কিছুদিন আগে নরওয়ের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সার্ভিসেসের হাত থেকে নিজের দুই সন্তানকে উদ্ধার করার জন্য বাঙালি মেয়ে সাগরিকা চক্রবর্তীর লড়াই নিয়ে তৈরি হয়েছে হিন্দি ছবি মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সাস নরওয়ে। একে বলিউডি ছবি, তার উপর শ্রেষ্ঠাংশে রানি মুখার্জি আর অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তাই ছবিটি পশ্চিমবঙ্গে বিলক্ষণ আলোচিত হয় এবং সেই সূত্রে সাগরিকার আসল ঘটনার সঙ্গে ছবির কোথায় মিল, কোথায় অমিল – সেসবও সবিস্তারে আলোচিত হয়েছিল। সোশাল মিডিয়ায় এই ছবির বয়ানের পক্ষে বিপক্ষে নানা কথাবার্তা উঠে এসেছিল। কিন্তু সাগরিকার চেয়েও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়েছে কানাডাবাসী আরেক বাঙালি মা দূর্বা মুখার্জির।
সাগরিকার গল্পে মধুরেণ সমাপয়েৎ হয়েছিল, তিনি সন্তানদের ফেরত পেয়েছিলেন। দূর্বার একমাত্র ছেলে অর্ক চক্রবর্তী কিন্তু মাত্র ১২ বছর বয়সে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। অসীমা চিব্বরের ছবির শেষে বলেই দেওয়া হয়েছে যে তৎকালীন মন্ত্রী তথা বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ এবং সিপিএম সাংসদ বৃন্দা কারাত সাগরিকার লড়াইয়ে যথাসাধ্য সাহায্য করেছিলেন। দূর্বা তেমন কোনো সাহায্য পাননি। গত ১৭ অক্টোবর কলকাতা প্রেস ক্লাবে দূর্বার বিভীষিকা নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র দ্য স্টোলেন স্টার প্রদর্শিত হল। সেই ছবি থেকে জানা গেল, কানাডার ভারতীয় দূতাবাস দূর্বাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু পরে আর যোগাযোগ করা হয়নি।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
সৌরভ সরকার নির্মিত এই তথ্যচিত্র থেকে যেটুকু বোঝা গেল, তাতে দূর্বার পুত্র অর্ক শুধু যে কানাডার স্কুলে বর্ণবিদ্বেষ তথা বুলিইংয়ের শিকার হয়েছিল তা নয়, তার মৃত্যুর কারণ নিয়েও সন্দেহের অবকাশ আছে। দূর্বার পুত্রশোক দ্বিগুণ হয়ে যায় এই কারণে যে কানাডার পুলিস তদন্ত করে অর্কর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে সাব্যস্ত করে। অথচ একটি ১২ বছরের ছেলে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের ছাদ থেকে ঝাঁপ না দিয়ে অন্য অ্যাপার্টমেন্টের ছাদ থেকে কেন ঝাঁপ দিল তার কোনো উত্তর নেই। বিশেষত সেই অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকতে হলে একটি অ্যাক্সেস কার্ডের প্রয়োজন, যা তার কাছে ছিল না। সেই অ্যাপার্টমেন্টের ছাদে যেতে হলে আরেকটি অ্যাক্সেস কার্ড দরকার, তাও অর্কর কাছে ছিল না।
এক বন্ধু ভিডিও গেম কনসোল চুরি করার অভিযোগ করেছিল অর্কর বিরুদ্ধে। সেই থেকে ঘটনার সূত্রপাত। তথ্যচিত্রের বয়ান অনুযায়ী, অর্ক কনসোলটি তার মালিককে ফেরত দেওয়ার আগে পর্যন্ত সে জানতও না জিনিসটি তার কাছে নেই। অথচ ফেরত দেওয়ার পরেও তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ তুলে স্কুলে ব্যাপক অশান্তি করা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ অর্ককে দিয়ে স্বীকারোক্তি লেখাতে চেয়েছিলেন, তাকে পুলিসের হাতে তুলে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন রবীশ কুমারকে নিয়ে তথ্যচিত্র: কেউ কেউ জেগে আছে বলে
দ্য স্টোলেন স্টার অবশ্য এসব নিয়ে গভীরতর তদন্তের দিকে যায়নি, হয়ত ঘটনাটি বিদেশে ঘটেছে বলেই তা সম্ভব হয়নি। তবে অর্ক আর দূর্বা কানাডায় যে অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন, সেখানকার সাংসদ সমেত অনেকের যেসব দীর্ঘ বিবৃতি এই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে তার চেয়ে দূর্বার লড়াই তাঁরই জবানিতে আরও বেশি করে থাকলে হয়ত ভাল হত। ঘটনার বীভৎসতা এবং একজন মায়ের লড়াই আরও স্পষ্ট হত দর্শকদের কাছে। তথ্যচিত্রের আগে পরে মনোচিকিৎসক ডাঃ অনির্বাণ গোজি আর মনোবিদ ডাঃ তিন্নি দত্ত যা যা বললেন তা যারা অন্যের উপর চড়াও হয় আর যাদের উপর চড়াও হয় – উভয়ের মনস্তত্ত্ব বুঝতেই সাহায্য করে। কিন্তু সেই আলোচনায় বড় ছবি ধরতে গিয়ে অর্ক আর দূর্বার ঘটনা কিঞ্চিৎ কম গুরুত্ব পেল – এই ধারণা রয়েই যাচ্ছে। সৌরভের এই তথ্যচিত্র নির্মাণ অবশ্য প্রশংসনীয় এই কারণে, যে অন্তত কিছু বেশি লোকের কাছে ঘটনাটি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হল। এদেশে তারকাসমৃদ্ধ বলিউডি ছবি না বানালে কোন কাহিনি আর আবালবৃদ্ধবনিতার মনোযোগ আকর্ষণ করে?
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।