রাকেশ শর্মা কেবল ভারতের একমাত্র মহাকাশচারীর নাম নয়। একই নামে একজন তথ্যচিত্র নির্মাতাও আছেন। তাঁর নির্মিত সবচেয়ে আলোচিত ও পুরস্কৃত তথ্যচিত্রের নাম ফাইনাল সলিউশন (২০০৪)। এই মুহূর্তে ইউটিউব অথবা ভাইমিও ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখে নেওয়া সম্ভব, তবে দুটো জায়গাতেই মোটামুটি আড়াই ঘন্টার ছবি রয়েছে। কিন্তু ২০০৪ লোকসভা নির্বাচনের কিছুদিন আগে রাকেশ শর্মার এক বাঙালি সহকারীর সৌজন্যে যাদবপুর এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই তথ্যচিত্রের দুটো প্রদর্শনী হয়েছিল। তাতে ঘন্টা চারেকের ছবি দেখেছিলাম আমরা অনেকে। দেখেছিলাম বলেই গত রবিবার রাজস্থানের বনসোয়াড়ায় নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা শুনে একটুও অবাক হইনি। ‘মুসলমানদের বেশি বাচ্চা হয়’ বলা বা মুসলমানদের অনুপ্রবেশকারী বলা মোদীর পক্ষে অস্বাভাবিক তো নয়ই, নতুনও নয়। নতুন হল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নির্বাচনী প্রচারে বলা। ২০০২ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে মোদী এই ভাষাতেই কথা বলতেন বিজেপির সমাবেশে। বস্তুত আরও প্ররোচনামূলক, বর্বর ভাষায় কথা বলতেন। জানি না আড়াই ঘন্টার সম্পাদিত তথ্যচিত্রে তার কতটুকু দেখা যায়, তবে মনে হয় না রাকেশ খুব বেশি কাটছাঁট করেছিলেন। কারণ ছবিটাকে অটলবিহারী বাজপেয়ীর এনডিএ সরকারের আমলে অনুপম খেরের নেতৃত্বাধীন সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন (চালু লব্জে সেন্সর বোর্ড) প্রথমে ভারতে প্রদর্শনের অনুমতি দিতে চায়নি। কীভাবে রাকেশ সে ছবি সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তা নিজেই এক রোমাঞ্চকর কাহিনি। পরে মনমোহন সিংয়ের ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় এলে সেন্সরের ছাড়পত্র পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে যখন মোদীর নতুন ভাবমূর্তি তৈরি করা হচ্ছিল, আজকের অনেক মোদীবিরোধীও লিখতে/বলতে শুরু করেছিলেন – এদেশে চণ্ডাশোক ধর্মাশোক হয়েছিলেন, মোদীও বদলে গেছেন; তখন রাকেশ তাঁর ছবি থেকে কেটে রাখা বেশকিছু ক্লিপ আলাদা করে প্রকাশ করেছিলেন। আগ্রহীরা সেগুলোও খুঁজে দেখতে পারেন।

এই ইতিহাস স্মরণ করানো এই কারণে, যে মোদীর বনসোয়াড়ার কুরুচিকর বক্তৃতা নিয়ে মোদীবিরোধীদের মধ্যে একটা প্রতিক্রিয়া খুব বেশি মাত্রায় দেখা যাচ্ছে। তা হল, প্রথম দফার নির্বাচনের পর মোদী বুঝেছেন যে হাওয়া ভাল নয়। ভোট আসছে না। চারশো পার দূরের কথা, দুশো পার হবে কিনা সন্দেহ। তাই ‘মোদী কি গ্যারান্টি’, ‘বিকাশ’ ইত্যাদি ছেড়ে দিয়ে চূড়ান্ত ধর্মীয় মেরুকরণের খেলা খেলেই ভোট কুড়োতে হবে। তাতে রক্তগঙ্গা বয়ে গেলেও কিছু যায় আসে না। এই ব্যাখ্যা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কারণ হঠাৎ দেখা যাচ্ছে সুধীর চৌধুরীর মত গোদি মিডিয়ার তারকা মোদীর বনসোয়াড়ার বক্তৃতায় মনমোহনের বক্তব্যকে যে বিকৃত করা হয়েছে তা ঘোষণা করে অনুষ্ঠান করছেন।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

আরেক গোদি তারকা রাহুল কাঁওয়াল অমিত শাহকে ‘ওয়াশিং মেশিন’ নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস দেখিয়ে ফেলছেন।

আনন্দবাজার পত্রিকার ঈশানী দত্ত রায় আর দেবাশিস চৌধুরী তো অমিতকে সিএএ থেকে মণিপুর পর্যন্ত নানা বিষয়ে চোখা চোখা প্রশ্ন করে একেবারে ল্যাজেগোবরে করে দিয়েছেন। ২০১৪ সাল থেকে দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যম যেভাবে চলছে তার বিচারে এসব সাহস নয়, রীতিমত দুঃসাহস। শুধু তাই নয়। কদিন আগেও যেসব সেফোলজিস্ট (বাংলা কি ভোটজ্যোতিষী?) বিজেপি একাই ৩৫০-৩৮০ পেয়ে যাবে বলছিলেন জোর গলায়, তাঁরাও কেমন কিন্তু কিন্তু করছেন। অ্যাক্সিস-মাই ইন্ডিয়া সংস্থার কর্ণধার প্রদীপ গুপ্ত একটা ওয়েবসাইটকে বলেছেন ১৩টা গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে (মহারাষ্ট্র, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, গুজরাট, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিসগড়, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, গোয়া) এবং কিছু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এনডিএ-র পক্ষে ২০১৯ সালের সমান আসন ধরে রাখা শক্ত। সেই খবরের লিঙ্ক অ্যাক্সিস-মাই ইন্ডিয়ার এক্স হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট করা হয়, প্রদীপ নিজে তা রিপোস্টও করেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সেই পোস্ট ডিলিট করে দেওয়া হয়। তারপর প্রদীপের সংস্থার করা সমীক্ষা বলে কিছু কম্পিউটার প্রিন্ট আউটের ছবি ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যাচ্ছে এনডিএ আর ইন্ডিয়া প্রায় সমান ভোট পাবে এবং আসন সংখ্যাতেও খুব বেশি হেরফের হবে না। তা নিয়ে অ্যাক্সিস-মাই ইন্ডিয়া এফআইআর দায়ের করেছে। সংস্থার দাবি ওগুলো ভুয়ো, আদৌ তেমন কোনো সমীক্ষা করা হয়নি। তারা প্রাক-নির্বাচনী মতামত সমীক্ষা করেই না, শুধু বুথফেরত সমীক্ষা করে। কিন্তু তাহলে প্রদীপ কিসের ভিত্তিতে বললেন, ১৩ রাজ্যে কী হবে? সে প্রশ্ন রয়েই গেল। ওদিকে সিভোটার সংস্থার কর্ণধার যশবন্ত দেশমুখ বলেছেন পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ুর মত রাজ্যে প্রথম দফায় এমন হয়ে থাকতেই পারে যে বিজেপির ভোটাররা অনেকে ভোট দিতে আসেননি। ভেবেছেন বিজেপির ওসব জায়গায় জেতার সম্ভাবনা নেই, তাই ভোট দিতে গিয়ে লাভ নেই।

এঁদের চেয়েও মানুষ কোন দিকে ঝুঁকছে তা ঢের ভাল বোঝে আরএসএস-বিজেপির সংগঠন। তাদের নয়নের মণি মোদী নিজেই ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার ভোটদানের পরে এক সমাবেশে ভোটারদের বলেছিলেন ভোট না দেওয়া ভাল নয়, ভোট দেওয়া নাগরিক কর্তব্য ইত্যাদি। অর্থাৎ তিনিও কম ভোট পড়া নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। সুতরাং এমন হতেই পারে যে তারই প্রভাবে ২০০২ সালের মোদীকে ভিতর থেকে বার করে এনেছেন। রবিবারের পরে সোমবারই যেভাবে উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে ভোল বদলে ফেলে সৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে কথা বলে ভারতীয় মুসলমানদের হজ করতে যাওয়ার কোটা কত বাড়িয়েছেন সেকথা ফলাও করে বলেছেন, তাতে আরও বেশি সন্দেহ হয় – মোদী বুঝতে পারছেন না এই নির্বাচনে জিততে গেলে কোনটা করলে বেশি ভাল হবে। মুসলমানদের যথাসম্ভব গালাগালি দিয়ে ২০০২ সালের মূর্তি ধরা, নাকি আপাতত হিন্দুত্বকে ঝুড়ি চাপা দিয়ে মুসলমানদের ভোটও যাতে পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করা।

সবই সত্যি। কিন্তু এসব দেখে উল্লসিত হওয়া বোকামি হবে। কেবল এ জন্যে নয় যে এগুলো অনুমান মাত্র। এ জন্যেও যে রবিবারের মোদীই আসল মোদী এবং মোদীর জনপ্রিয়তা মূলত ওই মোদীরই জনপ্রিয়তা। গণতন্ত্রে মানুষের উপর বিশ্বাস রাখা ছাড়া যেমন কোনো উপায় নেই, তেমন বিনা প্রমাণে মানুষকে স্বর্গীয় জীব বলে ভেবে নেওয়ারও কোনো কারণ নেই। আপনার চারপাশের মানুষের মধ্যে গত এক যুগ বা তারও বেশি সময় ধরে যে সংখ্যালঘুবিদ্বেষ দেখেছেন তা হঠাৎ কমে গেছে – এমন কোনো লক্ষণ দেখছেন কি? যদি না দেখেন, তাহলে মোদীর মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার তাঁকে ভোটারদের কাছে আরও অপ্রিয় করবে এমন ভেবে নেওয়া অর্থহীন। মোদীর সাফল্যের রহস্যই হল, সংখ্যাগুরু মানুষ আগে যা নিজস্ব আড্ডায় চুপিচুপি বলাবলি করত তিনি তা প্রকাশ্যে বলা ফ্যাশনে পরিণত করেছেন। প্রথমে করেছিলেন গুজরাটে, ২০১৪ সালের পর ক্রমশ সারা ভারতে। একমাত্র কেরালা আর তামিলনাড়ুই এই সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন অনেকখানি প্রতিহত করতে পেরেছে। তাই সেখানে আজও বিজেপি রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক শক্তি। তামিলনাড়ুতে বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে বলতে হয় তিনি রাজদীপ সরদেশাইয়ের সঙ্গে মুরগি খাবেন, আমিষ-নিরামিষ নিয়ে তাঁর বাছবিচার নেই। কেরালায় আবার এক বিজেপি প্রার্থী ২০১৭ সালে উপনির্বাচনের প্রচারে বলেছিলেন, জিতলে ভাল মানের গোমাংসের সরবরাহ নিশ্চিত করবেন। আগামী ৪ জুনও ওই রাজ্যগুলোর ছবি বদলানোর সম্ভাবনা কম। কিন্তু ভারতের আর কোনো অংশই সংঘের ঘৃণার রাজনীতির আওতার বাইরে নেই।

মুসলমানদের চারটে বউ আর চল্লিশটা বাচ্চা – একথা আমার, আপনার মামা কাকা পিসে জ্যাঠা মাসি পিসিরাই প্রবলভাবে বিশ্বাস করে আজকাল। অথচ জিজ্ঞেস করলে দেখা যায় এমন কোনো মুসলমানকে তাঁরা চেনেন না যার একাধিক স্ত্রী। অনেকে জীবনে কখনো কোনো মুসলমান মহিলা বা পুরুষের সঙ্গে আলাপই করেননি। অথচ মোদী এ বিশ্বাস তাঁদের মধ্যে গেঁথে দিতে পেরেছেন যে তেমন মুসলমান দেশের কোথাও না কোথাও আছে। বামপন্থী দলের কর্মী, সমর্থকদেরও কত সহজে সোশাল মিডিয়ায় ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে জোট ভেঙে গেলে বলতে দেখা যায় – মুসলমানদের কখনো বিশ্বাস করা উচিত নয়। মুসলমানরাই ভোটের দিন মারামারি করে, বিভিন্ন দলের হয়ে তারাই বোমা ছোড়ে – এসব বিজেপিবিরোধী ভোটাররাও ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েই বলেন। নিজে কানেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে শুনেছি একজন বলছেন, আমাদের এলাকায় মুসলমান নেই বলেই ভোটে অশান্তি হয় না, অনেকে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ছেন। গত পুজোতেই তো মুসলমান মানেই সন্ত্রাসবাদী – এমন বক্তব্যের একখানা বাংলা ছবি দিব্যি হিট হয়ে গেল।

এইসব প্রবণতাই ইংরেজ আমলের সমান বেকারত্ব আর আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির যুগেও মোদীর রক্ষাকবচ। তিনি ভাল করেই জানেন, যখন আর কিছু কাজ করবে না তখনো মুসলমানদের সম্পর্কে ভয় দেখানো কাজে লাগবে। হিন্দু মহিলাদের গলার মঙ্গলসূত্রটা পর্যন্ত কংগ্রেস ছিনিয়ে নিয়ে তাদের দিয়ে দেবে যাদের বাচ্চা বেশি হয় – হয়ত আপনি আশা করছেন এ তত্ত্ব হিন্দি বলয়ে আর কাজে লাগবে না। হয়ত আপনি ঠিকই ভাবছেন। কারণ যে ন্যাড়া আগে বেলতলায় গেছে সে যাওয়া থামাবে অন্যদের আগে – এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হয়ত দেখলেন আপনার উচ্চশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার মামাই বিশ্বাস করে ফেলেছেন কথাটা। কারণ তিনি সারাদিনে পড়ার মধ্যে পড়েন হোয়াটস্যাপ আর তাতে দশ বছর ধরে পড়ে চলেছেন যে গোপাল পাঁঠা ছিলেন বলে তিনি আছেন, প্রেরক আছেন, হাওড়া ব্রিজ আছে।

এঁরা আদিবাসী নন, দলিত নন, সংখ্যালঘু নন। এঁরা আশৈশব কল্যাণকামী ভারত রাষ্ট্রের সমস্ত সুযোগসুবিধা পেয়ে সরকারি স্কুল কলেজে পড়াশোনা করে মোটা মাইনের চাকরি বাগিয়েছেন। ভারতের গলতিওলা গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সুবাদে যা ইচ্ছে খেয়েছেন, যা ইচ্ছে পরেছেন, যেখানে ইচ্ছে বেড়িয়েছেন। তারপর মনমোহনী আমল থেকে ছেলেমেয়েদের শিখিয়েছেন – ‘বেসরকারি হলে পরিষেবা ভাল হবে’, ‘গান্ধী, নেহরু মহা বদমাইশ’, ‘মুসলমানদের বিশ্বাস করতে নেই’, ‘ভাল ছেলেমেয়েরা সাইন্স পড়ে, সাইন্সে চান্স না পেলে আর্টস পড়তে হয়’, ‘ইতিহাস ফালতু সাবজেক্ট’ ইত্যাদি। এখন এঁরা ধেড়ে বয়সে এবং এঁদের সন্তানরা কচি বয়সে হোয়াটস্যাপ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্রছাত্রী। এখন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়া বিজ্ঞান ভুলে, স্কুলে মুখস্থ করে খাতায় উগরে দিয়ে ভুলে যাওয়া ইতিহাস আর নাক সিঁটকে এড়িয়ে যাওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান টপাটপ শিখে ফেলছেন হোয়াটস্যাপ, ফেসবুক থেকে। সেখান থেকেই শিখেছেন – হিন্দু ঘরে জন্মে এতদিন তাঁরা অত্যাচারিত, নিপীড়িত ছিলেন। মোদীর আমলে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারছেন। ভারতের অন্য সব রাজনৈতিক দলই মুসলমানদের তোষণ করে গেছে চিরকাল। অতএব বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির তৈরি করা বহুযুগের অন্যায়ের প্রতিশোধ। রামনবমীতে অস্ত্র মিছিল করা অন্যায় নয়। ক্রুদ্ধ রাম আর ক্রুদ্ধ হনুমান বাঙালির দেবতা।

এই বাঙালিরা এখনো রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ কপচান। নিজেদের ভারতের অন্য সব জাতির লোকেদের চেয়ে শিক্ষিত মনে করেন, কিন্তু হতে চান মাড়োয়ারিদের মত ধনী। হোয়াটস্যাপ বিশ্ববিদ্যালয় এঁদের শিখিয়েছে যে সেটা হওয়ার পথে একমাত্র বাধা বাংলাদেশ থেকে আসা কাতারে কাতারে মুসলমান, যাদের মোদী বনসোয়াড়ায় বলেছেন ‘ঘুসপেটিয়া’। আপনি যতই এই বাঙালিদের দ্য হিন্দু কাগজের এই প্রতিবেদনের মত তথ্য দিয়ে বোঝান যে মুসলমানদের গাদা গাদা বাচ্চা হয় আর হিন্দুরা সব একটি-দুটিতে থেমে থাকে এমনটা ঘটনা নয়, বা কাতারে কাতারে মুসলমান বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়েছে এমনটাও নয়, এঁরা চোখ বন্ধ করে থাকবেন।

নিজেদের সুরক্ষিত অতীত আর আরামদায়ক বর্তমানে হেলান দিয়ে এঁরা ইদানীং হিন্দুরাষ্ট্রের স্বপ্ন সফল করতে ভোট দেন, যাতে আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ঝরঝরে হয়। ইরান, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মত ধর্মকেন্দ্রিক রাষ্ট্র যে খুব খারাপ তা এঁরা হোয়াটস্যাপ থেকে বিলক্ষণ শিখেছেন। কিন্তু হিন্দুরাষ্ট্র নিয়ে গদগদ হওয়ার বেলায় সেসব মনে থাকে না। এঁদের মধ্যে যাঁদের বয়স কম, হিন্দুরাষ্ট্র নিঃসন্দেহে তাঁদের জন্যেও বেদনাদায়ক হবে। কিন্তু কালিদাসের উত্তরাধিকারী তো এদেশে কম নেই। এই বাঙালিদের মোদী বিলক্ষণ চেনেন আর এও জানেন যে এরকম মানুষ কেবল বাংলায় নয়, সারা ভারতে রয়েছে। তাঁর বনসোয়াড়ার ভাষণের লক্ষ্য তারাই।

অর্থাৎ এবারের ভোট কেবল আপনার সাংসদ বেছে নেওয়ার বা কোন দল সরকার চালাবে তা বেছে নেওয়ার ভোট নয়। ভবিষ্যৎ বেছে নেওয়ারও। উন্নয়ন ইত্যাদি ঢক্কানিনাদে এখন আর মোদীও সময় ব্যয় করছেন না। ‘মোদী কি গ্যারান্টি’ কথাটাও আর বলছেন না। এখন স্রেফ মুসলমানকে হিন্দুর শত্রু হিসাবে খাড়া করে, নিজের দলকে হিন্দুদের দল আর বিরোধী দলগুলোকে মুসলমানদের দল প্রতিপন্ন করেই ভোট চাইছেন। এবার আপনাকে বেছে নিতে হবে, আপনি সোশাল মিডিয়া থেকে গেলা বিষ পান করে আরও বিষ পান করার জন্যে ভোট দেবেন, না নিজের এবং সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য ভোট দেবেন। এবার মোদীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে অনেক বিষাক্ত আপনজনের বিরুদ্ধে যেতে হবে। অথচ আপনজনদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে তাছাড়া উপায় নেই। কবি তো ভরসা দিয়েছেন ‘তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে/তা ব’লে ভাবনা করা চলবে না’।

মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

1 মন্তব্য

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.