বিদ্যেসাগরমশায় দুশো বৎসর পার কল্লেন। আর বচর যকন দুশো নম্বর জন্মদিন গ্যালো তকন বেজায় ঢাকঢোল পিটে পালন হয়েচিল। কে তেনাকে কত ছেরাদ্দি করেন তা নে কেবল বাবু-বিবি নয়, সরকার বাহাদুরদের মদ্যেও কম্পিটিশন হয়েচিল। বলতে কি, কম্পিটিশন একশত নিরানব্বুই হতেই আরম্ভ হয়েচে। তার এম্নি জমক যে বিদ্যেসাগরমশায়ের কালেজের সুমুখ দিয়ে গাঁটকাটাবাবুর ব্রিজকা যাবার সময় তার ভাইব্রেশনে কালেজের ভিতরে বিদ্যেসাগর মশায়ের স্ট্যাচুটি খানখান হয়ে পল্ল। ওই দেকুন, হুতোমের কতায় হাসচেন। য্যানো হুতোমের সকলি রসিকতা। বলি বড় সরকার, ছোট সরকার মিলে যকন কে ভেঙেচে তার কিনারা কত্তে পাল্লে না, তকন ভাইব্রেশন ভিন্ন কারণ ভাবা চলে কি?
তবে কারো ক্ষেতি হয়নি। বিদ্যেসাগরমশায়ের নূতন স্ট্যাচু বসেচে। এ সওয়ায় কলকেতার পথে ঘাটে তেনার কতগুলি স্ট্যাচু যে বসেচে, ক্যালকুলেটর ভিন্ন গণনা করা সম্ভবে না। কোনোটিতে বিদ্যেসাগর দিব্য লম্বা চওড়া হয়ে পড়েচেন। দেকে বেজায় আহ্লাদ হল। বিদ্যেসাগরমশায়ের ছেলেদের স্কুলের রচনা লেকার বই ভিন্ন বাবুদের ঘরে জায়গা হয় না। বর্ণপরিচয় পড়া আউট অব ফ্যাশন হয়ে গিয়েচে, আর পঞ্চাশ বচরে তেনার নামটি জিওগ্রাফির কেতাবে বিলুপ্ত সাগরের লিস্টিতে দেয়া হবে। বাবুরো সন্তানাদি নে উইকেন্ড আউটিংয়ে বের হলে তেনার স্ট্যাচুগুলি দেকে ছেলেপুলে শুধোবে ‘হু ইজ দিস গ্রাম্পি বুড়ো?’ পাপা ও মাম্মি গুগুল না করেই জবাব দেবেন ‘মাস্ট বি সাম পুওর রেলেশন অব বেঙ্গল’স গ্রেট লিডার।’ ক্যালেন্ডারে এ দুশো বৎসর এ মা, সে মা, এ স্বামী সে স্বামীদের জমিন্দারি ছিল। এদানি পশ্চিম হতে ব্র্যান্ড নিউ দেবতা আমদানি হচ্চেন। সকলি ঘরে জায়গা পাচ্চেন, বিলক্ষণ দু পয়সা রোজগেরে বাবুরো মাড়বারী ব্যবসায়ীদের দেকে ঘরের দেবতাদের মার্বেলের সিংহাসন অবধি তোয়ের করে দিচ্চেন। বিদ্যেসাগরমশায় কেবল পথে ঘাটে স্ট্যাচু হয়ে আচেন, কাকে পায়রায় তেনার মাতায় বাহ্যি কচ্ছে।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
সেকালে হুতোমের বিদ্যেসাগরের স্যাঙাত বলে বিস্তর নাম হয়েছিল। তা এম্নি পাপাচার দেকে নরকে তেনাকে বলতে গেলেম। তিনি মোটে আমল দিলেন না। বল্লেন যে দেশে দু বচর স্কুল, কালেজ বন্দ রেকে বাজারে সিনেমা হলে ভোটে মোচ্ছব হয়, সেকানে তেনার অমন বেওস্তা হবে না এ বা কি কতা?
এদিকে কারা সব স্টুডেন্টের রাহাজানি করা থিসিসওলা বাবুটির বদলি তেনার জন্মদিনটিকে শিক্ষক দিবস কত্তে চাইছে। আবার দুচার মডার্ন বাবু বিবি নূতন করে বিদ্যেসাগরের শ্রাদ্ধ কত্তে নেমেচেন। তেনাদের চোকে বিদ্যেসাগর রাধাকান্ত দেবাদির অধিক কনজারভেটিভ হয়ে পড়েচেন। শোনা যাচ্চে বিদ্যেসাগর সেকুলার ছিলেন না, জাতপাতের বড়ো খেয়াল রাখতেন। অ্যাক বাবু বলেচেন ‘বিধবাদের বে দিয়ে কী অ্যামোন উদ্ধার কল্লেন? ওতে ছোটলোকের একটি পয়সা ফয়দা হয়েচে কি?” শুনে মালুম হল, পাল্লে স্ট্যাচুর মাতাগুলি ফের কাটেন। কতাগুলি সকলি বিদ্যেসাগরমশায়ের কানে গিয়েচে। তবে কোনো ভাবান্তর দেকলেম না। কেবল শুধোলেন, অক্ষয়কুমারের দুশো বচর সেকুলার বাবুরো ক্যামন করে পালন করেচেন? আমাদের সম্পাদকের কাচে হুতোম এ কৈফিয়ত তলব কত্তে সে বল্লে ‘অক্ষয়কুমার! দ্যাট ব্লাডি ক্যান্যাডিয়ান? তার জন্মদিবস পালন কত্তে যাব ক্যানো?” তার মাতায় দুটি গাঁট্টা মেরে পথে বেরিয়ে পল্লেম।
বিদ্যেসাগরমশায়ের কার্মাটাঁড়ে গিয়ে ছোটলোকেদের মদ্যে বাস করা হুতোমের জীবদ্দশায় ঘটেনি। অ্যাকন পেত্যয় হল তিনি উচিত কাজটি করেছিলেন। কে নামে ছোটলোক আর কে কামে ছোটলোক, তিনি বিলক্ষণ জানতেন। আপনাদের দেশ স্বাধীন হয়েচে পঁচাত্তর বচর হল, এদিকে বিদ্যেসাগর নয়, ব্যালান্টাইন সায়েবের স্যাঙাতরা স্কুল, কালেজের মাতায় চড়ে বসেচে। বেদে সকলি আচে পড়ানো হচ্চে। ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাসে রামায়ণ, মহাভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো আরম্ভ হবে। কদিন সবুর কল্লে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির স্থলে ডাকিনী যোগিনী বিদ্যে পড়ানোও সম্ভবে। এদিকে ইন্টেলেকচুয়াল বাবুরো বিদ্যেসাগরের দোষ নে এই মোটা বই লিকচেন। ওগুলি মুগুরের মতন ব্যবহার কল্লে কিচু ফয়দা হতে পারে। ফ্যাসিবাদের সনে লড়তে গায়ে জোর লাগে কিনা।
কলকেতার ভোট
লড়ায়ের কতায় মনে পল্ল, এদানি কে যে কার সনে লড়চেন সেটি হুতোমের ঠাওর হচ্চে না। আপনারা বুজিয়ে দিলে শান্তি হয়। কলকেতায় মহালয়ার আগেই এক মোচ্ছব লেগেচে ভোটপুজো নে। শুনেছিলেম মুখ্য সেবিকা ও প্রধান সেবকের দলে জোর লড়াই হচ্চে। এদিকে দেকচি প্রত্যহ দিল্লির গান্ধীবাবু গালমন্দ হজম কচ্ছেন। সম্পাদককে শুধোলেম ও তল্লাটে গান্ধীবাবুর ক্যান্ডিডেটটি কে? মুখ বেঁকিয়ে বল্লে ‘তাও জানেন না? এই বিদ্যে নিয়ে নকশা লিকচেন? ওনারা ওকানে ক্যান্ডিডেট দেননি।’ সে কি হে, মুখ্য সেবিকা ও পয়লা উত্তরাধিকারীর স্পীচ শুনে যে ভাবলেম গান্ধীবাবুদের ক্যান্ডিডেটটিই এক নম্বর কাঁটা! তা নয় বলচ? তবে এম্নি গরম গরম স্পীচের অর্থ কী? সম্পাদক দন্ত বিকাশ করে বল্লে ‘ও আপনার বোধগম্য হবে না। আপনার তো ১৮৭০-এ নরকবাস হয়েচে। তার সতেরো বচর পরে জন্মে আপনার কোশ্চেনের আনসার বেহ্ম রায়বাড়ীর একজন লিকে গিয়েচেন।’ বলে এই মোটা এক কেতাব খুলে দ্যাকালে।
আজগুবি নয়, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা —
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হল ব্যথা!
শুনে হুতোম মহা ফাঁপরে পল্লেন। বাংলার পয়লা নম্বর লিডার ছায়ার সনে লড়চেন এ যদি সত্য হয়, তবে ফ্যাসিবাদের সনে লড়চে কে? সম্পাদক বল্লে, তিনি মাতা তিনি দশভুজা। তিনি সব পারেন। বলে দক্ষিণমুখো হয়ে গড় কল্লে।
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।