নতুন বছরের প্রথম দুদিন শীতের রোদে গা সেঁকতে সেঁকতে যারা কলকাতার ক্যাথিড্রাল রোড দিয়ে হেঁটে গেছে, তাদের অনেকেরই চোখ পড়েছে মোহরকুঞ্জের রেলিংয়ে ঝুলন্ত বেশকিছু ছবিতে। অ্যাকাডেমির ফুট দিয়ে যারা হেঁটে গেছে তাদের চোখে না পড়ার সহস্র কারণ বর্তমান। পেটের, চোখের এবং মনের খিদে মেটানোর মত এত কিছু ওই ফুটে আছে, যে উল্টো ফুটে নজর না যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু নেহাত তাড়া না থাকলে মোহরকুঞ্জের ফুট দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষের চোখে পড়েছে ছবিগুলো। লালমোহন গাঙ্গুলির পোর্ট্রেট, মনোরম নিসর্গ বা লাল পট্টি দিয়ে চোখ ঢাকা অমিত শাহের মত দেখতে একজন লোকের মানুষ গেলার দৃশ্য — সবই ছিল সেই ছবিগুলোর মধ্যে।
ক্যাথিড্রাল রোড দিয়ে বছরের এই সময়ে যারা হেঁটে যায়, তাদের সাধারণত তাড়া থাকে না। তাই অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়েছেন ছবিগুলো দেখে। কিন্তু হঠাৎ রাজপথে পার্কের রেলিংয়ের গায়ে ছবি টাঙানো কেন? বিক্রির উদ্দেশ্যে? ফুটপাথে ওরকম পোস্টারের দোকান কলকাতায় অনেক চোখে পড়ে। কিন্তু ব্যবস্থাটা কি আঁকা ছবি বিক্রির পক্ষে উপযুক্ত? সৌরভ মিত্রকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, উদ্দেশ্য ঠিক ছবি বিক্রি নয়। আসল উদ্দেশ্য ছবির প্রদর্শনী। যেমনটা রাস্তার উল্টোদিকে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে সারা বছর হয়ে থাকে। কে সৌরভ মিত্র?
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
বছর চব্বিশেকের সৌরভ পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার। বন্ধু, এবং এই প্রদর্শনীর অন্যতম আয়োজক বিপ্লব ধরের পাশে দাঁড়িয়ে সৌরভ নাগরিক ডট নেটকে বললেন “আর্ট গ্যালারিতে যে ছবির প্রদর্শনী হয় সেখানে তো সিংহভাগ মানুষই গিয়ে উঠতে পারেন না। ওখানে যেতে গেলে ছবির সাথে যে প্রাথমিক পরিচয় থাকতে হয় সেটা সকলের থাকে না। গ্যালারির পরিবেশটাও এমন গুরুগম্ভীর, যে ছবি দেখার ইচ্ছে থাকলেও সঙ্কোচে ঢোকেন না অনেকে। কিছু মানুষকে হয়ত ওরকম জায়গায় তাদের পোশাক-আশাক দেখে ঢুকতে দেওয়াও হবে না। অথচ ছবি দেখতে কিন্তু প্রায় সবাই ভালবাসে। এই চিন্তাভাবনা থেকেই আমরা ঠিক করেছিলাম স্ট্রিট এক্সিবিশন করব। যাঁরা ছবির কাছে আসতে পারেন না, ছবিকে তাঁদের কাছে নিয়ে যাওয়াই এই প্রদর্শনীর লক্ষ্য।”
সৌরভ-বিপ্লবদের সংগঠনের নাম ‘ছবিওয়ালা’। তারা পথপ্রদর্শনীর আয়োজন করছে তিন বছর হয়ে গেল। প্রথমবার হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৩, ২৪ ডিসেম্বর এই মোহরকুঞ্জের বাইরেই। পরেরবার জেলার মানুষের কাছে ছবি নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বীরভূম জেলার সিউড়িতে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে। অতিমারির কারণে ২০২১ সালটা বাদ যাওয়ার পর এ বছর আবার মোহরকুঞ্জে ফিরে আসতে হয়েছে। তবে ছবিওয়ালা এখনো পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পথে তাদের প্রদর্শনী নিয়ে যেতে চায়। জানুয়ারির মাসের শেষেই উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগরে পথপ্রদর্শনীর পরিকল্পনা রয়েছে, ওমিক্রনের থাবাকেই এখন ভয়।
এই প্রদর্শনীর ছবিগুলোর বিষয় এবং আঁকার মাধ্যমের বৈচিত্র্য যেমন দেখার মত, তেমনি ছবিওয়ালার শিল্পীদের বৈচিত্র্যও কৌতূহলোদ্দীপক। বিপ্লবের আছে নিজস্ব ব্যবসা। তৌসিফ হক, চিন্ময় মুখোপাধ্যায়, সৌমিত্র মণ্ডল, শুভঙ্কর প্রামাণিকরা আবার পুরোদস্তুর আঁকিয়ে। ডাক্তার শুভ্রজ্যোতি ভট্টাচার্য আর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় মাইতি, শিক্ষক অভিষেক হালদারও আছেন এই দলে। আবার পারিজাত ব্যানার্জি, রিম্পা মণ্ডলদের মত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি না পেরনো ছেলেমেয়েরাও এই দলের সদস্য। দুই ২৪ পরগণা, নদিয়া, হাওড়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর জেলার এই তরুণ শিল্পীদের কারোরই আর্ট কলেজের প্রথাগত শিক্ষা নেই। এক দল ছবিপ্রেমী ছেলেমেয়ে নিজেদের ছবি নিয়ে রাস্তায় নামছে যারা ছবির কাছে পৌঁছয় না কিন্তু ছবি দেখতে চায়, তাদের খুঁজতে।
“এমন অনেকে এখানে দাঁড়িয়ে পড়ে ছবি দেখেছেন, যাঁরা কখনো কোনো ছবির প্রদর্শনীতে যাননি,” সৌরভ জানালেন। “আমাদের জিজ্ঞেস করেছেন আমরা কীভাবে ছবি আঁকি, কোথা থেকে শিখেছি। কেউ কেউ জানতে চান নিজের ছেলেমেয়েকে কীভাবে আঁকা শেখাতে পারেন, আমরা শেখাই কিনা। এটুকুই আমাদের পাওয়া।”
ছবি: ছবিওয়ালা ও ডিজিটাল ডেস্ক
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।