৩রা ডিসেম্বর তারিখটা সারা পৃথিবীতে প্রতিবন্ধী দিবস হিসাবে পালন করা হয়। কলকাতা শহরের এ বছরের প্রতিবন্ধী দিবসের বড় খবর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল প্রতিবন্ধী-বান্ধব করা হল। সংবাদপত্র ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের র‍্যাম্পের ছবি প্রকাশ করল, সোশাল মিডিয়ায় অনেক হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী মানুষ আনন্দ প্রকাশ করলেন। কিন্তু ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তাদের বিল্ডিং প্রতিবন্ধী-বান্ধব বানাতে এত সময় কেন নিল, তার জবাবদিহি কেউ চাইল না। অথচ ১৯৯৫ সালে আমাদের দেশে যে আইন পাস হয়েছিল, সেখানেই বলা ছিল সব পাবলিক বিল্ডিং প্রতিবন্ধী-বান্ধব করতে হবে। আর বর্তমান আইনে তো স্পষ্ট করে বলা আছে, পাবলিক বিল্ডিং প্রতিবন্ধী-বান্ধব না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

প্রতিবন্ধীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য শহরগুলোর থেকে কলকাতা অনেকটাই পিছিয়ে আছে। দিল্লি বা চেন্নাই মেট্রো রেলে এমন অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে, কলকাতার নতুন স্টেশনগুলোতে যা দেখতে পাওয়া যায় না। কলকাতার নাগরিক হিসাবে সেজন্য মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন করি নিজেকে, আমরা কি আমাদের শহরের নীতিনির্ধারকদের, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে, এ নিয়ে ভাবাতে পেরেছি? কলকাতা কর্পোরেশনের ভোট এসে পড়েছে। বিভিন্ন দলের ইস্তাহার এ বিষয়ে কী বলছে?

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

যে দেশে সরকারি হিসাব অনুযায়ী তিন শতাংশ মানুষ (বেসরকারি পরিসংখ্যান বলে আট থেকে দশ শতাংশ) প্রতিবন্ধী, সেই দেশে নির্বাচন আসে নির্বাচন যায়, রাজনৈতিক দলগুলো এদের কথা উল্লেখও করে না ইস্তাহারে। এ বছরের কলকাতা কর্পোরেশন নির্বাচনের ইস্তাহারে বিজেপি এবং কংগ্রেস এক লাইনও বরাদ্দ করেনি কলকাতাকে প্রতিবন্ধী-বান্ধব করা নিয়ে। বামফ্রন্ট অবশ্য বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনের মতই প্রতিবন্ধীদের হতাশ করেনি। তারা চারটে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে — ১) প্রতিবন্ধীদের জন্য সাধারণ মানুষের ব্যবহারের উপযোগী সব নির্মাণে র‍্যাম্প, ব্রেইল চিহ্ন সহ অন্যান্য সহজগম্যতার সুব্যবস্থা; ২) কর্পোরেশন স্কুলগুলিতে স্পেশাল টিচার বা বিশেষ শিক্ষক নিয়োগ; ৩) কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য পরিষেবায় শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার; ৪) আয় নির্বিশেষে সব প্রতিবন্ধী মানুষকে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা হবে।

একেবারে দেশের প্রতিবন্ধী অধিকার আইন মাফিকই এই প্রতিশ্রুতিগুলো দেওয়া হয়েছে। সবথেকে হতাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহার। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটা-দুটো লাইন যোগ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু যে শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর কোনো অর্থ হয় না। বরং দৃষ্টিহীনদের কাছে অত্যন্ত অপমানজনক বলেই মনে হচ্ছে।

লেখা হয়েছে “বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য সহজলভ্য পরিকাঠামো” … পড়ে মনে হয় accessible-এর বাংলা যে ‘সহজগম্য’, তা ভুলে গিয়ে ‘সহজলভ্য’ লেখা হয়েছে। এর পরের বাক্যাংশ আরও মারাত্মক। “শহরে ব্রেইল পথ নির্মাণ…”। আমরা সকলেই জানি, ব্রেইল দৃষ্টিহীনদের লেখাপড়া করার এক বিশেষ উপায়। ব্রেইল দিয়ে কীভাবে পথ নির্মাণ হবে তা বোঝা অসম্ভব। লুই ব্রেইল প্রতিবন্ধী আন্দোলনের মানুষদের কাছে এক নমস্য ব্যক্তি। তাঁর নাম নিয়ে এ ধরনের কথা লেখা এই আন্দোলনের অপমান। তৃণমূল কংগ্রেস নিশ্চয়ই মনে করে প্রতিবন্ধীদের অপমান করলেও তারা প্রতিবাদ করতে পারবে না। তাই নির্বাচনের আগে inclusion-এর নামে শহরের প্রান্তিক নাগরিকদের নিয়ে এই তামাশা করা হল।

~মতামত ব্যক্তিগত।

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.