২০২২-২৩ আর্থিক বর্ষের বাজেটে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) বাবদ খরচ ছাঁটাই করল কেন্দ্র। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান, গম কেনার জন্য বরাদ্দ কমল ১১ হাজার কোটি টাকা। অতিমারীতে দারিদ্র্য বাড়লেও, খাদ্যে ও সারে ভর্তুকি কমানো হল। ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের চাপে মোদী সরকার গত নভেম্বরে তিনটি দুরভিসন্ধিমূলক কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনাও করেছিলেন। কিন্তু সে যে তাঁর মনের কথা ছিল না, বাজেটেই তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি আইনের মাধ্যমে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল কেনার সরকারি ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার মতলব করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কৃষি আইন প্রত্যাহার করলেও, এমএসপির জন্য আইন নিয়ে সরকার তখন কিছু বলেনি। পরে কৃষক নেতাদের কাছে এমএসপি নিশ্চিত করতে আইন তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হয়। আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, আইনের খসড়া প্রস্তুত করতে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে প্রতিশ্রুতি পালিত হয়নি। কৃষক নেতাদের দেওয়া কোনো প্রতিশ্রুতিই পালন করার সদিচ্ছা সরকারের নেই। বাজেট পেশ হওয়ার আগের দিন, ৩১ জানুয়ারি, তাই সারা দেশে পালিত হয় বিশ্বাসঘাতকতা দিবস। মোদী সরকারের বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন কৃষক নেতৃত্ব।

মোদী সরকারের আমলে দেশের নানা প্রান্ত বারেবারে কৃষক আন্দোলনে উত্তাল হচ্ছে। আন্দোলনে এমএসপির দাবি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে সারা ভারত কিষাণ সংঘর্ষ সমম্বয় কমিটির ডাকে কিষাণ সংসদ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কৃষি ঋণ থেকে মুক্তি ও এমএসপির লক্ষ্যে দুটি খসড়া বিল প্রস্তুত করা হয়েছিল। স্বামীনাথন কমিশন চাষের খরচের দেড় গুণ এমএসপির সুপারিশ করেছিল। খরচের হিসাবের ফর্মুলাও কমিশন নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সেই ফর্মুলা অনুসারে খরচের হিসাব না করেই এমএসপি ঘোষণা করে চলেছে। অথচ তাদের দাবি, কমিশনের সুপারিশ অনুসারেই এমএসপি ঘোষণা করা হচ্ছে। কৃষকের আয় দ্বিগুণ হওয়ার মত এই দাবিও মোদী সরকারের আরেক জুমলা। এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে অবশ্য আর জুমলাবাজির নাটক নয়, প্রতিবাদী কৃষকদের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করল কর্পোরেটদের দালাল এই সরকার।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কৃষি আইন বিরোধী কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিল। বিধানসভা ভোটে এর ফায়দা তুলতে তাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। কিন্তু এই রাজ্যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কৃষকের থেকে সরাসরি ফসল কেনার সুবন্দোবস্ত সরকার করেনি, বরং কর্পোরেটদের সুবিধা করে দিয়েছে। চুক্তি চাষকে আইনি মজবুতি দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর ঢাকঢোল পিটিয়ে ধানের এমএসপি ঘোষণা করা হয়, ধান কেনা নিয়ে বিজ্ঞাপনী চমকের শেষ নেই। কত ধান কেনা হল, কতজন বিক্রি করলেন এসব তথ্য দিয়ে কৃষক দরদী সাজে সরকার। কিন্তু উপকৃতদের মধ্যে কতজন প্রকৃত কৃষক সেই তথ্য বিজ্ঞাপনে থাকে না। ২০২১ সালের নভেম্বর মাস থেকে সরকার ধান কেনা শুরু করে। এবারে এমএসপি কুইন্টাল প্রতি ১৯৪০ টাকা। কেন্দ্রীয় ক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি করলে কুইন্টাল প্রতি আরও ২০ টাকা দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি আরএসপি হুগলী জেলা কমিটির উদ্যোগে জেলার কৃষি সমস্যা নিয়ে একটি ক্ষেত্র সমীক্ষা করা হয়। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে, অধিকাংশ কৃষক ৮৪০-৯০০ টাকা বস্তা (১৪০০-১৫০০ টাকা কুইন্টাল, ৬০ কেজিতে এক বস্তা হিসাবে) দরে ধান বিক্রি করেছেন। অনেকে আবার ৮২০ টাকা বস্তা দরেও ধান বিক্রি করেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এবার কৃষকদের চাষের খরচ বেড়েছে, অনেকের ধান নষ্ট হয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্টে বেশ কয়েকজন কৃষকের ক্ষতির চিত্র নমুনা হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে।

যেমন চন্ডীতলা ১ ব্লকের কৃষক শঙ্কর সাঁতরা। দু বিঘা দু কাঠা জমিতে চুক্তিতে আমন ধান চাষ করেছিলেন। খরচ পড়েছিল ৯৪৭০ টাকা। জাওয়াদের বৃষ্টিতে ধান নষ্ট হয়। মাত্র ন বস্তা ধান বিক্রয়যোগ্য ছিল। তারমধ্যে চুক্তি অনুযায়ী দু বস্তা ধান জমির মালিককে দিতে হয়। বাকি সাত বস্তা ধান, ৯০০ টাকা বস্তা (কুইন্টাল প্রতি ১৫০০ টাকা) দরে বিক্রি করেন। তাঁর ক্ষতি হয় ৩১৭০ টাকা।

বলাগড় ব্লকের তপন দাস দু বিঘা পাঁচ কাঠা জমি লিজ নিয়ে আমন ধান চাষ করেন। চাষের উপকরণে খরচ হয় ৮৫৯০ টাকা। জমি লিজের খরচ ৪০০০ টাকা। তার ওপর রয়েছে মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানির ঋণের সুদ। দশ বস্তা ধান ৮৫০ টাকা বস্তা দরে (কুইন্টাল প্রতি ১৪১৭ টাকার কম) বিক্রি করে তাঁর ক্ষতি হয় ৪৬১৫ টাকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই ক্ষতির অন্যতম হলেও একমাত্র কারণ নয়।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, সরকারি দরে তাঁরা ধান বিক্রি করলেন না কেন? প্রধান কারণগুলি এইরকম।

১) নথি ও নিয়মের জটিলতা। জমির নথি বা পরিমাণসহ স্বঘোষণাপত্র চাই। বাস্তবে ভাগ, চুক্তি, জমি লিজে বা বন্ধক নিয়ে চাষ করা কৃষকদের পক্ষে তা যোগাড় করা কঠিন। নিজের নামে পরচা না থাকলে, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জমির মালিকেরও সমস্যা হয়। পরচায় সামান্য ভুল থাকলেই হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।

২) ক্রয় কেন্দ্র থেকে চাষের জমির দূরত্ব।

৩) কবে ধান কিনবে তার তারিখ পাওয়ার হুজ্জুতি। বহুক্ষেত্রেই ফড়েরাজের অভিযোগ রয়েছে।

৪) কুইন্টাল প্রতি ছ থেকে আট কেজি ধান বাদ যাওয়া।

৫) মহাজনের থেকে দাদন বা ঋণ নিলে তার কাছে বিক্রির বাধ্যবাধকতা।

৬) প্রান্তিক, ছোট কৃষকের ফসল বিক্রি করে আয় করার তাড়া থাকে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফসল বেচে টাকা পেতে হবে। পরের ফসল চাষের জন্য ঋণ শোধ করতে টাকা চাই। সরকারি কেন্দ্রে সরাসরি ধান বিক্রি করার সুযোগ কম কৃষকই পান। কৃষকের থেকে কম দামে ধান কিনে সরকারি কেন্দ্রে বিক্রি করার জন্য গ্রামে গ্রামে রয়েছে চক্র। আবার ধান বাদ যাওয়ায় সরকারি কেন্দ্রে বিক্রি করেও সকলের লাভ হয় না। সমীক্ষাতেই এমন নমুনা পাওয়া গেছে।

যেমন পুরশুড়া ব্লকের জয়দেব সামন্ত। নিজের তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। সাইক্লোন জাওয়াদের আগে ধান মাঠ থেকে তুলে ফেলায় ক্ষতি হয়নি। ফলন হয়েছিল ১৪ কুইন্টাল ৪০ কেজি ধান। সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে এক কুইন্টালের বেশি ধান বাদ গিয়েছে। তাঁর ক্ষতি হয় প্রায় ৩০০০ টাকা। শুধু হুগলী জেলা নয়, সারা রাজ্যেই একই চিত্র।

রাজ্যের অনেক জেলায় আলু অন্যতম প্রধান ফসল। গত মরসুমে আলু চাষে অনেক কৃষকের ক্ষতি হয়েছিল। আলু চাষিদের নিয়ে সরকারের ভাষণের শেষ নেই। ভাষণে নাটকীয় উপাদান থাকলেও আন্তরিকতা থাকে না। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার আলুর ন্যূনতম মূল্য ঘোষণা করে কুইন্টাল প্রতি ৬০০ টাকা। অর্থাৎ বস্তা প্রতি ৩০০ টাকা (৫০ কেজিতে এক বস্তা)। অথচ জ্যোতি আলুর ক্ষেত্রে বস্তা প্রতি চাষের গড় খরচ ছিল ৪৫০ টাকার বেশি। ভাগ, চুক্তি বা ভাড়াটে চাষিদের ক্ষেত্রে খরচ আরও বেশি। খরচের দেড় গুণ দাম দূরের কথা, রাজ্য সরকারের নির্ধারিত ন্যূনতম মূল্য ছিল খরচের থেকে কম। আলুর বীজ নিয়ে কালোবাজারি আড়াল করতেই রাজ্য সরকার এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই মরসুমে জাওয়াদের জন্য দুবার করে আলু বসাতে হয়েছে।

পাটের ক্ষেত্রেও ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল বিক্রির সুযোগ বিশেষ নেই। জুট কর্পোরেশন পাট কেনার কাজ কার্যত লাটে তুলেছে। গত বছর অবশ্য পাট চাষে অনেকের লাভ হয়েছিল, কিন্তু তার কৃতিত্ব সরকারের নয়। পাট চাষে লাভের মুখ না দেখায়, অনেকে অন্য ফসল চাষ করছেন। উৎপাদন চাহিদার থেকে কম হওয়ায় কৃষকরা লাভজনক দাম পেয়েছেন। এ বছর উৎপাদন বাড়লে লোকসান হতে পারে। সবই চলছে বাজার অর্থনীতির নিয়মে। সরকার যেন ঠুঁটো জগন্নাথ। তার কাজ শুধু সেই অর্থনীতিকে তেল দিয়ে যাওয়া।

প্রায় দুবছর ধরে চলা অতিমারীতে পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক নয়, নানা বিধিনিষেধে বাজারও ঠিকমত বসেনি। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সেই দুর্যোগ সামাল দিতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, বিভিন্ন ওষুধ, বীজের ব্যবহার বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে এসবের কালোবাজারি। যেমন, এনপিকে ১০:২৬:২৬ সার কিনতে প্রতি প্যাকেটে ৫০০-৬০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। সারের সঙ্গে অনুখাদ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় বিক্রেতা কৃষককে রসিদ দিচ্ছেন না। মাঝে মাঝে সরকারি কর্তারা অভিযানে নামেন। শহরের বাজারে টাস্ক ফোর্সের মত তা নিয়ে ঢাকঢোল পেটানো হয়, কাজের কাজ বিশেষ কিছুই হয় না। সরকারের থেকে কৃষি উপকরণও অধিকাংশ কৃষক পান না। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহারে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। চাষের খরচ বাড়ছে, ফসলের সঠিক দাম মিলছে না। দুর্যোগের দুষ্টচক্রে চাষের ক্ষতিই যেন ভবিতব্য। কৃষকবন্ধুর অর্থে সেই ক্ষতি সামাল দেওয়া কঠিন। আবার নানা সরকারি প্রকল্প, শস্যবীমা, কৃষিঋণের সুযোগ সকলে পান না। প্রান্তিক বা ছোট কৃষক জমি রাখতে পারছেন না। ভাগ, চুক্তি, ভাড়াটে কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। বর্গা রেকর্ড, পাট্টা দেওয়ার কাজ বন্ধ। নথির অভাবে অন্যের জমিতে চাষ করা কৃষকের কৃষক হিসাবে স্বীকৃতিই থাকছে না। সরকারি সুযোগও কার্যত মিলছে না। এনআরসি, সিএএ বিরোধী আন্দোলনে আওয়াজ উঠেছিল “রক্ত দিয়ে কেনা জমি, কাগজ দিয়ে নয়”। কাগজ তথা নথির সঙ্গেই জড়িয়ে গেছে আমাদের অস্তিত্ব।

সংকট যত বাড়ে, ঋণের চাহিদা তত বাড়ে। এই সুযোগে মহাজনী ও মাইক্রোফিন্যান্সের কারবার বেড়ে চলেছে। মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানিগুলি বাড়িতে এসে ঋণ দেয়। তারই সঙ্গে চলে হুমকি, অপমান। এদের থেকে ঋণ পাওয়া যত সহজ, ঋণের জাল থেকে মুক্তি পাওয়া ততটাই কঠিন। ঠকছেন জেনেও কৃষক ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অধিকাংশ কোম্পানি নিয়ম মানে না; ঋণের শর্ত, সুদের হার স্পষ্ট করে জানায় না। দেশীয় ভাষায় লিখিতভাবে জানানোর কথা থাকলেও মানে না। বাড়ি বয়ে হুমকি দিয়ে যাওয়া, সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখানো বেআইনি হলেও তারা করেই চলেছে। মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানিগুলি আজ গ্রামবাংলায় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চাষের ক্ষতি আর দেনার দায়ে বাড়ছে মানসিক অবসাদ, সাংসারিক অশান্তি। যার চরম পরিণতি কৃষক আত্মহত্যা। জাওয়াদের পর সংবাদমাধ্যমে একের পর এক কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা উঠে আসছে। সরকার মানসিক অবসাদ, সাংসারিক অশান্তি ইত্যাদি বলে সত্য ধামাচাপা দিতে চায়।

হুগলী জেলার সমীক্ষার রিপোর্টে উঠে এসেছে আত্মহননকারী কৃষক শ্রীকান্ত সাঁতরার কথা। খানাকুলের বাসিন্দা চল্লিশ বছরের এই যুবক গত ডিসেম্বর মাসে আত্মহত্যা করেন। তাঁর নিজের চাষের জমি ছিল না। দু বিঘা জমিতে ভাগে ও এক বিঘা জমি ৮০ হাজার টাকায় বন্ধক নিয়ে চাষ করতেন। স্ত্রীর নামে মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানির থেকে ধার নেন। গত মরশুমে ২৬০ টাকা বস্তা দরে আলু বিক্রি করে তাঁর প্রায় ৪২ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছিল। এই মরসুমে গয়না বন্ধক রেখে আলু গাছ বসিয়েছিলেন। খরচ হয় ৪৭ হাজার ৪০০ টাকা। জাওয়াদের বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়, বন্ধক রাখা গয়নার সুদ মেটাতে হয়। তার উপর মাইক্রোফিন্যান্সের সাপ্তাহিক ৭৩৫ টাকা কিস্তির তাগাদা। জাওয়াদে ক্ষতির পর থেকেই তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।

পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসীর লিয়াকত আলি আত্মহত্যা করেন। পশ্চিমবঙ্গ ঋণমুক্তি সমিতির তথ্যানুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, তিনি ভাগে আমন ধান চাষ করেছিলেন, চাষের জন্য ঋণ ছিল। জাওয়াদের বৃষ্টিতে ধান নষ্ট হওয়ায় আতঙ্কে ভুগছিলেন। তাঁর গ্রামে কুইন্টাল প্রতি ১৪০০ টাকারও কমে অনেকে ধান বেচতে বাধ্য হন।

সরকারি নিষ্ক্রিয়তা ও বাজার অর্থনীতির তান্ডবে কৃষকের ক্ষতি ও বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম — দুইই পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। যে আলু কৃষক ৬-৮ টাকা কিলো দরে বেচেছেন (কেউ আবার আরও কমে), সেই আলু বাজার থেকে কিলো প্রতি ৪০ টাকা বা তারও বেশি দামে কিনতে হয়েছে। ধান চাষে ক্ষতি হচ্ছে, চালের দাম বাড়ছে। ক্ষতির ভয়ে কৃষক পাট চাষের উৎসাহ হারাচ্ছেন। আবার কাঁচা পাটের অভাবের অজুহাতে একের পর এক জুট মিল লক আউট হচ্ছে। মূল স্রোতের মিডিয়া কেন্দ্র-রাজ্য তরজা, মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল টুইট যুদ্ধ, নেতাদের টুইস্ট নাচ — এসবে আমাদের মাতিয়ে রাখছে। এদিকে কৃষিজমির চরিত্র যাচ্ছে বদলে। হাত বদল হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে। চাষের জমি হচ্ছে মাছের ভেড়ি বা বাস্তু ভিটে। চলছে জমি মাফিয়াদের তান্ডব।

সংকট বাড়লেই ত্রাতা সেজে বাজিমাত করবে কর্পোরেট কোম্পানিগুলি। কেন্দ্র ও রাজ্য — দুই সরকারই সেটা চায়। রকমারি নামের প্রকল্পের চমকে তারা তাই সব ভুলিয়ে, গুলিয়ে দিচ্ছে। সংকটের সময়ে কৃষকের আয় দ্বিগুণ না তিন গুণ বেড়েছে তাই নিয়ে দুই সরকার তরজায় মাতে। জুমলাবাজি ও নির্লজ্জতার এর চেয়ে ঘৃণ্য নিদর্শন আর কী হতে পারে?

মতামত ও তথ্যাবলী লেখকের

আরও পড়ুন: https://nagorik.net/economics/climate-change-deepens-agrarian-crisis/

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.