আমার খ্যাতি নেই, ইউটিউব চ্যানেল নেই, পোষ্য জীবজন্তুও নেই। পাড়ার কুকুরকে মাঝে মধ্যে উচ্ছিষ্ট খেতে দেওয়া ছাড়া পশুপ্রেমিক হিসাবে আমার কোনো কীর্তি নেই। আমি রেড ভলান্টিয়ার নই, সিপিএম দলের সদস্য নই, কোনোদিন ছিলাম না, ভবিষ্যতেও হব বলে মনে হয় না। অতএব যা লিখছি তা না লিখলেও কিছু এসে যেত না। তবু লিখছি একেবারে ব্যক্তিগত মন্দ লাগার কারণে। সব পক্ষকে সমান চোখে দেখার দায় এ লেখায় আমি নিচ্ছি না, নিতে চাইছি না। সেই কারণেই নাগরিক ডট নেটে এ লেখা লিখব না ভেবেছিলাম। ফেসবুক দেয়ালে লেখাই সমীচীন হবে মনে করছিলাম। কিন্তু সম্পাদকমণ্ডলীর অন্য সদস্যরা বললেন, আমরা ব্যক্তিগত অনুভূতিকে আগেও জায়গা দিয়েছি এই মঞ্চে, এবারেও দেব।
২০০০ সালে ভোটাধিকার পেয়েছি, তারপর থেকে সিপিএমকেই ভোট দিয়ে আসছি। সেই দল জেলেপাড়ার সঙেদের দলে পরিণত হলে খারাপ লাগে। সেই খারাপ লাগার কারণেই কিছু অপ্রিয় কথা এখানে বলব।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
পশ্চিমবঙ্গের ভদ্রলোক পরিসরে বরাবর দেখেছি, রাজনৈতিক পরিবার বলে একটা কথা খুব চালু। অরাজনৈতিক পরিবার বলে কিছু হয় কিনা জানি না, তবে দেখেছি সাধারণভাবে ওই শব্দবন্ধ দিয়ে বোঝানো হয় এমন পরিবারকে, যাদের একাধিক সদস্য এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের সদস্য। ধরেই নেওয়া হয়, ওই পরিবারের লোকেরা অন্যদের চেয়ে রাজনীতিটা বেশি বোঝে। অন্যদের চেয়ে রাজনৈতিক ব্যাপারে মতামত দেওয়ার অধিকার একটু বেশি, সে নিজে রাজনীতির ধারে কাছে না গেলেও। এই ধারণার পিছনে আদৌ কোনো যুক্তি নেই, আছে পরিবারতন্ত্রের প্রতি সুপ্ত ভালবাসা। ভারতে এই ভালবাসা সকলেরই অল্পবিস্তর আছে, বদনাম শুধু গান্ধীরা কুড়োয়। সেই কারণে স্বাধীনতার পর থেকে কমিউনিস্ট দলগুলো ছাড়া প্রায় সব বড় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বই কোনো না কোনো পরিবার কুক্ষিগত করেছে। কমিউনিস্টদের মধ্যে ব্যাপারটা ঘটেনি মানে বুঝতে হবে, ব্যক্তিগতভাবে যে যা-ই মনে করুক, অমুকের ছেলে বা তমুকের মেয়ে পরিচয়কে নেতা হওয়ার যোগ্যতা বলে স্বীকৃতি দেয়নি এই দলগুলো। এখনো দেয় না, কিন্তু আমার মতে সিপিএমের সাম্প্রতিক খিল্লিযোগ্য কার্যকলাপগুলোর কারণ হল পার্টির শুভানুধ্যায়ীদের পারিবারিক অতীতকে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া।
ক্ষমতা চলে যাওয়ার পরের দশ বছরে সিপিএমের সমস্ত স্তরে এটা ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সিপিএমের সেলিব্রিটি সমর্থকরা বলে থাকেন “আমার বাবা-মাকে ছোট থেকে দেখেছি লাল পতাকা নিয়ে…” ইত্যাদি। কেউ বলেন লাল পতাকার সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান, তাই তিনি সিপিএম সমর্থক। এসব খুবই পবিত্র আবেগ সন্দেহ নেই। কিন্তু মুশকিল হল, সাধারণত এই উচ্চমধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পার্টি দরদিরা মনে করেন, তাঁর বাবা জেল খেটেছিলেন বলে তিনি নিজেই একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার ক্ষমতা ধরেন। রাজনীতি ব্যাপারটা যে অত সহজ নয়, উপরন্তু কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতি, সেটা এঁদের অনেকেরই বোধগম্য হয় না। অথচ গত দশ বছরে সিপিএম দল এঁদের বিপুল গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছে। বিখ্যাত মানুষদের বাম প্রীতি অন্যায় তো নয়ই, অভিনবও নয়। পৃথিবীর সমস্ত কমিউনিস্ট পার্টির জন্মলগ্ন থেকে শিল্পী, সাহিত্যিকদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অনেকে একেবারে সদস্য হয়েছেন, অনেকে বাইরে থেকে সমর্থন করেছেন। অনিল চ্যাটার্জির মত জনপ্রিয় অভিনেতা তো সিপিএমের হয়ে নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেখছি শ্রীলেখা, বাদশা, রাহুল, কমলেশ্বররা সিপিএমের মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অনিল চ্যাটার্জির সময়েও কিন্তু জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরাই মুখ ছিলেন। এখন পার্টি কলেবরে কমেছে, আর নেতারা পার্টি দরদি আর পার্টি সদস্যের তফাত করতে ভুলে গেছেন। নিজেদের মুখগুলো মানুষের পছন্দ নয় বুঝেই কিনা কে জানে, বিখ্যাত দরদি পেলেই প্রবল আগ্রহে জড়িয়ে ধরছেন, তাঁর জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। ফলে কেরিয়ারের মধ্যগগনেও সঠিক অর্থে তারকা হতে ব্যর্থ অভিনেত্রী সিপিএমের স্টার ক্যাম্পেনার হয়ে রাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন। টিভি চ্যানেলের বিতর্কে সিপিএমের হয়ে বলতে যাচ্ছেন বাদশা মৈত্র বা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ব্রিগেডের মঞ্চেও তাঁরা যারপরনাই গুরুত্ব পাচ্ছেন। এত গুরুত্ব পেলে আমার আপনারও মনে হতে বাধ্য, আমি একজন দারুণ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং দলটা আমার পৈতৃক সম্পত্তি। দলের কর্মীদের চেয়ে আমি কোনো অংশে কম নই, তাদের সাথে আমি যেমন ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারি।
শুধু সেলিব্রিটি নয়। মূলত পারিবারিক ইতিহাসের কারণে সিপিএম সমর্থক বা একদা পার্টির কোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন, তাই ভালবেসে এখনো মোটা টাকা চাঁদা দেন — এরকম অনেক দরদিকেই সিপিএম নেতৃত্ব প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দেন। সিপিএমের যেসব সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে পার্টির নথিতে পর্যন্ত স্বীকার করা হয়েছে, সেগুলোও ঠিক ছিল বলে এঁরা ফেসবুকে ঝগড়া করে বেড়ান, শোনা যায় সোশাল মিডিয়া স্ট্র্যাটেজি ইত্যাদিও এঁরা ঠিক করেন। টুম্পা প্যারডি নিয়ে যখন পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথা হচ্ছে, এক সিপিএম বন্ধুকে আমার মন্দ লাগা জানাতে ফোন করেছিলাম। তার কাছে শুনলাম “ওটা তো পার্টি বানায়নি, বানিয়েছে পার্টিকে ভালবাসে এরকম কিছু ছেলেপুলে।” তারপর দেখলাম মহম্মদ সেলিম, শতরূপ ঘোষের মত নেতারা ওই প্যারডির সপক্ষে অনেককিছু বলেছেন। প্যারডিটা ভাল ছিল কি মন্দ ছিল সে প্রশ্ন আর নতুন করে তুলছি না। বলছি এটা যা প্রমাণ করে, তা হল হয় পার্টি নিজের কাজ দরদিদের আউটসোর্স করে দিয়েছে, অথবা দরদিরা ভালমন্দ যা-ই করুক, পার্টি তার পক্ষ নিচ্ছে। এত বিরাট হৃদয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের হওয়া উচিত কিনা সেটা বোধহয় ভেবে দেখা প্রয়োজন।
দরদিরা নিশ্চয়ই রেগে যাচ্ছেন। একটু বিস্তারিত বলি। দরদ খারাপ নয়, যদি তা দাবিহীন হয়। কমিউনিস্ট পার্টির নানারকমের দরদি থাকে। আমি যাদের কথা বলছি, তাদের কতকগুলো সামান্য লক্ষণ আছে। ১) পরিবারের কেউ অবিভক্ত সিপিআই বা সিপিএম করতেন, ২) অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত সচ্ছল, পার্টিকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেন নিয়মিত বা মাঝে মাঝে, ৩) সিপিএমের সমালোচনাও করেন, কিন্তু যেগুলো পার্টির দোষ বলে উল্লেখ করেন, সেগুলো শোধরালে সিপিএম উন্নততর কংগ্রেস বা তৃণমূল হবে। উন্নততর কমিউনিস্ট পার্টি নয়। ৪) সোশাল মিডিয়ায় সিপিএমের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই তাকে বিজেপি বা তৃণমূল বলে দেগে দিতে দেরি করেন না। হয়ত যার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তার পার্টির জন্যে আত্মত্যাগ বেশি। কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় পার্টির বিরুদ্ধ মত প্রচার আটকানোর পবিত্র দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ার পর অত আগুপিছু দেখার সময় থাকে না।
এই ধরনের দরদিরা মনে করেন যেহেতু এঁরা সিপিএমকে ভালবাসেন এবং সাধ্যমত সাহায্য করেন, অতএব এঁদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া এবং পরামর্শ অনুযায়ী চলা সিপিএমের কর্তব্য। অর্থাৎ সিপিএম একটি কোম্পানি আর এঁরা তার শেয়ার হোল্ডার। এই দরদিদের ভুল অচিরেই ভেঙে যেত, যদি পার্টির আচরণ তেমন হত। কিন্তু পার্টিও বোধহয় নিজেকে কোম্পানি হিসাবেই দ্যাখে। তাই দরদিদের সঙ্গে কর্মীদের বিবাদে চুপ করে থাকে, নয়ত বিপ্লবী নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের মত দরদিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “তুমিও একটা ভুল করেছ… আমাকে জানাতে পারতে….” ইত্যাদি।
তবে এই দোষে কেবল রাজ্য স্তরের নেতারা দুষ্ট এমন বললে মিথ্যে বলা হয়। সিপিএম পার্টিটা ভাল, জ্যোতিবাবু লোকটা ভাল নয়। বুদ্ধবাবু মানুষটা ভাল, কিন্তু পার্টি ওঁকে কাজ করতে দিল না। এই বাক্য দুটো শুধু বাজারি প্রোপাগান্ডা নয়, ব্যাখ্যা হিসাবে অমার্কসিয়ও বটে। সিপিএমের উপর, নীচ সর্বত্রই কর্মীর গুরুত্ব কমিয়ে দরদির গুরুত্ব বাড়িয়ে ফেলা হয়েছে। উদাহরণ দিই।
সাতই নভেম্বর সকালে বাজারে যাচ্ছি। পার্টির এক শহিদের বেদির সামনে নভেম্বর বিপ্লব দিবস উদযাপন হচ্ছে, জনা পাঁচেক পার্টি সদস্য রয়েছেন। আমাকে দেখে এক তরুণ পার্টিকর্মী যোগ দিতে বললেন। দাঁড়িয়ে পড়লাম। সামান্য বক্তৃতা হল, তারপর শহিদবেদিতে মাল্যদান। পার্টি সদস্যরা দিচ্ছেন, হতবুদ্ধি করে দিয়ে আমার হাতেও তুলে দেওয়া হল মালা। পথচারীদের মধ্যে থেকে আমাকেই যে ডাকা হয়েছিল তার একমাত্র কারণ এই এলাকায় সিপিএম দলকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়েছিলেন যাঁরা, তার মধ্যে আমার প্রয়াত পিতা একজন। আমি তাঁর কাছে শিখেছিলাম যে কমিউনিস্ট শহিদের বেদিতে মালা দিতে গেলেও যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। পার্টি সদস্যের সে যোগ্যতা আছে, আমার নেই। বুঝলাম এই তরুণ কর্মীটিকে তা শেখানো হয়নি। আশপাশে যে প্রবীণরা ছিলেন তাঁদের কাকু, জেঠু বলি। তাঁরাও চাইছেন আমি দিই।
মনে শহিদের প্রতি অশ্রদ্ধা নেই বলে দিয়েই ফেললাম। কিন্তু তাতে রাজনীতির ফাঁকিবাজিটা আড়াল হয় না। আসলে সারা বছর ধরে পাড়ার রিকশা চালকদের বোঝানো হয়নি নভেম্বর বিপ্লব কী এবং কেন? দরকারের সময় একজন পরিচিত দরদিকে ডেকে নেওয়া হল। অর্থাৎ পার্টিকে ব্রাহ্মসমাজে পরিণত করা হয়েছে। আদর্শ প্রগতিশীল, উদ্দেশ্য মহৎ। কিন্তু তা নিয়ে সভা-সমিতি, উপাসনা করব আমরা ভদ্রলোকেরা। ওরা ওসবের কী বুঝবে?
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনো গরীব মানুষ সিপিএম করেন জানি। কিন্তু সব মিলিয়ে সিপিএম হয়ে দাঁড়িয়েছে মধ্যবিত্তের, মধ্যবিত্তের জন্য, মধ্যবিত্তের দ্বারা চালিত পার্টি। ফলে এখন পার্টিকর্মীকে কুকুরের উপর হিংস্রতার অজুহাতে কেউ দল বেঁধে পিটিয়ে গেলেও কমিউনিস্টদের বিখ্যাত (এবং কুখ্যাত) পার্টিজানশিপ বোতাম আঁটা জামার নীচে শান্তিতে শয়ান। সংগঠন বাড়ানোর কী হবে তা কেউ ভাবছে না। ভাবছে কী করে সেলিব্রিটি দরদি বাড়ানো যায়। বিজেপি ফেরত হলেও চলবে।
দরদির উপরে কর্মীকে স্থান না দিলে সিপিএমের নিস্তার নেই।
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।
লেখক ও নাগরিক ডট নেট-কে ধন্যবাদ। শুভেন্দু দাশগুপ্তর ‘শ্রমিকদের নিয়ে একটি মধ্যবিত্ত রচনা’ বইতে আগে পড়েছি কীভাবে মধ্যবিত্ত নেতৃত্ব বাংলায় শ্রমিক আন্দোলনকে গাড্ডায় ফেলেছে প্রায়ই। আজ এই লেখার শেষাংশে পড়লাম “সব মিলিয়ে সিপিএম হয়ে দাঁড়িয়েছে মধ্যবিত্তের, মধ্যবিত্তের জন্য, মধ্যবিত্তের দ্বারা চালিত পার্টি”। এমনিতে আমার অস্পষ্ট ধারণা হল: সাধারণত যে কোনও আন্দোলনবাদী রাজনীতির নেতৃত্ব সব কালে, সব দেশে চরিত্রগতভাবে মধ্যবিত্ত হতে বাধ্য।
আমার প্রশ্ন
১. লেখকও কি তাই মনে করেন?
২. আমার মনে হল লেখক মধ্যবিত্ত নেতৃত্বের আমূল অপসারণের কথা বলছেন না, বরং তাঁর মতে আদর্শ কাঠামো ও কর্মপদ্ধতি হবে সেটাই যেখানে এদের পাশাপাশি কমপুঁজির মানুষরা আরও বেশি জায়গা পাবেন আমি কি প্রস্তাবটা ঠিক পড়লাম?
শুধু নেতৃত্বে কোন শ্রেণির অংশগ্রহণ থাকবে তা বলছি না। কমিউনিস্ট পার্টির প্রাথমিক উদ্দেশ্য তো শ্রমিক, কৃষকের জন্যে কাজ করা। আমার মতে সিপিএম সেই জায়গা থেকেই বহুদূরে সরে গেছে। পৃথিবীতে পারফেক্ট কিছু কখনো হয়নি। ফলে যাঁরা বলেন, সিপিএম যথার্থ কমিউনিস্ট পার্টি নয়, আমি সচরাচর তাঁদের সাথে একমত হই না। কারণ সে অর্থে যথার্থ কোনো কমিউনিস্ট পার্টির সন্ধান আমার জানা নেই। চীন, রাশিয়া, কিউবা, ভিয়েতনাম সব পার্টিরই চ্যুতি নির্দেশ করা যায় চাইলে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে পা কোথায় থাকবে সেটা একটা কমিউনিস্ট পার্টি ঠিক রাখতে পারে। আমার মতে সিপিএমের সেটাই আর ঠিক নেই। অবশ্যই, নেতৃত্বে কোন শ্রেণির মানুষ আছেন সেটা এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। শ্রমিক নেতা, কৃষক নেতা আর কই সিপিএমে। খুঁজেই পাওয়া যায় না। ওই শ্রেণি থেকে উঠে আসা নেতা বাদ দিন, ওই ফ্রন্টগুলোর নেতাই বা কোথায়? ছাত্র আর যুবনেতায় ভরে গেছে। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি ভোটের আগেও অন্যত্র লিখেছিলাম।