আমার বাবা বলিউডের অ্যাকশন ছবির ভক্ত। কিছু দিন আগে জি সিনেমায় রাত্রিবেলা একটা ছবি দেখছিল। নায়ক পুলিশের চরিত্রে অজয় দেবগন। সে একজন বড়মানুষের বাড়িতে রেড করে দেওয়াল থেকে, ছাদের ফলস সিলিং থেকে “রাশি রাশি ভারা ভারা” টাকা উদ্ধার করছে। দুর্নীতিগ্রস্ত খলনায়কদের বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার বলিউডি বা দক্ষিণী ছবির খুব চেনা দৃশ্য। কাল থেকে টিভিতে সেই দৃশ্যই দেখে চলেছি। তবে এবার আর সিনেমার চ্যানেলে নয়, খবরের চ্যানেলে। কুড়ি কোটি টাকার কথা শুনে এবং দেখে প্রথমে হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিলাম। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে বুঝলাম আমাদের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং তৃণমূলের মহাসচিব শ্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ একজনের বাড়ি থেকে বস্তাবন্দি ২০ কোটি টাকা উদ্বার হয়েছে। কুড়ি কোটি! সাধারণ মধ্যবিত্তের হিসাব গুলিয়ে যায়। কতগুলো শূন্য থাকে ২০ কোটিতে? আমার বান্ধবী খুব অবাক হয়ে প্রশ্ন করে “কুড়ি কোটি টাকা ঘরে রেখে ওরা রাতে ঘুমাতে পারে?”
কোথা থেকে এল এত টাকা? কীভাবেই বা এল? চিন্তা করতে গেলে মাথা ঘুরে যায়। সাধারণ পশ্চিমবঙ্গবাসীর ঘাম ঝরানো জমা হচ্ছে প্রভাবশালীদের ঘরে। তারপরেও তারা বুক ফুলিয়ে রাজ্যময় ঘুরে বেড়ায়, প্রকাশ্য সমাবেশে লাখো লাখো মানুষের সামনে গলা চড়িয়ে স্বচ্ছতার বুলি আওড়ায়।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
“সবাই দেখছে যে রাজা উলঙ্গ, তবুও
সবাই হাততালি দিচ্ছে।
সবাই চেঁচিয়ে বলছে; শাবাশ, শাবাশ!”
বুধ আর বৃহস্পতিবার কলকাতায় জনস্রোত দেখে অবাক হয়ে ভাবছিলাম, কীসের জন্য এত দুর্নীতি, বেকারত্ব, সন্ত্রাস দেখার পরেও লাখ লাখ মানুষ রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে, শারীরিক কষ্ট সহ্য করে দূর দূরান্ত থেকে মহানগরে জড়ো হয়েছে? এ কোন মগজ ধোলাইয়ের ফল? হয়ত বস্তা বস্তা টাকা উদ্ধারের পরেও শাসক দল আবার বিপুল ভোটে জয়ী হবে। হীরক রাজ্যের মগজ ধোলাই মেশিনটা কি তবে আমাদের রাজ্যেই আছে?
মুখ্যমন্ত্রী একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে বলেছেন ইডি, সিবিআই বাড়িতে গেলে মুড়ি খাওয়াতে। প্রশ্ন হল, ইডি, সিবিআই বাড়িতে যাবে কেন? কেন এত দুর্নীতি হবে? দুদিন আগে যে মন্ত্রী পুলিশের ভয়ে মেয়েকে নিয়ে গায়েব হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর মেখলিগঞ্জের বাড়িতে ইডি অভিযান চালালে আজ তিনিই জোর গলায় বলছেন “ আমি বাড়ি থাকলে ইডিকে মুড়ি খাওয়াতাম।” এই ঔদ্ধত্য কোথা থেকে আসে? সবাই জানে, সবাই বোঝে। তারপরেও জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয় করুণাময়ী থেকে ধর্মতলা। জানি না এ কোন মগজ ধোলাইয়ের ফল।
একুশে যে নেতারা সততার কথা, স্বচ্ছতার কথা বলেছেন তাঁদের আজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু মহামহিম কুণাল ঘোষ বলেছেন, যে টাকা নিয়েছে এক্ষেত্রে দায় তার। দল কিছু জানে না। তাহলে মহাসচিব দলের বাইরের লোক? এই কুণাল ঘোষ একসময় প্রিজন ভ্যানের বাইরে দাঁড়িয়ে সারদা মামলায় চিৎকার করে দায়ী করতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনিই আজ বলছেন দল কিছু জানে না। পরেশ অধিকারী, পার্থ চট্টোপাধ্যায় যদি দল না হয়, তাহলে দল কে? তৃণমূল সুপ্রিমো তাহলে কারোর বিষয়েই কিছু জানেন না?
আরো পড়ুন শিক্ষক দিবসের প্রশ্ন: শিক্ষকদের বাঁচাবে কে?
কুড়ি বছর ধরে পড়াশোনা করে, ডিগ্রির পর ডিগ্রি পেয়ে, গোছা গোছা সার্টিফিকেট অর্জন করে আমরা কী পেলাম? এসএসসি পরীক্ষায় একটিবার বসার সুযোগও পাইনি। সাত বছর ধরে নিয়োগ বন্ধ এই দুর্নীতির কারণে। নেতা মন্ত্রীরা গোটা পনেরো কুকুর পোষেন, গোটা কুড়ি মোবাইল রাখেন আর আমাদের টিউশনির পয়সায় একটা মোবাইল চালাতে নাভিশ্বাস উঠে যায়। ওঁরা জোড়া ফ্ল্যাটে থাকেন, আমাদের টিনের চাল থেকে জল পড়ে। একুশের সমাবেশে “চাকরি চাই” স্লোগান দেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী, অথচ আমরা চাকরি চাইতে গেলে পুলিস মারে, জেলে ভরে।
এ লেখা যখন লিখছি, তখনো ইডির অভিযান চলছে। পার্থবাবু গ্রেফতার হয়েছেন। ভাল কথা। কিন্তু আমরা, লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী, দেখতে চাই দোষীরা শাস্তি পেল নাকি ক্লিনচিট পেয়ে গেল। হয়ত কিছুদিন পরে দেখব আরও একটা সমাবেশ হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষ কোনো অজ্ঞাত নেশার টানে সবকিছু তুচ্ছ করে আবারও জড়ো হবে মঞ্চের সামনে, নেতানেত্রীরা গলা উঁচু করে নিজেদের স্বচ্ছ, সৎ বলে দাবি করবেন। আবার জয়ধ্বনিতে পূর্ণ হবে শ্রাবণের মেঘলা আকাশ।
আমরা যখন চাকরির দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিই, তখন লোক হয় না। হাতে গোনা কয়েকশো বা বড়জোর হাজার খানেক মানুষকে পাওয়া যায়। অথচ সরকারি হিসাবে বিএড পাস ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১২ লাখ। এভাবেই একটা প্রজন্ম, একটা যুগ শেষ হয়ে গেল। কোনো গণআন্দোলন দানা বাঁধল না। খলনায়কদের অভিসম্পাত দেওয়া ছাড়া আমাদের মত ভুক্তভোগীর আর কী-ই বা করার আছে?
মতামত ব্যক্তিগত
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।
নির্মম সত্যি কথা। নির্মম ভাষায় লেখা।
একটু আগে এক ইকো চেম্বারের সদস্যের সঙ্গে বাদানুবাদ হল, কিন্তু ভদ্রলোকের ওপর রাগ করতে পারলাম না! বরং করুণা হল। এরকম obviously criminal একটা মাফিয়া গ্যাংএর মতো দলকে ডিফেন্ড করতে নিশ্চয়ই তাঁর ভালো লাগে না!
And that’s what TMC is!
It has the structure and hallmarks of a Mafia gang, with Mr Chatterjee as one of its bagmen.