জাতীয় স্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া জোট গঠিত হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীরা কার্যত ধর্মসংকটে পড়েছেন। সাগরদিঘির উপনির্বাচন এবং পঞ্চায়েত ভোটে খানিকটা ভালো ফল করার পরে বাম কর্মী সমর্থকরা যখন খানিকটা উজ্জীবিত, তখনই জাতীয় স্তরে গড়ে উঠল বিরোধী জোট ইন্ডিয়া। এক মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজারা। মমতা এবং সীতারামের করমর্দন করার ছবি পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত বাম সমর্থকদের যে স্বস্তি দেবে না, তা বলাই বাহুল্য। সোশাল মিডিয়ায় ইতিউতি সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও চোখে পড়ছে। ইন্ডিয়া জোটের পরবর্তী বৈঠকে সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার সঙ্গে অভিষেক ব্যানার্জির সহাস্য ছবি সেই ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। বঙ্গ সিপিআইয়ের একাধিক তরুণ রাজ্যস্তরের নেতা সরাসরি দলের সাধারণ সম্পাদকের এই সৌজন্যের বিরোধিতা করেছেন। বামেদের মত না হলেও কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে রাজ্য কংগ্রেসের অন্দরেও। কৌস্তভ বাগচীর মতো যুব নেতা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চিঠি দিয়ে তৃণমূল সম্পর্কে অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন।
বস্তুত বামপন্থীদের খুব কিছু করারও নেই। জাতীয় স্তরে তাঁরা এখন অত্যন্ত দুর্বল শক্তি। ২০০৪ তো বটেই, ২০০৯ বা ২০১৪ সালেও তাঁদের হাতে যা সংখ্যা ছিল, এখন তার ধারেকাছেও নেই। শক্ত ঘাঁটি কেরলে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের ভরাডুবি হয়েছে। কুড়িটির মধ্যে ১৯টি আসনে কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল, একটিমাত্র আসন জিতেছিল সিপিএম। বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য দারুণভাবে ফিরে এসে সরকার গড়েছেন পিনারাই বিজয়ন। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে কেরলে কি দারুণ ফল করা সম্ভব এলডিএফের পক্ষে? দক্ষিণের ওই রাজ্যে কিন্তু বিজেপি কার্যত নেই। লড়াই বাম বনাম কংগ্রেসের। রাহুল গান্ধীকে ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরে কংগ্রেস যদি লড়াই করে, তাহলে কি বামেদের পক্ষে ২০১৯ সালের তুলনায় খুব বেশি ভাল ফল করা সম্ভব হবে? তামিলনাড়ুতে ডিএমকের সমর্থনে গত লোকসভায় চারটে আসন পেয়েছিল দুই কমিউনিস্ট পার্টি। সিপিএম দুটো, সিপিআইও তাই। আশা করা যায় এবারও ওই চারটে আসন তারাই জিতবে। কিন্তু তার বাইরে? পশ্চিমবঙ্গে বামেদের ভোট কংগ্রেসের চেয়ে বেশি। কিন্তু কংগ্রেসের ভোট যেমন কয়েকটা কেন্দ্রে জমাট বাঁধা, বামেদের তা নয়। ফলে আপাতত মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসন বাদে (যদি বাম-কংগ্রেস জোট হয়) এমন একটা আসন চিহ্নিত করা সম্ভব নয়, যেখানে বামেরা তীব্র লড়াই দেওয়ার জায়গায় থাকবে। ত্রিপুরার অবস্থাও তথৈবচ। বিজেপির বেলাগাম সন্ত্রাসের সামনে বিরোধীরা ছন্নছাড়া। বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের একাধিক আসন বামেরা ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে লড়তে পারে ঠিকই, তবে সেগুলোর কোনোটায় সিপিএম লড়বে এমন সম্ভাবনা কম। আরা আর কোডারমা সিপিআইএমএল লিবারেশনের শক্ত ঘাঁটি, বেগুসরাই সিপিআইয়ের।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
স্বাভাবিকভাবেই এত কম সাংসদ নিয়ে ইন্ডিয়া জোটে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকা সম্ভব নয়। জোটের প্রধান শক্তি কংগ্রেসের পক্ষে সংখ্যার কারণেই তৃণমূলকে উপেক্ষা করা অসম্ভব। তবে সংখ্যাগত হিসাবনিকাশের বাইরেও বামেদের পক্ষে যাবে বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে তাঁদের ধারাবাহিকতার ইতিহাস। নিচুতলায় রাজনৈতিক সচেতনতার অভাব এবং দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থার কারণে পশ্চিমবঙ্গে যা-ই হয়ে থাকুক, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ভারতে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য শক্তি বামপন্থীরাই। কোনো অবস্থাতেই তারা যে পার্টিগতভাবে বিজেপির পক্ষে যাবে না একথা কংগ্রেস নেতৃত্বও জানেন। বস্তুত, বিজেপিবিরোধিতার এমন মতাদর্শগত শক্তি ইন্ডিয়া জোট তথা গোটা দেশেই আর কেউ নেই। কাছাকাছি থাকবে ডিএমকে, এবং অবশ্যই লালুপ্রসাদ। রাজনীতির ময়দানে বিজেপিবিরোধিতায় তিনি এবং তাঁর দল একরোখা। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস, জেডিইউ, শিবসেনার মতো দলগুলো দীর্ঘদিন বিজেপির সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে লড়েছে। শিবসেনা মতাদর্শগতভাবেই বিজেপির কাছাকাছি। তৃণমূল নেত্রী বহুবার বলেছেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘকে নিয়ে তাঁর সমস্যা নেই। আম আদমি পার্টিও অনুশীলনের দিক দিয়ে বিজেপির থেকে খুব দূরে নয়। কাজেই ইন্ডিয়া জোটকে যদি আদর্শগতভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে শক্ত জমিতে দাঁড়াতে হয়, তাহলে বামেদের প্রয়োজন।
একইসঙ্গে এই জোটে থাকা বামেদের জন্যও বাধ্যবাধকতা। প্রশ্ন উঠতে পারে, ২০০৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপিকে হারাতে তো এমন কোনো জোটের প্রয়োজন হয়নি। তখন তো কংগ্রেস এবং বামেরা আলাদাভাবেই লড়াই করেছিলেন। তাহলে ২০২৪ সালে কেন বিরোধী জোটে না গিয়ে বামেদের উপায় নেই? উত্তর হল, ২০০৪ এবং ২০২৪ এক নয়। গত দশ বছরে ভারতীয় রাজনীতির কিছু মৌলিক পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। একে ফ্যাসিবাদ বলা যায় কিনা তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু বাস্তব হল ২০২৪ সালে যদি নরেন্দ্র মোদী মসনদে প্রত্যাবর্তন করেন, তাহলে ভারত নামক এই ভূখণ্ড গত সাড়ে সাত দশকে যা কিছু অর্জন করেছে, তার সবটুকুই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ভারতের সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, এমনকি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোই ভেঙে পড়তে পারে। কার্যত সলিলসমাধি ঘটবে সংবিধানে বর্ণিত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রটার। ইতিমধ্যেই তার বহু চিহ্ন প্রকট হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর আগেও বহু প্রগতিশীল মানুষের কাছেই বাবরি মসজিদের জমিতে রামমন্দির নির্মাণ ছিল কষ্টকল্পনা। কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে, অনেকেই ভাবতে পারেননি। কিন্তু হয়েছে। কথা চলছে দেশের নাম পরিবর্তন করার, নির্বাচন কমিশনকে শাসকের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার। সংসদের আসনসংখ্যা বাড়িয়ে এমন একটা ব্যবস্থা তৈরি করার পরিকল্পনাও জানা গেছে যাতে হিন্দি বলয়ে দু-একটা রাজ্যে শক্তি থাকলেই মসনদে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কায়েম করা যাবে। কাজেই দেশের এই মহাসংকটে বামপন্থীদের পক্ষে বিরোধী জোটের থেকে দূরে সরে থাকা সম্ভব নয়। তাতে তাঁদের মতাদর্শগত সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। মার্কসীয় পরিভাষায় যে প্রধান দ্বন্দ্বের কথা বলা হয়, তাকে উপেক্ষা করা বামপন্থীদের পক্ষে অসম্ভব।
সমস্যা হল, জাতীয় স্তরের এই বাধ্যবাধকতায় বাংলায় বামপন্থীদের ‘আত্মত্যাগ’ করা ছাড়া উপায় নেই। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যস্তরের নেতারা যা-ই বলুন, সাধারণ তৃণমূলবিরোধী ভোটারের কাছে ইন্ডিয়া জোটের পর বিরোধী হিসাবে বামপন্থীদের বিশ্বাসযোগ্যতা কমেছে। আবার রক্তাক্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঘা শুকোবার আগেই একমঞ্চে সীতারাম ও মমতাকে দেখা তৃণমূলবিরোধী ভোটারের যে অংশ এখনও বামেদের পক্ষে আছেন, তাঁদের পক্ষে অস্বস্তিকর। যে ইন্ডিয়া জোটের শরিক সিপিএম, সেই জোটের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে অভিষেককে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত তলব করেছে ইডি। অন্যদিকে অভিষেকের গ্রেফতারির দাবিতে ইডি দফতর অভিযানের ডাক দিচ্ছেন বাংলার বামেরা। বিষয়টা হাস্যকর তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু এছাড়া এই রাজ্যের বামেদের কিছু করার নেই। কারণ তাঁরা যদি তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজ্যে সুর না চড়ান, তাহলে যে সামান্য হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভোট তাঁদের রয়েছে, তাও বিজেপির দিকে চলে যাবে। পঞ্চায়েতে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের একাংশ বামেদের ভোট দিয়েছেন, তাঁরাও ভরসা হারাবেন।
লোকসভা নির্বাচনের আগে নভেম্বরে রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশন ডেকেছে সিপিএম, জানুয়ারিতে ব্রিগেডে সমাবেশ। তার আগে দুমাস ধরে রাজ্য জুড়ে পদযাত্রা। ব্রিগেডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুব সংগঠনকে। এই পদক্ষেপগুলো কার্যকরী হতে পারত যদি পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে মরিয়া লড়াই দিয়েছিলেন বাম কর্মীরা, তার ধারাবাহিকতাতেই এসব হত। কিন্তু ইন্ডিয়া জোট গোটা বয়ানটাই বদলে দিয়েছে। লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, তত তীব্র হচ্ছে বাইনারি। একদিকে বিজেপি, অন্যদিকে ইন্ডিয়া। পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেস এবং তৃণমূলের আসন রফা হতে পারে বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অধীররঞ্জন চৌধুরী ইতিমধ্যেই নদী এবং সমুদ্রের তত্ত্ব দিয়েছেন। এই অবস্থায় কার্যত রিংয়ের বাইরে ছিটকে যেতে পারেন বামেরা। ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে জোরদার প্রচার করেও হতশ্রী ফলের একটা ব্যাখ্যা হল, ইন্ডিয়া জোট তৃণমূলবিরোধী ভোটারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। আগামী দিনে এই সংকট আরও বাড়তে পারে।
ইতিমধ্যেই রাজ্যে রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে, জম্মু ও কাশ্মীরের সাত লোকসভা আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া জোটের সদস্যদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করবেন ন্যাশনাল কনফারেন্স সুপ্রিমো ফারুখ আবদুল্লা। আবার মহারাষ্ট্রের ৪৮ আসনের বিষয়ে মধ্যস্থতার কাজ করবেন এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার। তামিলনাড়ুর ৪০ আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিনের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কংগ্রেস আগামী বিধানসভা নির্বাচনগুলো হওয়ার আগে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনায় যেতে চায় না, তবু পশ্চিমবঙ্গে আসন রফা ঠিক কেমন হবে সে প্রশ্ন তো উঠবেই। খুব দ্রুতই উঠবে।
আপাতত ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে যা স্থির হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে,তাতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে গত লোকসভা নির্বাচনের ফল, শেষ বিধানসভা নির্বাচনের ফল অথবা দুই ভোটের মিলিত ফলাফল – যে কোনো একটার ভিত্তিতে আসন রফার ফর্মুলা তৈরি করা হতে পারে। এই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের অবস্থান এবং বক্তব্যকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে বলেও জানা যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আসন রফার ভিত্তি চূড়ান্ত করার চেষ্টা হবে। যদি এ খবর সত্যি হয়, তাহলে বাংলায় ইন্ডিয়া জোটের প্রতিনিধি হিসাবে লড়বে তৃণমূল বা কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। পঞ্চায়েতে যে সংখ্যালঘু মানুষ বামেদের পক্ষে ছিলেন, তাঁদের ধরে রাখাও কঠিন হবে আলিমুদ্দিনের পক্ষে।
আরো পড়ুন কেন্দ্রীয় কর্মসূচি নয়, প্রান্তিক মানুষকে গুরুত্ব দিতে হবে বাম আন্দোলনে
বঙ্গ বামের রাস্তা বোধহয় এখন একটাই। আশু ফলের আশা না করে দৃঢ়ভাবে রাস্তার রাজনীতিতে থাকা। স্থানীয় ইস্যুতে জোর দিয়ে বুথ স্তরে যথাসম্ভব সংগঠন গড়ে তোলা। সমুদ্রে ঢেউ যেমন আসে, তেমন চলেও যায়। মাটি কামড়ে পড়ে থাকার বিকল্প নেই। শর্টকাট খুঁজে বামপন্থী রাজনীতির পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয়। আগামী কয়েকটা মাস কঠিন থেকে কঠিনতর হবে জেনেই যদি বামপন্থীরা জমি আঁকড়ে থাকেন, তাহলে কে বলতে পারে, আগামী দিনের হয়ত নতুন কোনো সম্ভাবনার উদয় হবে।
মতামত ব্যক্তিগত
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।