দ্রযান-৩

একাধিক দেশ এর মাঝে চেষ্টা করলেও চাঁদের ওই দূরের দিকে (far end/south pole) আজ পর্যন্ত নামতে পারেনি কোনো মহাকাশযান। সর্বশেষ হিসাবে সেই তালিকায় রয়েছে রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমসের লুনা-২৫ মিশন‌, যা শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ হয়েছে, চন্দ্রযান-৩ (বিক্রম ল্যান্ডার) নামার ঠিক চারদিন আগে। তাই বলাই বাহুল্য সারা পৃথিবীর তাবৎ মহাকাশ গবেষকরা ইসরোর বিক্রমের দিকে তাকিয়ে ছিলেন বুধবার (২৩ অগাস্ট) ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৫টা ৪৪ মিনিট থেকে ৬টা বেজে ৪ মিনিট অবধি, যাকে অনেকেই শ্বাসরোধকারী ‘মিনিটস অফ টেরর’ বলেও অভিহিত করেছেন।

চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের আগে ২৫ কিলোমিটার উপর থেকে বিক্রম তার ‘ল্যান্ডার হ্যাজার্ড ডিটেকশন অ্যান্ড অ্যাভয়েড্যান্স ক্যামেরা’ (এল‌এইচডিএসি) দিয়ে চার কিলোমিটারব্যাপী একেকটা এলাকা জুড়ে (চন্দ্রযান-২ মিশনে যার বিস্তার ছিল ২.৫ কিলোমিটার মাত্র) একের পর এক ছবি তুলে ইসরোর গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে চলছিল সমানে, অবতরণের জন্য নিরাপদ জায়গা ঠিক করতে। ইসরোর এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করা নিচের চারতে ক্লোজআপ ইমেজ হল বিক্রমের ল্যান্ডার হ্যাজার্ড ডিটেকশন অ্যান্ড অ্যাভয়েড্যান্স ক্যামেরার সাহায্যে ১৯ অগাস্ট তোলা চাঁদের দূরবর্তী অঞ্চলের ছবি।

ইসরো
ছবি ইসরোর এক্স হ্যান্ডেল থেকে

পূর্বসূরী মিশনের তুলনায় এবারে চন্দ্রযানে ছিল আরো বেশি সোলার প্যানেল এবং বড় ফুয়েল ট্যাঙ্ক। জটিল এই অবতরণের মোট চারটে পর্যায় ছিল – রাফ ব্রেকিং (চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ কিমি উপরে ৬০০০কিমি/ঘন্টায় মহাকাশযান আবর্তনরত), অলটিচিউড হোল্ড (৭.৪ কিমি উচ্চতায় নেমে এসে ১০ সেকেন্ড থেমে নিজের হরাইজন্টাল পজিশন থেকে ভার্টিকাল অবস্থায় কাত হয় এবং ৩.৪৮ কিমি/ঘন্টা বেগে চলতে থাকে), ফাইন ব্রেকিং (১৭৫ সেকেন্ডের খুব সূক্ষ্ম পর্যায়, যখন ল্যান্ডার পুরোপুরি ভার্টিকাল অবস্থায় এসে ধীরে ধীরে নিজের গতি শূন্যের দিকে নামিয়ে আনতে থাকে) এবং টার্মিনাল ডিসেন্ট (একেবারে শূন্য গতিবেগে পৌঁছে ধীরে ধীরে সফট ল্যান্ডিং করে)।

চন্দ্রযান-৩ আর লুনার কোয়েস্ট নিয়ে বলা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, যদি না আলফা পার্টিকেল এক্স-রে স্পেকট্রোমেট্রি (APXS) এবং লেজার-প্ররোচিত ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপি (LIBS) বিষয়ে বলা হয়।

APXS হল এক উজ্জ্বল বৈজ্ঞানিক কৌশল যা আমাদের পদার্থের মধ্যেকার উপাদানগুলোকে বিশ্লেষণ করতে দেয়, বিশেষ করে মঙ্গল এবং চাঁদের মতো মহাকাশের বস্তুর মধ্যে থাকা উপাদানকে। এই প্রক্রিয়ায় আলফা কণা (হিলিয়াম নিউক্লিয়াস) দিয়ে একটা নমুনাকে আঘাত করা হয়, যা এক্স-রে নির্গমন চালু করে। আর এই এক্স-রেগুলোই পদার্থের স্যাম্পলে উপস্থিত উপাদানগুলোর উপর আলোকপাত করে।

APXS এর আগে মঙ্গল গ্রহে ‘কিউরিওসিটি’, ‘পারসেভেরান্স’-এর মত মিশনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সেখানকার শিলা, মাটি ইত্যাদি পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা গ্রহের বিবর্তন-ইতিহাস এবং ভূতত্ত্ব সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারে। APXS চাঁদের ওই রহস্যাবৃত দক্ষিণ মেরুর এলাকায় বরফের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সক্ষম। চন্দ্রপৃষ্ঠের মৌলিক গঠন বিশ্লেষণ করে APXS হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের অনন্য স্বাক্ষর সনাক্ত করতে পারে, যা জলের বিল্ডিং ব্লক। সঙ্গে চাঁদের দক্ষিণ মেরু জুড়ে জলীয় বরফবিন্যাসের বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করতে, চাঁদের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস ও পৃষ্ঠের মৌলিক গঠনপ্রকৃতির উপর আলোকপাতেও সক্ষম।

অন্যদিকে LIBS হল এক মহাজাগতিক অন্বেষণের সরঞ্জামের মত, যা উচ্চশক্তির লেজার পালস ব্যবহার করে উৎপন্ন প্লাজমা দ্বারা কোনো পদার্থের মৌলিক গঠন ও উপাদান বিশ্লেষণ করে। নাসার মঙ্গল অভিযানের কিউরিওসিটি রোভারে ব্যবহারের পর এবার এটা ভারতের লুনার মিশনেও প্রজ্ঞান রোভারে চড়ে চাঁদে পাড়ি দিয়েছে। চাঁদের রহস্যময় ভূতাত্ত্বিক আখ্যান, তার অসংখ্য আগ্নেয়গিরি, খনিজ পদার্থের সম্ভাবনা এবং সর্বোপরি বিবর্তনের গল্প উন্মোচনে বিজ্ঞানীদের সেরা বাজি হতে চলেছে LIBS প্রযুক্তি।

মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.