২০১৩ সালে আমাদের দেশে পাশ হয়েছে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে আইন, যে আইন মহিলাদের রক্ষাকবচ হয়ে উঠত পারত। এই আইন নিয়ে অবশ্য ঠাট্টা ইয়ার্কির শেষ নেই। আইনটা কীভাবে মহিলাদের প্রতি একপেশে এবং “বেচারা” পুরুষদের এই আইনের জন্য ভয়ে ভয়ে দিন কাটাতে হয় – সেকথা যে কোনো আড্ডায় মুখরোচক আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে সহজেই। অথচ আইন পাস হওয়ার এক দশক পরে দেখা যাচ্ছে দেশের অলিম্পিকে পদকজয়ী কুস্তিগীরদের পথে নামতে হচ্ছে, কারণ তাদের যৌন হেনস্থার অভিযোগকে সরকার পাত্তা দিচ্ছে না।

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। অন্তত ১০-১২ জন মহিলা কুস্তিগীর এই অভিযোগ করেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন নাবালিকাও আছে। তাঁদের বক্তব্য, ফেডারেশনে অভিযোগ জানালে কর্তারা কেরিয়ার শেষ করার হুমকি দিতেন। এর প্রতিবাদে অনেক কুস্তিগীর পথে নেমে ধর্নায় বসে পড়েন। এর জবাবে ব্রিজভূষণ জানান, সব অভিযোগ মিথ্যা। যৌন হেনস্থার তদন্ত হোক, দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি গলায় দড়ি দেবেন। ব্রিজভূষণ নিজে একজন বিজেপি সাংসদ, বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে এক সাক্ষাৎকারে ক্যামেরার সামনে তিনি নিজেই স্বীকার করেন, এক বন্ধুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে খুন পর্যন্ত করেছেন।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

বলাই বাহুল্য, বাবরি মসজিদ ভাঙতে সামনের সারিতে ছিলেন এমন কোনো নেতাকে ভারত সরকার শাস্তি দিতে উদ্যোগী হবে না। নিতান্ত চাপে পড়ে ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (আইওএ) এক তদন্ত কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল, যে কমিটির মাথায় ছিলেন এম সি মেরি কমের মত প্রবাদপ্রতিম বক্সার। সেই কমিটি তৈরি হওয়ার পর কুস্তিগীররা ধর্না তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু এ মাসে দেখা গেল তাঁরা আবার রাজধানীর যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসেছেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কী বলছে তা আমরা জানতে পারিনি, কিন্তু কমিটির সদস্যদের মধ্যেই যে মতের মিল নেই তা প্রকাশ্যে এসে গেছে। দেশের তারকা খেলোয়াড়রা রাস্তায় বসে কিন্তু নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি তাঁদের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেননি। খেলোয়াড়রা জানতে চাইছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজের ‘মন কি বাত’ শোনান, তাহলে তাঁদের মনের কথা কেন শুনতে চাইছেন না? এই কুস্তিগীররাই যখন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক জিতেছেন, তখন প্রধানমন্ত্রী তাদের নিজের বাড়িতে আপ্যায়ন করে তাঁদের “বেটি” সম্বোধন করেছিলেন। সরকারের ‘বেটি বচাও, বেটি পঢ়াও’ স্লোগান নিয়েও কুস্তিগীররা প্রশ্ন তুলেছেন।

আরো পড়ুন যে সমাজে না বলা বারণ, সেখানে বহরমপুর অনিবার্য

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মেরি কমের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির নিষ্ক্রিয়তা কুস্তিগীরদের ফের রাস্তায় গিয়ে বসতে বাধ্য করেছে, দেশের সর্বকালের সেরা অ্যাথলিটদের অন্যতম পিটি ঊষা আরও এককাঠি সরেস। তিনি বর্তমানে আইওএ সভাপতি। কুস্তিগীরদের পাশে দাঁড়ানোর বদলে তিনি ধর্নায় বসার নিন্দা করে বলেছেন, এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় অলিম্পিক পদকজয়ী কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক ক্যামেরার সামনে কেঁদে ফেলেন।

দেশের কৃতী সন্তানরা যৌন হেনস্থার অভিযোগ করলে যদি এই দশা হয়, তবে সাধারণ মেয়েরা অভিযোগ করলে কী হয় তা বোঝা কঠিন নয়। সবথেকে অবাক লাগে, সাধারণের মানুষের এহেন ঘটনায় বিশেষ হেলদোল নেই। তবে কি বিজেপি শাসনকালে প্রতিবাদ না করা আর অন্যায় সহ্য করা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেল?

মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.