বাবু দত্তরায়

শাঁওলীদি চলে গেলেন আর আমাকে তাঁর স্মৃতিচারণ করতে হচ্ছে — এ ভয়ানক কষ্টের, ভয়ানক বেদনার। বড় তাড়াতাড়িই যেন চলে গেলেন। শাঁওলীদি যে একজন অসাধারণ অভিনেত্রী, অসাধারণ কণ্ঠের অধিকারিণী, সে কথা নতুন করে আমার বলার অপেক্ষা রাখে না। যাঁরা তাঁর অভিনয় দেখেছেন, পাঠ শুনেছেন, বেতার নাটক শুনেছেন — তাঁরা সকলেই শাঁওলীদির অসামান্য অভিনয়ের স্বাদ উপভোগ করেছেন, তৃপ্ত হয়েছেন, মোহিত হয়েছেন।

দিদির সাথে আমার পরিচয় সেই ১৯৮০-৮১ সাল থেকে। আমি তখন থিয়েট্রন দলের সঙ্গে যুক্ত, সেই সুবাদে তাঁর সাথে পরিচয়ের সূত্রপাত। তিনি আমাদের সমস্ত প্রযোজনাই দেখতেন। ১৯৯৪ সাল নাগাদ কিছু সময়ের জন্য আমি ব্যক্তিগত কারণে থিয়েটার থেকে সরে দাঁড়াই। দিদির কাছে খবরটা পৌঁছে গিয়েছিল। একদিন হঠাৎই দিদি আমাকে বললেন “থিয়েটার ছেড়ে আছিস কী করে? চলে আয় পঞ্চম বৈদিকের মহলা কক্ষে।” আমি যুগপৎ আনন্দে এবং সংকোচে পৌঁছে গেলাম তাঁর কাছে। তখন পঞ্চম বৈদিক বিতত বীতংস নাটকটি তৈরি করছে। আমি একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে গেলাম। ব্যাস! ওইদিন থেকে তাঁর সাথে কাজ করার ও তাঁর নির্দেশনায় অভিনয় করার সৌভাগ্য অর্জন করলাম।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

মহলা কক্ষে তাঁকে দেখে অবাক হতাম। শারীরিক সুস্থতা তাঁকে সবসময় সঙ্গ দেয়নি। তথাপি এত প্রাণশক্তি, এত পরিশ্রম করার ক্ষমতা তিনি পেতেন কী করে? সকলের প্রতি তাঁর ব্যবহার ছিল মধুর। চমৎকার, স্নিগ্ধ হাসি ছিল তাঁর বরাবরের সঙ্গী। কাজের সময়ে কখনো-সখনো বিরক্ত হতেন হয়ত, কিন্তু তার প্রকাশ ঘটত অতীব নম্রতার সঙ্গে। কখনো কটু কথা উচ্চারিত হত না, কখনো কাউকে আঘাত করে কিছু বলতেন না। তাঁর শব্দচয়ন ছিল শিক্ষণীয়। আর নিয়মানুবর্তিতা? যাকে বলে আর্মি ডিসিপ্লিন। কঠোর, কিন্তু স্নেহময়ী। শুধু সময়জ্ঞান নয়, মহলা কক্ষের পরিবেশ, প্রতিটি সভ্য সভ্যার আচরণের প্রতি তাঁর সবসময় সজাগ দৃষ্টি থাকত। মহলা কক্ষটিকে পবিত্র স্থানের মর্যাদা দিতেন।

বড় সংযমী মানুষ ছিলেন আমাদের শাঁওলীদি। তাঁর নির্দেশনায় শেষ করেছি রাজনৈতিক হত্যা নাটকে। কতকিছু যে শিখতে পেরেছি, জানতে পেরেছি তাঁর কাছে — তার হিসাব দেওয়া অসম্ভব। শুধু অভিনয় নয়, জীবনচর্যা, জীবনযাপনের পথ দেখাতেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে ভয়ঙ্কর শূন্যতা, অপরিসীম অভাব বোধ করছি আমরা। আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও প্রণাম শাঁওলীদিকে।

নিবন্ধকার বর্ষীয়ান থিয়েটার অভিনেতা। দীর্ঘকাল প্রয়াত শাঁওলী মিত্রের সঙ্গে কাজ করেছেন

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.