১৯৩৫ সাল। ভারতীয় সিনেমা সবে তখন নির্বাক থেকে সবাক হয়েছে। বোম্বে টকিজের ব্যানারে শুটিং চলছে জওয়ানি কি হাওয়া ছবির। পরিচালক হিমাংশু রায়ের বন্ধু, সহপাঠী ও সহকর্মী ফ্রাঞ্জ অস্টিন। নায়িকা কমলার ভূমিকায় যথারীতি বম্বে টকিজের নামকরা নায়িকা, হিমাংশুর স্ত্রী দেবিকা রানী। নায়ক রতনলালের ভূমিকায় নাজমুল হাসান। লখনৌয়ের এই সুদর্শন ছেলেটি বোম্বেতে এসেছিল আইন পড়তে। হিমাংশু তাকে নিয়ে আসেন সিনেমা জগতে। আইন ছেড়ে পাকাপাকিভাবে নাজমুল নেমে যায় সিনেমায়। অত সুন্দর, লম্বা রাজকীয় চেহারার ছেলেটির নায়ক হিসাবে ভবিষ্যৎ তখনো অজানা, কিন্তু বোম্বে টকিজের সেটে শুটিংয়ের মধ্যে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছিল আরেকটি গল্প।
নাজমুলের সঙ্গে অভিনয় করতে করতেই দেবিকা নাজমুলের প্রেমে পড়লেন। যথা সময়ে জওয়ানি কি হাওয়া মুক্তি পাওয়ার পর দর্শকদের মধ্যে সাড়া পাওয়া গেল। হিট জুটি তৈরি হয়েছে ভেবে অস্টিনসহ বোম্বে টকিজের টিম পরের ছবি জীবন নইয়া-র জন্য এই জুটিকেই মনোনীত করল। ততদিনে নাজমুল আর দেবিকা দুজনেই দুজনের প্রেমে হাবুডুবু। দুজনে মিলে নতুন ছবিতেও জমিয়ে অভিনয় করতে শুরু করলেন। অর্ধেক শুটিং হয়ে যাওয়ার পর হয়ত ভবিষ্যৎ চিন্তা করে শঙ্কিত হয়েই ঠিক করলেন এই প্রেমের একটা পরিণতি দরকার। অমনি জওয়ানি কি হাওয়ার গল্পের মতই দেবিকা প্রেমিক নাজমুলকে নিয়ে ট্রেনে চেপে পাড়ি দিলেন কলকাতা।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
বোম্বে টকিজের সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার সাবক ভাচার সহকারী হিসেবে তখন কাজ করছেন পদার্থবিদ্যার স্নাতক শশধর মুখার্জি – হিমাংশুর আরেক আবিষ্কার। সেই শশধর কোথা থেকে খবর পেলেন নাজমুল-দেবিকা উঠেছেন কলকাতার গ্র্যান্ড হোটেলে। রায়ের আদেশে ছুটলেন সেখানে, দেখা করলেন দেবিকার সঙ্গে। দেবিকা কিছুতেই ফিরে যাবেন না। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে যখন কাজ হল না, তখন নাজমুলকে ধরলেন শশধর। কিছুটা বোঝাতেই কাজ হয়ে গেল। নাজমূল থেকে গেলেন কলকাতায় আর ব্যর্থ মনোরথ দেবিকা ফিরে গেলেন বোম্বে। নাজমুল কলকাতায় নিউ থিয়েটার্সের কয়েকটা ছবিতে অভিনয় করার পর দেশভাগ হলে পাকিস্তান চলে যান। এদিকে বোম্বে টকিজে নাজমুলের জায়গায় উঠে আসেন আরেক নায়ক।
দেবিকা ফিরে আসার পর অসম্পূর্ণ জীবন নইয়া ছবিতে নাজমুলের জায়গায় নায়কের ভূমিকায় কাকে নেওয়া হবে ভেবে যখন সবাই হয়রান, তখন আবার এগিয়ে এলেন শশধর। হিমাংশুকে নিজের নিজের এক শালার কথা বললেন, যে বোম্বেতে তাঁর কাছেই থাকে। একবার তার স্ক্রিন টেস্ট করে দেখা হোক – এই আর্জি। প্রথম দিকে পরিচালক অস্টিনের খুব আপত্তি থাকলেও মূলত হিমাংশুর জোরাজুরিতেই নায়কের ভূমিকায় অভিষেক হয় কুমুদলাল গাঙ্গুলির, রূপালি পর্দার জন্য যাঁর নাম দেওয়া হয় অশোককুমার।

এর কিছুকাল আগে উনবিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষদিকে এলাহাবাদের নামকরা কোঠেওয়ালি তওয়ায়েফ দলীপ বাঈ এক বিদূষী কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। দলীপ বাঈ আসলে ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণসন্তান দিলীপা দেবী। একদল লোক, যারা গান আর নাচের জন্য মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিত, তারা দিলীপাকে অপহরণ করে তওয়ায়েফ তৈরি করে। যে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন দলীপ বাঈ, তাকে বারাণসীতে তওয়ায়েফ করে তোলা হয় এবং সে বোম্বে টকিজের আমলে প্রথমে গান, পরে অভিনয়ের মাধ্যমে বোম্বে ফিল্ম জগতে জায়গা করে নেয়। বিদূষী এই কন্যার নাম জাদ্দান বাঈ। এই জাদ্দান বাঈ পরবর্তীকালে হয়ে ওঠেন বলিউডের প্রথম মহিলা প্রযোজক, নির্দেশক, মিউজিক কম্পোজার এবং নায়িকা। জাদ্দান বাই ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। সে ১৬ বছর বয়সে অভিনয় করতে নেমে ১৯৪৯ সালে পরপর দুটো হিট ছবি দিয়ে বলিউড সম্রাজ্ঞী হয়ে ওঠার রাস্তা তৈরি করে ফেলে।
সেই দুটো ছবিতে নায়কের ভূমিকায় ছিলেন এক বিখ্যাত থিয়েটার কোম্পানির মালিকের ছেলে। বাবা অভিনয় জগতে থাকলেও ছেলেকে বিন্দুমাত্র অতিরিক্ত সুযোগ দেননি। ছেলে নিজের যোগ্যতায় স্টুডিও খুলে সেখানে জাদ্দান বাঈয়ের মেয়ে নার্গিসকে কাস্ট করে নিজের ব্যানারে প্রথম ছবি বরসাত তৈরি করে সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের মনে চিরকালের মত জায়গা করে নেন। পৃথ্বীরাজ কাপুরের যোগ্য ছেলে রাজ কাপুর। নার্গিসকে প্রথম দেখেই তাঁর প্রেমে পড়েন রাজ। সিনেমার সেটে চুটিয়ে চলে সেই প্রেম। এর কয়েক বছর পরে শ্রী ৪২০ ছবিতে রাজ কাপুরের সঙ্গে নার্গিসের একখানা দৃশ্য ছিল, যেখানে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে নার্গিসের ছাতা উড়ে যাচ্ছে। সে দৃশ্য বৃষ্টি আর প্রেমের এক মিলনোপাখ্যানের জন্ম দিয়েছিল। সেই দৃশ্যের অসাধারণ রিমেক দেখার যদি সুযোগ ঘটে, তাহলে তা পুরোটা চেটেপুটে উপভোগ করতে হয়।
বোম্বে টকিজে ইতিমধ্যে অশোককুমার তারকা অভিনেতা। তাঁর মাথায় নিজের জীবনের এক অদ্ভুত সত্যি ঘটনা কেবলই ঘা মারতে থাকে। ১৯৪৮ সালে জিজিবয় হাউসে শুটিং করতে গিয়ে স্থানীয়দের মুখে শোনেন যে ওই বাড়িতে ভূত আছে। একদিন রাতে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পেয়ে অশোককুমার বেরিয়ে দেখেন এক মহিলা সাহায্য চাইছেন তাঁর গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে বলে। অশোককুমার বাইরে বেরিয়ে গাড়িটা ঠিক করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর ঘরের ভিতরে যেতেই বাইরে থেকে একটা গগনভেদী আর্তনাদ শুনতে পাওয়া যায়। ঝটিতি বাইরে এসে সেই মহিলাকে আর দেখতে পাননি অশোককুমার। কেবল গাড়ির মধ্যে একটা মুণ্ডু কাটা দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এই সত্যি ঘটনাকেই এক অসম্পূর্ণ প্রেমের গল্পের রূপ দিতে চান অশোককুমার। এক নবাগত পরিচালককে গল্পটা শুনিয়ে তাঁকে দিয়ে চিত্রনাট্য লেখান এবং সে ছবি দারুণ হিট হয়। সেই হিট পরিচালকেরও কপাল খুলে দেয়। নবাগত সেই পরিচালকের নাম কামাল আমরোহী, ছবির নাম মহল।
সাদত হাসন মান্টো তাঁর লেখায় বন্ধু অশোককুমারের ব্যাপারে লিখেছিলেন, অশোক জীবনে একবারই এক নায়িকাকে কিছুটা মন দিয়ে ফেলেছিলেন। ইন্ডাস্ট্রির কেউই সেকথা সেভাবে জানে না এবং সেই সম্পর্ক পরিণতি পাওয়া তো দূরের কথা, শুরুই হয়নি বলতে গেলে। সেই নায়িকা কি মধুবালা? কে জানে! নাম লেখেননি মান্টো।
এর কিছুকাল আগে আরেক নবাগত পরিচালক ম্যাক্সিম গোর্কির লোয়ার ডেপথ অবলম্বনে একটা ছবি বানান। প্রাথমিকভাবে সেই ছবি বাণিজ্যসফল না হলেও প্রথম ভারতীয় ছবি হিসাবে কান ফিল্মোৎসবে প্রদর্শিত হয়। মার্কসীয় ভাবধারায় প্রভাবিত সেই নবাগত পরিচালকের নাম চেতন আনন্দ এবং ছবির নাম নীচা নগর। এই ছবিতে উঠে এসেছিল নিপীড়িত মানুষের কথা।
স্বাধীনতার ঠিক পরপর ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বিভি কেসকরের মনে হয়, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত মুসলমান আর ব্রিটিশ শাসকদের হাতে পড়ে তার মাধুর্য হারিয়েছে। ফিল্মি গান সেই অধঃপতনকে আরও ত্বরান্বিত করছে। এই কারণে সঙ্গীতের শুদ্ধতা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে সিনেমার গান এবং ক্রিকেটের ধারাভাষ্য দেওয়া তিনি নিষিদ্ধ করে দেন। সেইসময় সারা দেশে ফিল্মের গানের প্রচুর শ্রোতা এবং গানের বাজারও ক্রমবর্ধমান। ঠিক এই ফাঁক ভরাট করে রেডিও সিলোন। তারা বোম্বের সিনেমার গান সম্প্রচার শুরু করে। তুমুল জনপ্রিয় হয় রেডিও সিলোন। তারা বিনাকা গীতমালা নামে সিনেমার গানের জন্য আলাদা একটা অনুষ্ঠানই চালু করে ফেলে। নতুন ছবির গান এখান থেকে রেডিও সিলোনের অফিসে পাচার হত এবং তা তারা সম্প্রচার করত।
ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ তখন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখা। ভারত জুড়ে তাদের দারুণ প্রভাব। বলিউডের সিংহভাগ শিল্পীই এর প্রভাব এড়িয়ে যেতে পারেননি। স্বাধীনতার আগে থেকেই বলিউডের দখল অনেকটাই গণনাট্য সঙ্ঘের হাতে। স্বাধীনতার পর যখন ঠাণ্ডা যুদ্ধ চলছে, গণনাট্য সঙ্ঘের অবস্থান স্বভাবতই সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে ছিল। আরকে ফিল্মসের বেশিরভাগ শিল্পীই, সে অভিনেতা হোক বা চিত্রনাট্যকার অথবা ক্যামেরাম্যান, গণনাট্য সঙ্ঘের সদস্য ছিলেন। শ্রী ৪২০ ছবির ‘মেরা জুতা হ্যায় জাপানি’ গানে ‘সর পে লাল টোপি রুশি’ কথাটা যেন সোভিয়েত ইউনিয়নের মানুষের মন জিতে নিল। শোনা যায় রাজ কাপুর যখন প্রথমবার মস্কো যান, তিনি ট্যাক্সিতে উঠলে তাঁর রুশ ভক্তরা নাকি সেই ট্যাক্সি কাঁধে করে বয়ে নিয়ে গেছিল।

ইতিমধ্যে বলিউডে প্রবেশ মেহবুব স্টুডিওর। মেহবুব খানই নার্গিসকে হাতে ধরে নিয়ে এসেছেন ফিল্ম দুনিয়ায়। আরকে ফিল্মস প্রতিষ্ঠার আগে রাজ কাপুর আর নার্গিসকে দর্শকরা চিনেছেন মেহবুবের অন্দাজ ছবিটা দিয়ে। এরপর যখন তিনি প্রোডাকশন হাউজ তৈরি করলেন, তাঁর ব্যানার হল কাস্তে-হাতুড়ি। সেই ব্যানারের ছবি মাদার ইন্ডিয়া ভেঙে দিল সমস্ত রেকর্ড। সদ্যস্বাধীন ভারতে তখন প্রয়োজন ছিল পরিকাঠামো উন্নয়ন। নেহরু বুঝেছিলেন সে কথা। নেহরুর সেই পরিকল্পনা মাদার ইন্ডিয়া ছবিতে পর্দায় তুলে আনলেন মেহবুব খান । বাঁধ তৈরির কাজে গ্রামের লোকের ঝাঁপিয়ে পড়া দেখিয়ে স্বাধীন ভারতে প্রোপাগান্ডা ফিল্মের নজির তৈরি হল।
অ্যামাজন প্রাইমের ওয়েব সিরিজ জুবিলি আসলে ফিল্মের ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে এক লম্বা যাত্রা। সেই যাত্রায় এই ইতিহাসগুলোকে এক সুতোয় বেঁধে আস্তে আস্তে মালা বোনা হয়। চরিত্রগুলোর মধ্যে একমাত্র হিমাংশুর আদলে শ্রীকান্ত রায় আর দেবিকা রানির আদলে সুমিত্রা কুমারী ছাড়া কেউই সেভাবে একরৈখিক নয়। যেমন বিনোদ দাসের উপর ভর করেছেন অশোককুমার আর শশধর, জয় খান্নার মধ্যে রয়েছেন রাজ কাপুর, চেতন আনন্দ আর দেব আনন্দ। নিলোফারের মধ্যে রয়েছেন জাদ্দান বাঈ, নার্গিস আর কিছুটা হয়ত মধুবালা। শামসের সিংয়ের মধ্যে যেমন সোহরাব মোদি, জেবিএইচ ওয়াদিয়া আর হোমি ওয়াদিয়ার ছায়া পাওয়া যাবে। বিনোদের ভাইয়ের মধ্যে রয়েছে কিশোরকুমারের ছায়া এবং যখন নিলোফার বিনোদের বাড়ি থেকে বৃষ্টির মধ্যে পালানোর সময়ে বিনোদের ভাইয়ের মুখোমুখি হয় তখন আমাদের ‘এক লড়কি ভিগিভাগি সি’ গানের দৃশ্য মনে পড়ে যেতে পারে। আরও কিছু কিছু চরিত্রে হয়ত আরও কিছু কিছু ছায়া পাওয়া যাবে, কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, রয়েছে একটা সুন্দর গল্প।
বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানি ইতিহাস শোনাতে বসেননি। তিনি সেই সময়কার প্রেক্ষিতে গল্প বলতে চেয়েছেন। কিন্তু পিরিয়ড পিসকে ইতিহাসের প্রতি কিছুটা দায়বদ্ধ থাকতেই হয়। সেই দায় বেশ ভালভাবেই মেটানো হয়েছে। গবেষণার গভীরতা এতটাই যে যারা সিনেমার ইতিহাস নিয়ে খুঁতখুতে, তারাও সন্তুষ্ট হবে। একটা উদাহরণ দিই। বিনোদের শুট করা সিনের রিল যখন সাবিত্রী দেবী নষ্ট করে দেন, তখন সেই রিল সাজিয়ে গুছিয়ে পুনরুদ্ধার করার সময়ে বিনোদ কমেডিয়ান নূর মহম্মদ চার্লির কথা বলেন। এই নূর মহম্মদ চার্লি বলিউডের একদম গোড়ার দিকের কমেডিয়ান। বদরুদ্দিন জামালুদ্দিন কাজি, যিনি জনি ওয়াকার নামে পরিচিত, তাঁর আমলের কিছুদিন আগেই বলিউডের একমাত্র কমেডিয়ান ছিলেন চার্লি। তাঁর উল্লেখ মান্টোর লেখা ছাড়া আর কোথাও পাইনি। সেই চার্লি খুব সংলাপ ভুল করতেন, কথা জড়িয়ে যেত। কিন্তু দর্শকরা খুব পছন্দ করতেন তাঁকে, কাজেই নির্দেশক বাদও দিতে পারতেন না। তাই চার্লির সংলাপ যেখানে যেখানে জড়িয়ে যেত, সেই জায়গাগুলো রিল থেকে কাটছাঁট করে মোটামুটি দাঁড় করানো হত। বিনোদ এই সিরিজে রায় টকিজের ল্যাবের লোকেদের ঠিক সেভাবেই চার্লির উদাহরণ দিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া রিলগুলোকে পুনরুদ্ধারের কথা বলেন। কতটা খুঁটিয়ে বলিউডের ইতিহাস পড়লে এই উল্লেখ আনা যায় ভাবছি। হিমাংশু কীভাবে পাইপ ধরাতেন এবং সবসময় সাহেবি পোষাকে থাকতেন, তা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় পড়েছি। শ্রীকান্ত রায়ের পাইপ ধরানোর মধ্যে সেই ব্যাপারটা হুবহু ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আরো পড়ুন ‘নিজেদের যুগের স্বপ্ন, সাফল্য, ব্যর্থতার ধারক তিন শিল্পী’
অবশ্য শুধু সিনেমার ইতিহাস কেন? জুবিলি সিরিজে অভিনয়ের মানও চোখধাঁধানো। বিশেষ করে নিলোফারের চরিত্রে ওয়ামিকা গাব্বি যেন সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন। বিনোদের চরিত্রে অপরশক্তি খুরানা আর জয় খান্নার চরিত্রে সিদ্ধান্ত গুপ্ত অসামান্য।
অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে গানগুলোর কথা না বললে অনেককিছু বলা হবে না। চরিত্রগুলোর ঐতিহাসিকতার মতই গানগুলোর ঐতিহাসিকতাও বিচার করা যায়। আমার ফেসবুক তুতো বোন রিচি অনেক খেটেখুটে গানগুলোর সঙ্গে কোন কোন গানের মিল রয়েছে তার একটা তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকা হুবহু তুলে দিলাম।
১. বাবুজি ভোলে ভালে – ইয়ে চান্দ সা রৌশন চেহরা
২. দিল জহাঁ পে – মাইকেল দারু পি কে
৩. নহি জি নহি – কৌন হ্যায় যো সপনো মে আয়া
৪. উয়ো মেরা ইশ্ক কা – দিল চিজ কেয়া হ্যায়
৫. ন কোঈ মেরা – ইয়ে রাত ভিগি ভিগি
৬. চন্দু নচা – পুতুল নেবে গো পুতুল/ইচক দানা বিচক দানা
৭. উড়ানখাটোলে – আচ্ছা জি ম্যায় হারি
৮. দরিয়াছা রাজা – মি ডোলকারা দরিয়াছা রাজা
৯. ইতনি সি হ্যায় দাস্তান – জীনা ইয়হাঁ মরনা ইয়হাঁ
১০. ইরাতি চলি – সুহানি রাত ঢল চুকি
১১. সারে কে সারে – ইয়ে দুনিয়া অগার মিল ভি জায়ে
বিষয়ের কত গভীরে প্রবেশ করলে এভাবে গান তৈরি করা যায়! এই সিরিজের প্রত্যেকটা জিনিস নিয়েই আলাদাভাবে লেখা সম্ভব।
~মতামত ব্যক্তিগত
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।