গত শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকেই হিন্দুত্ববাদীরা এই স্বপ্ন দেখছে। এখন অবধি সে স্বপ্ন যদিও অধরা, তথাপি তারা সর্বশক্তি দিয়ে সেদিকে এগোতে চাইছে এবং বর্তমান অনুকূল পরিস্থিতিতে সেদিকে অনেকটাই এগিয়ে গেছে – একথা আমাদের বলতেই হবে। এই এগিয়ে যাওয়ার পিছনে তাদের অন্যতম হাতিয়ার হল ইতিহাসের সচেতন বিকৃতি। ফ্যাসিবাদ অবশ্যই অর্থনৈতিক সংকটের ফল, বিশেষ করে লগ্নিপুঁজির সংকটের ফল। কিন্তু যদি আমরা ফ্যাসিবাদকে শুধুমাত্র অর্থনীতির মানদণ্ডেই বিচার করা হয় তাহলে মস্ত ভুল হবে। ফ্যাসিবাদ একইসঙ্গে এক ইতিহাসবিস্মৃত জাতির উপর লগ্নিপুঁজির সার্বিক সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে সর্বাপেক্ষা প্রতিক্রিয়াশীল অংশের দার্শনিক আধিপত্যও বটে। জাতি যখন ইতিহাসবিস্মৃত হয়, ইতিহাসচেতনাহীন হয়, তখন ফ্যাসিবাদীরা প্রবল ইতিহাসসচেতন হিসাবে দেখা দেয়। ফলে অচিরেই তারা হয়ে দাঁড়ায় ইতিহাসের শিক্ষক। ফ্যাসিবাদের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলির দৈন্যদশা, রাজনৈতিক দেউলেপনা ফ্যাসিবাদীদের শুধু মসীহাই করে তোলে না, শিক্ষাগুরুও বানিয়ে তোলে। সুতরাং আজ যখন অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলির প্রচারে স্থান পায় শুধুই ইতিহাসবর্জিত বর্তমান, এমনকি কমিউনিস্টরাও যখন চার পাতার অধিক কর্মসূচি লেখার সাহস পায় না, তখন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়দের মত আদ্যন্ত মিথ্যাবাদীরাই আমাদের ইতিহাসের শিক্ষক হয়ে উঠবেন এটাই তো স্বাভাবিক।
সুতরাং বিজয়বর্গীয় আমাদের সম্প্রতি শেখালেন, ভারত ভাগ হয়েছিল ধর্মীয় বিভাজন করার জন্য। সুতরাং ওপারে পাকিস্তান আর এপারে হিন্দুস্তান। অর্থাৎ ওপারে মুসলিম রাষ্ট্র আর এপারে হিন্দুরাষ্ট্র – এটাই স্বাভাবিক। বাকি কথা উহ্য রেখে দিলেন, কিন্তু বোঝা গেল – কংগ্রেস আর কমিউনিস্টরা বেইমান, যারা ভারত ভাগের এই স্বাভাবিক পরিণতিতে দেশকে নিয়ে যায়নি। আমরা নিয়ে যাব। ২১ মার্চ দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কাগজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৈলাশবাবু সাংবাদিকদের আরও কিছু মণিমুক্তো উপহার দিয়েছেন। বলেছেন ওঁর এক মুসলমান বন্ধু বলেছেন যে তাঁর পূর্বপুরুষ হিন্দু ছিলেন এবং হনুমান চালিশা পাঠ করতেন। আবারও বাকি কথা উহ্য, কিন্তু বুঝতে অসুবিধা নেই। কথাটা হল এ দেশের সবাই আসলে হিন্দু। কারণ হিন্দুধর্ম সনাতন ধর্ম। সুতরাং এ দেশকে হিন্দুরাষ্ট্র বানাতে আপত্তি করার কিছু নেই। বিজয়বর্গীয় সাহেবের যদি জানা থাকত যে মানুষের পূর্বপুরুষ আসলে বাঁদর, তাহলে হয়ত তিনি বলতেন, দেশটাকে জঙ্গলের রাজত্ব বানাতে আপত্তি করার কিছু নেই। কথাটা মজার ছলে বলা হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে বিজেপি-আরএসএসের মনের কথা এটাই। তাদের হাতে দেশটা এক সর্বব্যাপী জঙ্গলের রাজত্ব হবার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
বিজয়বর্গীয়ের অধিকাংশ কথাই অবশ্য হাসি মশকরার যোগ্য, বিজেপি-আরএসএসের বেশিরভাগ নেতারই তাই। কিন্তু এই দেশভাগের বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। প্রথমত, বিজয়বর্গীয়কে এটা বুঝতে হবে যে তাঁদের বর্তমান এবং পুরোনো সংগঠন, অর্থাৎ আরএসএস বা হিন্দু মহাসভা – কোনোটাই স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বে ছিল না। ব্রিটিশের সেবাদাস ছিল এবং যৌবনের আবেগে তাদের কেউ কেউ সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার ফলে জেল-টেল খেটে থাকলেও, ব্রিটিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেতৃত্ব চিরকালই ছিল কংগ্রেসের হাতে এবং ১৯১৯ সাল থেকে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীই ছিলেন তার নেতা। ১৯১৫ সালে ভারতে ফিরে আসার পর ধীরে ধীরে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের অবিসংবাদিত নেতৃত্ব। যদিও কংগ্রেস ছিল হিন্দু উচ্চবর্ণের এবং উচ্চবর্গের (বুর্জোয়া ও রাজন্যবর্গ) রাজনৈতিক সংগঠন, তথাপি গান্ধীর স্বাধীন ভারতের কল্পনায় কখনোই কোনো ধর্মীয় রাষ্ট্রের জায়গা ছিল না। গান্ধী, জওহরলাল নেহরু – এঁরা সকলেই ছিলেন ধর্মীয় বহুত্ববাদে বিশ্বাসী। স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেস ছাড়া আর যাঁরা বড় আকারে যোগদান করেছিলেন সেই কমিউনিস্ট এবং সোশালিস্টদের কথাই বলাই বাহুল্য। তাঁরা তো ধর্মনিরপেক্ষ ভারত গড়ার পক্ষে ছিলেন বটেই। বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের নেতৃত্বে দলিতদের বিভিন্ন সংগঠনও খুবই শক্তিশালী ছিল। তাঁরাও ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন ভারতই গড়তে চেয়েছিলেন।
একথা সকলেই জানেন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রশ্নে আম্বেদকর ছিলেন গান্ধীর প্রবল প্রতিপক্ষ। কিন্তু গান্ধী যে শুরু থেকেই ধর্মীয় বিভাজনের বিপক্ষে ছিলেন, একথা তিনি খুব পরিষ্কার করেই বলে গেছেন। আম্বেদকর লিখেছেন
At the very commencement of his career as a political leader of India when Mr. Gandhi startled the people of India by his promise to win Swaraj within six months, Mr. Gandhi said that he could perform the miracle only if certain conditions were fulfilled. One of these conditions was the achievement of Hindu-Muslim unity. Mr. Gandhi is never tired of saying that there is no Swaraj without Hindu-Muslim unity. Mr. Gandhi did not merely make this slogan the currency of Indian politics but he has strenuously worked to bring it about.
(BR Ambedkar/Pakistan or The Partition of India, p.164)
অর্থাৎ ভারতের একজন রাজনৈতিক নেতা হিসাবে তাঁর কার্যকলাপ শুরু করার সময়েই গান্ধী জনগণকে এই বলে চমকে দিয়েছিলেন যে তিনি ছমাসের মধ্যেই স্বরাজ আদায় করতে পারেন, কিন্তু তার কিছু শর্ত আছে। তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল হিন্দু এবং মুসলমানের মধ্যে ঐক্যসাধন। তিনি অক্লান্তভাবে এই কথা বলে চলেছেন যে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য ছাড়া স্বরাজ সম্ভব নয়। এই কথাটিকে তিনি ভারতীয় রাজনীতিতে একটা ফলদায়ী কিন্তু ফাঁকা স্লোগান হিসাবে দেখতেন না। এটিকে বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন।
আম্বেদকরের লেখার একটি সুন্দর দিক হল তিনি কোনো কথাই আলটপকা লেখেননি। প্রতিটি কথার পিছনে নিজস্ব অধ্যয়ন আছে, বিশ্বাস আছে। গান্ধীর সমালোচনা করে তিনি বহু বক্তব্য রেখেছেন। তার প্রত্যেকটিই গভীর গুরুত্ব দাবি করে। আবার উপরের কথাগুলিও তিনি সাক্ষ্যপ্রমাণ সহকারে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই এই প্রশ্নে আম্বেদকরের গান্ধীর যে মূল্যায়ন তাকে আমরা গুরুত্ব না দিয়ে পারি না। তিনি আরও দেখিয়েছেন যে রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে ১৯১৯ সালে কংগ্রেস আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলনের অংশ হিসাবে গান্ধী ৬ মার্চ দিনটিকে সারা ভারতে প্রতিবাদ দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেন। সেদিন সমস্ত দেশে যে অসংখ্য জনসভা হয়েছিল সেখানে একটি শপথবাক্য পাঠ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং সেটি পড়াও হয়। তাতে বলা হয়েছিল
ঈশ্বরকে সাক্ষী রেখে আমরা, এই দেশের হিন্দু এবং মুসলমানেরা, ঘোষণা করছি আমরা পরস্পরের সঙ্গে একই পিতা-মাতার সন্তানের মত ব্যবহার করব, আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। একজনের কষ্ট অন্যজনেরও কষ্ট বলে বিবেচিত হবে, এবং একে অন্যের কষ্ট লাঘবের জন্য সাহায্য করবে। আমরা একে অন্যের ধর্মকে এবং ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করব এবং অন্যের ধর্মীয় আচারের প্রতিবন্ধক হব না।
গান্ধী আজীবন এই রাজনৈতিক বহুত্ববাদে স্থিত ছিলেন। এখন একথা বুঝতে হবে যে মুসলিম লিগের সঙ্গে গান্ধী ও কংগ্রেসের মতপার্থক্য এখানে ছিল না। গান্ধী বা কংগ্রেস স্বাধীন ভারতকে একটা হিন্দুরাষ্ট্র হিসাবে দেখতেন, ফলে মুসলিম লিগের জন্ম হয় – ঘটনা তা নয়। লিগের অনেকগুলি দাবির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য আলাদা নির্বাচকমণ্ডলীর দাবি। এইটিই ছিল প্রধানত মতপার্থক্যের জায়গা।
স্বরাজ প্রতিষ্ঠা করার অর্থ হল হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা – এমন কথা কারা দাঁড় করাতে চাইছিলেন? প্রথমে হিন্দু মহাসভা এবং পরবর্তীকালে আরএসএস। ওটি তাদের কর্মসূচি, তারাই প্রথম থেকে হিন্দুরাষ্ট্র চেয়ে এসেছে। তাতে যদি দেশভাগ হয় তো হোক। লালা হরদয়াল তো আরও এক কাঠি সরেস। তিনি যদিও শ্রমিক আন্দোলনের লোক এবং খুবই মজাদার ব্যাপার যে তিনি বিদেশে বিভিন্ন কমিউনিস্ট এবং নৈরাজ্যবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে তিনি ছিলেন কট্টর ব্রাহ্মণ্যবাদী এবং খুবই নিকৃষ্ট ধরনের মুসলিমবিদ্বেষী মানুষ। তিনি প্রস্তাব রেখেছিলেন, আফগানিস্তান পর্যন্ত এলাকা দখল করে মুসলমানদের শুদ্ধি করা হোক, অর্থাৎ ‘ঘর ওয়াপসি’ করানো হোক। এই বক্তব্যের পিছনের কথাটা সবাই বুঝতে পারছেন। আফগানিস্তান থেকে শুরু করে উত্তর ভারত পর্যন্ত জায়গাটি আর্যদের পবিত্রভূমি বা দেবভূমি বলে বিভিন্ন শাস্ত্রে কথিত আছে। পরে এই জায়গাটির এক বড় অংশ মুসলমানদের অধিকারে আসে এবং জনসংখ্যার এক বড় অংশ ইসলামধর্মে দীক্ষা নেয়। ওই যে পূর্বপুরুষ তত্ত্বটি বিজয়বর্গীয় তুলে ধরছেন সেটিকে প্রচ্ছন্ন রেখে হরদয়াল তাঁর রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র তৈরি করেছিলেন, যা ১৯২৫ সালে প্রতাপ নামক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সেখানে তিনি বলেন
I declare that the future of the Hindu race, of Hindustan and of Punjab, rests on these four pillars: 1) Hindu Sangathan 2) Hindu Raj 3) Shuddhi of Moslems, and 4) Conquest and Shuddhi of Afghanistan and the Frontiers. So long as the Hindu nation does not accomplish these four things, the safety of our children and grandchildren will be ever in danger, and the safety of the Hindu race will be impossible.
হরদয়ালের মত লোকেরা চিরকালই শ্রমিক আন্দোলনে ছিলেন এবং আছেন। এঁরা নিঃসন্দেহে সাভারকরের গুরু হবার যোগ্য। সোশাল ডেমোক্রেসির মধ্যেই যে ফ্যাসিবাদের উপাদান থাকে সেকথা এমনি এমনি কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকে ওঠেনি। এও লক্ষ করার মত, যে মহম্মদ আলি জিন্নাকেই যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় দ্বিজাতি তত্ত্বের জনক বলা হয় তা সর্বৈব মিথ্যা। রাজনৈতিক হিন্দুত্বের জনকরাই ছিলেন প্রকৃত প্রস্তাবে দ্বিজাতি তত্ত্বের উদ্গাতা। যা-ই হোক, সাভারকরও চেয়েছিলেন হিন্দুরাষ্ট্র, যেখানে মুসলমানদের ‘শুদ্ধি’ না হলেও তাঁরা মাথা নিচু করে মুখ বন্ধ রেখে প্রশান্তভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে জীবনযাপন করবেন। সাভারকরের হিন্দুরাষ্ট্র সম্পর্কিত তত্ত্ব বহুল প্রচারিত। তাই আর উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা ভারাক্রান্ত করার প্রয়োজন নেই।
আরো পড়ুন রামনবমী এখন প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার উদযাপন
সৌভাগ্যের ব্যাপার, ভারতের জনগণ সেইসময় এইসব রাজনৈতিক শক্তির হাতে স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব তুলে দেয়নি। যখন দেশভাগ প্রায় অনিবার্য হয়ে দাঁড়াল, তখন পরিষ্কার হয়ে গেল যে সীমান্তের ওপারে একটি মুসলিম রাষ্ট্র তৈরি হলেও ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসাবেই আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। এর ফলে দেখা যাবে অনেক প্রথিতযশা ধর্মনিরপেক্ষ মুসলমান ইসলামিক দেশে না থেকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশে থাকবেন বলে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে যাননি। কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত লীগকে বোঝানোর চেষ্টা চালায় দেশভাগ করা উচিত নয়। কিন্তু লীগের ন্যায্য দাবিগুলির প্রতি তাঁরা কোনোরকম সহানুভূতি দেখাননি। ফলে ভারত ভাগ অনিবার্য হয়ে পড়ে। আম্বেদকরও লীগকে একই দেশের মধ্যেই সুষ্ঠুভাবে ধর্মীয় সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে লীগ গঠনেরই বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া দল সর্বদাই অন্য ধর্মীয় দল তৈরিতে উৎসাহ দেয় এবং এর ফলে সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িকতার পথই সুগম হয়। দেশভাগের বিরোধিতা করে তিনি লীগকে এও দেখান, যে একটি দেশকে সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় রাষ্ট্রে (এক্ষেত্রে হিন্দুরাষ্ট্র) পরিণত হবার বিপদ থেকে বাঁচানোর রাস্তা এবং সেখান থেকে বাঁচার রাস্তা দেশভাগ নয়। সঠিক পথটি হল সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলিকে নিষিদ্ধ করা, তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া। আম্বেদকরের ভাষায়
How have the French, the English and the Italians succeeded in preventing the Raj of the majority community from being established in their countries? Surely not by partition. What is their method? Their method is to put a ban on communal parties in politics. (ibid/ p 391)
সুতরাং একথা খুব পরিষ্কার, যে স্বাধীন ভারত গড়ে উঠেছিল ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে। কিন্তু মহাসভা, আরএসএস বা হরদয়ালের মত ব্যক্তিরা তাদের বিষাক্ত মননে পুষে রেখেছিল হিন্দুরাষ্ট্রের স্বপ্ন। সে স্বপ্ন আজও তাদের উত্তরসূরীদের অধরা। সেই স্বপ্ন স্বাধীন ভারতের আদর্শের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। সেই বিশ্বাসঘাতক কল্পনাকে বাস্তবায়িত সুযোগ আজ বিজেপির মত শক্তির কাছে তৈরি হচ্ছে বিরোধী রাজনীতির হতশ্রী অবস্থার কারণেই। এই বিপদ থেকে দেশকে বাঁচাতে পারেন একমাত্র এ দেশের জনগণ।
মতামত ব্যক্তিগত
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।
জরুরি লেখা। বিশেষতঃ লালা হরদয়ালের প্রসঙ্গটা