সংযুক্তা মিত্র

বুদ্ধদেব বসু বলতেন, কবিতার মূল্যায়ন করতে হলে একটু সময়ের দূরত্ব দরকার। আজকের কবিতার ভাল মন্দ আজকে দাঁড়িয়ে করলে তাতে বিভ্রান্তির সম্ভাবনা। শুধু কবিতা নয়, আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে অনেক ইস্যুকেই একটু সময়ের স্রোতে খাবি খেতে দেওয়া উচিত বলেই মনে হয়। সেদিক দিয়ে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য ডিএ নিয়ে আজকে বেশি হইচই হলেও আসলে এটা বেশ পুরনো প্রসঙ্গ। তাই এবার বোধহয় কিছু কথা বলা দরকার। কারণ বিষয়টা নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে প্রচুর আর তাতে চুনো মাছ শিকারেও অনেকে দিব্যি নেমে পড়েছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এই নিয়ে শুনানি বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে, কবে নিষ্পত্তি হবে কেউ জানে না। তারপর কর্মচারীরা তাঁদের প্রাপ্য পাবেন কিনা সেটাও লাখ টাকার প্রশ্ন। তবু আশায় বাঁচে চাষা।

কিন্তু মূল ব্যাপারটা কী? সরকারি কর্মচারীরা তাঁদের মূল বেতনের সঙ্গে নির্দিষ্ট মহার্ঘ ভাতা পেয়ে থাকেন। আজ নয়, দীর্ঘকাল ধরেই। প্রধানত দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে কালোবাজারি, মূল্যবৃদ্ধি এইসব সমস্যা দেখা দেওয়ায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তার কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতার প্রচলন করে। সেই ধারা মেনে স্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মচারীরাও মহার্ঘ ভাতা পাওয়ার অধিকারী হন। মনে রাখা দরকার, ১৯৩৫ সালে যে ভারত শাসন আইন হয়েছিল (Government of India Act, 1935) সেই আইনের ভিত্তিতেই স্বাধীন ভারতে সরকারি ব্যবস্থা, কর্মচারীদের দায়-দায়িত্ব-সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা স্থির করা হয়েছিল। শুধু সরাসরি সরকারি কর্মচারী নয়, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মীরাও মহার্ঘ ভাতা পান। বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিকরাও পান। এই ভাতা কতটা হবে, তা ঠিক হয় ‘সারা ভারত খুচরো মূল্য সূচক’ অনুযায়ী, যা নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের অধীন একটি স্বশাসিত সংস্থা। তারা রাজ্যগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মূল্য সূচকের কমা-বাড়া ঠিক করে। তার ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় সরকার ডিএ-র হার নির্ধারণ করে দেয় যা অনুসৃত হয় অন্যান্য রাজ্য সরকারগুলোর কর্মচারীদের জন্য – যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামোয় এটাই নিয়ম।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

 

শুধু সরাসরি সরকারি কর্মচারী নয়, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মীরাও মহার্ঘ ভাতা পান। বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিকরাও পান।

 

তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হল, এই রাজ্যের প্রশাসনের সর্বময় কর্তারা কর্মচারীদের ডিএ পাওয়া নিয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলন এবং জনপরিসরে এসে পড়া বিতর্কটাকে নানাভাবে গুলিয়ে দিতে চাইছেন। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ডিএ নিয়ে যেসব মন্তব্য করেছেন তাতে তাঁর এ বিষয়ে সীমাহীন অজ্ঞতাই প্রকাশিত হয়েছে। অথবা ধরে নিতে হবে তিনি যা বলেছেন তা উচ্চপদস্থ আমলাদের শিখিয়ে দেওয়া কথা, যে আমলারা মূলত কেন্দ্রীয় ক্যাডারের আধিকারিক এবং সেই সূত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ধারিত হারেই ডিএ পান। ফলে তাঁদের কোনো ডিএ বকেয়া নেই। রাজ্যের ডি ফ্যাক্টো অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র কয়েক বছর আগে বলেই দিয়েছিলেন, কর্মীদের ডিএ না দিয়ে তিনি সফলভাবে রাজ্যের কোষাগারের অর্থ সাশ্রয় করছেন। রাজ্যের সর্বশেষ বেতন কমিশনের প্রধান, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইন্সটিটিউটের এক অর্থনীতির অধ্যাপক তাঁর রিপোর্টে কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা পাওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে চাননি, যদিও তিনি নিজে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া মহার্ঘ ভাতা কোনোদিন ফেরত দিয়ে দিয়েছেন বলে আমরা শুনিনি। বিধানসভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন তিনি যেটুকু পেরেছেন ডিএ দিয়েছেন, এর বেশি পারবেন না। তাঁর বক্তব্যে এমনকি তিনি পেনশন প্রাপক ও সাধারণ কর্মীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির জন্য বলতে চেয়েছেন, পেনশন দিতে হচ্ছে বলে তিনি ডিএ দিতে পারছেন না। একমাত্র এই রাজ্যেই নাকি পেনশন চালু আছে, আর কোথাও নেই। এটা তাঁরই প্রকাশিত বক্তব্য। তাঁর এইসব বিভ্রান্তিকর বক্তব্যে ‘অনুপ্রাণিত’ হয়ে তাঁর চ্যালাচামুন্ডারা কেউ বলছেন, না পোষালে ছেড়ে দিন। কেউ নিদান হাঁকছেন, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ চাইলে কেন্দ্রের চাকরি করুন। কেউ দাবি করছেন, এই রাজ্যে কাজ করলে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ চাওয়া চলবে না। মারমুখী ঔদ্ধত্য ও আকাট নির্বুদ্ধিতা জট পাকিয়ে গেলেই এমন কথাবার্তা মুখ দিয়ে বেরোয়।

একটা কথা প্রথমেই বলতে হবে। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ খুব স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছেন ডিএ পাওয়া কর্মীদের অধিকার। কারণ কর্মচারীরা যে সরকারের কাজ করেন তাদের নীতি প্রণয়নে কর্মীদের কোনো ভূমিকা থাকে না। তাই সরকারি নীতি বা সিদ্ধান্তের ফলে যদি মূল্যবৃদ্ধি হয়, তার ফলে কর্মীদের মূল বেতন ক্ষয় হয়, অর্থাৎ ওই পরিমাণ বেতনের বিনিময়ে তাঁরা তাদের জীবন চালানোর উপযোগী ব্যয় করতে পারেন না। এই ক্ষয় রোধ করার জন্যই মহার্ঘ ভাতা। কে কতটা ‘ভালবেসে’ দেবে বা কতটা দিতে না পারলে তার ‘মুণ্ডচ্ছেদ’ করা হবে, এরকম কোনো অস্পষ্টতা এর ভিতরে আদৌ নেই। এর সঙ্গে বলে রাখা দরকার, ডিএ-র ‘কেন্দ্রীয় হার’ বলে কোনো পূর্বনির্ধারিত বিষয় নেই। সর্বভারতীয় মূল্য সূচকের ভিত্তিতেই ডিএ-র হার ঠিক হয়, এখানে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। কেন্দ্রীয় সরকার সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে ছমাস অন্তর ডিএ-র হিসাব ঠিক করেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় এটা ঠিক হয় বছরে চারবার। এমনকি কোনো ত্রৈমাসিকে যদি দেখা যায় মূল্যবৃদ্ধি হয়নি বা মূল্য হ্রাস হয়েছে, তাহলে কর্মীদের ডিএ বাড়ানো হয় না, কমেও যায়। সবটাই একটা সুশৃঙ্খল পদ্ধতি, এর মধ্যে কোনো ব্যক্তির সাধ আর সাধ্যের মতো ছেঁদো বিষয় নেই।

 

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় ডিএ ঠিক হয় বছরে চারবার। কোনো ত্রৈমাসিকে যদি দেখা যায় মূল্যবৃদ্ধি হয়নি বা মূল্য হ্রাস হয়েছে, তাহলে কর্মীদের ডিএ বাড়ানো হয় না, কমেও যায়।

 

পেনশন আর ডিএ-কে লড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কেন? সাংবিধানিকভাবে সরকারি চাকুরেরা পেনশন পান, কারণ বলা হয় তাঁরা হচ্ছেন ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ অর্থাৎ ‘জনগণের সেবক’। তাই অবসরের পর সরকার তাঁদের জীবন চালাতে একটা আনুপাতিক বেতন দিয়ে থাকেন। সেনাবাহিনীতে যাঁরা কাজ করেন, শারীরিক কারণে তাঁদের ৩৫ বছর বয়সে অবসর নিতে হয়। তাঁরাও তারপর চাকরি বা ব্যবসার সুযোগ পান, পেনশনও পান। রাজ্যের বিধায়ক, সাংসদরা যেহেতু জনপ্রতিনিধি, তাঁরা একটা দফায় (পাঁচ বছর) বিধানসভায় বা সংসদে থাকলেই সারা জীবন পেনশন পান। সরকারি কর্মীদের পুরো পেনশন পেতে গেলে কুড়ি বছর চাকরি করতে হয়। সরকারি কর্মীদের পেনশন ব্যবস্থায় সংস্কার শুরু হয়েছিল প্রথম এনডিএ সরকারের আমলে (২০০১)। আর্থিক দায় এড়ানোর জন্য তখনই কেন্দ্রীয় সরকার ‘ন্যাশনাল পেনশন স্কিম’ নিয়ে আসে, যাতে কর্মীদের যোগ দিতে বলা হয়। এতে সরকারের আর্থিক দায় এড়াতে কর্মীর বেতনের একটা অংশ আর সরকারের দেয় টাকার একটা অংশ চাকরি জীবনের প্রথম থেকেই সরিয়ে ওই পেনশন ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয়। অবসরের পরে ওই ফান্ডে যা জমে তা কর্মী পেনশন হিসাবে পান। তবে এই ফান্ড-নির্ভর ব্যবস্থা কর্মীদের কোনো সুনিশ্চিত পেনশনের আশ্বাস দেয় না। কারণ ফান্ডের টাকা শেয়ার বাজারে লগ্নি করা হয়। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।

ন্যাশনাল পেনশন স্কিম যে সময়ে চালু হয় তখন কেন্দ্রের শাসক জোটের শরিক ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তারা লোকসভায় এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিল বলে জানা নেই। বাম দলগুলো এভাবে সরকারি কর্মীদের কষ্টার্জিত অর্থ শেয়ারে বিনিয়োগের বিরোধিতা করেছিল এবং সেইসময় তাঁদের পরিচালনাধীন রাজ্য সরকারগুলো এই স্কিমে তাদের কর্মচারীদের নিয়ে আসেনি। পশ্চিমবাংলার কর্মচারীরা তাই পুরনো পেনশন স্কিমের আওতাতেই আছেন। রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও (২০১১) যে আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে নতুন পেনশন ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়নি, তার দায় কর্মচারীদের নয়। আর এই রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মতই অন্য রাজ্যেও রাজ্যের অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল (এজি) সেই রাজ্যের সরকারি কর্মীদের পেনশন অনুমোদন করেন। গুগল সার্চ করে যে কেউ দেখে নিতে পারেন যে এজি, ওয়েস্ট বেঙ্গল বা এজি, বিহার বা মধ্যপ্রদেশ কীভাবে কর্মীদের তথ্য সংগ্রহ করছেন, পেনশন অনুমোদন করছেন। তাই এ রাজ্যেই একমাত্র পেনশন চালু আছে, অন্য রাজ্যে নেই – এই বক্তব্য নির্জলা মিথ্যা।

 

রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও (২০১১) যে আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে নতুন পেনশন ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়নি, তার দায় কর্মচারীদের নয়।

 

কর্মচারীদের সংগঠিত আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে আরও কিছু তথ্য বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যার উৎস বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। যেমন কেন্দ্রীয় সরকার অনেক প্রকল্পের অর্থ বকেয়া রাখার কারণেই নাকি ডিএ দেওয়া যাচ্ছে না। তাই কি? কেন্দ্রীয় সরকার যেসব প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে বলে শোনা যায়, তা মূলত আবাস যোজনা ও একশো দিনের কাজ। যদি সত্যিই অন্যায্যভাবে এই বরাদ্দ আটকে রাখা হয় তা প্রতিবাদযোগ্য। কিন্তু এইসব প্রকল্পের বকেয়া অর্থ তো ওই চিহ্নিত প্রকল্পগুলোতেই খরচ করতে হবে। সেই অর্থ থেকে কি কর্মীদের ডিএ দেওয়া যায়? আর্থিক শৃঙ্খলার স্বার্থে কোনো সরকারই এই কাজ করতে পারে না। ফলে ওই বকেয়ার সঙ্গে ডিএ-র বকেয়াকে মিলিয়ে দিয়ে স্পষ্টতই ভুল বোঝানো হচ্ছে মানুষকে।

আরও পড়ুন নিয়োগ দুর্নীতি: সরকারি চাকরিনির্ভর যুবকের কিছু কথা

দ্বিতীয়ত, সরকার নানা জনকল্যাণমুখী কাজ করছে বলে নাকি কর্মীদের ডিএ মেটানো যাচ্ছে না। এটা আরেকটা পরিকল্পিত ভুল প্রচার। একটা কল্যাণকামী রাষ্ট্রে নাগরিকদের জন্য নানা জনমুখী প্রকল্প রূপায়ণ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে নানা রাজ্যের সরকার – সবাই নানারকম জনমুখী প্রকল্প চালায়। তার জন্য তো তাদের কর্মচারীদের প্রাপ্য মহার্ঘ ভাতা থেকে বঞ্চিত করতে হয় না। তথ্য বলছে, এই রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরাই সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম হারে মহার্ঘ ভাতা পান। অথচ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই রাজ্যের সরকারি চাকরিতে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ শূন্য পদ রয়েছে। অর্থাৎ অতজন কর্মীর বেতন ও ভাতা বাবদ আর্থিক দায় সরকারকে বহন করতে হচ্ছে না। একটা সরকার যখন তার অর্থমন্ত্রকের মাধ্যমে বাজেট তৈরি করে তখন তার কতটা আর্থিক দায়, কতটা পরিকল্পিত ব্যয় – এসব হিসাবনিকাশ করতে হয়। তাহলে কি ধরে নিতে হবে এই রাজ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মূল্যবৃদ্ধিজনিত সম্ভাব্য মহার্ঘ ভাতা বাবদ ব্যয়কে হিসাবের বাইরে রেখেই বছরের পর বছর বাজেট করা হয়েছে? তাই মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার ব্যাপারটা ব্যক্তিবিশেষের মর্জি বা ভালবাসার উপরেই দাঁড়িয়ে আছে?

 

এই রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরাই সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম হারে মহার্ঘ ভাতা পান। অথচ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই রাজ্যের সরকারি চাকরিতে প্রায় সাড়ে তিন
লক্ষ শূন্য পদ রয়েছে। অর্থাৎ অতজন কর্মীর বেতন ও ভাতা বাবদ আর্থিক দায়
সরকারকে বহন করতে হচ্ছে না।

 

পূর্বতন বাম সরকারও যে নিয়মিত কেন্দ্রীয় হারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ডিএ দিতে পারত তা নয়, কিস্তি বাকি থাকত। কিন্তু একটা শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে সেগুলো পরে মিটিয়েও দেওয়া হত। অন্তত এই মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়টাকে ‘কর্মীদের উপহার’ বলে কখনো বিজ্ঞাপিত করা হয়নি। বামফ্রন্ট আমলে শেষ যে বেতন কমিশন হয়েছিল (রোপা ২০০৯), তার বকেয়া টাকা তিনটে কিস্তিতে সরকার মিটিয়ে দিয়েছিল। তখন বর্তমান রাজ্য সরকারের কারাবাসী শিক্ষামন্ত্রী রাইটার্স বিল্ডিংয়ের ক্যান্টিন হলে সরকারি কর্মচারীদের সভায় বলেছিলেন তাঁরা সরকারে এলে সব বকেয়া একদিনে মিটিয়ে দেবেন। কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকারের আওতায় যে বেতন কমিশন হয়েছে (রোপা ২০১৬), সেখানে ২০১৬ থেকে প্রাপ্য বকেয়ার বিষয়টা সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। শাসক দলের কর্মী নেতারা বলে বেড়াচ্ছেন, সরকারি কর্মীরা অনেক টাকা মাইনে পান, আবার বাড়তি চাইছেন কেন? বেশি বা কম একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। কিন্তু এই প্রশ্নও তো তুলতে হবে, যে গত দশ বছরে বিধায়কদের বেতন, ভাতা সমেত অন্যান্য সুবিধা তিন তিনবার বাড়ানো হয়েছে কীসের ভিত্তিতে? সরকারি কোষাগারের বেহাল অবস্থাই যদি সত্যি হয়, তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবহারের জন্য গত দুবছর ধরে কেন চার্টার্ড বিমান ভাড়া করে রাখা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে? কেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের বাজেট বরাদ্দের সিংহভাগ খরচ করা হচ্ছে বিজ্ঞাপন ও প্রচারের কাজে? একটা সরকার নিজে যেভাবে গুজব ছড়িয়ে তার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তার উদাহরণ সাম্প্রতিক অতীতে বিরল।

নিবন্ধকার অর্থনীতি ও রাজনীতির আগ্রহী পর্যবেক্ষক। মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

1 মন্তব্য

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.