নিথী লাহিড়ী

সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, বর্তমান শিল্পমন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ইডি উদ্ধার করেছে প্রায় ২১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। সাথে আছে বিদেশি মুদ্রা ও প্রায় ৭৯ লক্ষ টাকার সোনা। এই নিয়ে বঙ্গ রাজনীতি তোলপাড়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিন্দার ঝড় তুলেছে ইতিমধ্যেই। ঝড় উঠেছে সোশাল মিডিয়াতেও, বিভিন্ন পেজে নানাবিধ ছবি দিয়ে মিম বানানো চলছে। অধিকাংশই পার্থ-অর্পিতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে। এসব সমালোচনা একেবারেই যৌনগন্ধী। ইদানীং রাজনীতিতে সমালোচনা করতে গেলেই মানুষের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাটাছেঁড়া করাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তির পোশাক আশাক, সাজগোজ এমনকি চেহারা নিয়ে কটুকাটব্য ক্রমশ রাজনীতির ভাষা হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আঘাত করতে ঠিক সেটাই করা হচ্ছে যাকে ইংরেজিতে বলে স্লাট শেমিং এবং বডি শেমিং। বাম, ডান নির্বিশেষে সদস্য, সমর্থকরা সোশাল মিডিয়ায় রাজনীতিবিদদের সাথে সম্পর্ক থাকা মহিলাদের স্লাট শেমিং করছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘটনার সূত্রে কিছুদিন আগে খবরের শিরোনামে থাকা অন্য রাজনীতিবিদের জীবনযাপন, তাঁর বান্ধবীর ছবি একত্রিত করে মিমে পরিণত করে তার সাথে তুলনা চলছে। দুর্নীতি দমন কিংবা তার সমালোচনা করতে গিয়ে সেই ব্যক্তির ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলোকে রঙ্গ তামাশায় পরিণত করা হচ্ছে। ফলে মহিলাদের এক প্রচলিত স্টিরিওটাইপকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।

কে কেমনভাবে তার ব্যক্তিগত জীবন কাটাবে, কেমন পোশাক পরবে, কেমনভাবে সাজবে তা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। সমালোচনা করার ক্ষেত্রে যে দিকগুলো জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত তাতে সীমাবদ্ধ না থেকে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ, সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিও কিংবা ছবি নিয়ে তামাশা করা আদতে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতিফলন। বঙ্গের রাজনৈতিক ভাষ্যে এই মানসিকতার আধিপত্য ক্রমশ বাড়ছে।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

রাজনীতিতে কুবাক্যের ব্যবহার গোটা সমাজের উপর প্রভাব ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সে প্রভাব ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যে যন্ত্র বিশেষভাবে সাহায্য করে তা হল টেলিভিশন। এখন কোনো রাজনৈতিক সভা, সমাবেশে না গিয়েও একজন সমর্থক টিভিতেই নেতাদের বক্তৃতা শুনে নিতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ নেতা, নেত্রীদের বক্তৃতা তিন-চারবার দেখানো হয়। আর সে বক্তৃতায় যদি কোনো চটুল রসিকতা থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। সারাদিন তা নিয়েই চর্চা হয়।

এ রাজ্যের রাজনীতিতে বিদ্বেষমূলক, হিংসাত্মক ভাষার প্রয়োগ নতুন নয়। রাজনীতিবিদরা নারীবিদ্বেষী কথাবার্তা এক শ্রেণির জনতাকে উৎসাহিত করার জন্য ছুড়ে দেন এবং জনতার করতালিতে আরও উৎসাহিত নিজে আরও কুবাক্য প্রয়োগ করতে থাকেন – এই চক্রাকার প্রক্রিয়া বহুবার দেখা গেছে। এইভাবে চলতে চলতে একসময় যা আগে অনভিপ্রেত ভাষা ছিল তা চালু ভাষায় পরিণত হয়। একেই বলে স্বাভাবিকীকরণ। নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে।

আরো পড়ুন সমানাধিকারের পাঠেও দখলদারি শুরু করেছে পুরুষ

এই পথেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সমালোচনা দুর্নীতি থেকে সরে গিয়ে তাঁদের ব্যক্তিজীবন নিয়ে কুৎসা করায় পরিণত হয়েছে। এতে আমাদের লাভ নেই, বরং ক্ষতি। পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির লঘুকরণের এর চেয়ে ভাল রাস্তা নেই।

নিবন্ধকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.