অনির্বাণ ভট্টাচার্য
এই বছরের প্রজাতন্ত্র দিবস একটা আশ্চর্য সময়ে আমাদের সামনে এসেছে। আমাদের দেশে যে কোন আন্দোলনকেই দেশবিরোধী তকমা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ গণতন্ত্র মানে তো বিরোধিতার অধিকার, প্রতিবাদের অধিকার, বিক্ষোভের অধিকার থাকা। এই অধিকার যদি না থাকে, তাহলে তো আমরা বিদ্যমান ব্যবস্থাটাকে গণতন্ত্র বলতে পারি না। গণতন্ত্র আছে কিনা তা বিচার করার সবচেয়ে বড় মাপকাঠি হল ‘গণ’ কি ‘তন্ত্র’টিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারছে?
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বে আমাদের দেশে বিরোধিতার কোন পরিসর নেই। সরকারের বিরোধিতা করলেই জেলে পাঠানো হচ্ছে। প্রজাতন্ত্র দিবসে জাঁকজমক বাড়ছে, কিন্তু ‘প্রজা’র কথা বলার জায়গা প্রতিদিন কমছে৷ ভয়াবহ শ্বাসরোধী একটা পরিবেশ কায়েম হয়েছে। ছাত্র আন্দোলন, যুব আন্দোলন, মজদুর আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন – যে কোন রকমের প্রতিবাদকেই ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই দেশের সর্বস্তরের মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, তাই হয়তো যে কোনও রকম প্রতিবাদকেই ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ তকমা দিয়ে দিচ্ছে৷
এই মুহূর্তের কর্তব্য যদি কিছু থাকে, তা হল বিজেপির বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়া। সর্বস্তরে সর্বাত্মক ঐক্য গড়ে তোলা। ভারতবর্ষে বহুবিধ রাজনৈতিক ধারা রয়েছে। বামপন্থীদের মধ্যেও বিভিন্নতা রয়েছে। মতাদর্শগত ফারাক রয়েছে বলেই তো এতগুলো রাজনৈতিক দল রয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা হল, আগামীতে কি আদৌ এই দেশে কোনরকম ভিন্নতা থাকবে? আদৌ কি ন্যূনতম প্রতিবাদটুকু করতে পারব আমরা? যদি এই দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে রক্ষা করতে হয়, তাহলে প্রাথমিক/প্রধান দ্বন্দ্বটা চিহ্নিত করতে হবে। এই মুহূর্তে ভারতের প্রধান দ্বন্দ্বটা হল, ভারতীয় জনগণের সঙ্গে, ভারতের সংবিধান এবং বহু সংগ্রামের ফসল গণতান্ত্রিক কাঠামোর সঙ্গে বিজেপি- আরএসএসের দ্বন্দ্ব। এই বিরোধে নির্দিষ্ট পক্ষ নিতে হবে আমাদের।
আমরা যখন জেলে ছিলাম, তখন মনে হয়েছে, জেলের ভিতরে গণতন্ত্রের পরিসরটা বেশি। এই প্রসঙ্গে আমি মিডিয়ার কথা বলব। মিডিয়ার একটা বড় অংশ পরিকল্পিতভাবে অ্যাক্টিভিস্টদের কালিমালিপ্ত করছে। আপনি যখন অর্ণব গোস্বামীর চ্যানেলে আমায় দেখবেন, আমার ছবির চারপাশে লাল রঙের গোল দাগ দিয়ে মার্ক করা থাকবে, খুব জোরে নাটকীয় মিউজিক বাজবে, এবং অ্যাঙ্কর চিৎকার করে আমাকে একজন সন্ত্রাসবাদী হিসাবে প্রমাণ করতে চাইবেন। আপনি একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে সেটা বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন। কিন্তু জেলের মধ্যে তো টিভি থাকে না। সরাসরি কথাবার্তা বলা যায়। পুলিশকর্মীদের সঙ্গে আমরা কথা বলতাম। তাঁদের অনেকে শুরুতে আমাদের ভয়ানক দেশদ্রোহী সন্ত্রাসবাদী বলেই মনে করতেন। কিন্তু আস্তে আস্তে তাঁদের বন্ধু হয়ে উঠলাম আমরা। তাঁরা আমাদের ভাবনাচিন্তা, কাজকর্মের বিষয়ে জানলেন। প্রশ্ন করলেন অনেক। আমরা আমাদের মতো করে উত্তর দিলাম। কিছু প্রশ্নে আমরা একমত হলাম, কিছু ক্ষেত্রে হলাম না। কিন্তু ওঁরা বুঝলেন আমরাও ওঁদের মতোই মানুষ, মিডিয়ার কথা মতো কোনও ভয়ানক দেশদ্রোহী সন্ত্রাসবাদী নই। আমরা যখন জেল থেকে ছাড়া পেলাম, তখন কয়েকজন পুলিশকর্মী আমাদের জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিলেন। একজন আমাকে একটি পার্কার কলম উপহার দিয়েছিলেন। ওঁরা বলেছিলেন, আমাদের মতো কয়েদি ওঁরা আগে কখনো দেখেননি।
একটি গানে শুনেছিলাম ‘দেশপ্রেমের দিনমজুর’ কথাটি। প্রজাতন্ত্র দিবসে ঐ মানুষগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে।
অনুলিখন – অর্ক ভাদুড়ি
চিত্র সৌজন্য : ফেসবুক
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।