“এই মামলার নিষ্পত্তি করে ফেলা উচিত, ধর্মাবতার,” বলে উঠলেন আইআইটি খড়্গপুরের কৌঁসুলি অনিন্দ্য মিত্র, যিনি তৃতীয় বর্ষের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ফয়জান আহমেদের খুনের মামলায় লড়ছেন। বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত তখন ফয়জানের কৌঁসুলি রণজিৎ চ্যাটার্জির যুক্তি শুনছিলেন আর মিত্র বারবার এরকম বাধা দিচ্ছিলেন। এই কথার পরে বিচারপতি প্রশ্ন করেন “সিট (বিশেষ তদন্তকারী দল) রিপোর্ট ছাড়াই?” আদালত কক্ষে কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা। তারপর বিচারক বললেন “আমি প্রোগ্রেস রিপোর্ট পর্যালোচনা করব, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।”

দুমাস পরে শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) কলকাতা হাইকোর্টে ফয়জান খুনের মামলার শুনানি শুরু হল অন্য এক বিচারপতির এজলাসে। তবে শুনানি শুরু হল ঠিক সেইখান থেকে, যেখানে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের এজলাসে শেষ হয়েছিল। আইআইটির উকিলরা আবার এই মামলা ডিসমিস করে দেওয়ার দাবি তুললেন।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

১১ অক্টোবর, ২০২২ তারিখে ২৩ বছর বয়সী ফয়জানের আংশিকভাবে পচে যাওয়া মৃতদেহ আইআইটি ক্যাম্পাসে তাঁর হোস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয়। তারপর খড়্গপুর পুলিস আর আইআইটি কর্তৃপক্ষ – উভয়েই দাবি করে ফয়জান আত্মহত্যা করেছিলেন। কিন্তু প্রায় একবছর ধরে আইনি লড়াই, হাইকোর্টের শুনানি, দেহ উত্তোলন করে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত, প্রথমে একজন বিচারপতির বেঞ্চ, তারপর ডিভিশন বেঞ্চ – এত কাঠখড় পোড়ানোর পরে একে খুন বলে রায় দেওয়া হয় এবং আইপিএস অফিসার কে জয়রমনের নেতৃত্বে সিট গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। দুই বিচারপতি পুলিসকে এফআইআরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা যুক্ত করতেও নির্দেশ দেন।

ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি রাজশেখর মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল রাখার পরে আশা করা গিয়েছিল আইআইটি আর রাজ্য সরকার তাদের অবস্থান বদল করবে এবং খুন হওয়া ছেলেটির পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু আইআইটি চত্বরে ঘটে যাওয়া অন্যান্য ঘটনার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ যেভাবে ছাত্রছাত্রীদের পরিবারের পক্ষে দাঁড়ায়, এক্ষেত্রে তা হয়নি। প্রত্যেক স্তরে তারা বিরোধিতা করেছে। শুক্রবার আইনজীবী মিত্র আবার বলেন যে এই মামলায় বিশেষ কিছু বিচার করার নেই এবং এর নিষ্পত্তি করে ফেলা উচিত। সিট এখন পর্যন্ত মামলার অগ্রগতি নিয়ে কোনো রিপোর্ট ফাইল করেনি। শুনানি চলাকালীন একসময় ফয়জানের পক্ষের কৌঁসুলি চ্যাটার্জি আদালতকে জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হন “মামলাটা চলতে থাকলে আইআইটির সমস্যা কী?”

আরো পড়ুন অবাধ তদন্ত নিশ্চিত করুন, মমতাকে লিখলেন রেহানা

ফয়জানের বাবা-মায়ের আরেক কৌঁসুলি অনিরুদ্ধ মিত্র ইনিউজরুমকে বলেন “আদালতও বলেছে প্রথমে এই অপরাধের শিকার যে তার পক্ষের অধিকার নিশ্চিত করা হবে, তারপর বিবেচনা করা হবে এই মামলার কী পরিণাম হওয়া উচিত।”

ফয়জানের মা রেহানা আহমেদও আইআইটি কেন তাঁর ন্যায়বিচারের দাবিকে সমর্থন করছে না, বরং সর্বশক্তি দিয়ে বিরোধিতা করছে, তা দেখে অবাক। তাঁর প্রশ্ন “আইআইটি কাকে বাঁচাতে চাইছে?”

উল্লেখ্য, এর আগের শুনানির দিন (৯ অক্টোবর) রাজ্যের পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন ১৭ অক্টোবর (মঙ্গলবার)।

মূল প্রতিবেদন: ইনিউজরুম

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.