ছোটবেলায় স্কুলজীবনে আমরা অনেকেই অণুবীক্ষণ যন্ত্র বা মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগৎ দেখে মুগ্ধ হয়েছি, অবাক হয়ে ভেবেছি, ওই এক বিন্দু জলকণার মধ্যে ছোট ছোট জীবের এক আশ্চর্য মহাবিশ্ব কীভাবে বিরাজ করছে! গত শতাব্দীতে যখন প্রকৃতির ক্ষুদ্রতম মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো অনুসন্ধান করার জন্য বহু কিলোমিটার লম্বা এবং সুবৃহৎ এক যন্ত্রের প্রয়োজন মানবসভ্যতা অনুধাবন করল, আমরা কেউ কেউ কি প্রথমে মাইক্রোস্কোপের সেই চিরাচরিত ধারণা নিয়ে কল্পনা করিনি, যে পর্বতপ্রমাণ এক মাইক্রোস্কোপের কথা বিজ্ঞানীরা বলছেন? আসলে কিন্তু আক্ষরিক অর্থে ওই যন্ত্রগুলো কোনো অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছিল না, বরং সেগুলো এমন মেশিন, যেগুলো আলোর গতির কাছাকাছি বেগে পদার্থের কণাগুলোকে ত্বরান্বিত করে থাকে। তবে প্রথম দিকে হয়ত আমাদের অনেকের কাছেই সেগুলোর কিছু কিছু ধারণা পরিষ্কার ছিল না, যেমন আসলে এই যন্ত্রগুলো ঠিক কী করে, কেনই বা মৌলিক গবেষণার জন্য এগুলো প্রয়োজন এবং কেন সেগুলো বহু কিলোমিটার লম্বা এবং আমাদের পরিচিত মাইক্রোস্কোপের আকারের নয়?

সেদিনের এরকম নানা প্রশ্নই কিন্তু আজকের বহু কণাপদার্থবিজ্ঞানীর জন্ম দিয়েছে, যাঁরা পার্টিকল অ্যাক্সিলারেটর সংক্রান্ত গবেষণায় নিযুক্ত। এই গবেষণাগুলোর অন্যতম হল, প্লাজমা ওয়েকফিল্ড অ্যাক্সিলারেশন নামক এক বিশেষ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা, যা অ্যাক্সিলারেটরের আকারকে সঙ্কুচিত করতে সচেষ্ট এবং একরকম নিশ্চিতভাবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বলা চলে, এটা কণা ত্বরণ বা পার্টিকল অ্যাক্সিলারেশনের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে চলছে। মনুষ্যসৃষ্ট পৃথিবীর বৃহত্তম ল্যাবরেটরি সার্ন (CERN)-এ বর্তমানে পৃথিবীর প্রথম প্রোটন রশ্মি পরিচালিত প্লাজমা ওয়েকফিল্ড অ্যাক্সিলারেশনের পরীক্ষা চলছে। কিন্তু অস্পষ্ট ও টেকনিকাল শব্দগুলো নিয়ে কথা বলার আগে এই অ্যাক্সিলারেটরের বিষয়ে ছোট করে একটু জেনে নেওয়া যাক।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

আজ বিশ্বব্যাপী ৩০,০০০-এরও বেশি পার্টিকল অ্যাক্সিলারেটর রয়েছে। এগুলো ডায়াগনস্টিকস এবং ক্যান্সার থেরাপির জন্য চিকিৎসার অ্যাপ্লিকেশন থেকে শুরু করে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প, মেটিরিয়াল সায়েন্স, জীববিজ্ঞানের গবেষণাসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় আকারের অ্যাক্সিলারেটরগুলো কণাপদার্থবিদ্যা (particle physics) গবেষণার কাজে লিপ্ত। দীর্ঘ সময় ধরে বিবর্তন হতে হতে অ্যাক্সিলারেটরগুলো ক্রমাগত আকারে বেড়েই চলেছে। এদের আধুনিকতম অবতার হল সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার বা LHC। এটার সম্পর্কে আমরা প্রায় সকলেই কম বেশি জানি। ২০১২ সালে এই যন্ত্র বিখ্যাত হিগস বোসন কণা আবিষ্কারে সহায়তা করেছিল এবং সেই কাজের উপর ভিত্তি করে পরের বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এখন এই অ্যাক্সিলারেটরগুলোর আকার বৃদ্ধি এবং কণাগুলোকে উচ্চতর শক্তিতে ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তা কেন সরাসরি সম্পর্কিত, আর কেনই বা আমাদের এই উচ্চশক্তিসম্পন্ন কণার প্রয়োজন – সে ব্যাপারে আলোচনা করা যাক।

ওয়েকফিল্ড
ফরাসী-সুইস সীমান্ত জুড়ে বিস্তৃত LHC, CERN

মহাবিশ্বের উৎপত্তি বুঝতে এবং পদার্থের ক্ষুদ্রতম বিল্ডিং ব্লকগুলো সম্পর্কে অনুধাবন করতে আমাদের উচ্চশক্তির কণা দরকার। আমাদের চিরাচরিত অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে আমরা দৃশ্যমান আলোর কণা বা ফোটন ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়ার আকারের বস্তু দেখে থাকি। কণার শক্তি যত বেশি হবে তার সাহায্যে কোনো বস্তুর ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর বৈশিষ্ট্যগুলো তত বেশি করে দেখতে পাওয়া যাবে। তাই আপনি যদি উচ্চতর শক্তির ফোটন, অর্থাৎ তথাকথিত এক্স-রে ব্যবহার করেন, তাহলে পরমাণুকে দেখতে পাবেন এবং যদি আরও উচ্চশক্তিসম্পন্ন তেজষ্ক্রিয়তার ফলে নির্গত কণা ব্যবহার করেন, তাহলে পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের ভিতরটা দেখতে পেতে পারেন। প্রায় এক শতাব্দী ধরে অ্যাক্সিলারেটর প্রযুক্তির ব্যাপক অগ্রগতির ফলে আমরা আজকের অ্যাক্সিলারেটরগুলোতে উচ্চশক্তির কণার সাহায্যে একটা পরমাণুর চেয়ে বিলিয়ন গুণ ছোট বৈশিষ্ট্যগুলোও পরখ করতে সক্ষম। তাই লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের মত মেশিনের সাহায্যে আমরা পদার্থের ক্ষুদ্রতম বিল্ডিং ব্লক – কোয়ার্ক এবং লেপটন (যাদের দ্বারা আমাদের ইন্দ্রিয়গোচর সমস্ত পদার্থ তৈরি) দেখতে পারি।

ওয়েকফিল্ড

পার্টিকল অ্যাক্সিলারেটর এবং এই উচ্চশক্তির কণার আরেকটা আকর্ষণীয় দিক হল, যখন কণাগুলো একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, আইনস্টাইনের বলা শক্তি ও ভরের সমতুল্যতার হিসাবে তখন পদার্থ বা matter সৃষ্টি হয়। এই প্রক্রিয়াগুলোই আসলে সেই শুরুর দিকের মহাবিশ্বে (early universe), অর্থাৎ বিগ ব্যাংয়ের ঠিক পরের এক সেকেন্ডের এক ভগ্নাংশেরও ছোট সময়ে ঘটে চলত। সেরকম অবস্থাই LHC-র মত কোলাইডারে ফের তৈরি করা হচ্ছে, যাতে পার্টিকল অ্যাক্সিলারেটর ব্যবহার করে প্রকৃতির মৌলিক ধর্মগুলো বোঝার চেষ্টা আরও সফল হয়। মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং পদার্থের ক্ষুদ্রতম বিল্ডিং ব্লকগুলোকে বোঝার মূল হাতিয়ার হিসাবে এদের জুড়ি মেলা ভার।

পদার্থবিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ ফ্রিম্যান ডাইসন একবার বলেছিলেন “নতুন নতুন ধারণার চেয়ে বরং অনেকসময়েই নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বিজ্ঞানের নতুন দিশার দ্বারোদ্ঘাটনে সহায়তা করে”। বিজ্ঞানের ইতিহাসও আমাদের তেমনই শেখায়। অর্থাৎ নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গেই আমরা প্রকৃতির নানা রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছি। কণাপদার্থবিদ্যার মূল হাতিয়ার এই অ্যাক্সিলারেটরগুলোই।

তাহলে এরা কাজ করে কীভাবে? কীভাবে কণাদের ত্বরান্বিত বা অ্যাক্সিলারেট করে থাকে? কণাগুলোকে ইলেকট্রিক ফিল্ডের মধ্যে স্থাপন করে ত্বরান্বিত করা হয়। খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে, আপনি একটা ১ ভোল্ট ব্যাটারির দুই প্রান্তে একটা ধাতব রিং যুক্ত করে নিজের পকেট অ্যাক্সিলারেটর বানিয়ে ফেলতে পারেন। এখন যদি বলয়টার কেন্দ্রে একটা প্রোটন বা ইলেকট্রন রাখেন (কল্পনা করুন), তবে তা শক্তি অর্জন করে ত্বরান্বিত হবে এবং কোনো এক প্রান্তের দিকে ধাবিত হবে (কণাটা ইলেকট্রন না প্রোটন তার ভিত্তিতে)।

ওয়েকফিল্ড

বলাই বাহুল্য, আজকের অ্যাক্সিলারেটরগুলো আর পকেট অ্যাক্সিলারেটর নয়। উদাহরণস্বরূপ LHC কণাগুলোকে ৭ টেরা ইলেকট্রন ভোল্টে (TeV) ত্বরান্বিত করে; অর্থাৎ এটা করার জন্য আপনার ৭,০০০ বিলিয়ন ব্যাটারির প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ এমন এক ব্যাটারির স্তূপ যা পৃথিবী থেকে প্রায় সূর্য পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। সৌভাগ্যবশত আজকের অ্যাক্সিলারেটরে তথাকথিত রেডিওফ্রিকোয়েন্সি ক্যাভিটি (RF cavity) ব্যবহার হয়। তাত্ত্বিকভাবে ত্বরণ বা অ্যাক্সিলারেশন এক্ষেত্রে মোটামুটি একই, তবে স্ট্যাটিক ইলেকট্রিক ফিল্ডের পরিবর্তে এখানে অল্টারনেটিং ইলেকট্রিক ফিল্ড ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই প্রযুক্তিও এখন প্রায় শেষ মাত্রায় পৌঁছে গেছে। তাহলে আমরা কীভাবে এই অ্যাক্সিলারেশন যাত্রা চালিয়ে নিয়ে যাব? কী করে আমাদের অ্যাক্সিলারেটরের ম্যাগনিফিকেশন আরও বাড়াতে পারব? কিভাবে আমরা কণাগুলোর শক্তি আরও বাড়াতে পারব?

ওয়েকফিল্ড
RF লিনিয়ার অ্যাক্সেলারেটর সাধারণত যে নীতিতে কাজ করে থাকে

মেশিনের ক্ষমতা এবং কণাগুলোর শক্তি বাড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হল অ্যাক্সিলারেটরের আকার বাড়ানো। LHC ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ দ্বারা নির্মিত। পরবর্তী প্রজন্মের অ্যাক্সিলারেটরগুলোর ডিজাইনের ধারণা ৫০-১০০ কিলোমিটারের দিকে এগোচ্ছে। এই মেশিনগুলো দীর্ঘ মেয়াদে কতটা সাশ্রয়কর হবে তা স্পষ্ট নয়। ফলে কণাগুলোকে ত্বরান্বিত করার এই প্রযুক্তিটারই মৌলিক সংশোধন প্রয়োজন। কণাগুলোকে ত্বরান্বিত করার জন্য আমাদের এক নতুন উপায় বা যন্ত্র দরকার, উদাহরণস্বরূপ যা হতেই পারে প্লাজমা ওয়েকফিল্ড অ্যাক্সিলারেশন।

প্লাজমা ওয়েকফিল্ড অ্যাক্সিলারেশন দিয়ে কণাকে কীভাবে ত্বরান্বিত করা যাবে? এটা জলের উপর সার্ফিং করার মত। ধরা যাক, কোনো হ্রদে বা সমুদ্রে একটা নৌকা ধাবমান এবং সার্ফাররা অদূরে যাত্রার জন্য অপেক্ষা করছে। নৌকাটা সার্ফারদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ঢেউয়ের সৃষ্টি করে আর সার্ফাররা এগোবার জন্য ঢেউয়ের উপর লাফিয়ে উঠে পড়তেই ত্বরান্বিত হয়। ব্যাস, কেল্লা ফতে! প্লাজমা ওয়েকফিল্ড অ্যাক্সিলারেশনে এই কাজটাই করা হয়ে থাকে।

ওয়েকফিল্ড

ওয়েকফিল্ড
প্লাজমা ওয়েকফিল্ড যেভাবে কাজ করে

বিজ্ঞানীদের রয়েছে একটা প্লাজমা ফিল্ড (অর্থাৎ সেই হ্রদ), রয়েছে একটা ড্রাইভ বিম বা যাত্রা করার জন্য কণারশ্মি (অর্থাৎ সেই নৌকা), যা ওয়েকফিল্ড (অর্থাৎ ঢেউ) তৈরি করে আর বিজ্ঞানীরা সেই তরঙ্গের উপর কণাদের (অর্থাৎ অপেক্ষমান সার্ফারদের) নিক্ষেপ করেন অ্যাক্সিলারেট করার জন্য। তাই বরাবরের মত ব্যাটারির ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক ফিল্ড দিয়ে কণাদের (অর্থাৎ সার্ফাদের) ত্বরান্বিত করার পরিবর্তে এখানে প্লাজমার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া অন্য একটা বিম বা রশ্মি ব্যবহৃত হয়। প্লাজমা ওয়েকফিল্ড সংক্রান্ত পরীক্ষাগুলো এখন অবধি বিশ্বব্যাপী অনেক জায়গায় অত্যন্ত সফলভাবে করা হয়েছে এবং সার্ফিংয়ের ওই নীতি দুর্দান্ত ফলাফল দিয়েছে। তবে সার্নে অ্যাওয়েক পরীক্ষার (AWAKE experiment) জন্য বিজ্ঞানীদের হাতে এক অনন্য ও শক্তিশালী নৌকা রয়েছে; ওয়েকফিল্ড পরিচালনার কাজে প্রথমবার প্রোটন রশ্মি (বিম) ব্যবহার শুরু হয়েছে। ভরের কারণে প্রোটন অনেক দীর্ঘতর তরঙ্গ তৈরি করতে সক্ষম যাতে ত্বরান্বিত হওয়া কণাগুলো অনেক বেশি দূরত্বে সার্ফিং করতে পারে। এই পরীক্ষায় একটা সার্ন অ্যাক্সিলারেটর থেকে প্রোটন বিম ব্যবহার করা হচ্ছে; সেগুলো প্লাজমার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় যে তরঙ্গ সৃষ্টি করে তার পিঠের ওপর একটা ইলেকট্রন বিম (সার্ফার) ইনজেক্ট করে দেওয়া হয়, যাতে তারা উচ্চশক্তিতে ত্বরান্বিত হতে পারে।

এবার মজার বিষয়ে আসা যাক। তরঙ্গ, অর্থাৎ এই সমস্ত প্লাজমা অ্যাক্সিলারেটরগুলোতে তৈরি হওয়া ইলেকট্রিক ফিল্ড প্রচলিত অ্যাক্সিলারেটরগুলোর ইলেকট্রিক ফিল্ডের চেয়ে ১০০০ গুণ পর্যন্ত বেশি শক্তিশালী। এর অর্থ হল, আমরা একই আকারের মেশিনে ১০০০ গুণ শক্তিশালী ত্বরণ পেতে পারি, যাতে ১০০ কিলোমিটার লম্বা অ্যাক্সিলারেটরে কমে ১০০-২০০ মিটারের ছোট অ্যাক্সিলারেটরে পরিণত হবে। নিঃসন্দেহে দীর্ঘ মেয়াদে তা সাশ্রয়করও হবে। তবে শেষমেশ একটা কম ব্যয়বহুল অ্যাক্সিলারেটরকে বাস্তবে রূপ দিতে এখনো অনেক পদক্ষেপ বাকি। তা বলে স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি নেই, যে আগামী দিনে প্লাজমা ওয়েকফিল্ড অ্যাক্সিলারেশন প্রযুক্তি শিল্প, চিকিৎসা এবং গবেষণাক্ষেত্রগুলোকে আরও বেশি উন্নত ও সুগম করে তুলবে। প্লাজমা ওয়েকফিল্ড অ্যাক্সিলারেটর একদিন বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে স্থানীয় হাসপাতাল বা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারের নাগালের মধ্যে পাওয়া সুলভ যন্ত্র হয়ে উঠতে পারে। কণাপদার্থবিদ্যায় নতুন নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে এই অ্যাক্সিলারেশন প্রযুক্তি।

আরো পড়ুন জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ বিস্ময়: বহু যুগের ও পার হতে

পরিশেষে বলি, একটা প্রচলিত অ্যাক্সিলারেটর থেকে নির্গত কণা রশ্মিকে ব্যবহার করে প্লাজমা অ্যাক্সিলারেটরের ওয়েকফিল্ড ক্ষেত্র পরিচালনার কল্পনাও বাস্তব রূপ পেতে পারে। সেক্ষেত্রে খুব কম দূরত্বের ব্যবধানে কণাগুলোর গতিশক্তি বৃদ্ধি করা যাবে এক বিশাল ফ্যাক্টর দিয়ে। তাই যদি এই সমস্ত প্রয়োগ বাস্তবায়িত হয়, যেসব জিনিস আজ আকাশকুসুম কল্পনা বলে মনে হয়, কণাপদার্থবিদ ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা তারও ঊর্ধ্বে গিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে পারবেন। সার্নের এই AWAKE-পরীক্ষার প্রকল্পটা একটা proof-of-concept পরীক্ষা। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিকে নাটকীয় উপায়ে কাজে লাগানোর জন্য অবশ্যই আরও পথ চলা এবং নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া বাকি। কিন্তু প্লাজমা ওয়েকফিল্ড অ্যাক্সিলারেশন নীতি সংক্রান্ত কমিশনিং, ইনস্টলেশন, প্রারম্ভিক পরীক্ষা ইতিমধ্যেই Run-1-এ সফল হয়েছে, তোড়জোড় চলছে উচ্চাকাঙ্ক্ষী Run-2-রও। আগামী কয়েক বছর AWAKE টিম এই স্বপ্নকে চলতি দশক শেষ হওয়ার আগেই বাস্তবে পরিণত করার চেষ্টা করবে।

তথ্যসূত্র

(১) https://home.cern/tags/awake
(২) https://home.cern/news/news/experiments/particle-acceleration-using-plasma-wakefields
(৩) https://www.symmetrymagazine.org/article/march-2015/the-lhc-does-a-dry-run
(৪) https://cms.cern/news/getting-excited-about-quarks
(৫) https://www.researchgate.net/publication/51957233_Cavity_types/figures?lo=1
(৬) https://home.cern/science/accelerators/awake

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

1 মন্তব্য

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.