হান্নান মোল্লা

প্রজাতন্ত্র দিবস তো কেবল রাষ্ট্রের বিষয় নয়, সাধারণ মানুষেরও তাতে সমান অধিকার। প্রজাতন্ত্র আসলে জনগণের। রাষ্ট্র যেমন প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করে, প্যারেড করে, শক্তি প্রদর্শন করে, তেমন সাধারণ মানুষও তার মতো করে এই দিনটি পালন করে। সে-ও নিজের বাড়িতে বা এলাকায় পতাকা উত্তোলন করে, নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেয়, রাষ্ট্রীয় প্যারেড টেলিভিশনের পর্দায় দেখে। ফলে রাষ্ট্রের মতো আমরাও এই দিনটির সমান হকদার।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

এই বছরের প্রজাতন্ত্র দিবস একটু অন্য রকম। আমরা একটা জীবন-মরণ যুদ্ধের মাঝে আছি। ফলে প্রজাতন্ত্র দিবসকেও আমরা সেই যুদ্ধের অংশ হিসাবেই দেখছি। রাষ্ট্র যেমন ২৬ জানুয়ারি প্যারেড করবে, তেমন আমরাও প্যারেড করব। হয়তো রাষ্ট্রীয় উদযাপনের মতো জাঁকজমক থাকবে না, কিন্তু আমরা সাধ্য মত সাজিয়ে তুলব আমাদের ট্র্যাক্টরগুলোকে৷ জাতীয় পতাকা দিয়ে, আমাদের দাবি দাওয়া সম্বলিত ব্যানার দিয়ে সাজিয়ে তুলব। কৃষকরা তাঁদের মত করে, নিজেদের মরণপণ সংগ্রামের অংশ হিসাবে পালন করবেন এই বছরের ২৬ জানুয়ারি।

একটা কথা মনে রাখা দরকার, কৃষকরা কিন্তু অন্নদাতা। খাবার জোগান তাঁরা। অন্য কোন উৎপাদকের সঙ্গে তাঁদের তুলনা চলে না। ৫০ হাজার টাকা দামের ইটালিয়ান জুতো না পরলেও আপনার চলে যাবে, খাবার না পেলে কিন্তু চলবে না। অথচ আমি আশ্চর্য হয়ে দেখি, এই কৃষকদের প্রতি কি চরম ঔদাসীন্য! দেশবাসী কত বড় অকৃতজ্ঞ! চার লক্ষ কৃষক আত্মহত্যা করল, অথচ কোথাও কোনও হেলদোল নেই! লোকে জানল না পর্যন্ত! আমরা ৪০০-৫০০ পরিবারকে নিয়ে এসে সংসদের সামনে ধর্নায় বসলাম, পি সাইনাথ লিখলেন, তার আগে অবধি কেউ কিছু জানতই না তেমন! এই তো আমাদের দেশ! আর মধ্যবিত্তের কথা কী বলব! তাঁদের এত গর্ব, তাঁরা নাকি খুব সচেতন, সব প্রগতিশীলতার পক্ষে তাঁরা দাঁড়ান, কই কৃষকদের নিয়ে তো এতদিন কিচ্ছুটি করতে দেখিনি! কেন? কৃষকরা কি মানুষ নন?

চলমান কৃষক আন্দোলনে ইস্যু নির্ভর জোট হয়েছে, মতাদর্শ নির্ভর জোট নয়। এখানে বড় কৃষকরা যেমন আছেন, তেমনই ছোট কৃষক, মাঝারি কৃষকরাও আছেন। বড় সংখ্যায় আছেন। আমরা, লাল ঝান্ডার লোকজন, তাঁদের পক্ষে আছি। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে ইতিমধ্যেই কৃষকদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়ে গিয়েছে। মান্ডি উঠে গেলে ওঁরা শেষ হয়ে যাবেন। তাই তাঁরা সামনের সারিতে আছেন। অন্য রাজ্যের কৃষকরাও ফসলের দাম পাচ্ছেন না। আত্মহত্যা করছেন। তাঁরাও আন্দোলনে আসছেন।

আরো একটা কথা বলতে চাই। এই আন্দোলন কিন্তু কেবল কৃষকের নয়। ভারতের ৮০-৮৫ কোটি মানুষ রেশনের উপর নির্ভরশীল। তাঁদেরও অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। সেই সঙ্গে সার্বিকভাবে গরীব, নিম্নবিত্ত মানুষও পথে বসবেন। ফলে এই লড়াই সবার লড়াই, সব মানুষের বাঁচার লড়াই।

প্রজাতন্ত্র দিবস প্রসঙ্গে বলি, আমরা, কমিউনিস্টরাই দেশের স্বাধীনতা ও প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষার্থে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা মুখে দেশপ্রেমের কথা বলে দেশ বিক্রি করি না। ওই কাজটা পুঁজিপতিরা করে, বড়লোকরা করে, বুদ্ধিজীবীরাও করে। আমাদের দেশপ্রেমের মানে হল দেশের সম্পদকে রক্ষা করা, দেশের মানুষের পাশে থাকা। আমরা আমৃত্যু সেই কাজটাই করে যাব।

অনুলিখন – অর্ক ভাদুড়ি

চিত্র সৌজন্য : ফেসবুক এবং Wikimedia

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.