রাশিয়ান সৈন্যদের সঙ্গে অটোমান বাহিনীর তখন ধুন্ধুমার লড়াই চলছে শিপকা গিরিপথে, রাশিয়ান সৈনিকদের করুণ অবস্থা। পর্যাপ্ত রসদ নেই, অস্ত্র নেই, লোকবল নেই। একের পর এক পরাজয়ে বাহিনী কোণঠাসা। এদিকে জার দাবি করে চলেছেন “শিপকা গিরিপথে সব ঠিক আছে”। বাহিনীর পিঠ দেওয়ালে ঠেকছে আর জার দাবি করে চলেছেন “শিপকা গিরিপথে সব ঠিক আছে”! সেখান থেকে রাশিয়ার রাজনৈতিক মহলে রসিকতা চালু হল “শিপকা গিরিপথে সব ঠিক আছে”।
ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ১০০ বছর বয়স হল। এই ১০০ বছরে অসংখ্য গৌরবোজ্জ্বল লড়াই, অসংখ্য আত্মবলিদান সত্ত্বেও আজ এই আন্দোলনের অবস্থা কী? তা সবাই নিজের চোখে দেখতেই পাচ্ছেন। তর্কবিতর্ক, আলোচনা, অনুমানের কোনো অবকাশ নেই। অবস্থা ওই শিপকা গিরিপথে রাশিয়ান সৈন্যদের মত। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। রসদহীন, অস্ত্রহীন, মনোবলহীন, ছন্নছাড়া এক পরাজিত সৈন্যদল। আর কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হল, কমিউনিস্ট শিবিরেও অনেক ছোট ছোট জার আছেন। তাঁরা ওই রাশিয়ান জারের মতই বলে চলেছেন “শিপকা গিরিপথে সব ঠিক আছে।” “যা করেছি সব ঠিক করেছি, সব দোষ অন্যদের”, “ওরাই আমাদের হারিয়ে দিল, ওরাই আমাদের ডুবিয়ে দিল” ইত্যাদি। হাসিঠাট্টার পাত্র হতে হতে চামড়া মোটা হয়ে গেলে তখন আমি যে আদতে তামাশার পাত্র তা বোঝার ক্ষমতাও মানুষের থাকে না। তখন একমাত্র হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায় শূন্যগর্ভ আস্ফালন। কথার তোড়ে বাঁধ ভাঙো, এমন ভাব করো যে কারোর পিতৃদেবের বোঝার সাধ্য না হয়, আসলে পুরুতমশায় ছড়িয়ে লাট করেছেন।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
একশো বছরের কমিউনিস্ট আন্দোলনের এমন ছন্নছাড়া অবস্থা হওয়ার বহু কারণ আছে। তার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, শ্রমিকশ্রেণির শ্রেণি ঐক্য গড়ে তুলতে না পারার সমস্যা। এই সমস্যারও আবার অনেকগুলো দিক আছে। তার মধ্যে একটা হল, ভারতবর্ষের দলিত আন্দোলন, যা আসলে শ্রমিকশ্রেণিরই একটা বড় অংশের আন্দোলন, তার সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির কখনোই সুসম্পর্ক ছিল না। এর শিকড় রয়েছে দলিত রাজনৈতিক আন্দোলনের সবচেয়ে দীর্ঘকায় নেতা বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর সম্পর্কে কমিউনিস্ট পার্টির ভুল দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে। এই দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে কমিউনিস্ট-দলিত সম্পর্কের উন্নতি ঘটার কোনো আশা নেই। বর্তমানের দলিত সংগঠনগুলো এবং তাদের কাজকর্ম সম্পর্কেও বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন গড়ে তোলা যাবে না। আমি তাই আগের দুটো লেখায় (‘আম্বেদকর ও দলিত আন্দোলন সম্পর্কে কমিউনিস্ট ভ্রান্তি’) মূলত জোর দিয়েছিলাম আম্বেদকরের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তৎকালীন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের ভুল মূল্যায়নের ব্যাখ্যায়। তাতে অনেকে অনেক মন্তব্য করেছেন, প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। পক্ষে বিপক্ষে বেশ কিছু কথা উঠে এসেছে। এসব একদিকে যেমন বামপন্থী মননের সজীবতার প্রমাণ, তেমনই অন্যদিকে আম্বেদকর এবং দলিত আন্দোলন সম্পর্কে প্রগাঢ় বিতৃষ্ণা, কুসংস্কার এবং উপর্যুক্ত ‘ক্ষুদ্র জার’ মনোভাবেরও প্রতিফলন। কমিউনিস্টরা অনেক সময়েই এটা ভুলে যান যে, একটা উথাল পাথাল করা সামাজিক-রাজনৈতিক উপপ্লব ঘটানোর নেতৃত্বের দায়িত্ব থাকলে কলহপ্রবণ ক্ষুদ্র মানসিকতার ঘেরাটোপে পড়ে থাকলে চলে না। এতে করে বিপ্লবের প্রধান রাজনৈতিক কাজ – বন্ধু ও শত্রু নির্ধারণ – ত্রুটিপূর্ণ হতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে বলতেই হবে, যে রাজার পার্ট ভুল লোককে দেওয়া হয়েছে।
ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের গোটা পর্যায় জুড়ে কমিউনিস্ট পার্টি একদিকে যেমন অসংখ্য গৌরবোজ্জ্বল লড়াই করেছিল, আত্মাহুতি দিয়েছিল, স্বাধীন ও মুক্ত ভারতের স্বপ্ন মানুষের মধ্যে প্রোথিত করেছিল, তেমনই বেশ কয়েকটা গুরুতর ভুলও করেছিল। তার যেমন সবকিছু ঠিক ছিল না, তেমনি বহু জিনিস স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। আমরা যদি বিশ্লেষণাত্মকভাবে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকাকে না বুঝি তাহলে নিজেদের কমিউনিস্ট বলার অধিকার থাকে না। লেনিনের কথা ধার করলে বলতে হয়, পুরনো ভুল যে সংশোধন করার চেষ্টা করে না সে শুধু অকমিউনিস্টই নয়, সে কমিউনিজমের ছদ্মবেশে রাজনৈতিক অপরাধী (political criminal)।
১৯২৯ সালের বোম্বের সুতোকলের ধর্মঘটে আম্বেদকরকে “ধর্মঘট ভাঙা দালাল” বলে দেওয়া খুবই সহজ কাজ। কিন্তু এটা বলার সময় সেই ধর্মঘটের কয়েকমাস আগেই শেষ হওয়া ছমাস ধরে চলা সফল ধর্মঘটের উল্লেখ করতে খুব কম লোককেই দেখা যায়। ১৯২৮ সালের সেই দীর্ঘ ধর্মঘটে আম্বেদকর-কমিউনিস্ট যৌথ স্ট্রাইক কমিটি সক্রিয় ছিল এবং ধর্মঘট জয়যুক্ত হয়েছিল। ১৯২৯ সালেই কমিউনিস্টরা আবার একটা লম্বা ধর্মঘটে চলে গেলেন। আম্বেদকর এত তাড়াতাড়ি আরও একটা লম্বা ধর্মঘটের বিরোধিতা করলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, দলিত শ্রমিকরা ভূমিহীন পরিবারের সন্তান। শহরে ধর্মঘট চললে তাঁদের চাষবাসের আয়ের উপর নির্ভর করার উপায় নেই। সুতরাং এত তাড়াতাড়ি আবারও আয়হীন দিনযাপনের বোঝা নেওয়া যাবে না। সঠিক যুক্তি। আন্দোলনকে সর্বদাই ধর্মঘটে নিয়ে যেতে হবে এমনটা যিনি ভাবেন তিনি ধর্মঘট নিয়ে ছেলেখেলা করেন। এটা অনেকটা যুদ্ধে পশ্চাদভূমিকে শক্তিশালী না করে বড় আক্রমণে যাওয়ার সামিল। বোম্বের কমিউনিস্ট নেতারা অপরিণামদর্শী আচরণ করলেন। বন্ধুরা সকলেই যে মুহূর্তে লড়তে চাইছে না, সে মুহূর্তে যে কোনো পরিণত নেতৃত্ব চূড়ান্ত লড়াই স্থগিত রাখত।
পাঠকের স্মরণ থাকবে, রাশিয়ার ১৯১৭ সালের এপ্রিল মাসের শেষদিকের ঘটনা। বিদেশমন্ত্রী মিলিউকভের চিঠি (যুদ্ধ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এই মর্মে মিত্রশক্তির কাছে প্রেরিত আশ্বাসবাণী) ফাঁস হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। দলে দলে সৈনিক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সৈনিক সোভিয়েতগুলোতে বলশেভিকদের রমরমা। সশস্ত্র সৈনিকদের মিছিলে আর বিক্ষোভে রাজধানী উত্তাল। সৈনিকরা বলশেভিকদের ডাক দিলেন ক্ষমতা দখলের। কিন্তু শ্রমিক সোভিয়েতগুলোতে তখনও মেনশেভিকরা সংখ্যাগুরু, তাঁরাও সশস্ত্র। সুতরাং সরকারের বিরুদ্ধে এবং সরকারের পক্ষে সেন্ট পিটার্সবুর্গ এবং মস্কোয় তখন বিরাট বিরাট সশস্ত্র মিছিল বেরোচ্ছে। বলশেভিকরা সৈনিকদের ক্ষমতা দখলের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন, যতদিন না শ্রমিক সোভিয়েতে সংখ্যাগুরু হচ্ছেন ততদিন চূড়ান্ত আক্রমণে যাওয়া হবে না। এর ফল কী হয়েছিল? সৈনিকরা বলশেভিকদের অভিহিত করেছিল বিশ্বাসঘাতক এবং কাপুরুষ বলে। বলশেভিকরা সহসা শ্রমিক এবং সৈনিক – উভয় সোভিয়েত থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু লেনিনের দৃঢ়তা এবং ইস্পাতকঠিন স্নায়ু শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হল। জুলাই সংকটের দিনগুলোতে কর্নিলভ বিদ্রোহ দমন করে বলশেভিকরা আবার সামনের সারিতে চলে আসে। সেপ্টেম্বর থেকে আসতে থাকে শ্রমিক সোভিয়েতে বহু প্রতীক্ষিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সৈনিকরাও তাঁদের ভুল বুঝতে পারেন। এর পর নভেম্বরে মাখনের মধ্যে দিয়ে ছুরি চালানোর মত সেই অবিস্মরণীয় শীতপ্রাসাদ আক্রমণ। “৬ তারিখটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে, আর ৮ তারিখটা হয়ে যাবে দেরি” – লেনিনের বিখ্যাত উক্তি। একে কী বলা যায়? একেই বলে নেতৃত্ব।
আর বোম্বের কমিউনিস্ট নেতৃত্ব কী করলেন? ১৯২৮ সালে যাঁদের সঙ্গে মিলিতভাবে একটা সফল ধর্মঘট করলেন, তাঁরা যখন ১৯২৯ সালে ধর্মঘটে যেতে চাইলেন না, তখন পাত্তাই দিলেন না। শ্রমিকদের একটা অংশের স্বতঃস্ফূর্ততার উপর নির্ভর করে আবারও একটা ধর্মঘটে চলে গেলেন। ফলে দলিত শ্রমিকরা ধর্মঘটে অংশ নিলেন না। এবার ধর্মঘট ব্যর্থ হওয়ার সব দায় আম্বেদকরের উপর চাপিয়ে বোম্বের নেতৃত্ব হাত ধুয়ে ফেলল। আমি আগের লেখায় একটা দলিলের উল্লেখ করেছিলাম – ১৯৩২ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কাছে লেখা তিনটে কমিউনিস্ট পার্টির (গ্রেট ব্রিটেন, চীন এবং জার্মানি) খোলা চিঠি। এই চিঠির উল্লেখ করেছিলাম ভারতের পার্টির কংগ্রেসের লেজুড়বৃত্তি প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সতর্কবাণীর কথা বলতে গিয়ে। ওই চিঠিতে অনেক কথা বলা হয়েছে। ১৯২৯ সালে বোম্বের ধর্মঘট নিয়ে সেই চিঠিতে কী বলা হয়েছিল তা কি আম্বেদকরের অন্ধ নিন্দুকরা পড়ে দেখেছেন? ধর্মঘট ব্যর্থ হবার কারণ প্রসঙ্গে সেখানে বলা হয়, একটা ঐক্যবদ্ধ, কেন্দ্রীয় কমিউনিস্ট পার্টির অনুপস্থিতি, ধর্মঘটকে বোম্বের বাইরে বিশেষ করে আমেদাবাদ এবং শোলাপুরে ছড়াতে না পারা, বোম্বের বাইরে কমিউনিস্টদের প্রায় কোনো যোগাযোগই না থাকা ইত্যাদি বিষয়। এই প্রসঙ্গে গুরুতর অভিযোগ আনা হয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে:
It may be stated accurately that in India, ‘The strength of the present movement lies in the awakening of the masses (chiefly the industrial proletariat), and its weakness lies in the insufficient consciousness and initiative of the revolutionary leaders’. (Lenin)
লেনিনকে উদ্ধৃত করে এই চিঠিতে ঠিক কথাটা বলা হয়েছে। আসলে ঘাটতি ছিল বিপ্লবী নেতৃত্বের চৈতন্যে এবং উদ্যোগে। সেটাকে ঢাকতে গিয়ে নেতারা আম্বেদকরের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার অভ্যাসটা রপ্ত করে ফেললেন।
বেঞ্জামিন ব্র্যাডলিকে সবাই চেনেন। তিনি গ্রেট ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টির বিখ্যাত নেতা ও ট্রেড ইউনিয়নিস্ট এবং রজনী পাম দত্তের সঙ্গে যৌথভাবে ভারতের কাজের ব্যাপারে দায়িত্বে ছিলেন। কুখ্যাত মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারারুদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসেরও (এআইটিইউসি) নেতা এবং সংগঠক ছিলেন। ১৯৩৫ সালে তাঁর দলিল লেসনস অফ দ্য সেন্ট্রাল টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স স্ট্রাইক ইন ইন্ডিয়া প্রকাশিত হয়। সেখানে সুতোকল লড়াইয়ের দুর্বল জায়গাগুলোর এক গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন হাজির করা হয়েছিল। তাতে কী বলা হয়? মোদ্দাকথা যা বলা হয়েছিল তা হল, পার্টি-অনুগত অংশ শ্রমিকদের অন্য অংশগুলোর সঙ্গে সফলভাবে যুক্তফ্রন্ট গড়ে তুলতে না পারার ফলেই লড়াই ব্যর্থ হয়েছিল। আর কী বলা হয়েছিল? সংস্কারবাদী নেতাদের সফলভাবে শ্রমিকদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি কমিউনিস্ট পার্টি। সেই সময়কার সবকটা দলিলে বোম্বের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের প্রধান বিপদ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল এআইটিইউসির সংস্কারবাদী কংগ্রেসপন্থী নেতৃত্বকে। যোশী-বাখালে গোষ্ঠী এবং খাণ্ডেলকর-আলভে গোষ্ঠীকে। আম্বেদকরকে কোনো দলিলেই আক্রমণ করা হয়নি। খুব সম্ভবত আম্বেদকর ওই সময়ে বোম্বের সুতোকলের ইউনিয়নে বা অন্যান্য ইউনিয়নে খুব একটা নির্ধারক শক্তি ছিলেনও না। কংগ্রেস সাংঘাতিক ক্ষতি করেছিল। প্রত্যেকটা দলিলে তার বিবরণ আছে। মহাত্মা গান্ধী খোলাখুলি মিল মালিকদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু কী আশ্চর্য! তার কয়েক বছরের মধ্যেই পার্টির চোখে কংগ্রেস হয়ে দাঁড়াল “জাতির শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক সংগঠন”। গান্ধী হয়ে দাঁড়ালেন “জাতির পিতা”! আমার আগের লেখায় পার্টির দলিল উদ্ধৃত করে এই তকমাগুলো তুলে ধরেছিলাম। সে প্রসঙ্গ অনেকেই সলজ্জভাবে এড়িয়ে গেছেন।
আমার আগের লেখার প্রসঙ্গে কেউ কেউ শিশুসুলভ ভঙ্গীতে বলেছেন, “আপনি খালি কমিউনিস্ট পার্টির দোষ দেখছেন, আম্বেদকর কি কোনো ভুল করেননি? ওঁর ভুল নিয়ে কিছু বললেন না তো!” ভুল করবেন না কেন? ভুল সবাই করে। কমিউনিস্ট পার্টিই অত বড় বড় ভুল করল, আর আম্বেদকর করবেন না? কিন্তু প্রথমত, পরিষ্কার বোঝা দরকার যে আমি আম্বেদকরের ভুল ধরতে বসিনি, বসেছি নিজেদের ভুল নিয়ে আলোচনা করতে। কারণ সমাজবিপ্লবের লড়াইয়ের বিষয়ীগত বিষয়ে কমিউনিস্টরাই হল নির্ধারক নেতৃত্ব, আম্বেদকর নন। সুতরাং আম্বেদকরের ভুল নির্ধারক পরাজয় ঘটানোর পক্ষে যথেষ্ট নয়। কমিউনিস্টদের ভুলের ওজন অনেক বেশি। তা জেতাতেও পারে, হারাতেও পারে, গড়তেও পারে, ভাঙতেও পারে। তাই আলোচনাটা এই জায়গাটা নিয়েই হওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, আম্বেদকর কে? তিনি দলিত নেতা, অর্থাৎ দলিতদের রাজনৈতিক প্রতিনিধি। দলিত কারা? তাঁরা ভারতের শ্রমিকশ্রেণির একটি অংশ। সুতরাং আম্বেদকর ছিলেন (এবং এখনও আছেন) আমাদের শ্রেণিভ্রাতা। তাঁর ভুল শুধরে তাঁকে যুক্তফ্রন্টে নিয়ে আসার দায়িত্ব তো ছিল কমিউনিস্ট পার্টির। তা না করে তাঁকে শত্রু বানিয়ে তুললে আর কমিউনিস্ট পার্টি কিসের? পার্টি কীভাবে সমগ্র শ্রেণির স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করবে? আর গান্ধী কে? গান্ধী ভারতীয় মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া শ্রেণির রাজনৈতিক প্রতিনিধি। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে তাঁর সঙ্গে ঐক্য তো কৌশলগত (ট্যাকটিকাল)। কিন্তু আম্বেদকরের সঙ্গে ঐক্য ছিল নীতিগত (স্ট্র্যাটেজিক)। গান্ধী এবং আম্বেদকরের মধ্যে এই মৌলিক ফারাক নিয়ে যাঁর সঙ্গে মতভেদ থাকবে, বুঝে নিতে হবে তাঁর সঙ্গে মতভেদটাও মৌলিক। এই মতভেদ খুচরো বিষয়গুলো নিয়ে নয়। কমিউনিস্ট পার্টি এই মৌলিক বিষয়ে মৌলিক ভুল করেছিল, তার দাম দিতে হয়েছে। এখন এই ভুল শোধরাতে হবে। শোধরাতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, পুরনো মতেই রয়ে গেছেন বহু কমিউনিস্ট। সুতরাং সব পার্টির মধ্যে এবং গোটা আন্দোলনের মধ্যেই আম্বেদকর ও দলিত আন্দোলন প্রশ্নে মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে। তাই আমি ওই মৌলিক প্রশ্নটাকেই আক্রমণ করেছি। কারণ এই প্রশ্নে পুরনো ধারণা, যা কিনা মাথার উপর দাঁড়িয়ে আছে, তাকে পায়ের উপর সোজা করে দাঁড় করাতে হবে। কমিউনিস্ট-আম্বেদকর ঠিক, ভুলের ভারসাম্য বজায় রেখে সর্বজনগ্রাহ্য মিষ্টি মধ্যবিত্ত প্রবন্ধ লেখা আমার উদ্দেশ্য ছিল না।
গত শতকের তিন এবং চারের দশকে কমিউনিস্ট পার্টি আম্বেদকরের সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট গড়ে তুলতে পারলে প্রথমত সেটা হত শ্রমিকশ্রেণিকে শ্রেণি হিসাবে সংগঠিত করার দিকে এক বিরাট পদক্ষেপ। দ্বিতীয়ত, তাতে করে স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে নিয়ে আসার একটা সুযোগ তৈরি হতে পারত। এই সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হয়নি। ঠিকঠাক পদক্ষেপ নিলে হতেও পারত, আবার না-ও হতে পারত। কিন্তু একটা সুযোগ তৈরি হত। সেক্ষেত্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে চীনের মত সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বিপ্লব ঘটতে পারত এবং ভারতও সমাজতান্ত্রিক নির্মাণকার্যের যুগে প্রবেশ করত। একথা প্রথমে স্বীকার করতে হবে।
তারপর যে বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে তা হল বর্তমান পরিস্থিতি। দলিত আন্দোলনের বর্তমান পরিস্থিতি কী? কমিউনিস্ট আন্দোলন যেমন বহুধাবিভক্ত, ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছে, জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে, দলিত আন্দোলনের অবস্থাও তেমনই। দলিত আন্দোলনও বহু ভাগে বিভাজিত হয়ে গেছে। সবথেকে বড় কথা হল, আম্বেদকরের সময়ে যেমন দলিত আন্দোলন ছিল মূলত শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন, বর্তমান পরিস্থিতি হুবহু তা নয়। গত ৭০ বছরে সংরক্ষণের সুযোগ মূলত পেয়েছে দলিতদের যে ছোট উপরের দিককার অংশ, তাঁরাই মূলধারার প্রায় সমস্ত দলিত দলের নেতৃত্বে উঠে এসেছেন। এঁরা বর্ণাশ্রম নির্মূল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নন, আস্থাশীলও নন। উলটে এঁরা চাইছেন জাত, বর্ণের বিভাজন টিকে থাকুক আর সংরক্ষণের সুবিধাটুকু চালু থাকুক। তাতেই এঁদের লাভ। সুতরাং এঁরা বিপুলসংখ্যক দলিত মানুষের স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এঁরা যদিও নিজেদের আম্বেদকরবাদী বলে পরিচয় দেন, প্রকৃত প্রস্তাবে এঁরা তা নন। এঁদের বলা যেতে পারে (এবং বলা হয়) নয়া আম্বেদকরবাদী। এঁরা প্রচণ্ড কমিউনিস্টবিরোধী এবং এঁদের হাতে দলিত আন্দোলন আজ মূলত এক পরিচিতিবাদী রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে। আম্বেদকর চেয়েছিলেন নিজ পরিচিতির (দলিত) উচ্ছেদ। তাই তা পরিচিতিবাদী রাজনীতি ছিল না, ছিল এক বিপ্লবী সংগ্রাম। আর বর্তমান নেতৃত্ব পরিচিতি ভাঙিয়েই করেকম্মে খাচ্ছেন। জাতিভেদ প্রথা নির্মূল করার স্লোগান তাঁদের কাছে আজ শুধুমাত্র দলিলে লেখার জিনিস আর সভা-সমিতিতে মন্ত্রের মত আওড়ানোর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপ্লবের স্লোগান যেমন আজ মূলধারার কমিউনিস্ট আন্দোলনে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। মূলধারার অধিকাংশ কমিউনিস্ট পার্টিও আজ শ্রেণির বিপুল অংশের মানুষের স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। যদিও তাঁরা নিজেদের এখনো কমিউনিস্ট বা মার্কসবাদী বলেই পরিচয় দেন।
সুতরাং পরিস্থিতি বেশ কঠিন, যার কোনো সহজ সমাধান নেই। দেশের প্রকৃত কমিউনিস্টদের যেমন একদিকে আজ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিকে পুনর্গঠিত করতে হবে, অন্যদিকে তেমনই শ্রমিকশ্রেণির অন্যান্য অংশগুলোর সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট গড়ে তুলতে হবে। একদিকে যেমন কমিউনিস্ট আন্দোলন থেকে সংস্কারপন্থী শোধনবাদী নেতৃত্বকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে, তেমনই সুবিধাভোগী, পরিচিতিবাদী দলিত নেতৃত্বের মুখোশ উন্মোচিত করে তাঁদের দলিত আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। যাঁরা আম্বেদকরের পথে দলিত আন্দোলনকে পুনর্গঠিত করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। হতে পারে বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন লোকেরা খুবই দুর্বল, প্রান্তিক, বিচ্ছিন্ন এবং আঞ্চলিক স্তরেই সীমাবদ্ধ থেকে কাজ করছেন। কিন্তু এটা বুঝতে হবে, যে কমিউনিস্ট-দলিত যুক্তফ্রন্টের প্রকৃত সাথী তাঁরাই। পাশাপাশি বৌদ্ধিক স্তরে আম্বেদকরের জাতি নির্মূল করার স্লোগানকে কমিউনিস্টদের উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে এবং অতীতের ভুল সংশোধন করে বৃহত্তর শ্রেণি ঐক্য গড়ে তোলার রাস্তা প্রস্তুত করতে হবে।
মতামত ব্যক্তিগত
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।
It’s fundpamental mistake to consider Dalits as Labourers. And this is wrong not because of misunderstanding Dalits, but misunderstanding Changed world-Capitalism, misunderstanding indian economy .
1. Indian economy is not ” Industrialised” economy by any stretch of imagination. Indian economy post-liberalisation has become pre-mature service led economy where most people (including most dalits) are “underemployed” in subsiting economy.
2. World late-capitalism can not be understood as simple ” labour-capital” dichotomy. European communist understood this and changed the course into social-democracy.
To understand this Indian communist need Empirical approach of understanding indian social-economy complex.
But they are stubborn Marxist-Lelinist Rationalist not amenable to plenty evidences that Hard communism never succeed
Another problem of communists is that they are not Constitutionalists . They claim that acceptance of constitution is a compromise for them. As a Dalit myself, I will never substitute Constitution in lieu of Platonic Utopia. Dalits prefers progressive social-democratic politics with public investment on Education-Health-Nutrition. We do not want benevolence dictatorship in any way .
Please Comrades, Change your ” communist” name first… মৈত্রী of Ambedkar is better word in place of ritualistic Comrade…. accept constitution as Basic not Das Capital….foster progressive politics….embrace Social democracy…politicise Health Education and Nutrition agenda… make ” Family/ household” as your target not abstract Labours…it should be Household basic Income not minimum wage….. embrace macroscale-capitalism and micro-scale-socialim( like Education, Health and nutrition and household) … and leadership should go beyond Chatterji-banerji-mukherji-sem-basu-roy-guha( specially in bengal communism)
We Dalits will be happy to join . মিত্র।
Another problems with
1. Communists is that they are not Constitutionalist..they have accepted constitution as compromise. As a dalit myself, I can assure..dalits will never substitute Constitution ( however flawed) in lieu of Platonic Utopia. We will never subscribe to dictatorship of proletariat under “Vanguards”
2. Communists are believer of redistributive politics. But by redistributive politic only ” Economic capital” can be distributed..not ” social captal” . Dalits has no ” social captal”( look at bengal Bhadralok hegemony of Chatterji-banerji-sen -basu-ray) . Without social capital dalits are prone to vicious circle of poverty and “Mathew Effect”. That’s why we are votary of progressive politics of Health-education-nutrition issues rather than Public investment in Business ( which defying any economic logic of Armslength principle ) ….we are votary of ” Pre-distribution” rather than ” Redistribution”… By ” Predistibution” of Health-education-nutrition ” social capital” can only be distributed .
Hey comrade, please update yourself for india and 21st century…. First change the name” Communist party” and ritualistic ” comrade” hail… try to find some indian version.. Ambedkar’s idea of Fraternity, মৈত্রী is better substitute…accept Constitution wholeheartedly as basic book rather than Das Capital/ Communist manifesto. …..be pragmatic of Jhon Dewey type…be Humanist…embrace european -style social-democracy…politicise Heath-Education-Nutrition…Make “Household/ family” as target of mobilisation rather than abstract Labours….it shoulr be Household basic income, not minimum wage….embrace Macro-scalrle capitalism and micro-scale socialiam( public investment in Health education and nutition)… embrace both redistribution and predistribution…and extend leadership beyond Chatterji-banerji-sen-basu-gupta-guha….. make commitment to build strong public administration( like police-reform) rather than cadre-based political management…
We will be more than happy to join you মিত্র( not comrade)।
Post Script: journalist Ajaz Ashraf in 2016 wrote a coloumn in Scroll whose headline is “why CPIM needs to begin its transformation by dropping the ” communist ” word from its name??”
This is a Bengali language website. Kindly comment in Bengali.
আমাদের ওয়েবসাইট বাংলাভাষার ওয়েবসাইট।দয়া করে ভবিষ্যতে বাংলায় মন্তব্য করবেন।
কেবল এই কথাটা বলুন শংকর বাবু যে আপনি কি অমর্ত্য সেনের ” Capability” তত্ত্বকেও সংশোধনবাদ ও পরিত্যাজ্য মনে করেন???যদি তাই মনে করেন , তবে আপনাদের কমিউনিস্টদের সঙ্গে আমাদের দলিতদের কোনো যোগাযোগ নেই। সাফ কথা। আমরা আপনাদের vanguard দের footsoldiers হয়ে strike-cum-revolution করব, আর আপনাদের ছেলেমেয়েরা ইংরাজী শিক্ষিত হয়ে ভারী ভারী তত্ত্ব আওড়াবেন….সেটি হবে না।
কি করে আশা করেন আপনাদের সর্বহারা তকমা গায়ে লাগিয়ে ঘুরব…আর আপনারা শিক্ষা স্বাস্থের কথা সংশোধনবাদ বলে উড়িয়ে দিয়ে ” pure communism” করবেন।