সম্প্রতি কলকাতা শহরের এক এনজিও কর্মী সাত বছর একই সংগঠনের চাকরি করার পর কাজ ছেড়ে দিতে চায় জানালে কর্তৃপক্ষ তাকে বলে, সে যেন পদত্যাগপত্র না দেয়, কর্তৃপক্ষই তাকে ছাঁটাইয়ের চিঠি পাঠাবে। কর্মীটি এতে ভয় পায়, কারণ সে জানে কলকাতার এনজিওগুলোর কর্তৃপক্ষ একে অপরের সঙ্গে বিশেষভাবে পরিচিত। তাকে ছাঁটাই করে দেয়া হয়েছে একথা অন্যান্য এনজিওকে জানিয়ে দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন কাজ পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে। এই এনজিওর কলকাতা অফিসে মাত্র দুজন কর্মী এবং এই দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হতে না দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ শুরু থেকে চেষ্টা করে গেছে। কাজেই একজন কর্মীর প্রতি অন্যায় করা হলে অন্যজন তার হয়ে বলবে – এমনটা প্রায় অসম্ভব। যাঁরা এনজিওতে কাজ করতে আসেন, তাঁরা সেবামূলক কাজ অথবা অন্যের অধিকার নিয়ে কাজ করতে আসেন। কর্মক্ষেত্রে নিজের অধিকার নিয়ে ভাবার বিশেষ অবসর পান না।
কলকাতার এক নামকরা নারীবাদী সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে সেই এনজিও কর্তৃপক্ষ নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, সংস্থাটি প্রকল্প অনুযায়ী অনুদান পায়। কোনো প্রকল্পে কাজ করতে করতে একজন কর্মী যদি টানা তিন-চার মাসের ছুটিতে চলে যান, তাহলে সেই প্রকল্প শেষ করতে অসুবিধা হয়, অন্য কর্মী তাঁর কাজ করতে পারেন না। প্রকল্পে একজন কর্মীর মাইনে ধরা থাকে। যে মহিলা ছুটি নেবেন তাঁকে মাইনে দেওয়া এবং তাঁর পরিবর্তে যিনি ওই প্রকল্পে কাজ করবেন তাঁকেও মাইনে দেওয়া এনজিওর পক্ষে সম্ভব নয়। এই এনজিওর মূল কাজই নারী অধিকার নিয়ে। ফলে এনজিওর কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন, কারণ তাঁরা বুঝতে পারছেন, যেসব অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ওঁরা সারাদিন কাজ করছেন, তাঁদের নিজেদের জীবনে সেই অধিকারগুলো লঙ্ঘিত হচ্ছে।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
এ তো একটা বা দুটো এনজিওর ঘটনা। কিন্তু আমরা কলকাতা শহরে যতগুলো এনজিও কাজ করে তার অনেকগুলোর কর্মীদের কাছ থেকেই একই ধরনের শোষণের কথা শুনতে পাই। প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাড়া বা বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি উপলক্ষে অনেকসময় তাঁদের দিনে আট ঘন্টার বেশি কাজ করতে হয়। এমনও হয়েছে যে একটা মাসের প্রত্যেক শনি, রবিবার কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পে ওভারটাইমের টাকা ধরা নেই, কাজেই এই কর্মীরা বাড়তি খাটুনির জন্য বাড়তি টাকা পান না। বরং ছুটি চাইলে শুনতে হয়, যে ইস্যু নিয়ে কাজ করছেন, সেই ইস্যুর প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা নেই।
চাকরির ‘বাজার’ খারাপ বলে হঠাৎই চাকরি ছেড়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। আর একথা সত্যি যে বেশিরভাগ এনজিওই নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। ফলে একটা এনজিওতে ঝগড়া করে বেরিয়ে এসে সেই কর্মীর অন্য এনজিওতে চাকরি পাওয়া মুশকিল। এমনও শোনা যাচ্ছে, কলকাতা শহরের অত্যন্ত নামকরা এক এনজিও র ডিরেক্টর অফিসের অন্যদের উপর রেগে গেলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। কর্মীরা তা-ও সহ্য করছে, কারণ বিকল্প চাকরি নেই। বেশিরভাগ এনজিও কর্মীদের চুক্তির ভিত্তিতে কাজ দেয়, ফলে একজোট হয়ে ইউনিয়ন তৈরি করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কোভিড অতিমারী শুরু হওয়ার আগে বাৎসরিক ছুটির তালিকা তৈরি করার সময়ে এক কর্মী বলেছিলেন পয়লা মে ছুটি থাকুক। কর্তৃপক্ষ তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করেছিল। সরকারি ছুটি থাকলেই যে এনজিওকে মানতে হবে এমন তো নয়। তাছাড়া পয়লা মে এনজিওর কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ তারিখ হবে তা তারা বুঝতে পারছিল না। কলকাতা শহরে নারী/শিশু অধিকার, প্রতিবন্ধী অধিকার বা সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন এনজিও অনেক আছে, তাদের কর্মীসংখ্যাও নেহাত কম নয়। কিন্তু তাদের কর্মীদের অধিকার নিয়ে লড়াই কবে শুরু হবে, তা এখনো কারোর জানা নেই।
মতামত ব্যক্তিগত
আরো পড়ুন
বৈবাহিক ধর্ষণ: অপব্যবহারের জুজু দেখিয়ে পৃথক আইন করা হচ্ছে না
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।