সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তিন বছরে ডিপ্লোমা ডাক্তার এবং ১৫ দিনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স তৈরি করার প্রস্তাব ঘিরে প্রবল আলোচনা, সমালোচনা, অসন্তোষ, ক্ষোভ, বিদ্রুপ চোখে পড়ছে। যদিও সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি এরই মধ্যে এই প্রস্তাবে ভিন্নমত, ফলে সরকারও আপাতত আর উচ্চবাচ্য করবে বলে মনে হয় না, তবু এরকম প্রস্তাবের গুণাগুণ সম্পর্কে বিতর্ক জরুরি। এ ধরনের পদক্ষেপ কতটা যুক্তিযুক্ত বা এরকম নিদর্শন আর কোথাও, বিশেষত ভারতের বাইরে আছে কিনা এবং থাকলেও তা স্বাস্থ্যব্যবস্থার কতখানি উন্নতি ঘটিয়েছে তার পর্যালোচনা অপেক্ষাকৃত জটিল। আর তা করতে হলে এই প্রস্তাবের সাগ্রহ সমর্থন এবং প্রবল বিরোধিতা – এই দুই মেরুর কোনোটাই আঁকড়ে ধরে থাকা সমীচীন হবে না।
২০১৮ সালে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ প্যারামেডিকদের প্রেসক্রিপশন লেখার অনুমতি দেওয়া হয়। কেন? এমনিতে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের হতশ্রী স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা NHS) তুলনা করা অনেকটা কলকাতার ক্লাব ফুটবলের সাথে লা লিগা র তুলনা করার মত। তবু বলা দরকার যে ব্রিটেনের এই প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য ছিল ডাক্তারদের এবং ভারাক্রান্ত হাসপাতালগুলোকে কিঞ্চিৎ চাপমুক্ত করা। উপরে যে প্রতিবেদনের লিঙ্ক দিয়েছি, সেখানে বলা হচ্ছে, একটা প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর অভিজ্ঞ প্যারামেডিকরা স্বাধীনভাবে ওষুধ লিখতে পারবেন যার অনুমতি তার আগে দেওয়া ছিল শুধুমাত্র ডাক্তার, দন্ত চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, সিনিয়র নার্স, থেরাপিউটিক রেডিওগ্রাফারদের। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, প্যারামেডিকদের এই অধিকারের আওতায় আনার আগেই ডাক্তার ছাড়া আরও অনেকেই স্বাধীনভাবে প্রেসক্রিপশন লিখতে পারতেন। এছাড়াও লন্ডন সমেত বেশকিছু এলাকায় পরিণত প্যারামেডিকদের সংকটজনক রোগীর চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ থেকে শুরু করে কাছাকাছি হোম ভিজিট (যা সাধারণত পারিবারিক চিকিৎসক বা ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানরা করে থাকেন) করার নিদর্শন রয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে অনেক ডাক্তার এই ব্যবস্থার গুণাগুণ বিশ্লেষণ করেছেন, যার মধ্যে বাড়ির কাছে চিকিৎসা পাওয়া এবং দ্রুত ওষুধ চালু হলে মৃত্যুহার হ্রাস পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। মাননীয়ার প্রস্তাব শুনে “গেল গেল” রব তোলার আগে এগুলো মনে রাখা ভাল – “লন্ডন অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার মেডিকাল ডিরেক্টর ডাঃ ফেনেলা রিগলি বলেন: ‘আমাদের অ্যাডভান্সড প্যারামেডিক প্র্যাকটিশনাররা (APPs) অত্যন্ত দক্ষ প্যারামেডিক। আমাদের ১৬ জন আর্জেন্ট কেয়ার APP আছেন যাঁরা সেইসব কম গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা করেন, যাঁদের নানারকম জটিল প্রয়োজন থাকতে পারে কিন্তু বাড়িতেই সেগুলোর ব্যবস্থা করা সম্ভব। আর ৩০ জন ক্রিটিকাল কেয়ার APP আছেন, যাঁরা জীবনের ঝুঁকি আছে এরকম রোগীদের দেখভাল করতে পারেন। এর মধ্যে প্রায়ই থাকেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা গুরুতর ট্রমার রোগীরা।’”
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই প্যারামেডিক কারা? NHS-এর তথ্য অনুযায়ী, প্যারামেডিকদের ৩-৪ বছরের প্রশিক্ষণে তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক বিভিন্ন বিষয় থাকে। ব্রিটেন ছাড়াও প্যারামেডিকদের পেশাদার করে তোলার প্রচেষ্টা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। বলাই বাহুল্য, বহু মানুষ ডাক্তারের অভাবে বা অর্থাভাবে হাতুড়ে বা কোয়াক ডাক্তারদের শরণাপন্ন হন। এই কোয়াকদের প্রশিক্ষণ কতদূর বা আদৌ তাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে হাতেখড়ি হয়েছে কিনা জানা দুষ্কর। কাজেই, তিন বা চার, যত বছরেরই হোক, একটা নির্ধারিত পাঠ্যক্রম অপেক্ষাকৃত ভাল।
এ তো গেল নিদর্শনের কথা, এবার আসি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাপ্রসূত কিছু কথায়। ডাক্তারি পড়ার সময়ে, বিশেষ করে ইন্টার্নশিপের সময়ে এবং পরে হাউজ স্টাফ থাকাকালীন সরকারি হাসপাতালের (কলকাতা মেডিকাল কলেজ এবং শেঠ সুখলাল কারনানি মেমোরিয়াল বা এসএসকেম হাসপাতাল) নানা দিক প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তারপর কয়েকমাস কাজ করি গার্ডেনরিচ রেলওয়ে হাসপাতালে (সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে সেন্ট্রাল হসপিটাল)। সব মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে, মেডিক্যাল কলেজ এবং এসএসকেএমে নার্সদের যোগ্যতা এবং প্রশিক্ষণের যথাযথ সদ্ব্যবহার হয় না। তার মানে এই নয়, যে নার্সদের হাতে কাজ নেই। বরং ওঁরা রোগীদের খাওয়ার ওষুধ দেয়া, ডাক্তারবাবুর নির্দেশ পালন করা, অপারেশনে যাওয়ার আগের সমস্ত প্রক্রিয়া তদারকি থেকে শুরু করে হাসপাতালের সাফাইকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া – এককথায় ইনডোর ওয়ার্ডগুলো সচল রাখা অথবা অপারেশন থিয়েটারকে ব্যবহারযোগ্য রাখার দায়িত্ব পালন করে যারপরনাই ব্যস্ত। কাজেই মনে হতেই পারে, যে এর উপর স্যালাইন চালানো, ইনজেকশন দেওয়া, রক্তপরীক্ষার জন্যে রক্ত নেওয়া, ক্যাথেটার পরানো ইত্যাদি করার সময়ই বা পাবেন কী করে? এর উত্তর আমার জানা নেই। সম্ভবত নার্সের সংখ্যা না বাড়ালে এসব দূর অস্ত। অথচ ওই কাজগুলো নার্সরা করার সুবিধা গার্ডেনরিচ হাসপাতালে স্বচক্ষে দেখেছি। ডাক্তারবাবুরা সেক্ষেত্রে চিকিৎসার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে রোগী এবং তাঁর বাড়ির লোকেদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করা, এমনকি সেমিনার, পেশাদারি উন্নতি জাতীয় কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করার সময় পেতেন। অনেক ক্ষেত্রে ভর্তি হওয়া রোগীর প্রারম্ভিক চিকিৎসা শুরু করে দিতেন সিস্টার দিদিরাই। ফলে ডাক্তারদের রাউন্ডের সময়ে বা কল দিয়ে ডাকতে হলেও তাঁদের মূল্যবান সময় চ্যানেল করা বা রক্ত নেওয়ার মত কাজে অতিবাহিত হত না। আমার অভিজ্ঞতায় নার্সরা এই কাজগুলো আমাদের চেয়েও ভালভাবে করতেন। শুধু তাই নয়, ডাক্তার এবং নার্সদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছিল এই পরিমণ্ডলে, যা মেডিকাল কলেজ বা এসএসকেএমে সবসময় চোখে পড়ত না।
আরো পড়ুন নিরুপায় রোগী, অসহায় ডাক্তার আর হিংস্র মহামারী
যথাযথ যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ পাওয়া শুধু নার্সদের জন্যেই নয়, স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে সজীব রাখার জন্যও অত্যন্ত জরুরি। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, মার্কিন দেশে এসে দেখছি অনেক নার্সের এমনকি প্রেসক্রিপশন লেখারও অনুমোদন রয়েছে। এটা প্রথম প্রথম বেশ অদ্ভুত লাগত। অথচ প্রাথমিক উন্নাসিকতা কাটিয়ে ওঠার পর লক্ষ্য করলাম যে কোন ক্ষেত্রে ডাক্তার পরীক্ষা করে ওষুধ লিখছেন, আর কোন ক্ষেত্রে নার্স প্র্যাকটিশনার (NP) এই ভূমিকা পালন করছেন, তা অনেকসময় আমরা খেয়ালই করি না। বরং ওষুধের “refill” দরকার হলে ডাক্তারের জন্যে আকুল হয়ে বসে না থেকে কোন NP-র দেওয়া প্রেসক্রিপশনে কাজ হবে, তা জানার পর থেকে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধের প্রয়োজন যেখানে, সেসব ক্ষেত্রে “এই বুঝি ওষুধ ফুরিয়ে গেল” জাতীয় উদ্বেগ অনেকটা কমে। এতো গেলো refill প্রসঙ্গ। বহু অসুখের প্রাথমিক নির্ণয় থেকে শুরু করে রক্তপরীক্ষা, এক্স-রে ইত্যাদি করতে বলা এবং ইন্টারভিউ, ক্লিনিকাল একজামিনেশন, সার্বিক ল্যাব টেস্ট এবং ইমেজিংয়ের ফলাফল দেখে চিকিৎসা পরিকল্পনা (যার একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ওষুধ লেখা) করা – এসবই করার সবুজ সংকেত দেওয়া আছে NP-দের। এমনকি স্বাধীনভাবে (ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ না করেই) এ সমস্ত করার অধিকারও আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যে। অন্যত্র ডাক্তারের সঙ্গে শলাপরামর্শ এবং/অথবা পূর্ব নির্ধারিত প্রোটোকলমাফিক চিকিৎসা করার অধিকারও আছে।
একথা সত্যি যে NP, মিডওয়াইফ, ফিজিশিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্ট, জাতীয় স্বাস্থ্যকর্মী ভারতে এখনো অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত, এবং হলেও খুবই সীমিত পরিসরে তাদের ব্যবহার হয়। ভারতবর্ষের মত জনবহুল দেশ, যেখানে আকাশছোঁয়া আর্থিক বৈষম্য রয়েছে, সেখানে এ ধরনের পেশার প্রসার ও উপযুক্ত ব্যবহার না করলেই নয়। এটাও খেয়াল রাখা দরকার, যে সব দেশেই ডাক্তারদের মতই প্যারামেডিকাল এবং নার্সিং পেশার অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। তার উপর নির্ভর করবে কে কতটা চিকিৎসা করা, ওষুধ লেখা ইত্যাদির স্বাধীনতা পাবে।
বলা বাহুল্য, মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবের অনেক দিক অপরিষ্কার। আমার মতে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স তৈরির প্রস্তাবটা সবচেয়ে অপরিষ্কার এবং উদ্বেগজনক। এখানে উনি কাদের ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রসঙ্গে ভাবছেন? যাদের নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ রয়েছে তাদের আরও উন্নত স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ যদি হয়, সে না হয় বোঝা গেল। কিন্তু কোনোরকম প্রাথমিক প্রশিক্ষণ যাদের নেই, তারা ১৫ দিনের প্রশিক্ষণে নার্সিং করতে শুরু করবে, এরকম বিপজ্জনক পরিস্থিতি “ভাবতে ভয় হয়”। এহেন ধর তক্তা মার পেরেক মার্কা মন্তব্যে সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা বাড়বে বৈ কমবে না। তেমনই “ডিপ্লোমা ডাক্তার” বলতে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন এবং তাদের কী কী করতে অনুমতি দেওয়া হবে তা পরিষ্কার নয়। তিন বছরের প্রশিক্ষণ কোন কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে? তাদের কি আলাদা রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা হবে? এরকম খুঁটিনাটি অনেক দিক খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
কিন্তু প্রশ্ন এবং উদ্বেগ থাকলেও, স্বাস্থ্যব্যবস্থার ল্যাজেগোবরে অবস্থার প্রেক্ষিতে এটা অনস্বীকার্য যে শুধুমাত্র ডাক্তার (বলতে এখন যা বুঝি আমরা) দিয়ে এই ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা একপ্রকার অসম্ভব। আর এর মোকাবিলার জন্যে যে কোনো প্রস্তাব গভীর পর্যালোচনা দাবি করে। ঠাট্টা তামাশা করে, রাগ অভিমান করে “ভেবেও দেখব না” গোছের গোঁয়ার্তুমি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত বা এর উন্নতিকল্পে আগ্রহী যারা, অন্তত তাদের মানায় না। প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের অর্থমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট গদ্যকার অশোক মিত্র বিস্মৃতি ছাপিয়ে বইতে লিখেছেন সিপিএম নেতা প্রমোদ দাশগুপ্ত বহুকাল আগেই অভিমত প্রকাশ করেছিলেন যে লাইসেনশিয়েট অফ মেডিকাল ফ্যাকাল্টি (LMF) ব্যবস্থা বা তার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা বজায় রাখতে পারলে জনগণের মঙ্গল। মেডিকাল শিক্ষা প্রসারের শৈশবের দিনগুলোতে উনি একাধিকবার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে MBBS ডিগ্রিধারী অনেকেই হয়ত গ্রাম মফস্বলের মানুষের সেবার্থে নিয়োজিত থাকবেন না।

অশোকবাবু লিখেছেন “… তাঁর দৃঢ় ধারণা কাতারে কাতারে মেডিকেল কলেজ খোলার জন্য টাকা ঢেলে লাভ নেই, যারা এসব কলেজ থেকে ডিগ্রি নিয়ে বেরোবে, তারা কদাচ গ্রামমুখো হবে না, শহরের হাসপাতালের আশপাশে ঘোরাফেরা করবে, কিংবা কোনো ধনীর দুহিতার পাণিগ্রহণ করে মূলধন জোগাড় করে নার্সিংহোম খুলে বসবে। গ্রামের ছেলেমেয়েদের এমবিবিএস পড়ার সামর্থ্য নেই, শহরের সাহেবরা কোন দুঃখে গ্রামে যাবেন? তাঁদের মধ্যে বড়োজোর দু’-একজন আদর্শবান তেমনটা করতে উৎসাহী হবেন, বাকিরা নিজেদের সুখশান্তির জন্যই নিবেদিত থাকবেন।”
অনেক ডাক্তার এসব পড়ে ভীষণ রেগে যাবেন, তাই বলি কেউই আদর্শবান হবেন না এমনটা প্রমোদবাবু বা অন্য কেউ বলেননি, বলা উচিতও নয়। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই যে প্রমোদবাবুর ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে তার উদাহরণ আমি এবং আমার মতন অনেকে, যারা বিদেশেই থাকুক আর দেশেই থাকুক, ‘প্রত্যন্ত এলাকা’-য় যেতে হবে ভাবলেই মনটা পালাই পালাই করে। তা ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতার কারণেই হোক, বাঘের ভয়েই হোক, পরিকাঠামো নামক খায়-না-মাথায়-দেয় বস্তুটার অভাবেই হোক, রাজনৈতিক চাপাচাপির কারণেই হোক, এসবের মিলিত প্রভাবে হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক। যাকগে, অশোকবাবু লিখেছেন প্রমোদবাবুর সেই প্রস্তাব বা সংশয় ওঁর নিজের দলেই পাত্তা পায়নি।
ডাক্তার তৈরির কোনো জাদু ফর্মুলা হয় না। অনেক দেশেই তো ডাক্তারি পড়ার আগে অন্তত চার বছরের কলেজ ডিগ্রি থাকার বিধান আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের উদাহরণ খতিয়ে দেখতে পারেন। কই, এগুলোকে ভারতীয় ডাক্তার শিক্ষার মডেল হিসেবে গ্রহণ করার দাবি তো আমরা ডাক্তাররা কেউ করি না!
প্রস্তাবের খুঁটিনাটি বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলুক, এমনকি এর পিছনে সদুদ্দেশ্য আছে কিনা তার আলোচনাও চলতে থাকুক। প্রস্তাবের সারাংশ শুনেই তাকে নস্যাৎ করা দায়িত্ববিমুখতার লক্ষণ। বৃহত্তর জনগণের সার্বিক কল্যাণে ব্রতী চিকিৎসক সমাজের কাছে তা অনভিপ্রেত।
মতামত ব্যক্তিগত
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।