দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর মহাবিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের আমন্ত্রণে গত ১৫ মার্চ ২০২৩ (বুধবার) ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘সাহিত্য ও সাংবাদিকতা’ বিষয়ে এই ভাষণ দেওয়া হয়েছিল। আজ শেষাংশ

সভ্যতার ইতিহাস যত লম্বা তার সাপেক্ষে বিচার করলে সাংবাদিকতা অত্যন্ত আধুনিক ব্যাপার, কিন্তু সাহিত্য অতি প্রাচীন। বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যে আধুনিক যুগ বলতে বিভিন্ন সময়কে বোঝানো হয়, আধুনিকতার সংজ্ঞাও সেই অনুযায়ী বদলে যায়। এখানে আধুনিক শব্দটা আমি সাহিত্যের ইতিহাসে যে অর্থে ব্যবহার হয় একেবারেই সে অর্থে ব্যবহার করছি না। শব্দটার সবচেয়ে সংকীর্ণ যে অর্থ, মানে সাম্প্রতিককালের ব্যাপার – সে অর্থেই ব্যবহার করলাম। তাহলে এতক্ষণ ধরে সাহিত্য আর সাংবাদিকতার অমিলগুলোকে বাতিল করতে করতে এসে এতক্ষণে একটা অমিল স্বীকার করলাম। তার মানে নিশ্চয়ই সাহিত্য আর সাংবাদিকতার সীমারেখা অস্পষ্ট হয়ে গেছে বললেও কোনো একটা সীমারেখা আমি মানি?

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

মানি তো বটেই। কী সেটা? উদ্দেশ্যের সীমারেখা। আবার রবীন্দ্রনাথের সংজ্ঞায় ফিরে যাই। “যে প্রকাশচেষ্টার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, আপন প্রয়োজনের রূপকে নয়, বিশুদ্ধ আনন্দরূপকে ব্যক্ত করা, সেই চেষ্টারই সাহিত্যগত ফলকে আমি রসসাহিত্য নাম দিয়েছি।” সাহিত্যের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আবহমানকাল ধরে চলছে। রবীন্দ্রনাথের আমলেও জোরদার বিতর্ক চলছিল। সেইসময় অনেকের মত ছিল সাহিত্যের উদ্দেশ্য লোককে শিক্ষিত করা। রবীন্দ্রনাথ তাতে ঘোর আপত্তি করেছিলেন। ওই সাহিত্যের পথে বইতেই ‘বাস্তব’ নামে প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন “লোক যদি সাহিত্য হইতে শিক্ষা পাইতে চেষ্টা করে তবে পাইতেও পারে, কিন্তু সাহিত্য লোককে শিক্ষা দিবার জন্য কোনো চিন্তাই করে না। কোনো দেশেই সাহিত্য ইস্কুল-মাস্টারির ভার লয় নাই। রামায়ণ মহাভারত দেশের সকল লোকে পড়ে তাহার কারণ এ নয় যে, তাহা কৃষাণের ভাষায় লেখা বা তাহাতে দুঃখী-কাঙালের ঘরকরনার কথা বর্ণিত। তাহাতে বড়ো বড়ো রাজা, বড়ো বড়ো রাক্ষস, বড়ো বড়ো বীর এবং বড়ো বড়ো বানরের বড়ো বড়ো লেজের কথাই আছে। আগাগোড়া সমস্তই অসাধারণ। সাধারণ লোক আপনার গরজে এই সাহিত্যকে পড়িতে শিখিয়াছে।” সাহিত্যের উদ্দেশ্য নিয়ে এতরকম পরস্পরবিরোধী মতামত আছে, যে তা থেকে কোনো মোদ্দাকথা বের করা অসম্ভব। এই হলে যতজন বসে আছেন তাঁদের প্রত্যেককে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কেন সাহিত্য পড়েন? আলাদা আলাদা উত্তর পাওয়া যাবে। আবার সাহিত্যিকদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কেন লেখেন? তাহলেও কোনো একটা উত্তর পাওয়া যাবে না। কিন্তু একথা ঠিক, যে বিন্দুমাত্র আত্মসম্মান আছে এমন কোনো সাহিত্যিক বলবেন না “লিখতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু লেখা আমার চাকরি, তাই লিখি।”

সাংবাদিকদের অনেককে জিজ্ঞেস করলে কিন্তু এই উত্তরটা পাওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ সাহিত্যের মূলে আছে মানসিক প্রয়োজন বা আরেকটু তরল করে বললে, সাহিত্য হৃদয় সংক্রান্ত ব্যাপার। সাংবাদিকতার মূলে আছে ব্যবহারিক প্রয়োজন। কথাটা শুধু সাংবাদিকের দিক থেকেই সত্যি তা নয়। একজন পাঠকও যে জন্যে পয়সা দিয়ে গল্পের বই কেনেন, সেই কারণেই খবরের কাগজ কেনেন কি? যে কারণে হলে গিয়ে বা মোবাইলে সিনেমা দ্যাখো তোমরা, ঠিক সেই কারণেই টিভিতে বা মোবাইলে খবর শোনো কি? তা তো নয়। সাহিত্য পড়ো বা সিনেমা দ্যাখো উপভোগ করার জন্যে। কিছু ক্ষেত্রে হয়ত নতুন কিছু জানার জন্যে। কাগজ পড়ো বা টিভিতে কি মোবাইলে খবর পড়ো চারপাশে কী হচ্ছে জানতে চাও বলে। যা হচ্ছে তার সঙ্গে নিজের রোজকার ভালমন্দ জড়িয়ে আছে বলে। কালিদাস, রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপিয়রের লেখা যদি কেউ না-ই পড়ে তার কী ক্ষতি হবে? ভারতের মত দেশে বেশিরভাগ লোকই তো সাহিত্য পড়ে না। কারণ সাহিত্য পড়তে গেলে যে প্রাথমিক পড়াশোনা করা দরকার তার সুযোগই পায় না। যারা পায় তাদের অনেকের হাতেও খাওয়া, পরা, থাকার ব্যবস্থা করে এবং পাঠ্য বইয়ের ব্যবস্থা করে এতটা অতিরিক্ত পয়সা থাকে না যে সাহিত্য পাঠ করার জন্যে শখ করে বই কিনবে। কিনে পড়ার ক্ষমতা না থাকলেও মানুষ যাতে বই পড়তে পারে তার জন্যে লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার বলে একটা চমৎকার জিনিস মানুষ আবিষ্কার করেছিল। কিন্তু সে জিনিস তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করে ফেলেছি। সে যা-ই হোক, আর্থিক ক্ষমতা না থাকলেও কিন্তু মানুষ খবর সংগ্রহ করতে চেষ্টা করে। নিজে কাগজ কিনতে না পারলে দোকানে গিয়ে পড়ে, প্রতিবেশীর কাগজ চেয়ে নিয়ে পড়ে। ইদানীং অবশ্য কাগজের জনপ্রিয়তা কমছে। কিন্তু মোটামুটি সকলেই টিভিতে খবর শোনে। নিদেনপক্ষে হাতের মোবাইলে বিভিন্ন ওয়েবসাইট খুলে খবর দেখে। ফেসবুকে দেখে, হোয়াটস্যাপে দেখে। অনেকসময় ভুয়ো খবরও দেখে ফ্যালে, কিন্তু দ্যাখে। মানুষের খবরের খিদে কিছুতেই মেটে না।

সাহিত্য আর সাংবাদিকতা যাদের জন্যে, অর্থাৎ পাঠক বা দর্শক – তাঁদের উদ্দেশ্যে যখন এরকম তফাত আছে, তখন সাহিত্য আর সংবাদ উৎপাদনের উদ্দেশ্যেও তফাত থাকতে বাধ্য। সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য মানুষকে অবগত করা। কী বিষয়ে? তা ঠিক করে সংবাদ পরিবেশকরা, চলতি কথায় সংবাদমাধ্যম। যেখানে সাংবাদিকরা চাকরি করেন। অর্থাৎ খবরের কাগজ বা চ্যানেল বা ওয়েবসাইট বা নিউজ এজেন্সি। পৃথিবীর যে কোনো দেশের খবরের কাগজ হাতে নিলে বা খবরের সাইট খুললে বা খবরের চ্যানেল দেখলে দেখা যাবে বিভাগগুলো মোটামুটি একই। রাজনীতির খবর, অর্থনীতির খবর, খেলার খবর, বিনোদন জগতের খবর। আমাদের দেশে এখনো খুব বেশি চল নেই যে দু ধরনের খবরের, সেগুলো হল পরিবেশ সম্পর্কিত খবর আর বিজ্ঞানের খবর। কিন্তু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে একেকটা সংবাদমাধ্যমে একেকটা বিভাগের গুরুত্ব একেকরকম। কেউ রাজনীতির খবর বেশি পরিবেশন করে, কেউ সিনেমা-টিনেমা নিয়ে বেশি মেতে থাকে, কেউ আবার খেলা নিয়ে। যারা রাজনীতির খবর বেশি দেয় তাদের মধ্যেও কেউ এ দলের খবর বেশি দেয়, কেউ ও দলের খবর বেশি দেয়। এই তফাতগুলো কেন হয়? সে প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে আগে অন্য একটা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া দরকার। এই যে বললাম, মানুষকে অবগত করা। আচ্ছা, অবগত হওয়ার দরকারটা কী? এই বুনিয়াদপুরে বসে যদি না-ই জানা যায় কলকাতায় কী হচ্ছে, দিল্লিতে কী হচ্ছে, ইউক্রেনের রাজধানী কিভে কী হচ্ছে বা নিউইয়র্কে কী হচ্ছে; তাতে ক্ষতিটা কী?

ক্ষতি ছিল না, যদি আমরা একটা রাজতান্ত্রিক বা একনায়কতান্ত্রিক দেশে বাস করতাম। আমাদের অধিকার বলে কিছু থাকত না, আইনকানুন বলেও কিছু থাকত না। রাজা বা একনায়কের মুখের কথাই হত আইন, আমাদের সবাইকে মুখ বুজে সেই আইন মেনেই চলতে হত। প্রতিবাদ করলেই পুলিস মিলিটারি ইত্যাদি দিয়ে মারধোর করা হত, জেলে পুরে দেওয়া হত, গুমখুন করা হত। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট ইংল্যান্ডের রানির শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার তিন বছরের মাথায়, ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি, আমরা, মানে ভারতের সাধারণ নাগরিকরা, একটা কাণ্ড করে বসেছি। আমরা একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান চালু করেছি। পৃথিবীর অন্য অনেক গণতান্ত্রিক দেশের মত এই সংবিধান অনুযায়ী আমাদের কিসে ভাল, কিসে মন্দ; কোন আইনটা করা হবে আর কোন আইনটা বাতিল করা হবে, আমাদের প্রতিনিধি হয়ে কারা দেশ চালাবে – এসব ঠিক করার দায়িত্ব আমরা নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছি। তা এইসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো আমরা নেব কী করে যদি কোথায় কী হচ্ছে সে সম্পর্কে অবগতই না থাকি? আর অবগত থাকা মানে মূলত খারাপ কী কী হচ্ছে সে সম্পর্কে অবগত থাকা। মানে আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কোথায় কোথায় তাঁদের যে দায়িত্ব আমরা দিয়েছি ভোটের মাধ্যমে, তা থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন সে সম্পর্কে অবগত থাকা। মানে ঘুষ নিচ্ছেন কি? আমাদের ভুল বুঝিয়ে বা অন্ধকারে রেখে এমন কোনো আইন তৈরি করছেন কি যাতে আমাদের ক্ষতি হতে পারে? তাঁদের হাতে যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে – মানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, পুলিসবাহিনী, সেনাবাহিনী – সেগুলো ব্যবহার করে এমন কিছু করছেন কি, যাতে তাঁরাই যে আমাদের ভৃত্য সেই ব্যাপারটা উল্টে গিয়ে আমরা তাঁদের ভৃত্য হয়ে যাই? যেসব সরকারি পরিষেবা আমাদের পাওয়ার কথা, তা আমরা সবাই পাচ্ছি কি? এমন নয় তো, যে কলকাতায় সরকারি হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু বুনিয়াদপুরে পাওয়া যাচ্ছে না? বা বুনিয়াদপুরে সরকারি স্কুলে লেখাপড়া হচ্ছে, মেদিনীপুরে হচ্ছে না? বর্ধমানে মসৃণ রাস্তা হচ্ছে, কিন্তু ঔরঙ্গাবাদে হচ্ছে না? সরকার আমাদের মত সাধারণ লোকেদের মধ্যে মারদাঙ্গা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে না তো? অন্য কোনো দেশের সরকারের সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি করছে না তো, যাতে সরকারের আমাদের উপর নজরদারি করতে সুবিধা হয় এবং আমাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়? আমাদের টাকায় তৈরি সরকারি সংস্থা জলের দরে একজন, দুজন ধনী লোককে বেচে দিচ্ছে না তো?

এই সমস্ত বিষয়ে অবগত হওয়ার জন্যে একটা গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমন হতেই পারে, আমার যে সিদ্ধান্তটা মনে হয় ঠিক তোমার মনে হল সেটা ঠিক নয়। কিন্তু আমার কেন মনে হয় ঠিক, আর তোমার কেন মনে হয় ঠিক নয় তা নিয়ে তর্ক হওয়া উচিত। তর্কে আমি ভুল প্রমাণিত হলে আমাকে তোমার সিদ্ধান্ত মানতে হবে, তুমি ভুল প্রমাণিত হলে তোমাকে আমার সিদ্ধান্ত মানতে হবে। এই প্রক্রিয়াতেই আমাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে বিতর্ক চলবে পৌরসভায়, পঞ্চায়েতে, বিধানসভায়, লোকসভায়, রাজ্যসভায়। তারপর সংখ্যাগরিষ্ঠ যাতে মত দেবে তাই হবে। একেই বলে গণতন্ত্র। কিন্তু আমাদের হাতে যদি তথ্যই না থাকে, তাহলে মত দেব কিসের ভিত্তিতে? দিলে কিছুদিন পরে বোঝা যাবে এমন মত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যা অধিকাংশ মানুষের মত হলেও আসলে তাদের পক্ষেই ক্ষতিকর হয়েছে। এমনটা ঘটেও, কারণ মানুষ মাত্রেই ভুল করে। একা করে বলেই অনেকে মিলেও ভুল করতে পারে। ভুল শোধরাতে হলেও আগে তো বুঝতে হবে ভুল করেছি। কী করে বুঝব, যদি আমার কাছে তথ্যই না থাকে?

আরো পড়ুন বাংলা সাংবাদিকতা: সততা ও নিরপেক্ষতার মূর্ত প্রতীক

এই ব্যাপারগুলো শুধু সরকারের সঙ্গে নাগরিকের সম্পর্কের বেলায় নয়, যে কোনোরকম ক্ষমতায় যে আছে তার সঙ্গে যে ক্ষমতায় নেই তার সম্পর্কের বেলাতেই সত্যি। সুতরাং এবার নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে, অরওয়েল কেন বলেছিলেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে তাই, যা কেউ না কেউ প্রকাশিত হতে দিতে চায় না? কোনো ক্ষমতাশালী তো চাইবে না তার কুকীর্তির খবর প্রকাশ পাক। যে সৎ ক্ষমতাশালী সে-ও হয়ত চাইবে না তার ভুলচুক লোকে জেনে যাক, কারণ সে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। সুতরাং সাংবাদিকতা করা মানেই হল, সজাগ দৃষ্টিতে যে ক্ষমতাশালী – সে সরকার হতে পারে, ব্যবসায়ী হতে পারে, মাস্টার হতে পারে, ডাক্তার হতে পারে, উকিল হতে পারে – তার দোষত্রুটি খেয়াল করা এবং সকলের চোখের সামনে সত্য উদ্ঘাটিত করা। আমি যখন সাংবাদিকতার ছাত্র ছিলাম, আমাদের এক মাস্টারমশাই বলেছিলেন “একশোটা শকুন মরলে একটা সাংবাদিক জন্মায়।” কথাটা কিন্তু নিন্দাসূচকভাবে বা ব্যঙ্গার্থে বলা নয়। বলার অর্থ হল, শকুনকে যেমন সারাক্ষণ ভাগাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, সাংবাদিকেরও কাজ হল সারাক্ষণ কোথায় কী অন্যায় হচ্ছে খুঁজে যাওয়া। আমাদের চারপাশ পরিষ্কার রাখার জন্যে শকুন কতটা প্রয়োজনীয় প্রাণী সে সম্পর্কে পুরনো দিনের লোকেদের ধারণা ছিল, আমাদের নেই। ফলে শকুন এখন একটা লুপ্তপ্রায় প্রাণী। সাংবাদিকও লুপ্তপ্রায় প্রাণী। কারণ যুগের হাওয়ায় সংবাদ হয়ে গেছে তেল, সাবান, শ্যাম্পু, এয়ার কন্ডিশনারের মত একটা পণ্য। ফলে সাংবাদিকরা চাকরি করেন যেসব সংবাদমাধ্যমে তারা আর সাংবাদিকদের দিয়ে শকুনের কাজটা করাতে চায় না, সেলসম্যান বা সেলসগার্লের কাজ করায়। কে না জানে, ব্যবসা করতে গেলে ক্ষমতাশালীর সঙ্গে বিবাদ করা চলে না? কিছু নাছোড়বান্দা সাংবাদিক এখনো আছেন, যাঁরা কিছুতেই বিক্রেতা হয়ে যেতে রাজি নন। তাঁরা কেউ ইন্টারনেটের সুযোগ নিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খুলছেন, ফেসবুক পেজ খুলছেন। আমরা কয়েকজন যেমন একটা ওয়েবসাইট খুলেছি। কিন্তু এইভাবে সাংবাদিকতা করার অসুবিধা হল বড় বড় সংবাদমাধ্যমের মত আমাদের বিরাট পুঁজি নেই, বিজ্ঞাপন নেওয়ার উপায় নেই। কারণ বিজ্ঞাপন নিলেই বিজ্ঞাপনদাতারা হয়ে যাবেন ক্ষমতাশালী, তখন আর তাঁরা আমাদের শকুনের কাজটা করতে দেবেন না।

এই কারণেই আজকাল বেশকিছু ক্রাউড-ফান্ডেড মিডিয়া তৈরি হয়েছে। মানে তুমি সেই সাইটে গিয়ে কোনো লেখা পড়লে বা ভিডিও দেখলে, দেখে তার জন্যে টাকা দিলে। সেই টাকাতেই যারা কাজ করছে তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হবে, সাইটের কাজকর্ম চলবে। তোমরা নিশ্চয়ই জানো এরকম অনেক সংবাদমাধ্যমের কথা। আমি যে সাইটের সঙ্গে যুক্ত সেটাও এরকমই একটা সাইট। কিন্তু বাংলায় এভাবে কাজ চালানো দ্বিগুণ শক্ত। কারণ সারা ভারতের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের উপরেও হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা তো চলছেই, সেইসঙ্গে বাংলা যে একটা ফালতু ভাষা, সেটা বাঙালিরা নিজেরা সবচেয়ে বেশি করে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। এই যে আমি বক্তৃতা দিচ্ছি বাংলায়, আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সংস্কৃত বিভাগ। অথচ এই ফ্লেক্সটা লেখা হয়েছে ইংরেজিতে। এমতাবস্থায় তোমাদের বাংলায় সাংবাদিকতা করতে বলি কী করে? আদৌ সাংবাদিক হতেই বা বলি কী করে, যা তোমাদের মাস্টারমশাইরা আমাকে বলতে বলছেন? বলার সমস্যা আছে।

পৃথিবীর কোন দেশে সাংবাদিকরা কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন তা নিয়ে প্রতি বছর একটা সমীক্ষা হয়। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ বলে এক আন্তর্জাতিক সংগঠন এই সমীক্ষা করে। ২০২২ সালের সর্বশেষ সমীক্ষায় ভারতের স্থান ছিল ১৮২টা দেশের মধ্যে ১৫০ নম্বরে। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক – যাঁদের মধ্যে তোমাদের সবচেয়ে জানা নাম হয়ত গৌরী লঙ্কেশ – খুন হয়ে গেছেন। খুন হয়ে যাওয়া সাংবাদিকদের একটা লম্বা তালিকা দেওয়া সম্ভব। বক্তৃতা অতি দীর্ঘ হয়ে যাবে বলে সে তালিকা দিচ্ছি না। শুধু এইটুকু তোমাদের বলে দিই, যে খুন হয়ে যাওয়াই একমাত্র সম্ভাব্য বিপদ নয়। তোমরা হয়ত সিদ্দিক কাপ্পান বলে একজনের নাম শুনেছ। তিনি কেরালার সাংবাদিক। উত্তরপ্রদেশে একটি দলিত মেয়ে ধর্ষিত হয়, খুন হয়, তারপর অভিযোগ ওঠে যে রাজ্যের পুলিসই নাকি দেহটা তার বাবা-মাকে অন্ধকারে রেখে রাতের অন্ধকারে জ্বালিয়ে দিয়েছে। সারা পৃথিবীর লোক টিভির পর্দায় দেখে ফেলেছে ঘটনাটা। তারপর সে ঘটনা নিয়ে আরও গভীরে লিখবেন বলে কেরালা থেকে সিদ্দিক যাচ্ছিলেন হাথরাসে। তিনি পৌঁছবার আগেই, কোনো প্রতিবেদন লেখার আগেই, স্রেফ লিখতে পারেন বলেই পুলিস তাঁকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পুরে দেয়। তারপর দুবছরের বেশি সময় কারাবাস করে সিদ্দিক এই কিছুদিন আগে জামিন পেয়েছেন। জামিন, খালাস নয় কিন্তু। মানে মামলাটা এখনো চালু আছে। অথচ পুলিস তাঁর বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ করেছে তার পক্ষে বিন্দুমাত্র প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

এইরকম বিপদের মুখে আমাদের দেশের সাংবাদিকরা এখন সাংবাদিকতা করেন। তোমরা ঠিক আমার ছেলেমেয়ের বয়সী নও, কিন্তু আমার ভাইবোনের মত তো বটেই। তা আমি এগুলো জেনেশুনে কী করে তোমাদের বলি, যে সাংবাদিকতা করো? ভারত সরকার অবশ্য বলেছে যে ওই সমীক্ষাটা ভুল। মেথডোলজি ভুল, অনেক কম নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু আমি যদি কোনো মেয়ের বাবা না হতাম, তাহলে হয়ত কায়মনোবাক্যে সরকারের কথা বিশ্বাস করে নিয়ে তোমাদের বলতে পারতাম, ঠিক আছে। সরকার একটা কথা বলেছে আর একটা সংগঠন উল্টো কথা বলেছে। তোমরা নিজেরা ময়দানে নামো, নেমে পরখ করে দ্যাখো সত্যিটা কী। কিন্তু আমি বাপু তোমাদের সে ঝুঁকি নিতে বলতে পারছি না।

এ প্রসঙ্গে বলে দিই, ইতিহাস বলছে কোনো দেশ যখন সাংবাদিকদের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, তখন সাহিত্যিকরাও শান্তিতে থাকতে পারেন না। তোমরা তেলুগু ভাষার কবি ভারভারা রাওয়ের কথা হয়ত জানো। এই অশীতিপর কবিও দীর্ঘকাল কারান্তরালে কাটিয়েছেন ওইরকমই আরেকটা অভিযোগে, যা পুলিস আজ অব্দি প্রমাণ করতে পারেনি। আপাতত জামিনে বাইরে আছেন অসুস্থ বলে। পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে অভিজিৎ রায়ের মত ব্লগারদের হত্যার কথাও তোমরা নিশ্চয়ই জানো। ব্লগাররা ঠিক সাহিত্যিক না হলেও সাংবাদিকতা আর সাহিত্যের মাঝামাঝি একটা জায়গায় বিচরণ করেন বলা যায়। আবার বিশ্ববিখ্যাত সলমন রুশদির উপর প্রাণঘাতী আক্রমণের কথাও নিশ্চয়ই জানো। তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন, একটা চোখ প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদাহরণ অসংখ্য, যা থেকে বোঝা যায় সারা পৃথিবীর সাংবাদিক এবং সাহিত্যিকদের জন্যে এ বড় সুখের সময় নয়, এ বড় আনন্দের সময় নয়।

কী করে সাংবাদিক হতে হয় আসলে সেটাই আমি এতক্ষণ ধরে বলেছি, যদি তোমরা বুঝে থাকো। কিন্তু কী করে সাংবাদিকতার চাকরি পেতে হয় তা বলা আমার সাধ্যের বাইরে। কারণ সমস্ত সংবাদমাধ্যম ব্যাপকভাবে সাংবাদিক ছাঁটাই করেছে গত ৫-৬ বছরে। কোভিড-১৯ আসার আগে থেকেই বহু কাগজ, টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছিল। অতিমারীর সময়ে ওটাকে অজুহাত করে আরও বেশি কর্মী সংকোচন করা হয়েছে, বহু বড় বড় কাগজ তাদের অনেক জায়গার সংস্করণ তুলে দিয়েছে, যেগুলো রেখেছে সেখানেও প্রচুর সাংবাদিক এবং অন্যান্য বিভাগের কর্মীদের চাকরি গেছে। যে সাংবাদিকদের চাকরি যায়নি, তাঁরা অরওয়েলের ভাষায় পাবলিক রিলেশন করতে বাধ্য হচ্ছেন। আজকাল পাবলিক রিলেশন যেহেতু নিজেই একটা আলাদা পেশা, সেহেতু ও কাজটা করতে হলে সরাসরি তাতে যাওয়াই ভাল। কারণ তাতে সাংবাদিকদের চেয়ে বেশি মাইনে পাওয়া যায়। কোথায় শিখবে? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় – তিনটে জায়গাতেই সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগের পাঠক্রমের অঙ্গ হিসাবেই ওটা পড়ানো হয়। যারা আরেকটু দূরে যেতে পারবে, তারা ওড়িশার ঢেঙ্কানল বা দিল্লির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মাস কমিউনিকেশনসে পড়তে পারো। এছাড়া আছে চেন্নাইয়ের এশিয়ান কলেজ অফ জার্নালিজম। এগুলো অনেকদিনের প্রতিষ্ঠান। এছাড়া একগুচ্ছ নতুন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে যারা সাংবাদিকতা এবং পি আর পড়ায়। তাদের তত্ত্বতালাশ তোমরা গুগল করলেই পাবে।

যে কথাটা বলে শেষ করব সেটা হল সাহিত্য যেমন সাংবাদিকতার মত অপ্রিয় সত্য উদ্ঘাটন করে তেমন সাংবাদিকতাও দেখার গভীরতায় এবং ভাষার সৌন্দর্যে সাহিত্যে বা শিল্পে উত্তীর্ণ হতে পারে। যে কারণে শুরুতেই প্রশ্ন তুলেছিলাম, অলঙ্করণ করলে কি সাংবাদিকতা আর সাংবাদিকতা থাকে না? উত্তর হল আলবাত থাকে। বস্তুত, সঠিক অলঙ্করণ ছাড়া সাংবাদিকতা যে বার্তা দিতে চাইছে তা ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। পাঠকের কাছে আদৌ না পৌঁছতে পারে। সাংবাদিকতা সম্পর্কে আমরা এভাবে ভাবতে অভ্যস্ত নই, কারণ সাংবাদিক বলতেই আমরা রিপোর্টার বুঝি। কথাটার মানে আসলে সাংবাদিক নয়। রিপোর্টার মানে প্রতিবেদক, যিনি যা ঘটেছে তার প্রতিবেদনটা এনে দেন। সেটা অবশ্যই সাংবাদিকতা, কিন্তু ওই প্রতিবেদনকে যথাযথভাবে সাজিয়ে পাঠক বা দর্শকের সামনে হাজির করা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। সেই কাজ যাঁরা করেন তাঁদের মধ্যে অনেকরকম লোক আছেন। এক দলের নাম সম্পাদক। কোন খবরটা নেব, কোনটা নেব না তা সম্পাদকরা ঠিক করেন। কোন খবরটাকে কীভাবে নেব তাও সম্পাদকরা ঠিক করেন। কোন খবরটা কাগজের প্রথম পাতায় যাবে, কোনটা ভিতরে যাবে; কোনটা প্রথম পাতায় ছবিসহ বড় করে যাবে, কোনটা ছোট করে এক কলমে যাবে – এই সমস্ত সিদ্ধান্ত, যা বাদ দিয়ে সাংবাদিকতা হয় না, সেগুলো সম্পাদকরা নেন। উপরন্তু সংবাদের অলঙ্করণ মানে শুধু সম্পাদনাও নয়। চিত্রসাংবাদিক বা ফটোগ্রাফারদের আমরা সাংবাদিক ভাবতে অভ্যস্ত নই, কিন্তু তাঁদের কাজ আসলে সাংবাদিকতার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এমন সব ছবি তোলা সম্ভব যে ছবি নিজেই গোটা ঘটনাটা বলে দেবে, আলাদা করে প্রতিবেদন লেখার দরকারই হবে না। তার উপর কাগজ, টিভি, ওয়েবসাইট – সর্বত্রই আছেন গ্রাফিক ডিজাইনাররা। তাঁরা কোনো প্রতিবেদনের নির্যাস বা প্রতিবেদনের অতিরিক্ত কিছুও আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে পারেন। এতরকম অলঙ্করণ ঠিকঠাক হলে, তবে কাজটা সাংবাদিকতা হয়ে ওঠে। মানে প্রকৃত অলঙ্করণ ছাড়া সাংবাদিকতা হয় না।

এছাড়াও সাংবাদিকতার মধ্যেই প্রতিবেদন বা রিপোর্টের চেয়েও গভীরে গিয়ে লেখা হয় এবং সাহিত্যে উত্তীর্ণ হতে পারে এরকম এক স্বতন্ত্র ধারা আছে। তার নাম রিপোর্টাজ। বাংলা ভাষায় যাঁরা ভাল রিপোর্টাজ লিখেছেন তাঁদের একজন দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি আমাদের ভাষার একজন উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিকও বটে। তাঁর একটা ছোট্ট রিপোর্টাজের নাম ‘মাটিতে এক ঋতু’। তার শেষদিকটা পড়ে এই বক্তৃতা শেষ করব। এখানে দীপেন্দ্রনাথ লখনৌয়ের উপকণ্ঠে একটা বস্তির কথা লিখছেন।

… পেছনে ভাঙা লোহার বেড়ার ওপর দিয়ে রেললাইন চলে গেছে কানপুরের দিকে। সামনেও কালো পিচের চওড়া রাস্তা। বাঁ দিকে পচা নালা, দক্ষিণে মজা নর্দমা। ধার ঘেঁষে মানুষ তার প্রতিদিনের কাজটুকু সেরে রেখেছে। জমাট দুর্গন্ধ। আর এরই মধ্যে ওদের সেই এক টুকরো পৃথিবী। যার ওপর দিয়ে অন্তত খ্রিস্ট জন্মের পরও এক হাজার ন’শো চুয়ান্নটি বসন্ত চলে গেছে।

মাথা হেঁট করে ফিরে আসছিলাম। কিন্তু, হঠাৎ থমকে দাঁড়াতে হল।

অবাক বিস্ময়ে দেখলাম একটা খুপরির দোরগোড়ায় আধহাতটাক জমি কুপিয়ে কে যেন দুটো ঝাউ আর কী একটা বুনো ফুলগাছের ডাল সযত্নে পুঁতে দিয়েছে। এত ছোট যে চোখে পড়ে কি পড়ে না। জমিটার চারপাশ সুন্দর করে নিকোনো। এত তুচ্ছ যে সহজেই দৃষ্টি এড়িয়ে যায়।

জিজ্ঞেস করলাম : কে পুঁতেছে রে?

আধডজন ছেলে কাছেই খেলা ছেড়ে অবাক হয়ে আমাদের দেখছিল। ছুটে গিয়ে সামনের অন্ধকার কুঠরিটা থেকে কানহাইয়ালালকে ধরে আনল। নাম জানতে চাইলাম। রুগ্ন বাছুরের মতো নির্বোধ আর অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে সে উত্তর দিল।

বললাম : এই ডাল তুমি পুঁতেছ এখানে?

অপরাধীর ভঙ্গিতে ঘাড় নাড়ল সে।

জিজ্ঞেস করলাম : কেন?

মিষ্টি সুরে দেহাতি ঢঙে সে উত্তর দিল : কাহে, গাছ হোবে।

গাছ হলে কী হবে?

আবার সে বিমূঢ় দৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর ফিক করে হেসে ফেলল হঠাৎ। হলদে রঙের ছোট্ট দাঁতগুলো বার করে কেমন এক সলজ্জ ভঙ্গিতে বলল : কাহে, ফুল হোবে।

বললাম : ফুল হোনেসে কেয়া হোগা কানহাইয়ালাল?

কিছু না ভেবেই ঝটপট উত্তর দিল সে : কাহে, সুন্দর হোবে।

আর প্রশ্ন করতে পারলাম না। দেখলাম ওখানকার শ্রমিকনেতা, আমাদের সঙ্গী সরফজি এক দৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁরও চোখে শিল্পীর দৃষ্টি। তাঁর ঠোঁটেও কী এক সার্থকতার হাসি।

তারপর কলকাতায় ফিরে এসেছি।

এখানে দৈনিক স্টেটসম্যান পড়ি, সাপ্তাহিক ‘দেশ’-এর পাতা ওলটাই। অ্যালবার্ট হলে বসে বিবর্ণ কফির স্বাদে মশগুল থেকে বন্ধু আর পরিচিতের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে, সাহিত্য নিয়ে তর্ক করি। আবার, ইতিহাসের নতুন মূল্যবোধকে যাচাই করার জন্য ডাক এলে ছুটে যাই ময়দানের সভায়। জীবন এখানে দ্রুত, বৈচিত্র্য আর পরস্পর-বিরোধিতার আবর্তে প্রাণ এখানে অবিরাম দোলায় দুলছে।

কিন্তু এরই মধ্যে থেকে থেকে মনে পড়ে যায় সেই দিনটা। মন্ত্রের মতো কতকগুলো কথা আর স্বপ্নের মতো গোটা দুই মুখ।

আর মনে হয়, আবার ফাল্গুন আসছে।

মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.