সাতশোরও বেশি কৃষক শহিদ হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কর্পোরেটদের সুবিধার্থে তৈরি তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। সেই কর্পোরেট, যাদের আর্থিক সহায়তায় তাঁর পার্টি নির্বাচনে লড়ে।
ভুটানের রাজকুমারী মা হলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন জানান, ক্রিকেটার শিখর ধাওয়ান আহত হলে তাঁর মনোবল বাড়াতে টুইট করেন। অথচ এই শহিদ কৃষকদের জন্য একটা শব্দও খরচ করেননি। ২০০২ সালের দাঙ্গা যেমন আজও প্রধানমন্ত্রীর পিছু ছাড়েনি, তেমনি এই নিষ্ঠুরতাও তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াবে।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
আজ এই ঐতিহাসিক আন্দোলনের এক বছর পূর্ণ হল। এতদিন ধরে এই আন্দোলন কী করে চলল, হয়ত ভবিষ্যতে তা নিয়ে রীতিমত গবেষণা হবে।
স্পষ্টতই এই আন্দোলনের একাধিক কারণ আছে। কৃষিক্ষেত্রের ক্রমাবনতির ফলে তৈরি হওয়া নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে বড় কারণ। কিন্তু প্রত্যক্ষ কারণগুলোর পাশাপাশি একটা জিনিস কৃষকদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের শহিদদের মতই জীবন বাজি রেখে দিল্লির পাঁচ সীমান্ত অবরোধ করার প্রেরণা দিয়েছে। সেটা হল ভগৎ সিংয়ের শহিদ হওয়ার ঘটনা।
ইংরেজ সরকার ২৩ মার্চ ১৯৩১ তারিখে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ভগৎ সিং, রাজগুরু আর সুখদেবকে ফাঁসি দিয়েছিল। গত এক বছরে অসংখ্যবার এই অধমের দিল্লি সীমান্তে বসে থাকা কৃষকদের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। একেবারে প্রথম দিন থেকেই ওঁদের তাঁবুগুলোর বাইরে ভগৎ সিংয়ের ছবি এবং ব্যানার টাঙানো ছিল। সিঙ্ঘু আর টিকরি সীমান্তে বসে থাকা বেশিরভাগ কৃষকের বুকের উপর ভগৎ সিংয়ের ভয়হীন জ্বলজ্বলে ছবিওলা ব্যাজ সাঁটা আছে।
হরিয়ানার জিন্দ জেলার হন্ডোলা গ্রামের পঁচিশ বছর বয়সী সুরেন্দ্র কুমার গত বছরের নভেম্বর মাস থেকেই সিঙ্ঘু সীমান্তে তাঁবু ফেলে বসে আছেন। ওঁর তাঁবুর বাইরে ভগৎ সিংয়ের বড় ব্যানার টাঙানো আছে। কারণ জিজ্ঞেস করতে বললেন “শহিদ ভগৎ সিং ২৩ বছর বয়সে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। কথাটা ভাবলে, অনুভব করলেই নতুন শক্তি পাওয়া যায়। রোজ ওনার মুখটা দেখেই নিজেকে ভিতরে ভিতরে প্রস্তুত করি, যেন দরকার পড়লে এই আন্দোলনের জন্য আমিও প্রাণ দিতে পারি।”
সিঙ্ঘু সীমান্তে কিষাণ একতা হাসপাতালের বাইরে একটা চারপাইয়ের উপর সুনীল কুমার কিষাণ একতা মোর্চার পতাকা আর শহিদ ভগৎ সিংয়ের ব্যাজ বিক্রি করছেন। চল্লিশ বছর বয়সী সুনীল কুমার বললেন “আমি গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে এখানেই আছি। গোড়ার দিকে দিনে একশোর বেশি ভগৎ সিং ব্যাজ বিক্রি করেছি। বহু লোক ওনার পোস্টারও কিনেছে। গত কয়েক মাসে চাহিদা কমেছে ঠিকই, তবু এখনো দিনে ২০-২৫ টা ব্যাজ আর ১০-১২ টা পোস্টার বিক্রি হয়েই যায়। কৃষকরা এসে এই ৫-১০ টাকা দামের ব্যাজগুলো কিনতে চান।”
পাতিয়ালার মন্ডৌলি গ্রাম থেকে এসেছেন ৭৯ বছরের রঘুবীর সিং। এই আন্দোলনের উপর ভগৎ সিংয়ের প্রভাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে উনি সোৎসাহে বলেন “ভগৎ সিং কোনো মানুষের নাম নয়, একটা চিন্তাধারার নাম। উনি বিশ্বাস করতেন যে মানুষকে খুন করা যায়, তার চিন্তাধারাকে খুন করা যায় না। উনি অ্যাসেম্বলিতে বোমা ফাটিয়ে নিজেদের অধিকারের লড়াইয়ের কথা ইংরেজদের কানে তুলেছিলেন। ওনার ওই আবেগ এই আন্দোলনকে শক্তি দিয়েছে। সরকারকে আমাদের সব কথা মেনে নিতে হবে।”
পাতিয়ালারই লোহচমা গ্রামের সর্দার নায়াব সিংকে দেখলেই বোঝা যায়, ওঁর যা বয়স তাতে এই আন্দোলনে বসেই উনি জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। এঁর বুকেও কিন্তু ভগৎ সিংয়ের ব্যাজ লাগানো। ছিয়াশি বছরের নায়াব সিং জোরের সঙ্গে বললেন “ভগৎ সিংয়ের এই আন্দোলনের উপর বিরাট প্রভাব। ইংরেজদের ভগৎ সিংকে নিয়ে সমস্যা ছিল কারণ তিনি ঐক্য আর অধিকারের কথা বলতেন। ইংরেজরা তাঁকে ভয় করত। কৃষকদের ঐক্য দেখে মোদীও একইরকম ভীত। ভগৎ সিং গরীব, বড়লোকের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা করার কথা বলতেন, ওনার স্লোগান ছিল ইনকিলাব জিন্দাবাদ। উনি সিস্টেমকে আঘাত করেছিলেন। এই আন্দোলনও ঠিক ওই পথেই চলেছে। এই লড়াই সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই। আদানি-আম্বানির বিরুদ্ধে লড়াই।”
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।