দীপঙ্কর ভট্টাচার্য
প্রজাতন্ত্র দিবসের কথা উঠলেই দিল্লির সামরিক প্যারেডের কথা মনে হয়। সেই প্যারেডে কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কথা, সংবিধানের কথা থাকে না। সেটা মূলত সামরিক শক্তির প্রদর্শনী। অন্য দিকে, গত এক-দেড় বছর ধরে আমাদের দেশের বড় বড় গণ আন্দোলনগুলোতে আমরা দেখছি, সংবিধানের অধিকারের প্রশ্নটা সামনে আসছে৷ শাহীনবাগে, সিংঘু বর্ডারে প্রতিবাদরত মানুষ আসলে আমাদের প্রজাতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করছেন। এটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
একটা বড় গণ আন্দোলন আসলে জনতার সৃজনীশক্তির স্ফূরণ ঘটায়। কেবলমাত্র দাবি আদায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না। এই প্রথম সংবিধানের মর্মবস্তুকে ধরে দেশ জুড়ে আন্দোলন হচ্ছে। তাই প্রজাতন্ত্র দিবসও যেন নতুন করে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর আগে ২৬শে জানুয়ারির আনুষ্ঠানিকতাই ছিল প্রধান। আমাদের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা পর্বে এবং তার আগে-পরে দেখেছি, সাংবিধানিক গণতন্ত্রের খামতিগুলো নিয়ে বেশি চর্চা হত। সঠিক কারণেই হত৷ কিন্তু এখন এমন একটা রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে, এমন একটা সরকার দেশ চালাচ্ছে, যারা সংবিধানটাই মানে না। গোটা ব্যবস্থাটাকেই ছুঁড়ে ফেলতে চাইছে। ফলে প্রতিবাদের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। শাহীনবাগের মতো জায়গায় লোকে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করছে। এই প্রস্তাবনা আন্দোলনের ম্যানিফেস্টো হয়ে উঠছে। এটা এই সময়টার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এটা না বুঝলে আমরা ভুল করব।
একটা কথা খেয়াল করতে বলব, আমি কিন্তু সংবিধানের সব অনুচ্ছেদের কথা বলছি না। প্রস্তাবনার কথা বলছি। আমরা যারা কমিউনিস্ট রাজনীতি করি, যারা সংবিধানের বিভিন্ন যৌক্তিক সীমাবদ্ধতার কথা বলেছি, তারাও কিন্তু প্রস্তাবনার সমালোচনা কখনো করিনি। প্রস্তাবনায় যে লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে, এই পাল্টে যাওয়া সময়ে সেটা আমাদের জন্য একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। আসলে মানুষ তাঁর প্রজাতন্ত্রকে রিক্লেম করছেন। শাহীনবাগ থেকে সিংঘু সীমান্ত – সর্বত্র।
একই কথা জাতীয় পতাকার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সাম্প্রতিককালে জাতীয় পতাকাও একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে উঠেছে। এক দিকে বিজেপি এই পতাকা নিয়ে ধর্ষককে স্বাগত জানাচ্ছে, ধর্ষকের মুক্তির দাবিতে মিছিল করছে, অন্যদিকে এই জাতীয় পতাকার নীচেই প্রতিবাদী মানুষ জড়ো হচ্ছেন। কৃষকরা ট্র্যাক্টরে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে রাজধানীতে ঢুকে পড়ছেন। শাহীনবাগের মেয়েদের হাতে হাতে উড়ছে জাতীয় পতাকা।
আমাদের, বামপন্থীদের এই বিষয়টি বুঝতেই হবে। শ্বাশ্বত স্বপ্ন তো থাকবেই, সেই লক্ষ্যেই তো সংগ্রাম৷ একই সঙ্গে সময়ের দাবিটা কী, তা বুঝতে হবে। মানুষের লড়াই, আন্দোলনের সাথী হতে হবে। দিন বদলের যে স্বপ্ন, সমাজ পরিবর্তের যে স্বপ্ন, তাকে একটা দুঃস্বপ্ন এসে ঘিরে ফেলেছে যেন। এই দুঃস্বপ্নকে ঠেকানোর কাজ তো বামপন্থীদেরই৷ আমি তাই শাশ্বত স্বপ্নের থেকে এই লড়াইকে আলাদা করে দেখি না। মানুষের জীবনে ওঠা নামা থাকে। সমাজেও থাকে৷ সেই ওঠা নামার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে কমিউনিস্টদের। পরিবর্তিত সময়ে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে হবে নিজেদের।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। বিজেপির ব্যাপক ও ভয়াবহ উত্থান ঘটেছে বাংলায়। বিজেপির এই বাড়বাড়ন্তে তৃণমূলের অবদান বিরাট। তৃণমূল গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল। তারপর তাদের হাতেই গণতন্ত্র আক্রান্ত হয়েছে৷ এর সুযোগ নিয়েছে বিজেপি। আমরা মনে করি না, যে তৃণমূলকে সামনে রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে। তৃণমূলের মিছিলে ‘গোলি মারো’ স্লোগান উঠছে। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে যদি তৃণমূল বিজেপিরই পশ্চিমবঙ্গীয় সংস্করণে পরিণত হয়, তা দুর্ভাগ্যজনক এবং নিন্দনীয়। তাই লড়তে হবে বামপন্থীদের। একই সঙ্গে আমরা বিজেপি এবং তৃণমূলকে এক বলে মনে করি না। বিজেপি প্রধান বিপদ। তাকে রুখতে হবে। এবং পশ্চিমবঙ্গে সেই প্রতিরোধ গড়তে পারেন বামপন্থীরাই।
অনুলিখন – অর্ক ভাদুড়ি
চিত্র সৌজন্য : ফেসবুক এবং The Financial Express
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।
[…] https://nagorik.net/…/26/republicday2021-dipankar-cpiml/). Translation from the Bangla original done by the […]