কলকাতার রাজপথে কয়েক হাজার মানুষ যুদ্ধের বিরুদ্ধে মিছিল করলেন। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ আরম্ভ হয়েছে। শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন, আকাশ জুড়ে কালো ধোঁয়ার আস্তরণ। মানুষকে হত্যা করার নানাবিধ আয়োজন। যুদ্ধবিরোধী মিছিল নিশ্চয়ই আমাদের চেতনায় ধাক্কা দেয়, কিন্তু সব যুদ্ধবিরোধী মিছিলেই একটি কথা অনুচ্চারিত থেকে যায়। তা হল যুদ্ধ মানেই পরিবেশের ভারসাম্যের উপর এক চরম আঘাত। বিশ্বজুড়ে পরিবেশ নিয়ে আলোচনা যখন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, তখন যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ সভা ও মিছিলে পরিবেশ ধ্বংসের সঙ্গে যুদ্ধের সম্পর্কটিকে উপেক্ষা করা যায় না।

বেশ কয়েক বছর আগে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক শক্তিধর ক্লাবের নতুন সদস্য হিসাবে বিশ্বের দরবারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তা নিয়ে নানা দেশে নানা মুনির নানা মত। আমেরিকা সবথেকে বেশি সোচ্চার কারণ তার ভয় বেশি। তার বিশাল সাম্রাজ্যে আঘাত হানার জন্য আরেকটি আণবিক শক্তিধর দেশের আবির্ভাব ঘটল। সবাই নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত, সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে এ নিয়ে সভা হয়েছে। বিশ্বের মানুষ সর্বক্ষণ আরেকটি যুদ্ধের আশঙ্কায়। কিন্তু কোনো দেশই প্রত্যেকটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ প্রকৃতির কতটা ক্ষতি করে তা নিয়ে সোচ্চার হয়নি। আমেরিকা নিজেই প্রায় হাজারেরও বেশি এরকম বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। আমেরিকার পর রাশিয়া, চীন, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ভারত ও পাকিস্তান — প্রত্যেকেই আণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বলার চেষ্টা করেছে শান্তির জন্যই নাকি এই বিস্ফোরণ। একটি দেশও আণবিক বিস্ফোরণে প্রকৃতির ভারসাম্যের স্থিতাবস্থার যে পরিবর্তন ঘটে সে সম্পর্কে একটিও শ্বেতপত্র প্রকাশ করেনি।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

বিংশ শতাব্দীতে মানুষ প্রত্যক্ষ করেছিল দুটি বিশ্বযুদ্ধ — পারমাণবিক বিস্ফোরণ এবং লাখো লাখো মানুষের হাহাকার। নতুন শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের ঘনঘটা। আক্রান্ত মানুষ, আক্রান্ত জীবমণ্ডল, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। সমস্ত আণবিক শক্তিধর দেশই নিশ্চিতভাবে পরিবেশ দূষণের অন্যতম আসামি।

আধুনিক যুদ্ধ মানেই কামানের প্রবল গর্জন, সৈনিকদের উদ্ধত পদক্ষেপ, ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া বাহিনীর অমোঘ গতিবেগ, গণবিধ্বংসী অস্ত্রের তীব্র উল্লাস। আকাশজুড়ে মৃত্যুবাহী বিমানের কুটিল আনাগোনা এবং সমুদ্রের অন্তঃপুর থেকে উঠে আসা টর্পেডোর আকস্মিক বিভীষিকা। মাটি, জল, আকাশ — সবই মৃত্যুর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়াবহ হত্যালীলা দেখার পরেও, আজও যুদ্ধের প্রস্তুতিতে মানুষ সক্রিয়। যুদ্ধ কেবলমাত্র মৃত্যুকেই অনিবার্যভাবে আহ্বান করে না, প্রকৃতির ভারসাম্যকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রশান্ত মহাসাগরের জীববৈচিত্র্য প্রবলভাবে আক্রান্ত হয়েছিল।

গোটা ইউরোপের মাটি বারুদে মাখামাখি হয় এবং এক জ্বলন্ত ফার্নেসে পরিণত হয়। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আণবিক বিস্ফোরণ প্রাকৃতিক ভারসাম্যের উপর এক চূড়ান্ত আঘাত, যার ভয়াবহতা আজও অমলিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লক্ষ লক্ষ ল্যান্ডমাইন আফ্রিকাসহ বিভিন্ন রণাঙ্গনে ব্যবহার করা হয়েছিল। সমরবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ল্যান্ডমাইন সবথেকে উৎকৃষ্ট সৈনিক যাদের কোনো ক্ষুধা নেই, তৃষ্ণা নেই, ঘুম নেই, কর্তব্যে অবিচল। যুদ্ধ পরবর্তী স্তরে ল্যান্ডমাইনের বিস্ফোরণ প্রচুর চাষযোগ্য জমি ধ্বংস করে দিয়েছে। তাছাড়া বায়ুদূষণ করেছে।

কেবলমাত্র স্থলে নয়, জলেও ব্যাপকভাবে মাইন বা বোমার ব্যবহার সমুদ্রের অন্তঃপুরে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। যুদ্ধোত্তরকালে জলে ও স্থলে অব্যবহৃত বোমা এক দীর্ঘস্থায়ী বিভীষিকার সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধের পর সৈনিকরা চলে যায়, কিন্তু প্রায় কাউকেই জানিয়েই যায় না কোথায় কত বোমা রেখে গেল। পরবর্তীকালে সাধারণ মানুষ বোমার শিকার হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বোমা আজও বহু প্রান্তে দুঃস্বপ্নের কারণ। যখন ‘যুদ্ধ শেষ হয়’ এক জার্মান সৈনিকের কথায়, তখন “দাঁড়িয়ে থাকে মুক বধির কালো গাছগুলো যার প্রতিটি সবুজ পাতা আগুনে জ্বলে গেছে। প্রান্তর জুড়ে সবুজ শেষ। মাইলের পর মাইল কেবলমাত্র ধূসর ভাঙ্গা পাথরের সারি, যারা মৃত্যুর নীরব সাক্ষী। আর এই পাথরের খাঁজে খুঁজে পাওয়া যাবে মানুষের অস্থি যারা চিরকালের মতো ঘুমিয়ে গেল এই ধূসর প্রান্তরে।”

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানুষ নিরাপত্তার জন্য পথ হাতড়ে বেরিয়েছে, কিন্তু পায়নি। পুরনো কুটিল ক্ষমতার আবর্তে নিরাপত্তা নীতি মুছে গেছে। চূড়ান্ত হত্যালীলা দেখার পরও মানুষের আশ্চর্য স্মৃতিবিভ্রম ঘটেছে। আদিম অতীতের গহ্বর থেকে উঠে এসেছে এক দানবীয় মানুষ। একটির পর একটি যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। ভিয়েতনাম থেকে আরম্ভ করে কম্বোডিয়া, পরে বিশেষ করে আরব দুনিয়াতে দানবীয় যুদ্ধের আত্মপ্রকাশ। ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের মানুষের কৌশল ছিল গেরিলা যুদ্ধ। ফলত ভিয়েতনামে ও কম্বোডিয়ায় ব্যাপক বনাঞ্চল ছিল তাদের আচ্ছাদন। আমেরিকা ভিয়েতনামের স্বদেশপ্রেমী মানুষকে খুঁজে বের করার জন্য বিপুল বনাঞ্চল নির্মমভাবে ধ্বংস করেছিল আমেরিকান সৈনিকরা। ভিয়েতনামের যুদ্ধ একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ, কীভাবে পরিবেশ ধ্বংস হয় এবং যুদ্ধের পরও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব জনজীবনের উপর থেকে যায়। পরবর্তীকালে আফগানিস্তানের যুদ্ধ, যুগোশ্লোভিয়ার যুদ্ধ এবং নব্বইয়ের দশকের উপসাগরীয় যুদ্ধে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের উল্লাস পরিবেশ ধ্বংসের অন্যতম কারণ।

১৯৯০-৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সামুদ্রিক দূষণের ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া ব্যাপক বোমা বর্ষণ করে মেসোপটেমিয়ার ১৫,০০০ কিলোমিটার জলাভূমির জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হয়েছে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০ কোটি মানুষ কেবলমাত্র জলাভাবে মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষারত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ক্রমাগত আফ্রিকা এবং আরব ভূমিতে যুদ্ধের ফলে জলের সমস্ত রকম উৎসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে উপসাগরীয় যুদ্ধে তৈলাক্ত পাখির ছবি সমস্ত পৃথিবীকে অন্তত বোঝাতে চেয়েছিল, কেবলমাত্র পাখি নয়, পুরো জীবজগত আগামী দিনে ঠিক এইভাবেই মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করবে, যদি না যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। কিন্তু এই তৈলাক্ত পাখির ছবি মানুষকে সচেতন করতে পারেনি।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে মানবিক অধিকার রক্ষার ট্রাইবুনাল ১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক স্তরে গণবিধ্বংসী অস্ত্র সীমিত করার আহ্বান জানায়। বিশেষ করে আণবিক যুদ্ধাস্ত্র, রাসায়নিক বোমা ও নাপাম বোমার মত গণবিধ্বংসী অস্ত্র যা প্রথম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তার পরবর্তী ক্ষেত্রে ক্রমাগত ব্যবহৃত হয়েছে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে আমেরিকা, ব্রিটেন ও ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি দেশ অত্যন্ত বেআইনিভাবে ইউরেনিয়ামযুক্ত বোমা ব্যাপক হারে ব্যবহার করেছে। ইউরেনিয়াম বোমার ব্যবহার স্থলে, জলে এবং অন্তরীক্ষে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

২০০৩ সালে আমেরিকার ইরাক যুদ্ধে সমস্ত রকম গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়েছে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কোনরকম বিধিনিষেধকে এই যুদ্ধে গ্রাহ্য করা হয়নি। সমস্ত ইরাক জুড়ে চূড়ান্ত ধ্বংসলীলা চলেছে। সাম্প্রতিক যুদ্ধে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আলোচনা আরম্ভ হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৭২ সালে প্রথম সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সনদ তৈরি করা হয়। তারপর বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছে। পৃথিবীর বর্ধিত উষ্ণতা, বায়ুদূষণ ও সাম্প্রতিককালে জোহানেসবার্গে, জলের পৃথিবীব্যাপী সংকট ও মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে উপযোগী পরিবেশ দরকার তা নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও সমাজবিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ ও রাষ্ট্রনায়করা কখনোই যুদ্ধের সময়ে বা প্রস্তুতিতে যে ব্যাপক পরিবেশ দূষণ ঘটেছে তা নিয়ে আলোচনায় বিশেষ উৎসাহ দেখান না। বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আজ অবধারিত সত্য, কিন্তু এর কিছু কিছু কারণ নিয়ে আলোচনা হলেও সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ বা যুদ্ধের প্রস্তুতিতে যে ব্যাপক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে চলেছে তা নিয়ে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জও কোনো সুদৃঢ় অবস্থান নিতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মানবাধিকার সংস্থা এ ব্যাপারে একটি ডাক দেওয়া ছাড়া কোনো ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করেছে বলে অন্তত পরিলক্ষিত হয় না। কেবলমাত্র আণবিক অস্ত্র তৈরি করার জন্য ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে স্থলে ৪২৩টি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে ভূগর্ভে ১৪০০-র বেশি পরীক্ষামূলক আণবিক বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়েছে।

সাম্প্রতিক রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এক নতুন মাত্রা নিয়েছে। ইউরোপের বুকে আজ বারুদের আগুন। আণবিক বিপর্যয়ের ফলে চেরনোবিলের মাটি আজও মনুষ্যশূন্য। বর্তমান যুদ্ধ চেরনোবিলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার বিষক্রিয়া হবে মারাত্মক। পৃথিবী জুড়ে শান্তির বার্তায় যুদ্ধ বন্ধের আওয়াজ উঠলেও একবারও উচ্চারিত হচ্ছে না, যে এই যুদ্ধ পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। একদিকে রাষ্ট্রনায়করা মিলিত হয়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলছেন, অন্যদিকে যুদ্ধ করে বা যুদ্ধের প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে ক্রমাগত উষ্ণায়ন বৃদ্ধি করছেন। আজ যুদ্ধ বন্ধ করা প্রয়োজন নির্মম পরিবেশ সংহার বন্ধ করতেও। যুদ্ধ মানেই বারুদের ব্যবহার আর তাপ উৎপাদন।

আধিপত্যবাদের সর্বশেষ পরিণতি যুদ্ধ। পৃথিবীজুড়ে শান্তির সপক্ষে লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের পরিবেশ ধ্বংসকারী ভূমিকা নিয়েও সার্বিক আন্দোলন প্রয়োজন।

পৃথিবীজুড়ে আণবিক অস্ত্র তৈরি করার জন্য যে সমস্ত ধ্বংসাত্মক কাজ ক্রমাগত করা হচ্ছে তার বিষময় ফলে আমাদের গোটা পরিবেশ আক্রান্ত। পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে মানুষ এই বিষ পান করছে। পৌরাণিক আখ্যানে আছে, সাগর মন্থনে শিব বিষপান করে নীলকণ্ঠ হয়েছিলেন, তারপর অমৃত পানে তাঁর জীবন রক্ষা হয়। কিন্তু পৃথিবীব্যাপী এই বিষের জ্বালা মেটাতে পারে কোন অমৃত, তা জানি না।

তবুও মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।

মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.