ফয়জান আহমেদের মা রেহানার আশঙ্কা এখন বাস্তবে পরিণত।

ফয়জান ছিল আইআইটি খড়্গপুরের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, যাঁকে গতবছর হোস্টেলের মধ্যে খুন করা হয়। তাঁর মা রেহানা এখন উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি একমাত্র সন্তানের হত্যায় ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে সামান্য আশার আলো দেখেছিলেন যখন কলকাতা হাইকোর্ট শুধু ঘটনাটিকে ‘হোমিসাইড’ বলে ঘোষণা করল তাই নয়, আরও তদন্তের স্বার্থে একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমও (সিট) তৈরি করে দিল। কিন্তু আইআইটি খড়্গপুর কর্তৃপক্ষ সিঙ্গল বেঞ্চের এই আদেশ বাতিল করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এস শিবগননমের নেতৃত্বাধীন দুই বিচারকের বেঞ্চের কাছে আবেদন করেছে।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, আসামের তিনসুকিয়ার বাসিন্দা ফয়জানের দেহ আংশিক পচে যাওয়া অবস্থায় আইআইটি খড়্গপুরের একটি হোস্টেলের মধ্যে থেকে উদ্ধার করা হয়। আইআইটি জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা ২০২০-তে সারা দেশের মধ্যে একাদশ র‍্যাঙ্ক করা ফয়জান, রেহানা ও সেলিম আহমেদের একমাত্র ছেলে। তিনি আইআইটি খড়্গপুরের এয়ারিয়াল রোবোটিক্স ও রোবোসকার রিসার্চ টিমেরও সদস্য ছিলেন। এই দুটো প্রকল্পই কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থে চলে।

দুই বিচারকের বেঞ্চের কাছে তাদের পিটিশনে আইআইটি খড়্গপুর একজন ডাক্তারের বয়ান হাজির করেছে, যিনি বলেছেন, বিচারপতি রাজশেখর মান্থা অবসরপ্রাপ্ত ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ডাঃ অজয় কুমার গুপ্তের যে রিপোর্টের ভিত্তিতে ফয়জানের মৃত্যুকে হত্যা বলে ঘোষণা করেছেন তাতে গুরুতর অসম্পূর্ণতা রয়েছে (‘suffers from serious deficiencies’)। অন্যদিকে মেদিনীপুর হাসপাতালে যে প্রথম অটোপ্সি করা হয়েছিল তা ‘নির্ভরযোগ্য’। আইআইটির আরও বক্তব্য যে আদালত হত্যার অভিযোগ করায় প্রতিষ্ঠান হিসাবে তাদের ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে।

কিন্তু ফয়জানের মা বলছেন “প্রথম ময়না তদন্ত তড়িঘড়ি আমাদের উপস্থিতি ছাড়াই করা হয়েছিল। সব হয়ে যাওয়ার পরে মৃতদেহ আমাদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে দ্বিতীয় ময়না তদন্ত অ্যামিকাস কিউরি সন্দীপ ভট্টাচার্য, ডাঃ গুপ্ত কলকাতা মেডিকাল কলেজের ডাক্তাররা, যে ডাক্তার প্রথম ময়না তদন্ত করেছিলেন তাঁর এবং আমার উপস্থিতিতে করা হয়েছিল। আমরা খড়্গপুর পুলিস বা আইআইটি কর্তৃপক্ষের থেকে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা পাইনি।”

রেহানার আরও বলেন “আমরা আশঙ্কা করেছিলাম যে আইআইটি খড়্গপুরের কর্মকর্তারা তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। সেই কারণেই আমি দুটো চিঠি লিখেছিলাম। প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে, তারপর রাজ্যের সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যানকে। আমি দুজনেরই হস্তক্ষেপ চেয়েছিলাম, কারণ আমার আশঙ্কা ছিল আইআইটির মত শক্তিশালী সংগঠন তদন্তে বাধা দেবে। আমি জানি না আমার আবেদনের ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা।”

রেহানার কৌঁসুলি অনিরুদ্ধ মিত্র ইনিউজরুমকে বললেন “এখন পর্যন্ত কেউ দাবি করেনি যে আইআইটি কর্তৃপক্ষ ফয়জানের মৃত্যুর জন্য দায়ী। ওঁদের বোঝা উচিত যে সিট যদি অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাহলে এই সম্মানীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার প্রতি ছাত্রছাত্রী এবং তাদের বাবা-মায়েদের আস্থা ফিরে আসবে। নিজেদের ভাবমূর্তির কথা না ভেবে আইআইটির উচিত যে প্রতিভাবান ছেলেমেয়েরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে ওখানে আসে তাদের জীবন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। কিন্তু এখন ওঁদের পিটিশন দেখে তো মনে হচ্ছে ভারতের অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান ছাত্রের হত্যার ব্যাপারে সত্যটা চাপা দেওয়ার কাজে ওঁরা যুক্ত।”

রেহানা যোগ করলেন “কে বলতে পারে, ফয়জানের জন্যে ন্যায়বিচারের দাবি জোরালোভাবে তোলা গেলে হয়ত যাদবপুরের স্বপ্নদীপের যা হল সেটা হত না!”

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর হত্যার অভিযোগ নিয়ে কলকাতা এই মুহূর্তে প্রতিবাদে উত্তাল। ফয়জানের মতই স্বপ্নদীপের মৃত্যুকেও প্রথমে আত্মহত্যা বলেই চালানো হয়েছিল। কিন্তু ব্যাপক প্রতিবাদের ফলে চাপ তৈরি হওয়ায় পুলিস আরও তদন্ত করে এবং এমন প্রমাণ সামনে আসে যা থেকে মনে হয় তাঁকে সিনিয়ররা হোস্টেল বিল্ডিং থেকে ঠেলেও ফেলে দিয়ে থাকতে পারে। ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে তিনজন সিনিয়র ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আরো পড়ুন ‘রোহিত, নিখোঁজ নাজীবের মতই প্রতিষ্ঠানের শিকার ফয়জান’

কিন্তু ফয়জানের মা রেহানা, সরকার বা আইআইটি, কারোর থেকে ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে কোনো সাহায্য পাননি। তা সত্ত্বেও তিনি আইনজীবীদের সাহায্যে তাঁর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। আটমাস লড়াই করার পর হাইকোর্ট তাঁর ছেলের মৃত্যুকে খুন বলে ঘোষণা করে এবং আরও তদন্তের স্বার্থে সিট গঠন করে।

রেহানা বললেন “আমি আগেও বলেছি, আবার বলছি – আমার লড়াই শুধু ফয়জানের জন্যে নয়। যত ছেলেমেয়ে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে, এই লড়াই তাদের সবার বাবা-মায়ের জন্যে। আমরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বাস করে তাদের হাতে আমাদের ছেলেমেয়েদের ছেড়ে দিয়ে যাই। অথচ তাদের যত্ন নেওয়ার বদলে কখনো কখনো আমাদের হাতে তার নির্জীব দেহটা ফেরত দেওয়া হয়। এ জিনিস বন্ধ করতেই হবে। আশা করি আদালতও তাই বলবে।”

ইনিউজরুম ওয়েবসাইটের অনুমতিক্রমে ইংরেজি প্রতিবেদনের এই ভাষান্তর প্রকাশিত হল। তথ্য প্রতিবেদকের।

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.