উদয়নিধি স্ট্যালিন একদম পাখির চোখে তির মেরেছেন। স্বাভাবিকভাবেই হইচই পড়ে গেছে, ত্রাহি ত্রাহি রব উঠে গেছে বিজেপি আর সঙ্ঘ পরিবারের সদর দফতরে। “সনাতন ধর্মের অবলুপ্তি চাই” – শুধু এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি উদয়নিধি। সঙ্গে আরও কিছু কথা বলেছেন যা প্রণিধানযোগ্য। বলেছেন, “সবকিছুর বিরোধিতা করা যায় না। নির্মূল করতে হয়। আমরা ডেঙ্গু, করোনা বা ম্যালেরিয়ার বিরোধিতা করি না। তাকে নির্মূল করি।” অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা। উদয়নিধির কথাটাকে ভাঙলে বোঝা যায়, তিনি পরিষ্কারভাবেই বলতে চাইছেন, তারই বিরোধিতা করা হয় যা নিয়ে বিভিন্নরকম মতামত আছে। কেউ কেউ সেই জিনিসের মধ্যে ইতিবাচক কিছু দেখতে পান, আবার অনেকে তা দেখেন না। তাই আসে বিরোধিতার প্রশ্ন। কিন্তু যা নিয়ে কোনো বিতর্কই নেই, যার মধ্যে ইতিবাচক কোনোকিছুর অস্তিত্বের অসম্ভাব্যতা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত তার আর বিরোধিতা করার কিছু নেই। একমাত্র কাজ হল তাকে নির্মূল করা। যেমন করোনা, ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া।

কথাগুলি নতুন নয়। হুবহু একই কথা বহুবার বলেছেন বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর এবং ইরোড় ভেঙ্কটাপ্পা রামস্বামী, যিনি পেরিয়ার বা থানথাই পেরিয়ার বলেই বেশি পরিচিত। উদয়নিধির ক্ষেত্রে আম্বেদকরের থেকেও পেরিয়ারের সংযোগ অনেক বেশি প্রত্যক্ষ। তাঁরা দুজনে একই রাজ্যের মানুষ তো বটেই, উদয়নিধির দলটিও পেরিয়ারই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে তাঁরা দাবি করে থাকেন। সুতরাং উদয়নিধি বলতেই পারেন যে তিনি পেরিয়ারের বক্তব্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করছেন। সে যা-ই হোক, এই কথাগুলি আম্বেদকর বা পেরিয়ার বলা এক জিনিস আর উদয়নিধি বলা অন্য জিনিস। ঠিক এই ব্যাপারটিই আমাদের ভাবনার অনেক গভীরে টেনে নিয়ে যায়। বিজেপির ব্রাহ্মণ্যবাদী ফ্যাসিবাদের প্রাণভোমরা যে কৌটোয় সুরক্ষিত আছে একেবারে তার কাছে। তাই এ নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

আম্বেদকরের কথাই ধরা যাক। তিনি চিরকাল মূলত দলিতদেরই সংগঠিত করেছেন। শুদ্র, দলিত, অন্ত্যজ, অস্পৃশ্যদের মধ্যে প্রচার করেছেন যে ব্রাহ্মণ্যবাদ দু হাজার বছর ধরে তাঁদের সব কিছু থেকে বঞ্চিত করেছে, নিষ্পেষিত করেছে, শোষণ করেছে, মানুষের মর্যাদা দেয়নি। অতএব ব্রাহ্মণ্যবাদ তাঁদের শত্রু। তাকে নির্মূল করতে হবে, ধ্বংস করতে হবে। আম্বেদকর সরাসরি হিন্দুধর্মেরই বিরোধিতা করেছিলেন এবং জীবনোপান্তে কয়েক লক্ষ অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন। ভোটে জেতার বাধ্যবাধকতা তাঁর ছিল না।

ভোটে জেতার বাধ্যবাধকতা পেরিয়ারেরও ছিল না। পেরিয়ার প্রথমে কংগ্রেসেই ছিলেন। তারপর কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে গিয়ে শুরু করেন সেল্ফ রেসপেক্ট মুভমেন্ট। আম্বেদকরের মতই ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদগার তাঁর রাজনীতিরও ভিত্তি ছিল। কিন্তু পেরিয়ারের ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধিতা আম্বেদকরের বিরোধিতার থেকে খানিকটা আলাদা। আম্বেদকর নিজেকে বা নিজেদের আর্য সমাজের বাইরের লোক বলে মনে করতেন না। কারণ তিনি নিজেকে শুদ্র বলে মনে করতেন আর চতুর্বর্ণ বিভাজন আর্য সমাজের মধ্যেই হয়েছিল। আম্বেদকর মনে করতেন শুদ্ররা আদতে ক্ষত্রিয়ই ছিল। ব্রাহ্মণরা তাঁদের উপনয়নের অধিকার হরণ করে নিচে নামিয়ে দিয়েছিল। ‘শুদ্ররা কারা?’ তাঁর এক বিখ্যাত রচনা। সেই লেখায় এ বিষয়ে তাঁর বিস্তারিত বক্তব্য আমরা লক্ষ্য করি। সুতরাং আর্য সমাজের মধ্যে থেকেই তিনি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কামান দেগেছিলেন। এমনটা অনেকেই করেছেন। গৌতম বুদ্ধও নিজেকে আর্য সমাজের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করতেন এবং তা সত্যি। শাক্যবংশীয়রা ছিলেন ক্ষত্রিয়। ভারতের ইতিহাসে আর্যসমাজের মধ্যে থেকেই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাবার দীর্ঘ ধারাবাহিকতা আছে। আম্বেদকর সেই ধারাবাহিকতারই মানুষ।

কিন্তু পেরিয়ার বিষয়টিকে সেভাবে দেখতেন না। তিনি নিজেকে আর্য সমাজের মধ্যেকার লোক বলে মনে করতেন না। তামিল হওয়ার কারণে তিনি নিজেকে দ্রাবিড় ভাবতেই অভ্যস্ত ছিলেন। ফলে ১৯৩৯ সালে জাস্টিস পার্টি তৈরি করলেও তাঁর রাজনীতি সম্পূর্ণ বিকশিত হল ১৯৪৪ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দ্রাবিড় কজঘম সংগঠনে। তামিল গর্বের প্রশ্ন জুড়ে গেল ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধিতা, ধর্মবিরোধিতা এবং ঈশ্বরকে অস্বীকার তথা নাস্তিকতার সঙ্গে। এই দ্রাবিড় কজঘম থেকেই পরবর্তীকালে তৈরি হয় দ্রাবিড় মুনেত্রা কজঘম, যা পরে বিভক্ত হয়ে আজকের ডিএমকে এবং এআইএডিএমকে তৈরি হয়েছে। সুতরাং পেরিয়ারের ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধী রাজনীতির সাথে জাতিসত্তার প্রশ্ন জুড়ে যাওয়ার ফলে যেমন তা একদিকে রাজনীতি হিসাবে অনেক জটিল এবং ব্যাপকতর হয়েছে, অন্যদিকে এক স্থানিক লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অন্য একটি প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ।

উদয়নিধি বা তাঁর বাবা এম কে স্ট্যালিন নিজেরা পেরিয়ারের অনুগামী হতেই পারেন, তাঁদের দলও পেরিয়ারপন্থী হতে পারে, তাঁরা সেই হিসাবে অবশ্যই নাস্তিক এবং ডিএমকে দল হিসাবেও নাস্তিক বলেই নিজেদের পরিচয় দেয়। কিন্তু তাঁদের কি ভোট হারানোর ভয় নেই? আম্বেদকরের মতই পেরিয়ারেরও ভোটে জেতার বাধ্যবাধকতা ছিল না। কিন্তু স্ট্যালিনের তো আছে, ডিএমকেরও আছে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী যে তামিলনাড়ুর ৮৯% জনগণ নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দেয় তাঁদের ভোট হারানোর ভয় কি ডিএমকে পায় না? এই প্রশ্নের মধ্যেই বিজেপির ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনীতির প্রাণভোমরা লুকিয়ে আছে।

এই প্রশ্নের একমাত্র উত্তর হল, না, তাঁরা ভোট হারানোর ভয় পান না। তার মানে কি এই যে, তাঁদের ভোটে জেতার দরকার নেই? না, তা নয়। ভোট হারানোর ভয় তাঁদের আলবাত আছে। কিন্তু তাঁরা জানেন, সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে কামান দাগলে তাঁদের ভোট কমবে না, বরং বাড়বে। অন্যদিকে দেখুন, ডিএমকে যে সদ্যগঠিত বিরোধী মোর্চার সদস্য সেই ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকরা, যেমন কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেস, স্ট্যালিনের এই মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। এ রাজ্যের বামেরা নিশ্চুপ, যেন কিছুই হয়নি। কেন? কারণ তাঁরা মনে করছেন, সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে আঘাত হানলে তাঁরা ভোট হারাবেন। ভারত সত্যিই এক অগাধ বৈচিত্র্যের দেশ। বিষয়টিকে একটু ব্যাখ্যা করা যাক।

হিন্দুধর্ম এবং সনাতন ধর্ম কথাটাকে সাধারণত একই অর্থে প্রয়োগ করা হয়। হিন্দু ধর্ম আর সনাতন ধর্ম একই জিনিস – একথাই আমরা জেনে এসেছি। তাহলে তামিলরা নিজেদের হিন্দু বলে মনে করলেও কেন নিজেদের সনাতনী বলে ভাবেন না? আমাদের, মানে বাঙালিদের কথাই ধরুন। বাঙালি হিন্দুরা বহুকাল থেকেই নিজেদের হিন্দু বলে মনে করেন কিন্তু কজন নিজেকে সনাতনধর্মী বলে পরিচয় দেন? আজকাল সংবাদমাধ্যমের দৌলতে এই ধরনের নানা পরিভাষা কিছুটা ছড়াচ্ছে বটে, কিন্তু আম বাঙালি এই সনাতন ধর্ম কথাটির সঙ্গে মোটেই পরিচিত নন। আমরা হিন্দু শুনেছি, হিঁদুয়ানি শুনেছি। কিন্তু সনাতন ধর্ম কথাটি সাধারণভাবে আমাদের অপরিচিত। এ শুধু পরিভাষার বিষয় নয়, বিষয়বস্তুরও বিষয়। উত্তর ভারতে বৈদিক সাহিত্য, বিশেষ করে গীতা, উপনিষদ, মনুস্মৃতি, বর্ণবাদভিত্তিক যে হিন্দুধর্মের প্রচলন আছে ভারতের অন্যত্র হিন্দুধর্ম ঠিক তেমনটি নয়। বেদে তো সনাতন শব্দটিই অনুপস্থিত। গীতায় যে সনাতন ধর্মের কথা বলা আছে তা আমাদের কখনই মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি। আম বাঙালি গীতা থেকে নিয়েছে শুধু নিষ্কাম কর্মের তত্ত্বটুকু। ব্যাস।

বাঙালি হিন্দুর প্রকৃত ধর্ম ছিল বৌদ্ধধর্ম এবং তন্ত্র। বৌদ্ধধর্মও এসেছে পরে, তন্ত্রই আদি। বিহার-উত্তরপ্রদেশের গাঙ্গেয় সমভূমিতে যখন ব্রাহ্মণ-শ্রমণ দ্বন্দ্ব সাংঘাতিক তীব্র হয়ে উঠেছে, তখনো বাংলা তার তন্ত্রমতে স্থিত ছিল। পরবর্তীকালে ব্রাহ্মণ-শ্রমণ দ্বিত্বের বাইরে যে হাজারো বিশ্বাস, ধর্মমত এবং অনুশীলনগুলির অস্তিত্ব ছিল, তাকে আত্তীকরণ করার জন্য বৈদিকরা এবং বৌদ্ধরা – উভয়েই তীব্র প্রতিযোগিতা চালায়। একদিকে আচার্য শংকর যেমন গোটা দেশের কোণে কোণে মঠ স্থাপন করছেন, নিজে কট্টর অদ্বৈতবাদী হয়েও অন্য ধর্মমতগুলিকে এক বৃহত্তর ছাতার তলায় আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, এমনকি স্বগোত্রীয়দের কাছে “প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ” জাতীয় গালাগালি খেয়েও বৌদ্ধদের কিছু শাখা প্রশাখাকে দিব্যি বেদান্তের মধ্যে ঢুকিয়ে নিচ্ছেন; অন্যদিকে তেমনি আচার্য কমলশীল বা অতীশ দীপঙ্করের হাত ধরে বৌদ্ধতত্ত্ব এবং তন্ত্রের মিলনে বজ্রযানের মত বৌদ্ধ শাখা তৈরি হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার ফলেই তন্ত্রমতের দেবী তারা যেমন বজ্রযানী বৌদ্ধদের দেবী হয়েছেন, তেমনি আবার কালী বা দুর্গা হয়েছেন হিন্দু। যদিও এঁরা কেউই আদতে তা নন।

ঠিক তেমনভাবে দক্ষিণ ভারতেও আমরা অনার্য বা আর্যপূর্ব ধর্মমত, বিশ্বাস, অনুশীলন এবং দেবদেবীদের কালে কালে হিন্দু বলে পরিগণিত হতে দেখি। যেমন মুরুগান হয়েছেন কার্তিক। সুতরাং বর্তমান ভারতবর্ষে হিন্দুধর্ম বলতে যা বোঝায় তার চেহারাটি জটিল এবং দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ। এই ধর্মের একটি কেন্দ্র আছে। সেটি হল উত্তর ভারতীয় বৈদিক আর্যদের পৌরোহিত্যে গড়ে ওঠা বেদ-উপনিষদ-ব্রহ্মসূত্র-মনুস্মৃতি-ব্রাহ্মণ্যবাদ ধারাবাহিকতা, যা প্রবলভাবে পুরুষতান্ত্রিক এবং তথাকথিত উচ্চবর্গীয় অস্মিতা দ্বারা লালিত। মনে রাখতে হবে, এই ধারাবাহিকতাও কিন্তু মসৃণ নয়। এটিও পদে পদে বিচ্ছেদ ও স্ববিরোধের মধ্যে পড়েছে। এর বিপরীতে আছে ভারত জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এক বিপুল পরিধি। তার উৎস অনার্য, প্রাগার্য তথা বেদবিরোধিতা থেকেই।

আরো পড়ুন হিন্দুরাষ্ট্র: বিজয়বর্গীয়ের প্রোপাগান্ডা সরিয়ে সাদা চোখে

ওই কেন্দ্র নিজেদের সনাতনী বলে পরিচয় দেয়, কিন্তু পরিধি কালে কালে হিন্দু বলে নিজেদের চিনে নিয়েছে। সনাতনী বলে ভাবতে অভ্যস্ত নয়। ফলে বোঝাই যায়, বিজেপি তথা আরএসএস যে ৮০% হিন্দু ভোটের উপর নির্ভর করে তার নির্বাচনী কৌশল সাজায় তা কতখানি নড়বড়ে। সুতরাং এই নড়বড়ে সৌধকে ভেঙে চুরমার করতে গেলে কী করতে হবে? কেন্দ্র ও পরিধির মধ্যেকার চাপা দ্বন্দ্বকে তীব্রতর করে তুলতে হবে। কেন্দ্রের মধ্যেও যে ধারাবাহিকতা আছে তার ভিতর লুকিয়ে থাকা চাপা উত্তেজনাও বাইরে আনতে হবে। উদয়নিধি ঠিক এই কাজটিই করেছেন। বয়সে তরুণ হলেও অপূর্ব দক্ষতায় ও জ্ঞানে তিনি তাই সঠিকভাবেই মন্তব্য করেছেন, “সনাতন ধর্মের বিলোপ আসলে আম হিন্দুদেরই ক্ষমতায়ন।” সত্যিই তো। জাতিবর্ণ ব্যবস্থা যদি ধ্বসে পড়ে তাহলে যে বিপুল অধিকাংশ হিন্দু আসলে দলিত বা তথাকথিত নিম্নবর্ণের, তাঁরাই তো শক্তিশালী হবেন। ব্রাহ্মণ্যবাদী পুরুষতন্ত্রের চার দেওয়াল ভেঙে পড়লে ক্ষমতায়ন হবে পিঞ্জরভাঙ্গা অগণিত নারীর, যাঁদের বিরাট অংশ নিজেদের হিন্দু বলেই ভাবেন। সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে আঘাত আসলে ভারতের কেন্দ্রীয় শাসকবর্গের বিরুদ্ধেই আঘাত। এটাই এ দেশের বর্তমান বাস্তবতা।

মুশকিল হল এই বাস্তবতা মমতা ব্যানার্জিরা বোঝেন না। না, ভুল হল। বোঝেন ঠিকই, কিন্তু অবস্থান নেবেন না। কংগ্রেস যেমন একটি কৌশল নিয়েছে। তারা পার্টিগতভাবে প্রকাশ্যে উদয়নিধির পক্ষে দাঁড়ায়নি। কিন্তু রাহুল গান্ধী ক্রমাগত এই র‍্যাডিকাল কথাগুলি প্রচার করে যাচ্ছেন। তিনিও বছর দুয়েক হল লাগাতার বিজেপির ব্রাহ্মণ্যবাদী আদর্শগত সৌধে আঘাত করে চলেছেন। কয়েকদিন আগেই যেমন প্যারিসে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি আবার হিন্দুধর্ম এবং বিজেপির রাজনৈতিক হিন্দুত্বের মধ্যে ফারাক তুলে ধরে মন্তব্য করেছেন, “বিজেপির হিন্দুত্বে হিন্দুধর্মের কোনোকিছুই নেই।”

এই পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতার ইংরাজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ-এর মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। “His party has, however, has not pursued this line of argument, probably thinking that such a nuanced discourse was unlikely to bring much political returns.” অবশ্য এবং কর্ণাটকের কংগ্রেস মন্ত্রিসভার সদস্য এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের পুত্র প্রিয়ঙ্কও স্ট্যালিনের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। আসলে কংগ্রেস সবদিকেই হাত বাড়িয়ে রেখেছে। যা কাজে লাগে তাই লাগুক। মমতা এবং তাঁর দল অবশ্য এত সূক্ষ্ম নয়। মমতার সবই চাই। বিবেকানন্দও চাই, রবীন্দ্রনাথও চাই। আদানিও চাই, আদানির হাতে উচ্ছেদ হওয়া জনতার ভোটও চাই। এ তো মূলধারার দলগুলি সকলেই চায়। কিন্তু মমতা আবার কথাটি বানান করে বলে দেন, ঘোষণা করে দেন। ফলে উদয়নিধির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর পক্ষে কোনো অবস্থান নেওয়া সম্ভব নয়। তিনি আমতা আমতা করে বলেন, না না। কারোর ধর্মবিশ্বাসে আঘাত দেওয়া ঠিক নয় ইত্যাদি।

আর বামেরা তো নিশ্চুপ। তাঁরা এখনো মনে করে চলেছেন, বোধহয় শুধু অর্থনৈতিক দাবিদাওয়া দিয়েই কেল্লা ফতে হয়ে যাবে।

এইসব স্ববিরোধিতার ফলে একটি সঠিক ও কার্যকরী রণকৌশল নেওয়ার ক্ষমতা ইন্ডিয়া জোট এখনো দেখাতে পারছে না। বিষয়টি উদয়নিধিদের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক। দেশের জনতার অবস্থা অবশ্য আরও শোচনীয়। তাঁরা একটি বিরোধী জোট পেয়েছেন বটে, কিন্তু এখনো দিশা পাননি।

মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.