সীমান্ত এলাকার মানুষ গদ্যে কথা বলে
বস্তি ও কলকারখানার মানুষ গদ্যে কথা বলে
দিনের বেলায় শহর গদ্যে কথা বলে
সমস্ত সমসাময়িক দুঃখ গদ্যে কথা বলে
শুকনো মাঠ ও রুখু দাড়িওয়ালা মানুষটি গদ্যে কথা বলে
গোটা ছুরি কাঁচির সভ্যতা গদ্যে কথা বলে
তা হলে কী নিয়ে কবিতা লেখা হবে?
১৯৮৩ সালে প্রকাশিত নিজের ত্রয়োদশতম কাব্যগ্রন্থে, অর্থাৎ স্মৃতির শহর-এর ১৩তম অংশে খেলাচ্ছলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যে প্রশ্নটি তুলেছেন, সে প্রশ্ন ওঁর পুরনো পরিচিত। হয়ত শুধু সুনীল নয়, যে কোনো কাব্যপ্রয়াসীর কাব্যজীবনের উন্মেষকালেই এই জিজ্ঞাসা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের রূপ নিয়ে হাজির হয়। সবাই জবাব দিতে পারে না, সুনীল পেরেছিলেন।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
উপরের কবিতাটির চলন দেখে মনে হওয়া অসঙ্গত নয়, যে এক কবি হয়ত গদ্য থেকে নিষ্কৃতিলাভের লোভেই কবিতার আশ্রয় খুঁজছেন। যে গদ্য জীবনের জঙ্গমে জব্দ, যে কিনা কোলাহলে বন্দী, খর-তপ্ত ব্যস্ততার চাপে যার থেকে কিনা যান্ত্রিক আওয়াজ বেরিয়ে আসে – সেখান থেকে যে মুক্তি দিতে পারে – আশা করা যায় তার উপস্থিতি হবে শান্ত, ছায়ার মত।
পরিত্রাণ, তুমি শ্বেত, একটুও ধূসর নও, জোনাকির পিছনে বিদ্যুৎ,
যেমন তোমার চিরকাল
জোনাকির চিরকাল; স্বর্গ থেকে পতনের পর
তোমার অসুখ হলে ভয় পাই, বহু রাত্রি জাগরণ – প্রাচীন মাটিতে
তুমি শেষ উত্তরাধিকার। একাদশী পার হলে – তোমার নিশ্চিত
পথ্য হবে।
আমার সঙ্গম নয় কুয়াশায় সমুদ্র ও নদী;
ঐ শব্দ চতুষ্পদ, দ্বিধা, কিছুটা উপরে, সার্থকতা যদি উদাসীন;
বিপুল তীর্থের পুণ্য – নয়? সর্বগ্রাস
যেমন জীবন আর জীবনী লেখক।
প্লেনের ভিতরে কান্না এক দেশ থেকে অন্য দেশে উড়িয়ে আনি
একই বুকের মধ্যে।।
উদ্ধৃত কবিতাটি সুনীলের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি-তে অন্তর্ভুক্ত। শিরোনাম – ‘আমার কয়েকটি নিজস্ব শব্দ’। মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, গদ্যের হাঁসফাঁস জাল থেকে মুক্তিদাত্রীর ভূমিকায় আবির্ভূত হবে যে কবিতা – তাকে শান্ত, সুন্দর ও সাজানো রূপে পাবার আশাতে পড়ল এক চপেটাঘাত। কীভাবে পড়ল, তা সবার কাছে স্পষ্ট। গাঢ় করে লেখা তিনটি শব্দ, ‘পরিত্রাণ’, ‘সঙ্গম’ আর ‘কান্না’ কবিতায় ছড়িয়ে থাকল। বাকি শব্দগুলির মধ্যেই থাকল, কিন্তু থাকল একটি ‘ভিজুয়াল অ্যাপিল’ নির্মাণ করে। কবিতার শিরোনাম থেকেই অনুমান করা যায়, এ লেখা কোথাও না কোথাও কবিতা রচনার যাত্রাপথ সম্পর্কিত। লক্ষ করার বিষয়, এই তিনটি শব্দ কবিতায় উদ্ভুত পৃথক পৃথকভাবে। ‘পরিত্রাণ’ শব্দটি নিজের বাচ্যার্থ উপচে কবির কাছে তার অভিঘাতের বিস্তার নিয়ে এসেছে। তার সংজ্ঞা সুঠাম, ঋজু ও অত্যন্ত প্রত্যয়ী। সুনীল জানাচ্ছেন – পরিত্রাণ শব্দটি শ্বেত, বিন্দুমাত্র ধূসর নয়। জোনাকির পিছনের আলোর মত, যার জীবন জোনাকির মত মেয়াদেরই। কবির মূল কাজই হয়ত নতুনভাবে ভাবা। যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার বাইরে, তাকে টেনে আনা স্পর্শ, ঘ্রাণের আওতায়। আর যা সামনে থাকা সাধারণ স্বাভাবিক বস্তু, তাকে ফুঁড়ে অসীমে মিলিয়ে দেওয়া। অতীন্দ্রিয় যোগ স্থাপন করা। আপাতত পরিত্রাণ শব্দটিকে যেভাবে পাচ্ছি –
সে স্বর্গ থেকে পতিত, তার অসুখ হয় – অর্থাৎ সে নশ্বর। আমাদের প্রাচীন মাটিতে সে শেষ উত্তরাধিকার। কিন্তু, কার থেকে কী সূত্রে পাওয়া সে উত্তরাধিকার? এই প্রাচীন মাটির উত্তরাধিকার শুনতেই কি আমাদের মূলচ্ছিন্ন উদ্বাস্তু জীবনের কথা মনে আসে না?
‘সঙ্গম’ শব্দটির সঙ্গে আমাদের পরিচয় হচ্ছে ঠিক বিপরীত পদ্ধতিতে। তার বর্ণনা খানিকটা সাংকেতিক। এবং, ‘সঙ্গম’ কী বা কী কী নয়, আমাদের পরিচয় হচ্ছে সেগুলির সঙ্গেই প্রথম। কুয়াশায় সমুদ্র ও নদী নয় সঙ্গম। সঙ্গম শব্দটি চতুষ্পদ, দ্বিধা আছে, তার উপরে সার্থকতা যদি উদাসীন, আর তার পরে সংশয় – বিপুল তীর্থের পুণ্য তা কিনা – এই বিষয়ে। সঙ্গমকে ধরা যাক, সর্বগ্রাস। সে জীবন ও জীবনীলেখক এই দুইয়ের সমাহার।
সব শেষে, কান্না শব্দটি একটি ভিন্ন অভিমুখের বাক্যের মধ্যে আসে, যে বাক্যের কোনো অভিপ্রায় নেই শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করবার।
কৃত্তিবাস পত্রিকার পঞ্চাশ বছরের সংকলনের ভূমিকায় সুনীল নিজেদের গোষ্ঠীর ভূমিকা ও আচরণ সম্পর্কে লেখেন, “বিদেশি ধাঁচে একটা কোনো বিশেষ নাম দিয়ে কাব্য আন্দোলন আমরা শুরু করিনি, কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর কবিরা নিজেদের মধ্যে কোনোরকমের পরামর্শ না করেই যে নতুন রীতিতে কবিতা লিখতে শুরু করে, তাকে বলা যেতে পারে স্বীকারোক্তিমূলক কবিতা। এই কবিতা শুধু সৌন্দর্যের নির্মাণ নয়, রূপকল্পের সন্ধান নয়, এইসব কবিতা যেন তাদের রচয়িতাদের জীবনযাপনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরু-চণ্ডালীকে এতকাল দোষ বলে গণ্য করা হত, কৃত্তিবাসের কবিদের মতে গুরু-চণ্ডালীই সঠিক আধুনিক কবিতার ভাষা। ছন্দের ঝোঁক দেখা গেল মুখের ভাষার কাছাকাছি। তবে চিন্তা ও শব্দ ব্যবহার বা ছন্দ এর কোনো ক্ষেত্রেই তা সম্পূর্ণ নতুন বা অভিনব কিছু আনয়ন করা হয়েছে, এমন দাবি করা যায় না; তা হলেও সব মিলিয়ে এই সব কবিতা নিশ্চিত আলাদা রকমের। বেশ কিছুদিন সমালোচকদের কাছে বা বিশুদ্ধ কবিতা নামে এক অলীক ভাবালু জিনিসের যাঁরা সমর্থক তাঁদের কাছে কৃত্তিবাস কবিগোষ্ঠী খুবই নিন্দিত ও ধিক্কৃত হয়েছে, বলা হয়েছে এইসব কবিতা অতিচিৎকৃত ও যৌনসর্বস্ব… আবার বুদ্ধদেব বসু-র মতন কবি এবং ‘কবিতা’ পত্রিকার সার্থক সম্পাদক বলেছিলেন, তোমাদের কবিতা বেশ জটিল, আমি বুঝতে পারছি না!”
যদি এই দীর্ঘ উদ্ধৃতির শেষ থেকে শুরু করি, তাহলে আরও একবার স্পষ্ট হয় যে, কবিতার ভাষা জীবন্ত। অন্যন্য সমস্ত সজীব অস্ত্বিত্বের মত তারও বিবর্তন আছে কালের নিয়মে। এবং ক্রান্তদর্শী বুদ্ধদেব বসু সেই বিবর্তিত ভাষা ধরতে পারছেন না – অথচ তিনি জীবনানন্দ দাশের মতো ‘জটিল’, ‘দুরূহ’ কবির লেখাকে প্রথম স্বীকৃতি দেবার কৃতিত্বের অধিকারী। অর্থাৎ, সময় বদলে গিয়েছে, এবং, তার দাবিও। ভাষা স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন বাঁক নিয়েছে। তার প্রমাণ এই, যে হঠাৎ সবাই স্বীকারোক্তিমূলক লেখা, খোলামেলা ভাষায় লিখতে শুরু করলেন। সাহিত্যমহলে সে কবিতার প্রতিক্রিয়ায় যে অনুরণন উঠল, তা কি এই কারণে নয় যে লেখাগুলি সময়ের রাগ, উদ্বেগ, আশংকাকে অর্থাৎ একটা angst-কে ভাষা দিতে পেরেছিল? তা ছাড়াও সে সময়ের কবিদের মধ্যে একটি flaneur সত্তা ছিল। মূলত সেটিই হয়ত এক নাগরিক পরিসর থেকে নাগরিক ভাষার জন্ম দিয়েছে। সারারাত উদ্দামতায় শহর শাসন করা – শাসন লঙ্ঘন করা –
এই সবকিছুই তো ভাষায় প্রভাব বিস্তার করে। কবি চারপাশের জগৎটাকে তো ভাষা দিয়ে দেখেন। নিজের উপনিবেশ পত্তন করতে চান।
মহারাজ, আমি তোমার সেই পুরনো বালক ভৃত্য
মহারাজ, মনে পড়ে না? তোমার বুকে হোঁচট পথে
চাঁদের আলোয় মোট বয়েছি, বেতের মতো গান সয়েছি
দু’হাত নিচে, পা শূন্যে- আমার সেই উদোম নৃত্য
মহারাজ, মনে পড়ে না? মহারাজ, মনে পড়ে না? মহারাজ,
চাঁদের আলোয়?
মহারাজ, আমি তোমার চোখের জলে মাছ ধরেছি
মাছ না মাছি কাঁকরগাছি একলা শুয়েও বেঁচে তো আছি
ইষ্টকুটুম টাকডুমাডুম, মহারাজ, কাঁদে না, ছিঃ!
অমন তোমার ভালোবাসা, আমার বুকে পাখির বাসা
মহারাজ, তোমার গালে আমি গোলাপ গাছ পুঁতেছি-
প্রাণঠনাঠন ঝাড়লন্ঠন, মহারাজ, কাঁদে না, ছিঃ!
মহারাজ, মা-বাপ তুমি, যত ইচ্ছে বকো মারো
মুঠো ভরা হাওয়ার হাওয়া, তো কেবল তুমিই পারো।
আমি তোমায় চিম্টি কাটি, মুখে দিই দুধের বাটি
চোখ থেকে চোখ পড়ে যায়, কোমরে সুড়সুড়ি পায়
তুমি খাও এঁটো থুতু, আমি তোমার রক্ত চাটি
বিলিবিলি খান্ডাগুলু, বুম্ চাক ডবাং ডুলু
হুড়মুড় তা ধিন্ না উসুখুস সাকিনা খিনা
মহারাজ, মনে পড়ে না?
কবিতার শিরোনাম – ‘মহারাজ, আমি তোমার’। পড়ে কি মনে হয় না, যে একটি ননসেন্স কবিতা ঘন হয়ে হয়ে হিংস্ররূপ ধারণ করল? একটি কড়া শৃঙ্খলের উপর, ধরা যাক, কেউ সরু কাঠি দিয়ে জলতরঙ্গ বাজিয়ে দিচ্ছে। এবং শোষিত মানুষই তা করছে। তার দৃষ্টি তিক্ততায় ভরপুর। পুরো কবিতাটি তার শাসককে দেওয়া সান্ত্বনা। তাতে ঝল্কে উঠছে ব্যঙ্গ।
একলা ঘরে শুয়ে রইলে কারুর মুখ মনে পড়ে না
মনে পড়ে না মনে পড়ে না মনে পড়ে না মনে পড়ে না
চিঠি লিখবো কোথায়, কোন মুণ্ডহীন নারীর কাছে?
প্রতিশ্রুতি মনে পড়ে না চোখের আলো মনে পড়ে না
ব্লেকের মতো জানলা খুলে মুখ দেখবো ঈশ্বরের?
বৃষ্টি ছিল রৌদ্র ছায়ায়, বাতাস ছিল বিখ্যাত
করমচার সবুজ ঝোপে পূর্বকালের গন্ধ ছিল
কত পাখির ডাক থামেনি, কত চাঁদের ঢেউ থামেনি
আলিঙ্গনের মতো শব্দ চোখ ছাড়েনি বুক ছাড়েনি
একলা ছিলুম বিকেলবেলা, বিকেল তবু একা ছিল না
একটা মুখ মনে পড়ে না মনে পড়ে না মনে পড়ে না।
এত মানুষ ঘুমোয় তবু আমার ঘুমে স্বপ্ন নেই
স্বপ্ন না হয় স্মৃতি না হয় লোভ কিংবা প্রতিহিংসা
যেমন ফুল প্রতিশোধের স্পৃহায় আনে বুকের গন্ধ
রমণী তার বুক দেখায়, ভালোবাসায় বুক ভরে না
শরীর নাকি শরীর চায়, আমার কিছু মনে পড়ে না
মনে পড়ে না মনে পড়ে না- মেঘলা মতো বিস্মরণ
যেমন পথ মুখ লুকিয়ে ভিখারিণীর কোলে ঘুমোয়।
বৃক্ষ তোমার মুখ দেখাও, দেখি আকাশ তোমার মুখ
এসো আমার গতজন্ম তোমায় চেনা যায় কিনা
কোথাও নেই মুখচ্ছবি এ কী অসম্ভব দৈন্য-
আমার জানলা বন্ধ ছিল উঠেও ছিটকিনি খুলিনি
জানলা ভেঙে ঢোকার বুদ্ধি ঈশ্বরেরও মনে এলো না?
আমায় কেউ মনে রাখেনি, না ঈশ্বর না প্রতিমা…….
সুনীল লিখিত এই কবিতার শিরোনাম, ‘অসুখের ছড়া’। এমন অর্গলহীন হাহাকার আগে ছিল না কবিতায়। একজন একা অসুস্থ মানুষ ঘরে শুয়ে আছেন। সময় অচল। তাঁর মাথাও শূন্য। কিচ্ছু মনে পড়ছে না। এই এক কাতরতা।
সুনীলের কবিতার মূল সুর কিন্তু একটি কাতরতা। তাকে নানারকমভাবে প্রচ্ছন্ন রাখা হয়। কিন্তু, এই কাতরতা আর সেই সূত্রে সুনীল লিখেছেন ওই তিনটে নিজস্ব শব্দ – পরিত্রাণ, সঙ্গম আর কান্না। ওগুলো দিয়েই সুনীলের কবিতাকে বড় নিজের করে ছোঁয়া যায়।
আমি তোমাদের কোন্ অনন্ত ছায়ায়
শুয়ে আছি, শুয়ে রবো, আমি তোমাদের
থেকে বহু দুরে তবু ছায়ার ভিতরে
শুয়ে আছি, জেগে আছি, শিয়রে ও পায়ে
ছায়া পড়ে, ছায়া কাঁপে, চোখের ছায়ায়
মাছ খেলা করে, ভাসে, আমি তোমাদের
মাছের মতন চোখ ছায়ার সাঁতারে
তুলে আনি, তোমাদের গোলাপজামের
মতো চোখ ভালোবাসি, মুখে দিই, দাঁতে
‘তোমাদের’ ভালোবাসাময় চোখগুলি
ভেঙে যায়, মিশে যায়, হেমন্ত বেলায়
শিরীষ ফুলের মতো তোমাদের চোখ
আমাকে পালন করে গোধুলি ছায়ায়।
‘তোমাদের’ শব্দখানি অনেক কুয়াশা
যেমন শব্দের কাছে নীরবতা ঋণী
যেমন নীরব ফুল সব বন্দনার
চেয়ে শ্রেষ্ঠ, ভ্রষ্ট ফুল যেমন বুকের
কাছে হাত জোড় করে, ছায়ায় শয়ান
ফুল ও বুকের চেয়ে কোমল পাছার
সঙ্গীতের মতো ভঙ্গি যেমন অনেক
দূর মনে হয়, আমি মনের কুয়াশা
‘তোমাদের’ মুখে রাখি, তোমাদের চোখ
কাজলের মতো লাগে, চোখে চোখে ছুঁয়ে
আমি দেখি, শুয়ে থাকি, যেন বিপুলের
ভিতরে নিঃস্বতা কাঁপে, চঞ্চলতা যেন
ছায়ায় গোপন, মুখ মুখশ্রী লুকোয়-
মুখের ভিতরে চোখ ভাঙে মিশে যায়।
কবিতার নাম ‘চোখ বিষয়ে’। কবিতায় ‘রবো’ ক্রিয়াপদ আর ‘আছি’ অবলীলায় একসঙ্গে থেকে যাচ্ছে, একই পঙক্তিতে ‘ফুল’, ‘বুক’ আর ‘কোমল’ শব্দটির সঙ্গে ‘পাছা’ বসে যাচ্ছে – অথচ ঝুঁকিহীন পথে নিতম্ব বসানো যেত। কথা এই, যে এ সত্ত্বেও কোনো অসুবিধে হচ্ছে না, কবি নিজের পথ গড়ে পিটে নিচ্ছেন।
আরো পড়ুন কবি ও কাঙাল শক্তি উত্তরাধিকার স্বীকার করেছেন ইন্দ্রনাথে
যদি আবার ‘আমার কয়েকটি নিজস্ব শব্দ’ কবিতায় ফিরে যাই – দেখা যায় কবি নিজের কয়েকটি পছন্দের শব্দ, সমুদ্রের ধারে নুড়ির মত বেছে নিয়ে, তাকে ঘষে মেজে নিজের অংশ করে নিচ্ছেন। তাঁর একটি ব্যক্তিগত অভিধান তৈরি হচ্ছে। জগতকে নিজের বোধ দিয়ে উপলব্ধি করতে শব্দ সম্পর্কে নিজের অধিকারবোধ জন্মানো জরুরি। সুনীল তিনটি শব্দের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমরা কোনো কবির লেখায় পৌঁছতে পারি না, শুধু লেখাকে নিজের দিকে টেনে নিই। দেখি, ‘পরিত্রাণ’, ‘সঙ্গম’ আর ‘কান্না’ শব্দগুলোর অর্থ একটু হলেও গভীরতর হয়ে গিয়েছে।
মতামত ব্যক্তিগত
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।