কলতান দাশগুপ্ত

পশ্চিমবঙ্গের চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন ইতিমধ্যেই তৃণমূল সরকারের চরম অমানবিক, হৃদয়হীন, স্বৈরাচারী চেহারাটাকে সামনে নিয়ে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অকারণে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের উপর হিংস্র আক্রমণ নামিয়ে আনছেন না। তিনি জানেন এছাড়া তাঁর আর কোনো উপায় নেই। সরকারটা পা থেকে মাথা পর্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত। চাকরি বিক্রি হয়েছে কোটি কোটি টাকায়। জেলায় জেলায় সেই টাকা দিয়ে বাড়ি গাড়ি করেছেন তৃণমূলের নেতারা। রাজ্যের সর্বত্র প্রতারিত এবং বঞ্চিত যুবক যুবতীদের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। সেই শব্দ তৃণমূল কংগ্রেস দল এবং সরকারকে তাড়া করছে। যে চাকরিপ্রার্থীরা পুলিশের লাঠির সামনে বুকটান করে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁরা কেবল নিজেদের জন্যই লড়ছেন না, ওঁরা পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ রচনা করছেন। তৃণমূলের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের জুলুম আর স্বৈরাচারের অবসানের মাধ্যমেই এই পথচলা সম্পূর্ণ হবে। আমরা বামপন্থীরা, ছাত্র-যুবরা সর্বতোভাবে এই লড়াইয়ের পাশে আছি। আমরা এই সংগ্রামকে ব্যর্থ হতে দেব না।

হুমকি বা পুলিশি নির্যাতন দিয়ে যখন কাজ হচ্ছে না, তখন আন্দোলন ভাঙতে আরও কুৎসিত পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। আন্দোলনকারীদের মাঝে বিভাজন তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের মুখোমুখি প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করানো হচ্ছে ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণদের। কিন্তু এই চক্রান্ত সফল হবে না। আমরা বামপন্থীরা স্পষ্ট বলছি, ১,২০,০০০ শূন্য পদে নিয়োগ চাই। ২০১৪ এবং ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণদের মেলালেও এই সংখ্যা হবে না। যাঁরা ২০১৪ সালের টেট পাশ করেছেন, তাঁরাও বঞ্চিত। কারণ টাকা নিয়ে চাকরি বিক্রি হয়েছে, যোগ্যরা চাকরি পাননি। একইরকম বঞ্চনার শিকার ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণরাও। সকলকে চাকরি দিতে হবে, বেআইনি নিয়োগ বাতিল করতে হবে। অবিলম্বে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এই আমাদের স্পষ্ট কথা।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

আমরা না হয় রাজনীতি করি। আমাদের কথা থাকুক। যদি রাস্তাঘাটে কান পাতি, তাহলে শুনতে পাওয়া যাবে, একদম সাধারণ মানুষ, যাঁরা কোনো রাজনীতি করেন না, তাঁরাও বাম আমলের কথা বলছেন। সুতীব্র অন্ধকার সাধারণ মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে বিগত আলোর স্মৃতির কাছে। বছর বছর শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হত। পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষিত যুবক যুবতীদের চাকরি হত। খুব বেশি আগের কথা তো নয় – মাত্র ১১ বছর। সেই দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনাটা জরুরি। নয়ত পশ্চিমবঙ্গের মুক্তি নেই।

আরো পড়ুন বস্তাবন্দি টাকা আর নষ্ট যৌবন: আন্দোলনকারীর বয়ান

বিজেপি ঠিক কী করছে? তৃণমূলের সেফটি ভালভ হিসাবে কাজ করছে। আসলে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতিতে তো কেবল তৃণমূল নয়, বিজেপিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের সামনে আসেন না। আসা সম্ভব নয় ওঁর পক্ষে। কারণ ওঁর বিরুদ্ধেও তো দুর্নীতির গণ্ডা গণ্ডা অভিযোগ। উনি নিজেই টেট দুর্নীতির অন্যতম কুশীলব। কোন মুখে প্রতিবাদ করবেন? বিজেপির কোনো নৈতিক অধিকার নেই আন্দোলন করার। আন্দোলন করছি আমরা, বামপন্থীরা। আমরা বুক ঠুকে বামফ্রন্ট সরকারের কথা বলতে পারি, যে সরকার বেকারের চোখের জল মুছিয়েছিল, যার আমলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়নি। বিজেপি আর তৃণমূল – দুটো দলই দুর্নীতির পাঁকে ডুবে আছে। একে অন্যকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।

লড়াইটা অনেক বড়। গোটা রাজ্যটাকে বাঁচানোর লড়াই। নাগরিক সমাজকে এই আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। নয়ত আগামী প্রজন্মের কাছে জবাব দেওয়ার মত মুখ থাকবে না। যে যুবক যুবতীদের পুলিশের গাড়ির চাকার তলায় শুয়ে থাকতে দেখছেন, তাঁরাই পশ্চিমবঙ্গ, তাঁরাই এই রাজ্যের ভবিষ্যৎ। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোটাই এই সময়ের ডাক।

লেখক ভারতের যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.