পাঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনে আপ বিপুল জয় পাওয়ার পর কেউ বিশ্বাস করতে চাইবেন না, কিন্তু কংগ্রেস কয়েক মাস আগেও সত্যিই খুব ভাল জায়গায় ছিল। ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং আর নভজ্যোৎ সিং সিধুর মধ্যে লড়াই শুরু হতেই অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চরণজিৎ সিং চান্নিকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল দলিত ভোটের কথা ভেবে, কারণ পাঞ্জাবে দলিত ভোট প্রায়শই নির্ধারক ভূমিকা নেয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তেও লাভ হয়নি। সিধু আর অমরিন্দরের লড়াইয়ে কংগ্রেস দলের ভূমিকা দেখে দলিত ভোটাররা বিশ্বাস করেননি যে চান্নিকে নির্বাচনের পরেও মুখ্যমন্ত্রী রাখা হবে। তাঁদের মনে হয়েছে নির্বাচনের পর আবার গোলমাল শুরু হতে পারে, তখন চান্নিকে সরিয়ে অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে। অন্তর্দ্বন্দ্বে দীর্ণ একটা দলকে ভোট দেওয়ার চেয়ে ঝামেলা নেই এমন দলকে তাঁরা ভোট দিতে চেয়েছেন। অকালি দলের উপরেও পাঞ্জাবের ভোটাররা রুষ্ট, ফলে তারা লড়াইয়ে ছিল না। এসবের ফল পেয়েছে আম আদমি পার্টি।
তবে আসল কথা হল, এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা কৃষক আন্দোলনের নির্বাচনী ফসল উঠেছে আপের ঘরে। কারণ ওই আন্দোলনের সময়ে টিকরি বর্ডারে এবং পাঞ্জাবের বিভিন্ন জায়গায় যিনি ডায়াসে বলতে উঠেছেন, তিনিই বলেছেন “কংগ্রেস, অকালি, বিজেপি — কাউকেই কোনো জায়গা দেওয়া উচিত নয়। এরা সকলেই কৃষি আইনগুলোর জন্য দায়ী। অকালি কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক ছিল, আর কংগ্রেসও তেমন বাধা দেয়নি।” জনতার এই মেজাজটা বুঝে আপ নতুন দল হিসাবে তাদের কাছে একটা সুযোগ চেয়েছিল। সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কৃষক আন্দোলনে একটা সময় পর্যন্ত কিন্তু অমরিন্দরের নেতৃত্বাধীন পাঞ্জাব সরকার সহযোগিতা করেছে। আন্দোলনটাকে বড় করতে পাঞ্জাব কংগ্রেসের ভূমিকাও ছিল। কিন্তু ভোটাররা তার জন্যে নির্বাচনে কংগ্রেসকে কোনো সুবিধা দিলেন না। আসলে নিজেদের মধ্যে আকচা আকচি মানুষ একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি। তাঁদের মনে হয়েছে কংগ্রেসের শাসন চালানোয় আগ্রহের অভাব আছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই ব্যস্ত।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
তাছাড়া আপের ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, ১৮ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের মাসে ১০০০ টাকা ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি — এসব তো কাজে লেগেছে বটেই। তাছাড়া সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার যা অবস্থা, তাতে ১৬,০০০ মহল্লা ক্লিনিকের প্রতিশ্রুতিও মানুষকে আকর্ষণ করেছে।
দিল্লির মত এই প্রতিশ্রুতিগুলো ছাড়াও পাঞ্জাবের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু কথা আপ বলেছে। যেমন রাজ্য থেকে যে বিপুল সংখ্যক যুবক বাইরে চলে যায়, তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। পাঞ্জাবের মত একটা রাজ্যে এই কথাটা মানুষের উপর বড়সড় প্রভাব ফেলেছে। ড্রাগ মাফিয়া আর খনি মাফিয়া পাঞ্জাবের বড় শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছে আপ। ফরিদকোট, অমৃতসর, পাঠানকোটের মত জায়গাগুলোতে হিন্দুদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। ওইসব এলাকাতে আবার নির্বাচনের এক-দেড় মাস আগে আপ ‘তিরঙ্গা যাত্রা’ বার করেছিল। অন্যান্য এলাকায় কিন্তু ওই যাত্রার আয়োজন হয়নি। কেবল হিন্দু এলাকাতেই কেন জাতীয়তাবাদের কথা তোলা হল তা বোঝা মুশকিল।
এখন এই বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আপ কী করে সেটাই দেখার। দিল্লির সরকার চালানো আর পাঞ্জাবের সরকার চালানো কিন্তু এক কথা নয়। প্রথম যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তাদের পড়তে হবে তা হল কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক। যেসব রাজ্যে বিজেপি হেরেছে সেখানকার সরকারগুলোকে কেন্দ্রীয় সরকার যেনতেনপ্রকারেণ ফাঁপরে ফেলার চেষ্টা করে। পাঞ্জাবের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হবে না ধরে নেওয়া যায়। এমনিতেই বিজেপি মহল থেকে পাঞ্জাবিদের খালিস্তানি বলা শুরু হয়েছে সেই কৃষক আন্দোলনের সময় থেকে। এখন আক্রোশ আরও বেড়ে যাওয়া আশ্চর্য নয়। এ মাসের গোড়ার দিকে ভাকরা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ডে নিয়োগের নিয়ম একতরফাভাবে বদলে ফেলে আগেই নরেন্দ্র মোদীর সরকার পাঞ্জাবের প্রতিনিধির গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা করেছে। বিরোধী শাসিত পাঞ্জাবের জন্য আর কী কী পরিকল্পনা তাদের আছে কে জানে?
সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অধীন এলাকা বাড়ানো নিয়েও আপ এতদিন কিছু বলেনি, কারণ তারা সরকারে ছিল না। এবার ওই বিষয়ে তারা কী অবস্থান নেয় তা-ও দেখার।
নভজ্যোৎ সিং সিধু, প্রকাশ সিং বাদলের মত মহীরুহদের পরাজিত করে বহু অখ্যাত, অজ্ঞাত প্রার্থীকে পাঞ্জাবের ভোটাররা এবার জিতিয়ে দিয়েছেন। কারণ তাঁরা কংগ্রেস, বিজেপি, অকালি দল — তিন পক্ষকেই শাস্তি দিতে চেয়েছেন। ন বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকা অমরিন্দরের দলের অবস্থাও শোচনীয়। তাঁর দলের পাঁচজন প্রার্থী পাঁচশোরও কম ভোট পেয়েছেন, এগারোজন এক হাজারের কম ভোট পেয়েছেন। এ থেকে বোঝা যায়, মানুষ কতটা রেগে ছিলেন এতদিনের নেতাদের উপর। সুতরাং আপের কাছে তাঁদের প্রত্যাশা বিপুল। এই প্রত্যাশার চাপ কেজরিওয়াল এবং পাঞ্জাবের নতুন মুখ্যমন্ত্রী ভগওয়ান্ত মানকে সামলাতে হবে প্রতি মুহূর্তে।
মতামত ব্যক্তিগত
আরো পড়ুন
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী বদলে কৃষক আন্দোলনের ভূমিকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।