দুর্গোৎসব এসে পল্ল। শহুরে বাবুরো কাশফুলের ছবি শেয়ার কত্তে লেগেচেন, সর্বান্তঃকরণে কাউন্টডাউন কচ্ছেন, অ্যাডভান্সড বাবু বিবি আসচে বছর পুজোর নির্ঘণ্ট আরম্ভ করেচেন, লিটারেচারবাবুদের কচিকাঁচা ম্যাগাজিনের শারদ সংখ্যা ঠোঙা হয়ে পড়েচে, গবর্নমেন্টের চাঁদার ভাণ্ডার খোলা হয়েচে।
যুগে যুগে বাঙালীর উৎসবে ভারী মন। বারো মাসে তেরো পার্ব্বণ বরাবর হয়ে আসচে। এদানি ইট-বালি উৎসব, চেয়ার-টেবিল উৎসব, ব্রাশ-পেস্ট উৎসব, দু হাতে খাও উৎসব প্রভৃতি ঐতিহাসিক উৎসব নে তেইশ পার্ব্বণে পৌঁছেচে। তবে এবার উৎসবের বাজার কিচু মন্দা। ভাইরাস কোন গত্তে সেঁধিয়েচে, কখন ফের ঘাড়ে এসে পড়বে সেটি ঠিক ঠাওর হচ্চে না। তাই একুনো কার্নিভালাদি হবে কি না হবে সেটি এনাউন্স করা হয়নি। মুখ্য সেবিকা ভেঙে বলচেন না, তাই বাবু বিবি প্রাণে ধরে মহালয়ার দিন হতে মোটরে চেপে ঠাকুর দেকতে যাবার প্ল্যান ফাইনাল কত্তে পারচেন না। পথের ধারে রোল, চাউমিন, পপকর্ন, বিরিয়ানি সকলি ফেরত এসেচে। একন মোচ্ছবটি আগের মতন না কল্লে সেগুলি যে বৃথা যাবে, এই কতাটি গবর্নমেন্ট বুজবেন — বাবুরো এম্নি আশায় আচেন। তবে টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরির বাবু বিবি সকলি গবর্নমেন্টের হাতে সঁপে দিয়ে বসে থাকার মানুষ নন। তেনারা অন্ত্রেপ্রেনেয়রশিপের প্রতিভায় টইটম্বুর। তদুপরি রামমোহন, বিদ্যেসাগরের আমল হতে কসমোপলিটান। তাই দুর্গোৎসবের অপেক্ষায় না থেকে দুর্গা মায়ের আদরের ছেলেটির পূজায় যোগ দিয়েচেন। কতিপয় মডার্ন ও বয়স্ক বাবু বিবি তাজ্জব বনে গিয়ে বল্লেন, এ আবার কলকেতায় কবে ছিল? এটি বাঙালীর উৎসব নয়, প্রলয় খোট্টাই।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
শুনে অন্ত্রেপ্রেনেয়ররা গোঁসা কল্লেন। স্যাঙাতদের বল্লেন, চোপা দেকেচ? কলকেতায় ধুমধাম করে রামলীলা হচ্চে, এনারা গণেশপুজোকে বলচেন খোট্টাই। কেউ স্লোগান দিলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। শুনে মডার্ন বাবু বিবি কান মুল্লেন, নাক মুল্লেন। মহাপাতক হয়ে গ্যাচে। অতেব প্রসাদ বিতরণ হতে ডিজে বক্স বাজানো, সকলি আয়োজন হল। যাদের কান ফেটে যাবার যোগাড়, তেনারা জানালা বন্দ করার আগে উঁকি মেরে বাংলাপক্ষকে খুঁজলেন। টিকিটি দ্যাকা গ্যালো না।
বাংলায় শিল্প নেই ভেবে যে বাবু বিবির রাতে ঘুম হচ্চে না, তেনাদের বাঙালীর ব্যবসা বুদ্ধি সমন্দে জ্ঞান তালিবানের বীজগণিত জ্ঞানের অধিক নয়। কেমন করে মোটা চাঁদা আদায় কত্তে হয়, সে কতা পুজো কমিটির অন্ত্রেপ্রেনেয়ররা অ্যান্টিলাবাবুকেও শেকাতে পারেন। কোন্ বাবু সন্দের পরে দু পাত্তর খেয়ে শাজাহান হয়ে পড়েন, হাত পাতলেই পাড়ার ক্লাবে তাজমহল তোয়ের কত্তে হাজার পাঁচেক বের করে দেবেন; কার ঘটিবাটি বেচে দিলেও কুল্লে পাঁচশোটি টাকা হবে না; কোন বাবুকে হ্যাটা করে গিন্নীকে, আপনি জগদম্বা, আপনি সাক্ষাৎ দুগগা বল্লে কার্যসিদ্ধি হবে, কোন্ বাড়ীতে হাতজোড় করে মেয়েটির কালেজ যাওয়া বন্দ করে দেয়ার ভয় দ্যাকাতে হবে — সব অন্ত্রেপ্রেনেয়র বাবুদের মগজের হার্ড ডিস্কে লেকা আচে। তা কোন নেতা কোন ফুলে তুষ্ট তা জানবেন না এ বা কি কতা? তবে কিনা তেনাদের লাইনে সকলি পাকা খেলোয়াড়, বেজায় কম্পিটিশন। এক কমিটি মুখ্য সেবিকার প্রতিমা তোয়ের করে সকলেরে টেক্কা দিলেন। আমরা ভেবেচিলেম সে প্রতিমার পুজো হবে, বাসি কলকেতায় অ্যাদ্দিনে একটি নূতন রঙ্গ দ্যাকা যাবে, যে গায়ক ক বচ্ছর আগে ভবিষ্যবাণী করেচিলেন বাংলায় মুখ্য সেবিকার পুজো হবে, তিনি চ্যানেলে চ্যানেলে বাইট দেয়ার ফুরসত পাবেন। তা শুনলেম ওটি পুজোর প্রতিমা নয়, থিম প্রতিমা। আপনারা যাবেন, দেকবেন, সুমুখে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলবেন। অষ্টমীতে অঞ্জলি দেয়া হবে না।
সে কতা শুনে ধন্য ধন্য পড়ে গ্যালো। সকলে বল্লে মুখ্য সেবিকা কারো পুজো নেন না। কেবল হুতোমের মতন নিন্দুকেরা বদনাম করে আমোদ পায়। এদের গায় জলবিছুটি ঘষে দেয়া কর্তব্য হয়। নেহাত ভূতের গা খুঁজে পাবার ঝক্কি আচে, উপরি মুখ্য সেবিকা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাকতে বলেচেন, তাই হুতোমকে এবারটি বাবুরো রেয়াত কল্লেন। তবে গুরুজনেরা বলেচেন, স্বভাব যায় না মলে। হুতোম গুরুজনেদের ভারী ইয়ে করেন, অতেব বেয়াড়া কতা শুধোবার বদ স্বভাবটি সূক্ষ্ম দেহেও ত্যাগ করা হয় না। তাই শুধোলেম, ইতিহাসে আর কোনো নেতা দেশের ভালো করেননি কি? তেনাদের থিম করা হয়েচিল? তা বাবু বিবি বল্লেন এটি অন্যায় হচ্চে না। পার্কে পার্কে, মোড়ে মোড়ে প্রতিমা বসালে সেটি অন্যায় হত। বাঙালীর সেরা মোচ্ছবে হাজার হাজার প্যান্ডেলে হাজার হাজার থিম হচ্চে। সবের উপরে কড়া নজর রাখা হবে, আর বুঝি কাজ নেই গবর্নমেন্টের?
কতাটি ন্যায্য। মাতা নেড়ে সকলেরে পেন্নাম ঠুকে অঞ্জলীর ফুলের যোগাড় দেকব ভাবচিলেম। কিন্তু হুতোমের বাচাল মনটি মোচ্ছবের মরশুমে দু গুণ বাচাল হয়ে উঠেচে। ফের শুধোলে, মোড়ে মোড়ে, হোর্ডিং হোর্ডিংয়ে ছবিকে কি প্রতিমা বলা চলবে? ওলিম্পিকের মেডেল জেতা খেলোয়াড়দের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানেও প্রধান সেবকের ছবি চাদ্দিক আলো করে থাকে, এদিকে সিনেমার মোচ্ছবেও মুখ্য সেবিকার ছবি হতে দ্যুতি বের হয়। এটি কি ন্যায্য?
শুধোতেই বাবু বিবি বল্লেন, ডেমোক্রেসিতে আচো কিনা, তাই অ্যাতো কতা বেরিয়েচে। ফ্যাসিবাদ হলে অ্যাতোক্ষণ ঠ্যালা টের পেতে। হুতোমের শরীরটি সূক্ষ্ম, কিন্তু ভয়টি আসল মানুষের মতন। তাই আর কতা বাড়ালেন না। শাস্ত্রে লিকেচে পুজোর সময় বিরক্ত কল্লে পাপ হয়। হুতোমের পাপের ঘাট নেই, তাই নরকে স্থান হয়েচে। আর পাপে কাজ কী?
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।
অসাধারণ