এখন যাঁর বই পড়ছি, সেই চোমান হার্দি – কুর্দিস্তানি মানুষ – এমনই এক কবি যিনি ‘Seeing (দেখা)’ শীর্ষক কবিতা শুরু করছেন অন্ধকার উক্তি দিয়ে:

Life is by invitation, somebody once told me,
and seeing depends on the spectacles you wear.

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

(জীবন আমন্ত্রণমূলক, আমায় একজন বলেছিলেন একবার,
আর দেখা ব্যাপারটা নির্ভর করে কোন চশমা তুমি পরছ তার ওপর।)

এই কবিতারই মাঝপথে গিয়ে দেখা যায় চোমান লিখছেন,

My neighbor is obsessed with visiting the optician,
he keeps taking his children too.
He’s always checking the simple facts
in case things are happening behind his back.

সাদা তর্জমায় দাঁড়ায়:

পড়শি ভদ্রলোকটি চোখের ডাক্তারের কাছে যাবার জন্য সর্বদা উতলা,
নিজের বাচ্চাকাচ্চাদেরও সেখানে টেনে নিয়ে যান।
সর্বক্ষণ ছোটখাটো জিনিস উনি মিলিয়ে দেখে নিচ্ছেন
কে জানে কখন কী ঘটে যাচ্ছে পিছনে।

কবিতায় এই স্তবকটি, বিশেষ করে শুরুর অমন দুটি পংক্তির পর, আপাতভাবে মনে হয়, একটি ছিটেল মানুষকে দেখে মুচকে হাসি দিচ্ছে। কিন্তু শুরুর পংক্তিতে উদ্ধৃতির অছিলায় কী লেখা? জীবন আমন্ত্রণমূলক! এখানে এসে থামতে হয়। এর অর্থ কী? জীবনে সবার প্রবেশাধিকার নেই – তাই কি? যাদের প্রবেশাধিকার থাকে না, তাদের বেঁচে থাকাকে তবে কী বলে? যেখান থেকে এই কবিতাটি খুঁটে তুলছি – Bloodaxe Books প্রকাশিত সে কাব্যগ্রন্থটি – Life For Us –এই প্রশ্নকেই আলোয় ছায়ায় ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে। Life For Us – শিরোনামের সুষ্ঠু বাংলা কী হতে পারে? হয়ত, আমাদের যা জীবন

জীবনের শাশ্বত ভাবাবেগকে স্পর্শ করে বা করতে চেয়ে কবিতা আমাদের জীবনে কী ঘটিয়ে দেয় সে বিষয়ে একটি সাধারণ ধারণা আমাদের সবার আছে। ভিতরে অজানা কিছু একটা বদলে যায়। কোথাও থেকে দমকা একটি উজ্জ্বলতা এসে লাগে। যা চোখে ধরা পড়ারই না – তা চোখটাকেই বদলে দিল।

‘Seeing’ কবিতাটি শেষ হচ্ছে নিজের দিকে তাকিয়ে:

I drop my father’s glasses and prepare
To see things that weren’t visible to him,
feeling freed from the distortions.

But suddenly
my own reflection in the window stops me.

(আমি বাবার চশমাটি ছেড়ে দিলাম আর
যা উনি দেখতে পাননি তা দেখবার জন্য তৈরি হই,
মনে হল বাঁকা দৃষ্টি থেকে আমি অবশেষে মুক্ত হয়েছি।

কিন্তু হঠাৎ
জানালায় নিজের প্রতিফলন দেখে স্তব্ধ হয়ে যাই।)

এখানে মৃদু প্রশ্ন আসে, নিজের প্রতিফলন দেখেই কেউ স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে কেন? কী আছে সে দেখায়? খুব সম্ভবত একটি একা একা দেখা। দীর্ঘকাল ধরে যে ঐতিহ্য আমাদের লালন করে আসে, সে-ই আমাদের দেখার চোখ নির্মাণ করে দেয়। সেই চশমাটি ছাড়া নিজেকে প্রথমবার দেখলে অপরিচিত লাগা স্বাভাবিক। এই ছেড়ে-দেওয়া চশমাটির কথা ভাবি, যার কাচে লেগে আছে ত্রস্ত জীবনের দাগ। প্রকাশিত হবার ১৮ বছর বাদে, Life For Us কাব্যগ্রন্থটি যখন ভারতবর্ষের এক পাঠকের কাছে এসে খুলে যাচ্ছে, সেই ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে বসল। আর চশমাটি আবার নিশ্চয়ই অনেকের চোখে উঠে আসছে।

এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনিয়ান-আমেরিকান কবি ইলিয়া কামিন্সকির ২৭ ফেব্রুয়ারি লেখা একটি টুইট পৃথিবীজুড়ে তার অনুরণন ছড়িয়ে দিয়েছে।

“Me, writing to an older friend in Odessa: how can I help, please let me know I really want help
He writes back: Putins come and go. If you want to help, send us some poems and essays. We are putting together a literary magazine.
And, that is in the middle of war. Imagine.”

ইউক্রেনের বন্দর-শহর ওডেসায় থেকে যাওয়া পুরনো এক বন্ধুকে কামিন্সকি বিপদের সময় সাহায্যের প্রস্তাব নিয়ে যোগাযোগ করেন। এবং তৎক্ষণাৎ যে রোমহর্ষক উত্তরটি পান, তাতে তাঁর বিস্ময়বোধ ঝাঁকুনি খায়: “পুতিনেরা আসে আর যায়। যদি সত্যি সাহায্য করতে চাও, তবে কবিতা পাঠাও, প্রবন্ধ পাঠাও। আমরা একটা সাহিত্যপত্র নির্মাণ করছি”। প্রাণসংশয়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে, মাটি-হারানোর আশংকার মুখোমুখি হয়েও একজন মানুষের তেজী ব্যক্তিত্ব অটুট থাকছে। যেন, আসন্ন ঝড়ের মধ্যে সে নিজের একটি ফুৎকার মিশিয়ে দিয়েছে। এই স্পর্ধা আসে কোথা থেকে? ভাঙন ধরে যাওয়া ওডেসায় থেকে যে মানুষটি সাহিত্যপত্র নির্মাণের কথা ভাবছেন, তাঁর কাছে এই মুহূর্তে শান্ত প্রেমের কবিতা গেলেও তা এই কদাকার সময়কে প্রতিরোধ করার বার্তা নিয়েই যাবে না কি? এই মৃত্যুময় ইউক্রেনে দাঁড়িয়ে যিনি আছেন, তাঁর চোখে নিশ্চয়ই উঠে এসেছে সেই চশমাটি। তিনি বুঝতে পারছেন, এই অর্থহীন জীবন, আর ততোধিক অর্থ তাৎপর্যহীন মৃত্যু – তার মাঝে বেঁচে থাকা একটি ক্রিয়ামাত্র – তা সত্ত্বেও জীবন একটি মহাগ্রন্থ, কারণ আমাদের কারোর মৃত্যুতেই তা স্তব্ধ হয় না। কিন্তু জীবন সর্বত্র এক নয়। সে ইঙ্গিত চোমান হার্দির কাব্যগ্রন্থের Life For Us নামকরণেই রয়েছে।

চোমান হার্দির জন্ম ১৯৭৪ সালে, ইরাকি কুর্দিস্তানে। জন্মের অব্যবহিত পরেই তাঁর পরিবার ইরানে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পাঁচ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তিনি প্রথম দেশে ফেরেন, কিন্তু তার ন বছর পরেই কুর্দ জনজাতির ওপর রাসায়নিক অস্ত্র হামলা শুরু হয়। আবার দেশান্তরী হতে হয় তাঁর পরিবারকে। বর্তমানে আমেরিকার অভিবাসী চোমান নিজের দেশ ও দেশান্তর দুটিকেই নিজের মধ্যে নিয়ে ঘুরে বেড়ান। এবং আত্মকরুণার বিরুদ্ধে সদর্পে উঠে দাঁড়াচ্ছে তাঁর জীবনবোধ; তিনি লিখছেন, “seeing depends on the spectacles you wear”। এই হেন বাস্তবের শিকার যাঁর জীবন, তাঁর কবিতায় অ্যাবসার্ডিটির ধারণাটি আমাদের সাধারণ ধারণার সঙ্গে যে মিলবে না – তা আলাদা করে বলার কথা না। ‘Nights in the cellar’ শীর্ষক কবিতার শুরুর পংক্তিটিই একটি ছারখার জিজ্ঞাসা:

Is it fireworks or fire?

একটি শিশু উৎসব আর উপদ্রবের মধ্যে দৃশ্যত তফাত গুলিয়ে ফেলেছে। আতশবাজি হলে তারা হেসে হাততালি দেবে, অগ্নিকাণ্ড হলে পরাণের ধুকপুকুনিটুকু বাঁচিয়ে রাখতে পালিয়ে যাবে। কুর্দ মানুষদের এই জীবন, এই জীবন দেখা আর এই দেখার চোখ। চোমান হার্দি এই বাস্তবটি তুলে ধরেছেন জটিলতাহীন ভাষায়। কিন্তু সেই বয়ানই একটি অ্যাবসার্ড নাটকের মঞ্চসজ্জা বলে মনে হয়, বিশেষ করে যাঁরা আপাত-নিস্তরঙ্গ জীবনযাপনে রয়েছেন, তাঁদের কাছে।

দ্বিতীয় কন্যা দিনটি স্মরণ করে।
প্রতিবারই সেই এক গল্প বলতে গিয়ে হাপুস কেঁদে ফেলে
কিন্তু বাবা কাঁদেন না।
বাবা অনেক তুচ্ছাতিতুচ্ছ জিনিস মনে রাখেন বটে
কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও
ওই মুহূর্তটি মনে করতে পারেন না।

এমনকি, মায়েরও মনে পড়ে না।
খালি মনে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে স্যুপ তৈরি করে দিচ্ছিলেন স্বামীকে,
কী ভাবে দু জন লোক ওঁকে ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছিল, দু দিক থেকে ধরে,
রেখে গিয়েছিল, ভেবেছিল, এ বাঁচবে না, নিশ্চিত।

ওরা চারজন বাগানে খেলছিল,
এ ওর থেকে এক বছর এক বছর করে লম্বা।
যখন থেকে বাবাকে উঠোনে শুইয়ে রাখা হয়েছে
উনি মেয়েদের দিকে চোখ মেলে তাকিয়েছিলেন।
একটু বাতাসের জন্য, একটা শব্দের জন্য উনি খাবি খাচ্ছিলেন
আর মেয়েদের কেবল হাত নেড়ে কাছে ডাকছিলেন।

ওরা দেওয়ালের পাশে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়েছিল
কে কার পিছনে লুকোবে সেই চেষ্টায়,
কেউ গিয়ে বাবার হাতটা ধরতে বা একটা চুমু খেতে পারেনি লজ্জায়।

কবিতার শিরোনাম – ‘One of father’s absences’। আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা যা বলে, দৈনন্দিন জীবনে একজন কবিতা না লিখেও বেঁচে থাকতে পারেন। কিন্তু উপদ্রুত এলাকা থেকে যিনি কবিতা প্রয়াস করছেন তাঁর কাছে কবিতার সঙ্গে জীবনের সম্পর্কটি অনেক বেশি কৌণিক। চোমান হার্দি অস্ত্রহানায় প্রাণ খোয়াননি, সুতরাং বেঁচে আছেন এবং তাই লিখতে পারছেন – এত কটি প্রত্যক্ষ ধাপ পেরিয়ে এসেছেন বলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর পদক্ষেপ আমাদের থেকে বেশি ক্লান্ত, ভারি।

Sitting around an old table
they drew lines across the map
dividing the place
I would call my country.

(গোলটেবিল ঘিরে বসে
ওরা ম্যাপে লাইন টেনে টেনে
ভাগ ভাগ করে দিয়েছে যাকে
আমি দেশ বলব।)

কবিতার শিরোনাম ‘Lausanne, 1923’।

এই কবিতাটি, বলাই বাহুল্য, অভূতপূর্ব কিছু নয় – যুদ্ধবিধ্বস্ত জীবনের বুনিয়াদি কবিতার থেকে বেশি কিছুমাত্র নয়। এবং এ কবিতা একটি সুস্পষ্ট পুরনো কবিতা। ইতিপূর্বে যাঁরা এই নিয়তির শিকার, যাঁরা ভূমিহারা, দেশান্তরী, উদ্বাস্তু, তাঁরা সবাই কখনো না কখনো নিয়তির জবাবে এই কবিতাটিই লিখেছেন। চোমান এই চর্বিত চর্বনে ন্যূনতম কোনো নতুন মাত্রা যোগ করেননি। কবিতাটি একটিই অখণ্ড বাক্য; রাজনৈতিক বিভাজনের কথা বলছে। এই একটি বাক্যের পুরনো কবিতাটি চোমানের নিজের কাছে কী হতে পারে? হয়ত, ছিন্নমূল মানুষদের সংস্কৃতিতে নিজের নথিভুক্তকরণ। ঠিক এইখানে এসে কবিতার দায়িত্ব ও উদ্দেশ্য অন্যমাত্রায় উত্তীর্ণ হয়ে যায় না কি? যে কবিতা মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে মানুষ লেখে, তা-ই আবার লিখে মানবজীবনে নিজের শিকড় নামিয়ে দিলেন একজন। অসংখ্য স্বরের মধ্যে একটি স্বর আমারও, সামিল হয়ে গেল। এই কবিতা আর্তনাদের মত সবার মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে, চোমানের জীবন থেকেও, কোনো এক সময়। আবার তা শোনা যাবে, সময় হয়ে এসেছে, অন্য কারোর জীবনে।

আরো পড়ুন অপর ভুবনের গবেষণা, গবেষণার অপর ভুবন

নৈঃশব্দ্যের শান্ত মুখের আড়ালে
কিছু একটা থেকে গিয়েছে,
কিছু একটা কোনওদিনও আর উদ্ধার,
বা প্রকাশ করাও যাবে না।

শব্দ আর আশার সীমারেখার পিছনে
তা অব্যক্ত পড়ে আছে।
ক্ষীণ একটা কিছু
যা একসময় কষ্ট দিয়েছিল,
স্মৃতি দিয়েছিল, স্মিত হাসি দিয়েছিল
তার নাগালের বাইরে থেকে গিয়েছে।

আমি নৈঃশব্দ্যে আস্থা রাখি আর বিশ্বাস সময়ে
ভাবি থামবে।
তখন হয়ত আমি হেসে উঠব, বা কাঁদব,
বা নিজেকে চিঠি লিখব
জানাবো যে, যে সব শেষ হল।
তারপর আমি কাঁদতে পারি বা হাসতে পারি।

কবিতার শিরোনাম, ‘Something’ বা ‘কিছু একটা’।

আত্মসচেতনতা ছাড়া, কবিতা আমাদের কী দেয়? কখনও মনে হয়, সহমর্মিতা। আত্মসচেতনতা কি বৃহৎ অর্থে সহমর্মিতাও নয়? দীর্ণ আধুনিক জীবনে আত্ম-র থেকে বেশি অপর আর কে আছে? কিন্তু সেই আত্ম-অপরকেই যখন চিঠি লিখছেন চোমান, কী লিখছেন তাতে? নিজের কথা। মানুষের বলিরেখাময় মুখশ্রী একটি ল্যান্ডস্কেপ, তার কথা। চোমান হার্দির কয়েকটি কবিতার দিকে চোখ রাখা যাক।

 

আমার বাবার বই

১৯৮৮-র শরতে
আমার বাবার বইগুলো ছড়িয়ে গেল।
এক এক করে থাক থেকে নেমে এল,
বাবার সই মুছে মুছে তারা সাফসুতরো হল
আর নতুনভাবে বিন্যস্ত হল, একেকটির পরিণতিও হবে আলাদা।

যে বইগুলির বিবেক আছে তাদের ভাগ করা হল।
একগুঁয়েগুলি দৃষ্টি আকর্ষণ করল,
বেশি বিদ্রোহীগুলি বিধিনিষেধে
মৃত্যুবরণ করল।

বাকিগুলো লুকিয়ে থাকল।
একদিন না একদিন ফিরে আসবে, এই আশায়
বাক্সপ্যাঁটরায় ঢুকে গেল,
পিছনের বাগানে লুকিয়ে থাকল মাটির নীচে,
বহু বছর যখন তাদের উঠিয়ে আনা হয়,
পাতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে, লোনা ধরে।

এর বাইরে যেগুলি ছিল তাদের পাকা ঘর জুটে যায়
যেখান থেকে আর তাদের তাড়ানো হবে না।
অন্য মালিকের থাকে তারা জ্বলজ্বল করতে থাকল
তাদের গোপন কথা কেউ জানে না।

আমার মায়ের হেঁশেল

আমি আমার মায়ের হেঁশেলটি উত্তরাধিকার সূত্রে পাব।
ওই গ্লাসগুলো, তার মধ্যে কিছু লম্বা, পাতলা, বাকিগুলো বেঁটে মোটা,
প্লেটগুলো, যত রাজ্যের যাচ্ছেতাই একটা সংগ্রহ,
তাড়াহুড়োয় কেনা কাপ,
জংধরা কেটলি যা ফেলাও যাবে না।
“এক্ষুণি আর কিছু কিনিস না,” মা প্রায়ই বলে,
“আর ক’দিন পরে এগুলো তো তোরই হয়ে যাবে”।

মা আবার পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে,
জীবনে এই প্রথম মায়ের গন্তব্য নিজের বাড়ি,
যে বাড়ি আবার তৈরি করা হয়েছে তা মা সাজিয়ে নেবে।
৬৯ বছর বয়সে
মা আবার নতুন করে শুরু করার জন্য উত্তেজিত হয়ে আছে।
এই নিয়ে নবমবার।

মা কখনই নিজের হারানো আসবাব নিয়ে কথা বলে না
যেগুলো ছেড়ে আসতে হয়েছে প্রতিবার।
তা নিয়ে দুঃখও নেই,
শুধু ওই উঠোনের আঙুর গাছটা
জাল ছেয়ে দালান ঢেকে দিয়েছিল।
মা গান গাইত আঙুর পাকাতে
কাপড়ের ব্যাগ বুনে রাখত যাদের মাছির থেকে রক্ষা করতে।
আমি জানি ওই গাছটি আর আমার হবে না”।

 

এক জীবন

এক।

১২ নভেম্বর
একটি বাচ্চা একটি নারীর মধ্যে মারা যায়
একটি নারী একটি বাচ্চার মধ্যে মারা যায়
রাত্রি নারী ও বাচ্চাটির ফাঁক দিয়ে গলে বেরিয়ে যায়।

একটি নারী তার বাচ্চার মৃত্যুতে একটি মোমবাতি জ্বালে
একটি বাচ্চা যে কি না শুরু হবার আগেই থেমে গিয়েছে।
নারীটি আর বাচ্চাটি একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে
তাদের কথা আর শুরু হবে না।

১২ নভেম্বর, একটি জীবন শেষ হয়েছে
কেউ কাঁদে, কেউ কোনোদিন ক্ষমা করে না

১২ নভেম্বর

 

দুই।

যেই চোখ খুললাম
বুঝে গিয়েছি ভিতরে সে আর নেই।
আমি আমার ফেলে আসা শহরের মতো ফাঁকা এখন।

শূন্যতা হয়ে আমি আয়না দেখি
আর স্পষ্ট দেখতে পাই –
একটি ছোট আশা খসে গিয়েছে
আর আমার হাত ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।

তথ্য:

Life For Us (2004). Choman Hardi – কাব্যগ্রন্থটির প্রকাশক Bloodaxe Books। প্রচ্ছদের ছবিটি তুলেছেন তাহা লতিফ। চোমান মূলত কুর্দিশে লিখলেও এই কাব্যগ্রন্থটি তাঁর প্রথম ইংরেজি বই। অক্সফোর্ডে দর্শন ও মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করে চোমান কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে কুর্দিশ উদ্বাস্তু মহিলাদের বিষয়ে গবেষণা করেছেন।

মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.