প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
পশ্চিমী মিডিয়া প্রথমবার যখন ‘আবেনোমিক্স’ (Abenomics) শব্দটির সঙ্গে তাদের পাঠক ও দর্শককুলের পরিচয় করিয়ে দেয় তখন দ্বিতীয়বারের জন্য শিনজো আবে ক্ষমতায় ফিরেছেন বটে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অফিসে দুসপ্তাহও কাটাননি। এ হল ২০১২ সালের ডিসেম্বরের কথা। সেই শুরু, পরের এক দশক ধরে এই শব্দটি নীতিনির্ধারক, অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকদের লবজে ঘুরে ফিরে আসবে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে খুব কমজনই খতিয়ে দেখবেন কোন জাদুবলে অফিসে গুছিয়ে বসার আগেই শিনজোর অর্থনৈতিক মডেল ধনতান্ত্রিক বিশ্বে সুস্পষ্ট পরিচিতি পেয়ে গেল। বহু বছর ধরে মুষড়ে থাকা এবং ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর বিপদসীমায় দাঁড়িয়ে থাকা জাপানী অর্থনীতির মোড় ঘোরানোর জন্য শিনজোর দাওয়াই ছিল ত্রিস্তরীয় – (১) ব্যাঙ্ক অফ জাপানের মাধ্যমে বাজারে যথেচ্ছ টাকা এনে চাহিদা বাড়ানো, (২) সাধারণ মানুষ এবং কর্পোরেট সেক্টরকে ভর্তুকি দেওয়া এবং (৩) কাঠামোগত সংস্কার ঘটানো যার দরুন শ্রমের বাজার হবে উন্মুক্ত, ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের পথ হবে সুগম, কর্মসংস্থান হবে আরও বহু মহিলার।
এই ত্রিফলা মডেল কতটা কার্যকর হয়েছিল সে কথায় পরে আসছি, কিন্তু তার আগে পাঠকদের মনে করিয়ে দেওয়া দরকার যে ২০১২ সালের আগে শিনজোকে অর্থনীতি নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতে জাপান বা বাকি দুনিয়ার লোক দেখেনি। ২০০৬-০৭ সালে প্রথমবারের জন্য ক্ষমতায় এসে শুল্ক নীতির কিছু সংস্কারসাধনে উদ্যোগী হয়েছিলেন বটে, কিন্তু জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক হিসাবে শিনজো অনেক বেশি উৎসাহী ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানের সংবিধানে রদবদল ঘটাতে। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমী দুনিয়া শিনজোর বাজারমুখী অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে প্রথম থেকেই উচ্ছ্বসিত হলেও জাপানের মানুষের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল বিস্ময়সূচক। কিন্তু নতুন অর্থনৈতিক দিশার প্রতিশ্রুতি পেয়ে তাঁরাও শুরুর অস্বস্তি ঝেড়ে ফেলেন। জাপানের প্রায় একদলীয় গণতন্ত্রে শিনজোর দল পাঁচ দশক ধরে রাজত্ব করার পরেও ২০১২ সালের জাতীয় নির্বাচনে সর্ববৃহৎ জয় লাভ করে। অথচ দলীয় সংগঠন হোক কি পার্টির নেতৃত্ব, জাতীয়তাবাদী রাজনীতি হোক কি শিনজোর ঘোষিত বিদেশনীতি, কোনোকিছুই বদলায়নি। এক এবং একমাত্র বদল হিসাবে দেখা দিয়েছিল শিনজোর অর্থনৈতিক মডেল, এবং নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই শিনজো প্রবলভাবে এই মডেলকে দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরেছিলেন। ২০১২ সালের নির্বাচনী প্রচার ছিল এক হিসাবে আবেনোমিক্সেরও প্রচার। যে কারণে পশ্চিমী মিডিয়ার কাছে জাপানের অর্থনৈতিক সন্ধিক্ষণের খবর পৌঁছতে দেরি হয়নি।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
শিনজো ২০১২ সালে যখন ক্ষমতায় এলেন, ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে জাপানের স্থান ছিল ২২ (১৭৯টি দেশের মধ্যে)। পাঁচ বছর পরে দেখা গেল জাপান পিছোতে পিছোতে গিয়ে পৌঁছেছে ৭২ নম্বরে (১৮০টি দেশের মধ্যে)। আরো পাঁচ বছর পর, এই ২০২২ সালে জাপান রয়েছে ৭১ নম্বর স্থানে। জি-৭-এর মত উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশগুলির মধ্যে আর কোনো দেশের এতটা অধঃপতন ঘটেনি। কিন্তু আবেনোমিক্স নিয়ে হইচইয়ের মধ্যে এই খবর ধনতান্ত্রিক সংবাদমাধ্যমগুলিতে স্থান পায়নি। পেলে দেখা যেত অন্য স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলির মতন শিনজোর সরকার সরাসরি সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করেনি। কিন্তু তিনি ক্ষমতাসীন থাকার সময়ে জাপানী অলিগার্করা ক্রমশই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, বড় কর্পোরেট হাউসগুলি আর্থিক প্রতিপত্তি খাটিয়ে দখল করে নিয়েছে অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম। ফলে জাপানের ছাত্রযুব আন্দোলন বা শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনের কথা প্রায় কখনোই মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলিতে উঠে আসেনি। শিনজো নিজেও সংবাদমাধ্যমের সামনে আসা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। খবর পরিবেশনের বদলে সরকারি প্রচারযন্ত্র হয়ে কাজ করে চলেছে অধিকাংশ টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র।
আবেনোমিক্সের তুমুল প্রচার ও শুরুর সাফল্য সাধারণ মানুষকে বেশ কিছুদিন ভুলিয়ে রেখেছিল। অবস্থা বদলাতে শুরু করল ২০১৭ সালের নির্বাচনের পর। দেখা গেল শিনজোর অর্থনৈতিক মডেলের প্রথম দুটি নীতি যতটা মনোযোগ দিয়ে পালন করা হয়েছে, তৃতীয় নীতিটি প্রায় ততটাই অবহেলিত। অথচ প্রথম দুটি নীতি (টাকার জোগান বাড়ানো এবং ভর্তুকি দেওয়া) নেহাতই স্বল্পমেয়াদি সমাধান। কাঠামোগত সংস্কার না হলে জাপানের মত বয়স্ক মানুষে ভর্তি দেশের অর্থনীতি ভিতর থেকে ফোঁপরা হয়ে থাকবে। এদিকে শিনজোর জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে উন্মুক্ত শ্রম-অভিবাসন নীতি আদপেই মানানসই নয়। ফলে ২০১৭ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেও শিনজো জাপানের শ্রম সংস্কারের বিষয়টি গা করেননি। অর্থনীতিবিদরা কিন্তু শেষ দু দশক ধরে বলে আসছিলেন, কাঠামোগত সংস্কারের অভাবে জাপানের অর্থনীতি বহুলাংশে বেলাগাম হতে পারে – ২০৪০ সালের মধ্যে জাপানের জাতীয় আয়ের প্রায় ২৪% চলে যাবে সামাজিক সুরক্ষাজনিত সরকারি খরচ মেটাতে। এর সঙ্গে যদি যোগ হয় বাকি সমস্ত সরকারি পরিষেবার খরচ, তাহলে চলে যেতে পারে আয়ের প্রায় ৬০%। জাপানের মত ধনতান্ত্রিক দেশ, যেখানে পরিকাঠামো তৈরি করার গুরুত্ব অপরিসীম, এ যে বিশেষ দুঃসংবাদ সে কথা বলা বাহুল্য।
তাহলে কি শিনজোর মডেলের প্রথম দুটি নীতিতেই বাজিমাত হয়েছে? জাপানের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি তরতর করে এগিয়েছে? তা-ও তো নয়। নিচের লেখচিত্রটির দিকে একবার তাকানো যাক। বিশ্বব্যাঙ্কের দেওয়া পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে ২০১৯ সাল অবধি, অর্থাৎ কোভিড আসার ঠিক আগে অবধি, জাপানের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ক্রমশই কমতে কমতে প্রায় শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে। অথচ এই ২০১৯ সালেই আরেক উন্নত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার দুই শতাংশের বেশি, ভারতের মতন ‘ইমার্জিং ইকোনমি’-তে স্বাভাবিক কারণেই সংখ্যাটি আরো বড়।

বৃদ্ধির হার যদি নাও বাড়ে, যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ চাকরি পাচ্ছেন কি? হতেই পারে যে বয়স্কবহুল অর্থনীতিতে সার্বিক উৎপাদন ক্ষমতা কমে এসেছে কিন্তু চাকরি আছে ঘরে ঘরে। ফাইন্যানশিয়াল টাইমসের তথ্য থেকে মনে হতে পারে প্রতিপাদ্যটি সঠিক। শিনজো ক্ষমতায় আসার পর থেকে জাপানের বেকারত্ব ক্রমশই কমেছে।
কিন্তু সামান্য গভীরে গেলেই বোঝা যায় ব্যাপার অত সোজা নয়। কী ধরণের চাকরি বেড়েছে জাপানে? বেড়েছে সেই সব চাকরি যেগুলি নিয়ে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে চলছে ‘গিগ ইকোনমি’। অর্থাৎ সুইগি/জোমাটোর খাবার ডেলিভারি দেওয়ার চাকরি বা উবের/ওলার মত ভাড়া গাড়ি চালানোর চাকরি। জাপানের প্রায় সতের শতাংশ মানুষ এখন গিগ ইকোনমির অংশীদার। এই অনিয়মিত চাকরি বেড়েছে আবেনোমিক্স আসার পর থেকেই।

সচেতন পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে কী আবেনোমিক্স নিয়ে এত মাতামাতির কোনো কারণ নেই?
আসলে আবেনোমিক্স যদি সত্যিই কারোর উন্নতিসাধন করে থাকে তা হল জাপানের কর্পোরেট সেক্টর। তাদের শেয়ারমূল্য ক্রমেই বেড়ে চলেছে, ফলে পুঁজির অভাবও হচ্ছে না। কিন্তু সেই শেয়ারমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই বেড়েছে অর্থনৈতিক অসাম্য। যে কারণে ২০২০ সালে শিনজো স্বাস্থ্যের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি নিলে, নতুন প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলেন অর্থনৈতিক অসাম্য এতই বেশি যে সম্পদ পুনর্বন্টনের মাধ্যমে সেই অসাম্য কমানোই এখন জাপানের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাঁর হেভিওয়েট পূর্বসূরিকে কটাক্ষ করে কিশিদা আরো বলেছিলেন জাপানের অর্থনীতি শেষ এক দশক ধরে সাধারণ মানুষের কথা না ভেবে উলটো পথে হেঁটেছে। জাপানের মত রক্ষণশীল দেশে শিনজোর এহেন খুল্লমখুল্লা সমালোচনা আমাদের নিকিতা ক্রুশ্চেভের কথা মনে করিয়ে দেয়। স্তালিনের প্রতি ক্রুশ্চেভের সমালোচনা নিয়ে পশ্চিমী দুনিয়ায় যতটা শোরগোল পড়েছিল, আর্থরাজনৈতিক কারণেই অত হইচই কিশিদার কথা নিয়ে হয়নি। কিন্তু আবেনোমিক্সের সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান প্রসঙ্গে কিশিদার বক্তব্য যে একটি অন্য মাত্রা এনে দেয় সে কথা বিশ্বরাজনীতির উৎসুক পর্যবেক্ষকদের নজর এড়াবে না বলেই আমার বিশ্বাস। নিয়তির পরিহাস এই, যে মাত্র এক বছরের মধ্যেই নিজের গদি বাঁচানোর জন্য কিশিদা সম্পূর্ণভাবে আত্মবিস্মৃত হয়ে শিনজোর মডেলের ভূয়সী প্রশংসা শুরু করেন।
আবেনোমিক্স যে নেহাতই এক অর্থনৈতিক মুখোশ ছিল তা নিয়ে আজ আর কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। বাস্তবধর্মী, বাজারমুখী এক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিজেকে যেভাবে শিনজো উপস্থাপিত করতে চেয়েছিলেন, ধনতান্ত্রিক দুনিয়া সেই রূপকে প্রথম থেকেই প্রচারের আলোয় রেখেছে। অথচ সেই মুখোশের তলায় আসল মুখটি ছিল ভীষণভাবেই রাজনৈতিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাস সংশোধন করাই ছিল সেই মুখের প্রধান লক্ষ্য। এই নতুন ইতিহাসে জাপানের রাজবংশের গরিমা অটুট, সেখানে জাপানী সাম্রাজ্যবাদের গর্হিত কার্যকলাপের বিশেষ স্থান নেই, স্থান নেই উদারপন্থী আলোচনার, জায়গা নেই বিশ্বযুদ্ধের পরে নেওয়া শান্তির অঙ্গীকারের। প্রবল পরাক্রমী চীনের পাশে জাপানের ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকার কোনো কারণ নেই, কিন্তু হিরোশিমা-নাগাসাকি এবং অতি সম্প্রতি ফুকুশিমার পারমাণবিক ট্র্যাজেডির পরেও শিনজো যেভাবে পারমাণবিক অস্ত্রাগার গড়ে তোলার জন্য সওয়াল করেছেন তা জাপানের আধুনিক ইতিহাসে বিরল। আবেনোমিক্সের জন্য যে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি তিনি পেয়েছিলেন তা বিহনে শিনজোর রাজনৈতিক অভীষ্ট সিদ্ধি কতটা হত তা নিয়ে বিস্তর সন্দেহ থেকে যায়।
তবে তাঁর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড মানবিক দিক থেকে তো বটেই, আর্থরাজনৈতিকভাবেও ভারতের জন্য বিশেষ দুঃসংবাদ। নরেন্দ্র মোদী এবং শিনজোর রাজনৈতিক ধ্যানধারণায় প্রভূত মিল থাকার ফলে দুজনে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একে অপরের কাছাকাছি আসতে পেরেছিলেন। মোদী ক্ষমতায় আসার দুবছরের মধ্যে জাপান ভারতে ছয় বিলিয়ন ডলারেরও বেশি টাকা বিনিয়োগ করে এবং কোভিড আসার আগে পর্যন্ত মোটের ওপর জাপানী বিনিয়োগের হার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। সফটব্যাঙ্কের মত বিশালায়তন বিনিয়োগ সংস্থায় ভারতীয় প্রভাব যে ক্রমেই বেড়েছে তা-ও নেহাত আকস্মিক সমাপতন নয়। আবার বর্তমান ভূরাজনৈতিক সঙ্কট অর্থাৎ চীনা-পাকিস্তানি জোটের মোকাবিলায় ভারত ও জাপান যে ভাবে কোয়াড (Quad)-এর মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করেছে সেরকম নজিরও আমরা আগে দেখিনি। যদিও শুধু কোয়াড দিয়ে ভারত-জাপান সম্পর্ককে বুঝতে চাইলে ভুল হবে। মনে করিয়ে দেওয়া ভাল, কোয়াডের বাকি দুই সদস্য আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার যাবতীয় অনুরোধ-বিরক্তি-হতাশা উপেক্ষা করে ভারত এবং জাপান রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে যথেষ্ট ইতিবাচক সম্পর্ক রেখে চলেছে। এই বিদেশনীতি ঠিক কতটা কাজে দেবে তা ভবিষ্যৎ বলবে, কিন্তু এই মুহূর্তে একটি বিষয় নিয়ে কোনো ধোঁয়াশা নেই – মোদী এবং শিনজোর ব্যক্তিগত সম্পর্ক দুই দেশের রাজনৈতিক রসায়নকে ক্রমেই জোরালো করেছে। শিনজোর জীবদ্দশায় এ সম্পর্ক বেলাইন হওয়ার কোনো আপাত সম্ভাবনা ছিল না। ক্ষমতাসীন না থেকেও তিনি ছিলেন জাপানের সবথেকে ক্ষমতাবান মানুষ। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এতটা ভরসা সম্ভবত রাখা যাবে না – না অর্থনৈতিকভাবে, না রাজনৈতিকভাবে। শিনজোর অবর্তমানে কিশিদা বা অন্য কোনো উদারপন্থী নেতা জাপানকে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির হাত থেকে হয়ত মুক্তি দিতে পারেন, কিন্তু ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিতে উদারপন্থার স্থান যে বিশেষ নেই তা একপ্রকার নিশ্চিত।
আরো পড়ুন ‘১৯৯১ থেকে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের পথ ত্যাগ করার ফল গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে ১০১তম স্থান’
তাই শেষমেশ চীনই ভরসা। চীনের প্রতাপ যত বাড়বে, ভারত এবং জাপানের সম্পর্ক নষ্ট হওয়া দুই দেশের পক্ষেই তত অনভিপ্রেত হবে। ইতিবাচক ব্যাপার এই, যে পশ্চিমী দুনিয়া সন্দেহ প্রকাশ করলেও জাপানের নিজস্ব অর্থনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণী জানাচ্ছে ২০৩৩ সালের মধ্যে চীন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অর্থনীতি হতে চলেছে। আবেনোমিক্স যথার্থ কাজ করলে হয়ত জাপানকে এত তটস্থ হয়ে থাকতে হত না, কিন্তু আবেনোমিক্সের ব্যর্থতা এক হিসাবে ভারতের জন্য শাপে বর হয়ে দেখা দিয়েছে।
নিবন্ধকার ব্রিটেনের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট সাইন্সের অধ্যাপক। মতামত ব্যক্তিগত
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।