পাভেল ধর চৌধুরী

বাংলার ক্যাম্পাস বাংলার মানুষ গড়ার ঠিকানা। বাংলার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই প্রথম অঙ্কুরোদ্গম ঘটেছিল প্রতিষ্ঠানবিরোধী রাজনীতি চর্চার, বাংলার ক্যাম্পাসই গোটা ভারতবর্ষকে ছাত্র আন্দোলনের পথ দেখিয়েছিল। ছাত্র আন্দোলন যে বিচ্ছিন্ন কোনো কৃৎকৌশল নয়, বরং “লেখাপড়া করে যে গাড়িঘোড়া চড়ে সে”, “আপনি বাঁচলে বাপের নাম” ইত্যাদি বাগধারার বিপরীতে দাঁড়িয়ে যে কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক প্রশ্নে ছাত্রদের ভূমিকা থাকতে পারে – একথা প্রতিষ্ঠা করেছিল বাংলার ক্যাম্পাস। এই কথার মধ্যে কোনো প্রচ্ছন্ন গর্ববোধ নেই। আসলে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের কেন্দ্র হওয়ায় নবজাগরণের যাবতীয় প্রভাব সিঞ্চিত হয়েছিল বাংলার ছাত্র মননে। পার্থেনন পত্রিকায় যেভাবে প্রাচীন জরাজীর্ণ সামন্ততান্ত্রিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল ইয়ং বেঙ্গলের পড়ুয়ারা, সেই ধারাতেই ১৮৩১ সালে ফ্রান্সে বুর্জোয়া বিপ্লবের সময়ে কলকাতার রাস্তায় ইউনিয়ন জ্যাক নামিয়ে দিয়ে সামন্ততন্ত্রের মৃত্যু ঘোষণায় সংহতি জানিয়েছিল বাংলার ছাত্ররা। মেডিকাল কলেজে শব ব্যবচ্ছেদের অধিকার পাওয়ার লড়াই একদিনের নয়, বরং বহুদিনের সূক্ষ্ম সংঘাতের ফসল। গুপ্ত সমিতির লড়াই, আন্দোলনের চিন্তারও উৎসভূমি ছিল ক্যাম্পাস। প্রথমে সামন্ততন্ত্রবিরোধী লড়াই, পরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনোত্তর ভারতে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী এবং যে কোনোরকম অর্থনৈতিক, সামাজিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুপ্রেরণার জোগান দিয়েছে বাংলার ক্যাম্পাস।

শিল্পবিপ্লবোত্তর পর্যায়ে রাষ্ট্র পাঠক্রম তৈরি করেছে পুঁজিপতিদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। ক্রমে তা হয়ে উঠেছে সস্তা শ্রমিক তৈরির হাতিয়ার। গোটা বিশ্বে আধিপত্যবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে গড়ে তোলা হয়েছে গোটা শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো। এখন শিক্ষায় অর্থের জোগান, ব্যয়বহন শুধু নয়, শিক্ষার দর্শনগত প্রশ্নেও ছাত্র মনন গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে কর্পোরেটের বিশ্বাসের মডেলে। যে বিশ্বাস এবং স্বাচ্ছন্দ্যের ধরন একজনের মধ্যে প্রবেশ করানো গেলে, সে মালিককে সর্বনিম্ন ব্যয়ে সর্বোচ্চ মুনাফা দিতে শেখে এবং তার শ্রম চুরি করে যে মালিক শ্রেণি মুনাফা করছে, তাকে বৈধ মনে করতে শেখে। আধা সামন্তবাদী আধা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে সেই শিক্ষা বৈধতা দান করবে কর্পোরেট জগৎ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির আঁতাতের অনুঘটক হিসাবে।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

আজ সামগ্রিকভাবে ছাত্রছাত্রীদের জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে রাজনীতিবোধ – সবটাকেই কর্পোরেট গড়ে তুলতে চায় নিজস্ব মডেলে। ছাত্রছাত্রীদের মানসিক কাঠামোকে নয়া উদারবাদী বিশ্বের যাবতীয় কদর্য সংস্কৃতির মানানসই করে তুলতে পারলে শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়া যাবে নবীন প্রজন্মের। এর জন্য শুধু কর্পোরেটের ধামাধারী দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচি রূপায়ণ বা তাদের শাসন আরোপ করেই কর্পোরেট ক্ষান্ত থাকে না, বরং সাংস্কৃতিকভাবেও হজম করতে চায় ছাত্রসমাজের মগজকে। তাই তাকে তৈরি করতে হয় নিজস্ব বয়ান। সেই বয়ান ছাত্রছাত্রীদের মগজে প্রবেশ করাতে হয় রাষ্ট্রের যাবতীয় প্রচারযন্ত্র, বিজ্ঞাপন, সেমিনার, পাঠক্রম ইত্যাদির মধ্য দিয়ে। সেই বয়ান নির্মাণের একটা বড় সোপান ছিল কস্তুরীরঙ্গন কমিটি। অতঃপর জাতীয় শিক্ষানীতির (NEP) পথ ধরে এ রাজ্যে এসেছে রাজ্য শিক্ষানীতি বা স্টেট এডুকেশন পলিসি (SEP)। ছাত্রছাত্রীদের শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়ার যে কটা রাস্তা রয়েছে তার প্রায় সবকটাই উপস্থিত এই শিক্ষানীতিতে। সেগুলো অনেকটা এরকম:

১) আত্মকেন্দ্রিকতার চাষ
২) রাজনীতিবিমুখতার চাষ
৩) আট ঘন্টা অবসর এবং চিন্তার পরিসরকে সংক্ষিপ্ত করে দেওয়া
৪) প্রজ্ঞাপ্রবাহমূলক শিক্ষার বদলে কিছু দক্ষতা নির্মাণের শিক্ষা
৫) আঁটোসাঁটো ক্লাস – পরীক্ষা নির্ঘণ্ট এবং ক্যাম্পাসে কাটানো সময় সংক্ষিপ্তকরণ
৬) রাষ্ট্রীয় ব্যয়ভার ব্যতীত সেল্ফ ফিনান্সিং এডুকেশনের স্বাভাবিকীকরণ
৭) কর্পোরেট দাসত্বের জীবন সম্পর্কে মিথ্যা মোহ তৈরি
৮) কর্মসংস্থানের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় দায়ভার সংক্রান্ত ধারণার বিলোপ

এই আটটা উপকরণকেই জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ভয়ানকভাবে আত্তীকরণ করেছে এই শিক্ষানীতি। কোন কোন অস্ত্র রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যতের পক্ষে ধ্বংসাত্মক হতে পারে?

ক) শিক্ষানীতি বলছে “…it is untenable that the new policy can be wholly implemented with support from the government. It is necessary to explore the possibilities of private funding. Private funding of education is not new”। অর্থাৎ সরাসরি সওয়াল করা হচ্ছে বেসরকারি অনুদান এবং শিক্ষাক্ষেত্রে লাভজনক সংস্থার অনুপ্রবেশের পক্ষে।

খ) “The self-financing courses can be started with seed money from the government or the UGC and then continued on the basis of funds generated from student fees”। অর্থাৎ যাবতীয় কোর্সের আর্থিক দায়ভার নিতে হবে ছাত্রছাত্রীদেরই।

গ) নয়ের দশকের পর থেকেই সর্বত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ছোট, বড় বেসরকারি স্কুল। ২০১১ সালের পর সেগুলো হয়ে উঠেছে নিয়ন্ত্রণহীন। মাইনের কোনো ঊর্ধ্বসীমা সরকার নির্দিষ্ট করেনি। এই স্কুলগুলো কালক্রমে হয়ে উঠেছে ছাত্রদের মস্তিষ্ক প্রক্ষালনের জায়গা। কর্পোরেট দাসত্বের প্রতি আনুগত্য তৈরি হয় ওখান থেকেই। রাজ্য শিক্ষানীতি বলছে ৩-৫ বছর বয়সী শিশুদের শিক্ষার দায়িত্ব নেবেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। কিন্তু বাস্তবতা হল, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের এই জাতীয় কোনো প্রশিক্ষণ থাকে না। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলোর শিক্ষা সংক্রান্ত পরিকাঠামোও অপর্যাপ্ত। ফলে রি নীতিতে যা হবে, তা হল অভিভাবকদের স্রোত যাবে বেসরকারি স্কুলের বুকিং কাউন্টারের দিকে। এতদ্বারা শৈশবেই সরকারি শিক্ষার হাল হকিকত সম্পর্কে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করলেন মমতা ব্যানার্জি।

ঘ) ৩-৫ বছরে বয়সীদের পড়ানোর জন্য শিক্ষক, শিক্ষিকা নিয়োগের প্রয়োজন ছিল। সে গুড়ে বালি দিয়ে স্থায়ী কর্মসংস্থানের পাট তুলে দেওয়া গেল।

ঙ) যতরকম উন্নত উপকরণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত অ্যাক্সেসরিজের নিদান রাজ্য শিক্ষানীতি স্কুলশিক্ষা সংক্রান্ত অংশে দিয়েছে, তার পরিকাঠামো তৈরি করবে না সরকার। ফিল্ম স্ক্রিনিং, ডিজিটাল ল্যাব ব্যবহার, এ আই টুলস প্রয়োগ ইত্যাদি ব্যাপারে সরকারি স্কুলের পরিষেবা অপর্যাপ্ত হলে বেসরকারিকরণের রাস্তা আরও প্রশস্ত হবে। শৈশব থেকে যতরকম চাকচিক্য একজন পড়ুয়া এবং অভিভাবককে আকৃষ্ট করতে পারে, তার জোগান দেবে বেসরকারি স্কুল।

চ) নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যৌথভাবে কাজ করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে একটি ইনস্টিটিউশনাল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের (IDP), যা স্কুল কলেজের পরিকাঠামো নির্মাণ পরিচালনা করবে। IDP প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে “Regular monitoring of the implementation of the IDP by the HEIs may be done by a designated agency”। কারা এই এজেন্সি? এরা শিক্ষাক্ষেত্রে ঢুকলে লাভ কাদের? ক্ষতিই বা কাদের?

ছ) উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বাড়ছে এমসিকিইউ প্রশ্নের আনুপাতিক সংখ্যা। সরকার প্রকাশ করবে এমসিকিউ সম্বলিত বই। বিবরণধর্মী প্রশ্ন থেকে এমসিকিউয়ের দিকে ঝোঁকার পিছনে রয়েছে সৃষ্টিশীলতা এবং বোধের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশের রাস্তা বন্ধ করে ছাত্রছাত্রীদের যান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাবিত করার দর্শন।

জ) অষ্টম শ্রেণি থেকে থাকছে সামার প্রোজেক্ট, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে সঙ্গে আবার সামার ইন্টার্নশিপ। এই ইন্টার্নশিপ করতে নিয়ে যাওয়া হবে বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজ বা সংবাদমাধ্যমে। সেখান থেকেই কর্পোরেট একটু একটু করে ছাত্রছাত্রীদের মস্তিষ্ককে উচ্চমাধ্যমিক এবং স্নাতক স্তরের পরেই (বা মধ্যে) তার দুয়ারে এসে পড়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করার সুযোগ পাবে। বিভিন্ন স্কুলে সেমিনার, ওয়েবিনার, ওয়ার্কশপ চালাবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। তারা শস্তার শ্রমিক হওয়ার জীবন বেছে নেওয়ার নানা আকর্ষণীয় টোপ ফেলবে।

ঝ) বিশুদ্ধ বিজ্ঞান এবং কলাবিভাগের চর্চাকে রাষ্ট্র চিহ্নিত করে অনুৎপাদনশীল হিসাবে। ক্রমাগত যেভাবে সেল্ফ ফিনান্সিং, ব্যাঙ্ক লোন এবং প্রাইভেট টেন্ডারের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে উচ্চশিক্ষায়, তাতে শিক্ষার ব্যয়ভার বহনের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠবে পকেটের টাকা। একাধিক স্কলারশিপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গবেষণা করার জন্য সরকার দেবে না ফেলোশিপ। বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিপত্রে সই করে একজন গবেষককে জোগাড় করতে হবে গবেষণার খরচ। কর্পোরেট সোশাল রেসপনসিবলিটি স্কিমের মাধ্যমে গবেষণার অর্থ জোগাড় করা হবে (৩.৮.৩) এবং এমন বিষয় বেছে নিতে হবে ছাত্রছাত্রীকে, যাকে রাষ্ট্র লাভজনক মনে করে। ফলে মানববিদ্যাচর্চার সমস্ত বিভাগ শুকিয়ে আসবে, বিশুদ্ধ বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রও ক্রমশ সংকুচিত হবে। যেখানে প্লেসমেন্ট সেল তৈরি করা সম্ভব নয় বা তৈরি করে কোনো লাভ হবে না, সেইসব বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করা সম্পর্কে তৈরি হবে সামাজিক অনীহা। ভাষা, সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রকে সচেতনভাবে মেরে ফেলা হবে। দর্শন বিষয়টা তুলে দিতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে, আগামী দিনে রাজ্য সরকারও এই প্রক্রিয়া কার্যকর করবে।

ঞ) যেরকম অবৈজ্ঞানিক বিষয়বিন্যাস এবং পরীক্ষাপদ্ধতির নিদান দেওয়া হয়েছে পূর্বতন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সার্কুলারে, সেই সার্কুলার মোতাবেক কাজ হলে পাঠক্রমের চাপে ধাতস্থই হতে পারবে না একজন পড়ুয়া। চিন্তা করার ক্ষমতা, প্রশ্ন করার সাহস তারা পাবে কোথায়? কারা গড়ে তুলবে যাবতীয় সামাজিক রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ? ছাত্র আন্দোলনের ভিতকে নড়বড়ে করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে এভাবেই।

আরো পড়ুন নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে (NEP) কিসের আপত্তি? 

পরিশেষে একটা স্কিমের উল্লেখ করব – ‘ইন্ডাস্ট্রি মেন্টরশিপ ফর স্টুডেন্ট অন্ত্রেপ্রেনেয়ার্স’। এর নামে ছেলেমেয়েদের স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্নে অভিভূত ও উৎসাহিত করে তাদের কর্পোরেট মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করা হবে। এতে করে যেমন বিপুল লাভের মুখ দেখবে কর্পোরেট মালিকরা, তেমনই ওই প্রতিযোগিতায় ছেলেমেয়েদের নামাতে পারলে প্রথম বিশ্বের সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক অভিঘাত এদেশে তৈরি করা সহজ হবে। এমবিএ চায়ওয়ালা বা বিরিয়ানি বাই কিলোর সাফল্যের কাহিনি শুনতে শুনতে ২০ টাকা ফোনপে ব্যালান্স নিয়ে ঘোরা ছেলেটার মনেও জেগে উঠবে অন্ত্রেপ্রেনেয়ার হওয়ার অদম্য বাসনা। মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগান দিতে তাকেই ছমাস পরে নামতে হবে জোমাটোর ডেলিভারি পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে। কলেজে স্কিল ডেভেলপমেন্টের নামে এইসব কাজের অনেক কৌশলই তো সে রপ্ত করে ফেলবে।

আগামী ১৩ বছর চলবে এই শিক্ষানীতি রূপায়ণ। ক্রমশ ভেঙে পড়বে রাজ্যের সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে শস্তা শ্রমিক তৈরির কারখানা। সেই কারখানায় ছাত্র রাজনীতি হবে না। সেই কারখানার হবু শ্রমিকরা রুখে দাঁড়াবে না রাষ্ট্রের বৈষম্যের বিরুদ্ধে, যে কোনো ছোটবড় অন্যায়ের বিরুদ্ধে। বাড়বে বিচ্ছিন্নতার চর্চা, সামাজিক সম্পর্ক তৈরি, আড্ডা, গল্প ইত্যাদি বিষয়ে অস্পৃশ্যতার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা হবে সামগ্রিকভাবে। বোঝানো হবে, ওই এসি ঘরের ভিতরকার মধ্যবিত্তের আকাঙ্ক্ষানিবিষ্ট সেমিনার হলেই আছে যাবতীয় গ্ল্যামার। রাস্তায় “ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও” বলায় কোনো গ্ল্যামার নেই। ওসব ছোটলোকেরা করে। এই ভয়াবহ চেহারা হতে চলেছে বাংলার ক্যাম্পাসের।

খেটে খাওয়া মানুষের উপর আক্রমণ বাড়ছে, বৈষম্য বাড়ছে, শোষণ বাড়ছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। তাদের সন্তানসন্ততিরাই তো স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। তাদের শিক্ষা যদি এই বিশ্বব্যাপী ধ্বংসলীলার বিরুদ্ধে লড়তে না শেখায়, তাহলে পালটে দেওয়ার ডাক দেবে কারা? হোস্টেলের রাঁধুনি, পাশের বন্ধু, বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ষীর অসুস্থতায় তারা হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র অবধি এগিয়ে যাবে তো? ভবিষ্যতের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে ভাবতে গেলে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবা দরকার।

নিবন্ধকার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.