বিজেপিকে সমর্থন নয়, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে পৃথকভাবে প্রার্থী দেবে হিন্দু সংহতি। উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে ১৭০টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এই হিন্দু সংগঠনটি৷ তবে নিজেদের নামে নয়, বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করার জন্য ‘জন সংহতি’ নামে একটি নতুন দল গঠন করা হয়েছে৷ সেই দলের নামেই নির্বাচনে লড়বে হিন্দু সংহতি।

রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে হিন্দু সংহতির নেতা দেবতনু ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, বিজেপি মুখে হিন্দুত্বের কথা বললেও আদতে হিন্দুদের সঙ্গে প্রতারনা করছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে বিজেপি জানিয়েছিল, ভোটে জিতলেই তারা সিএএ চালু করবে৷ কিন্তু তা নিয়ে ক্রমাগত টালবাহানা করা হচ্ছে। দেবতনু বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি কার্যত তৃণমূলের বি-টিমে পরিণত হয়েছে।  একের পর এক দলত্যাগী তৃণমূল নেতাদের দলে নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের যে মুসলিম নেতারা বিজেপির হিন্দু কর্মীদের খুন করেছেন, তাঁরাই এখন বিজেপির নেতা। ফলে পশ্চিমবঙ্গের এই বিজেপির সঙ্গে হিন্দুত্বের কোনও সম্পর্ক নেই।” হিন্দু সংহতি নেতার দাবি, বিজেপি বাঙালি হিন্দুর দাবিদাওয়া নিয়ে সচেতন নয়, বরং উত্তর ভারতীয় হিন্দুত্বকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। দেবতনুর কথায়, “আমরাই একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা বাঙালি হিন্দুর দাবিদাওয়ার কথা বলছি। বিজেপি যে ‘বিরাট হিন্দুত্বে’র কথা বলে, আমরা সেই ভাবনার শরিক নই। হিন্দু সংহতি গোপাল মুখোপাধ্যায়কে (গোপাল পাঁঠা নামে পরিচিত। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ : নাগরিক ডট নেট) বাংলার হিন্দুত্বের আইকন বলে মনে করি। বিজেপি ওঁর নামটুকুও নেয় না।”

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

হিন্দু সংহতির প্রতিষ্ঠা হয় ২০০৮ সালে। প্রতিষ্ঠাতা তপন ঘোষ দীর্ঘদিন আরএসএসের প্রচারক ছিলেন। পরে মতপার্থক্যের জেরে সংগঠন ছেড়ে দেন। দেবতনু জানান, ২০১১ সালের নির্বাচনে তৃণমূলকে সমর্থন করেছিল হিন্দু সংহতি। ২০১৪ সালের লোকসভায় সরাসরি প্রচার না করলেও পরোক্ষে সমর্থন করা হয়েছিল বিজেপিকে। ২০১৬ সালে তপন ঘোষের নেতৃত্বে হিন্দু সংহতি তৃণমূলের পক্ষে ছিল। এরপর তপনবাবুর সঙ্গে হিন্দু সংহতির বর্তমান নেতৃত্বের বিরোধ বাধে। নিজের হাতে গড়া সংগঠন ছেড়ে দেন তপন ঘোষ। তৈরি করেন নতুন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘সিংহবাহিনী’। তপনবাবু চলে যাওয়ার পরে হিন্দু সংহতির নেতৃত্বে আসেন দেবতনু। ২০১৯ সালের নির্বাচনে সরাসরি বিজেপির পক্ষে প্রচার করে হিন্দু সংহতি। সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তপন ঘোষ। তাঁর সংগঠন সিংহবাহিনীর একাংশ যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে।

রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে হিন্দু সংহতির। একাধিক দাঙ্গায় সরাসরি অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। ধর্মতলায় সভা করে অন্য ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্মে ‘ফেরানোর’ উদ্যোগও নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এই প্রথম সরাসরি ভোটে লড়বে এই সংগঠন।

হিন্দু সংহতির অভিযোগ, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস বর্তমানে স্বাধীনতার সময়কালের মুসলিম লিগে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বিজেপি পরিণত হয়েছে গান্ধী-নেহরু পরিচালিত জাতীয় কংগ্রেসে। দু’দলের কেউই হিন্দুদের স্বার্থ দেখছে না। নাগরিক ডট ইনকে দেবতনু বলেন, “আমরা মনে করি প্রকৃত হিন্দুত্বের আদর্শে লড়াকু রাজনৈতিক দল গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিজেপিকে দিয়ে সেই কাজ হবে না। তাই উত্তরবঙ্গের ৬০টি এবং দক্ষিণবঙ্গে ১১০টি আসনে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করব আমরা।”

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.