পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল বনাম বিজেপির দ্বিদলীয় বৃত্তকে আচমকাই যেন কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পেরেছে বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠনগুলির নবান্ন অভিযান। দলবদল আর ব্যক্তিগত কাদা ছোড়াছুড়ির  আবহে হঠাৎ করেই সামনে এসেছে প্রতিদিনের বাঁচামরার বেশ কিছু জ্বলন্ত সমস্যা। নবান্ন অভিযান আদৌ নির্বাচনী পাটিগণিতে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে কিনা তার উত্তর দেবে সময়। কিন্তু *নাগরিক ডট নেট* মনে করে, অনেকদিন পর রাজ্যের রাজনৈতিক পরিসরে কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কিছুটা হলেও তুলে আনতে পেরেছেন বামপন্থী ছাত্র-যুবরা। তাই নবান্ন অভিযানে অংশ নেওয়া কয়েকজনের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।

অন্বেষা চক্রবর্তী। ভারতের ছাত্র ফেডারেশন বরানগর আঞ্চলিক কমিটি -১ এর একজন সক্রিয় কর্মী।

গত ১১ই ফেব্রুয়ারি ১০টি বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠনের ডাকে নবান্ন অভিযান কর্মসূচি ছিল। সারা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার ছাত্র-যুব কমরেডরা শিয়ালদহ আর হাওড়া থেকে রাজপথ কাঁপিয়ে মিছিল করে কলেজস্ট্রিটের দিকে এগোতে থাকে নবান্নের উদ্দেশ্যে। দাবি ছিল সকলের জন্য শিক্ষা এবং শিক্ষান্তে কর্মসংস্থান। স্লোগান ছিল- বাংলা বিপন্ন, তাই চলো নবান্ন।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

আমাদের মিছিল রাজপথের বুক কাঁপিয়ে স্লোগানে স্লোগানে শান্তিপূর্ণ ভাবেই এগোচ্ছিল। হঠাৎ ডোরিনা ক্রসিং-এর একটু আগে থেকে আমরা দেখতে পাই শুধু কালো কালো মাথা এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। অসংখ্য, অজস্র পুলিশ। শুরু হয় হিংস্র আক্রমণ। মূহূর্তের মধ্যে দিকশূন্য হয়ে পড়ি আমরা। বড়রাস্তার দু’ধারে গার্ডরেল দিয়ে দেয় পুলিশ, যাতে কোনও কমরেড পালিয়ে যেতে না পারে। শুরু হয় বেধরক লাঠিচার্জ। রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে একের পর এক ছাত্র- যুব কমরেডরা। কেউ কেউ দৌড়ে গলির ভিতর ঢুকতে গেলে গলি থেকে টেনে বের করে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে থাকে। বিরামহীন, ক্রমাগত লাঠিচার্জ। টিয়ার গ্যাসের সেল ছুঁড়তে থাকে একের পর এক, যার মধ্যে বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো ছিল। সাথে জলকামান, যার মধ্যে ছিল ব্লিচিং পাউডার। তবুও সেই টিয়ার সেল নিয়ে ফুটবল খেলতে থাকে আমাদের কমরেডরা। সপাট লাথিতে টিয়ার গ্যাসের শেল পাঠিয়ে দেওয়া হয় ব্যারিকেডের ও’পারে। হ্যাঁ এসব কেবল  বাম ছাত্রযুবদের মিছিলেই দেখা সম্ভব।

একদিকে বিষাক্ত গ্যাসের ধোঁয়া আরেকদিকে জলকামান এবং ক্রমাগত লাঠিচার্জের ফলে অসংখ্য কমরেড আহত, অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মুর্শিদাবাদের একজন কমরেডের চোখের মধ্যে লাঠি দিয়ে আঘাত করে পুলিশ। আমার চোখের সামনেই একজন কমরেডের কান ফেটে গড়িয়ে পড়ে রক্ত। একের পর এক কমরেডের মাথায়, বুকে পিঠে লাঠির বাড়ি চলতে থাকে। রাস্তায় ফেলে বুকের উপর পা তুলে দেওয়া হয়, গলা টিপে ধরা হয়। সাংবাদিকরাও বাদ যাননি৷ মহিলা পুলিশ ছাড়াই ছাত্রী এবং যুবতী কমরেডদের উপর বীভৎস আক্রমণ নেমে আসে।

অথচ, আমরা নবান্ন অভিযানে গেছিলাম এ রাজ্যের প্রতিটি বেকারের কর্মসংস্থানের দাবি নিয়ে। বিগত দশ বছর ধরে তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি, একের পর এক ভাঁওতাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। সকলের জন্য শিক্ষা চাইতে। গিয়েছিলাম স্কুল-কলেজ অবিলম্বে চালু করার দাবি নিয়ে। আর বিনিময়ে আমাদের উপর নেমে এসেছে রাষ্ট্র নামক শোষণ যন্ত্রের অত্যাচার। এই রাজ্যে চাকরি চাইতে গেলে পিঠে লাঠির বাড়ি সহ্য করতে হয়। জেল বন্দি হতে হয়। হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে হয়। অথচ আমদের নেতৃত্ব এই দলদাস পুলিশ কে গতকাল বলেছিল, বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এলে তারা আবার সময় মতই ডিএ পাবেন।

কেন এত এত ভয় বামপন্থীদের? কেন এত ভয় ৭% ভোট নিয়েও কর্মসংস্থান আর শিক্ষার দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া  একটা দলকে? আমাদের জন্য বরাদ্দ বর্বর নির্যাতন। আর বিজেপি নবান্ন অভিযান করেছিল তখন রং মেশানো জলে হোলি খেলা দেখেছে সারা দেশ। নিজের জামা নিজেই ছিঁড়ে ফুটেজ খেতে ক্যামেরার সামনে প্রস্তুত ছিল আরএসএসের ক্যাডার রা।

এ এক আশ্চর্য রাজ্য! ডিএ চাইতে গেলে পুলিশ টেবিলের তলায় লুকিয়ে পড়ে। অথচ গতকাল নির্বিচারে ছাত্র-যুবদের উপর লাঠি চালায় তারাই। অথচ গরীব, মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলেমেয়েরা কিন্তু ক্রমাগত আক্রমণ হওয়ার পরেও এক মূহুর্তের জন্যও পিছু হটেনি। ইনকিলাবের স্লোগান তুলেছে বারবার। একজন কমরেড আরেকজন কমরেডের রক্তক্ষরণ,  শ্বাসকষ্ট হচ্ছে দেখে পালিয়ে যায়নি। বরং যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। রাস্তার দ’ধারে থাকা সাধারণ মানুষেরা আমাদের মুখে জল তুলে দিয়েছে, খাবার তুলে দিয়েছে। আমাদের বাঁচাতে গিয়ে কত সাধারণ মানুষ যে কাল পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়েছে তার কোনো হিসেব নেই।

কর্মসূচির শেষে যখন আমাদের কমরেডরা এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে লেনিন সরণি থেকে মৌলালিতে গিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ করছিলেন, ঠিক সেই সময় মাননীয়ার দলদাস পুলিশ সেখানে পৌঁছে গিয়ে আরও একবার লাঠিচার্জ করে ছাত্রযুব দের উপর। আমাদের এক ছাত্র নেতা ডঃ দীপ্তজিৎ দাসের কাছ থেকে জানতে পারি, স্টুডেন্ট হেলথ হোমের ভিতরে ঢুকে পুলিশ মারতে গিয়েছে আহত কমরেডদের। এন আর এস হাসপাতালে ট্রমা ডিপার্টমেন্টে গিয়ে আহত কমরেড দের অ্যারেস্ট করতে যায় পুলিশ৷
এদের ঘৃণা জানাবারও কোনো ভাষা নেই!

আরো পড়ুন :

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।