বাঙালিদের মধ্যে চালু রসিকতা হল, পৃথিবীর যেখানেই যাও না কেন, বাঙালির দেখা মিলবেই। আর যেখানেই বাঙালি আছে সেখানেই আছে ‘কালচার’। ওটা ছাড়া বাঙালির আর কী-ই বা আছে? কিন্তু সেই কালচার রক্ষা করতে গিয়ে অনেককেই হিমশিম খেতে হয়, কারণ বাংলা বই দেশের বাইরে খুব সহজলভ্য নয়। পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় বসে চট করে যে কোনো বাংলা বই কিনে ফেলা যায় না। হয় কলকাতা থেকে অর্ডার দিয়ে আনাতে হয়, তাতে বইয়ের দামের চেয়ে আনানোর খরচ বেশি হয়ে যায়। অথবা কয়েক বছর পরে পরে পশ্চিমবঙ্গে এলে একসাথে অনেক বই কিনে নিয়ে যান প্রবাসীরা। অনেকসময় তাতেও এক হাজার টাকার বই নিয়ে যেতে দেড় হাজার টাকা খরচ হয় শুল্ক ইত্যাদিতে। অথচ আজকের দুনিয়ায় এর খুব সহজ সমাধান সম্ভব – হাতের মোবাইল ডিভাইসেই যদি পছন্দের বই পড়তে পাওয়া যায়। কিন্তু সামান্য দু-একজন প্রকাশক ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে এখন অবধি বাংলা ই-বই নিয়ে কাউকে তেমন ভাবতে দেখা যায় না। কিন্তু রবিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় রোটারি সদনে কেতাব-ই প্রকাশনা সংস্থার অনুষ্ঠানে আশার আলো দেখা গেল।

যাঁরা বাংলা ই-বইয়ের খোঁজ করেন, তাঁরা জানলে খুশি হবেন, কেতাব-ই আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলা ই-বই প্রকাশক হিসাবেই। ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে কেতাব-ই অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস অ্যাপ লঞ্চ হয়। এই ফ্রি অ্যাপ যে কোনো ডিভাইসে ডাউনলোড করে এখান থেকে ই-বই কিনে পড়া যায়। কিন্তু এখনো এক বছর পূর্ণ না হওয়া এই প্রকাশনা সংস্থা রবিবার আরও দুটো নতুন কাজে হাত দিল। প্রথমত, বাংলা বই এবং লিটল ম্যাগাজিনের ই-লাইব্রেরি চালু হল। দ্বিতীয়ত, কেতাব-ই মুদ্রিত বইয়ের জগতেও পা রাখল।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

সংস্থার ডিরেক্টর পিনাকী মিত্র তাঁদের কার্যকলাপের খতিয়ান দিতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের লাইব্রেরি সংস্কৃতির ক্রমাবলুপ্তির কথা বলছিলেন। গত শতকের মত এখন পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরি নেই বা থাকলেও ধুঁকছে। সেই কারণে ই-বই এবং ই-বইয়ের লাইব্রেরি যে শুধু প্রবাসী বাঙালি নয়, স্থানীয় নিম্ন মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পাঠকেরও কাজের জিনিস হয়ে উঠতে পারে, সে কথা পিনাকীবাবু বলেছেন। কেতাব-ই অ্যাপের মধ্যেই এই লাইব্রেরি রয়েছে। মাসে মাত্র ৫০ টাকা চাঁদা দিয়েই (ছ মাসের চাঁদা ২৫০ টাকা, এক বছরের ৪৫০ টাকা) এই লাইব্রেরি থেকে একসঙ্গে ছটা পর্যন্ত বই তোলা যাবে, অর্থাৎ নিজের ডিভাইসে ডাউনলোড করা যাবে। একটা বই ফেরত দিলে আবার একটা বই ডাউনলোড করা যাবে।

সবচেয়ে জরুরি কথা, কেতাব-ই অ্যাপে শুধু ওঁদের দ্বারা প্রকাশিত বইই পাওয়া যাবে এমন নয়। প্রতিক্ষণ, ডিএম লাইব্রেরি, সোপান, সেতু, গাঙচিল, নবজাতক, ভাষা সংসদ, সপ্তর্ষি, লালমাটি, ভারতী, দ্য ক্যাফে টেবল, আবিষ্কার, আর বি এন্টারপ্রাইজ, খোয়াবনামা, দেব সাহিত্য কুটীর, বার্ডউইং, কলিকাতা লেটারপ্রেস, বিয়ন্ড হরাইজন, কলাবতী মুদ্রা, বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ, দিব্যপ্রকাশ, স্বপ্নরেখা, কাউন্টার এরা, ইতিকথা এবং অভিযান প্রকাশিত বইয়ের ই-বইও এই অ্যাপে পাওয়া যাবে। যাঁদের বইয়ের খিদে অসীম, কিন্তু বাড়িতে বই রাখার জায়গার টানাটানি, তাঁরা আহ্লাদিত হবেন।

আরো পড়ুন সুখেন মুর্মুর চদরবদর: অচেনার আনন্দ, অজানার সংকট

বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতির অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল লিটল ম্যাগাজিন। সেই লিটল ম্যাগাজিনের অনলাইন সংগ্রহশালা তৈরি করার প্রয়াস সম্ভবত এই প্রথম। পুরনো লিটল ম্যাগাজিনের উৎসাহী পাঠক, গবেষকদের জন্য রত্নভাণ্ডারের দরজা খুলে গেল বলা যায়। কেতাব-ই অ্যাপের লাইব্রেরি থেকে বইয়ের নিয়মেই লিটল ম্যাগাজিনও তোলা যাবে। আপাতত যেসব লিটল ম্যাগাজিনের ই-সংস্করণ পাওয়া যাবে তাদের মধ্যে আছে উৎস মানুষ, এখন বোবাযুদ্ধ, অপর, তেপান্তর, বারোমাস, বোধশব্দ, ভাষাবন্ধন, অনীক, কালধ্বনি, কঙ্ক, বিষয়মুখ এবং অমৃতলোক।

ই-লাইব্রেরির উদ্বোধন এবং ছখানা মুদ্রিত বইয়ের প্রকাশ ছাড়াও রবিবারের অনুষ্ঠানের আরও দুটো পর্ব ছিল। কেতাব-ই আয়োজিত ‘গল্প আপনার, বই আমাদের’ প্রকল্পের নির্বাচিত লেখকদের সম্মাননা প্রদান এবং ‘দেবেশ রায়ের বিস্তার’ শীর্ষক আলোচনা সভা। প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে ছিল দেবেশ রায়ের সাক্ষাৎকার সংকলন চাপান-ওতোর এবং বিভিন্ন শিল্পকর্মের যেসব আলোচনা তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় করেছিলেন, তার সংকলন পড়া-দেখা-শোনা। আলোচনা সভায় বক্তা হিসাবে ছিলেন রুশতী সেন, স্বপন পাণ্ডা, গৌতম সেনগুপ্ত, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় এবং সমরেশ রায়।

discussion on debesh roy
‘দেবেশ রায়ের বিস্তার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা। (বাঁদিক থেকে) গৌতম সেনগুপ্ত, স্বপন পাণ্ডা, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, রুশতী সেন, সমরেশ রায়

বাংলা সাহিত্যে ইদানীং অভিনবত্ব সুলভ নয়। ফলত একই সন্ধ্যায় বই প্রকাশ করার ক্ষেত্রে থেকে অভিনব চিন্তার প্রকাশ এবং দেবেশ রায়ের মত ব্যতিক্রমী লেখককে নিয়ে আস্ত একটি আলোচনা সভার আয়োজন চমৎকৃত করে।

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.