To inculcate a culture of gender equality, Kerala’s school text books will be revised and audited to sieve out words and phrases disparaging women. Steps will be taken to turn our schools and colleges into spaces that embrace the idea of gender equality and equal rights.
— Pinarayi Vijayan (@vijayanpinarayi) June 24, 2021
অন্যান্য অনেক দেশের মতই ভারতে যে পিতৃতন্ত্রের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত, তা নিয়ে বিতর্কের কোনো জায়গা নেই। এবং সেই শিকড় উৎপাটন খুবই প্রয়োজনীয় তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ থাকে না। এই জায়গা থেকেই কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের কিছুদিন আগের একটি টুইট নেটে বাহবা কুড়িয়েছে, কারণ সেখানে বিজয়ন বলেছেন যে কেরলের সমস্ত পাঠ্যপুস্তককে ‘জেন্ডার ইনক্লুসিভ’ করা হবে, এবং মেয়েদের প্রতি অবমাননাকর যে কোনো অংশ বাদ দেওয়া হবে। উল্লেখযোগ্য যে এই টুইটটি তিনি করেছেন বিস্মায়া বলে একটি ইঞ্জিনিয়ার মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পণের জন্য অত্যাচারিত হয়ে আত্মহননের পর। এই প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত সদর্থক এ কথা বলা বাহুল্য।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
সমস্যা হল ভারতের মত দেশে, যেখানে জেন্ডার এবং সেক্সের অর্থ যে একেবারে আলাদা তা-ই অর্ধেকের বেশি “শিক্ষিত” লোক জানে না, এই কাজটি করা একইসঙ্গে জরুরি ও দুরূহ। কিছুদিন আগেই সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল একটি বইয়ের পাতা, যা বি এড শিক্ষার্থী তথা ভবিষ্যৎ শিক্ষকদের পাঠ্যপুস্তক। বাংলায় লেখা এই বইটিতে দেখা গেছিল যে এমনকি বইটির লেখকও এই দুয়ের প্রভেদ সম্পর্কে অবগত নন, আর তাই তিনি অনায়াসে জেন্ডার এবং সেক্স অর্থাৎ সামাজিক নির্মাণ এবং শারীরবৃত্তীয় লিঙ্গকে এক বলেই ধরে নিয়েছেন। সেই সময় এই বিষয়টি নিয়ে সমাজকর্মী, নারীবাদীরা প্রবল প্রতিবাদ করলে সরকার বইটিকে বাতিল করে।
আর একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। ২০১৯ সালে এন সি ই আর টি ঘোষণা করে যে, লিঙ্গসাম্যের লড়াইয়ে পাঠ্যপুস্তককে আরো জেন্ডার ইনক্লুসিভ করার জন্য শিক্ষক বা পাঠ্যপুস্তকের লেখককে তারা লিঙ্গসাম্যের শিক্ষা দেবে। খুবই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সন্দেহ নেই, কারণ আমরা যেভাবে সমাজকে দেখতে, তাকে প্রশ্ন করতে শিখি, তার গোড়াপত্তন হয় এই শিক্ষক এবং পাঠ্যপুস্তকগুলির মাধ্যমে। শিশু থেকে কিশোর যতটা সময় বাড়িতে কাটায়, প্রায় ততটা সময় স্কুলেও কাটায়, তাই তাদের সচেতনতার পাঠ শুরু করা উচিত প্রাইমারি স্কুল থেকেই। এন সি ই আর টি বিশেষ করে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক ও তৎকালীন পাঠ্যপুস্তককে পাখির চোখ করেছিল, যা অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক। কিন্তু এই শিক্ষা কতটা সামাজিক নির্মাণের ধারাকে ভাঙতে পারবে সে সম্বন্ধে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে এন সি ই আর টি এও জানায় যে বাৎসরিক পাঠ্যপুস্তকের “অডিট” হওয়া উচিত। সেটা যদি সত্যিই করা হয়, তাহলে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রের ছবি কিছুটা হলেও পালটাতে পারে।
আরও একটু পিছিয়ে যাই। লিঙ্গসাম্যের একটি কাঠামো এন সি ই আর টি তৈরি করে পাঠ্যপুস্তক রচনার জন্য, যা তৎকালীন সমাজের নিরিখে অনেকটাই অগ্রগামী ভাবনা। কিন্তু ২০১৭ নাগাদ এন সি ই আর টি একটি সমীক্ষা চালায় পাঠ্যপুস্তকগুলির উপর। সেই সমীক্ষায় দেখা যায়, লিঙ্গসাম্যের কথা প্রাধান্য পাওয়া তো দূরের কথা, পুরুষ এবং নারীর (অন্যান্য লিঙ্গের কথা বাদ রাখছি) সামাজিক নির্মাণ থেকে এক পাও এগোয়নি পাঠ্যপুস্তকগুলি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, মেয়েরা কাজ করবে বাড়িতে, এবং ছেলেরা বাইরে — এই ধারণাই প্রতিফলিত হতে দেখা গেছে শিশু পাঠ্যপুস্তকে। স্বাভাবিকভাবেই, যে শিশু এই ধারণা মাথায় নিয়ে বড় হবে, তার লিঙ্গসাম্য বা মেয়েদের (এবং অন্যান্যদের) অবস্থান সম্বন্ধে বেশ কিছু ভুল ধারণা তৈরি হবে। এবং এই ধারণার সাথে এন সি ই আর টি-র তৈরি করা কাঠামোর আকাশ পাতাল তফাত রয়ে যাচ্ছে।
চলুন শেষবারের মত পিছিয়ে যাই। ২০১৪ সালে এন সি ই আর টি-র প্রথম লিঙ্গসাম্য সংক্রান্ত সমীক্ষায় দেখা গেছিল পাঠ্যপুস্তকগুলিতে সমাজে নারী ও পুরুষের অবস্থান, অবদান ইত্যাদি সম্পর্কে যে ছবি পাওয়া যাচ্ছে তা খুবই গতানুগতিক এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজের আদর্শ দ্বারা পরিপুষ্ট। ১৮টি পাঠ্যপুস্তককে “অডিট” করে দেখা গেল যে মূলত পুরুষ নানা পেশা বেছে নিতে পারলেও নারীকে সাধারণভাবে দেখানো হচ্ছে গৃহিণী, বা শিক্ষিকা, বা ডাক্তার রূপেই। মনে রাখতে হবে ২০১৪-র গণধর্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার চেয়েছিল পাঠক্রমের অন্তর্গত হবে কিছু মূল্যবোধ। কিন্তু মূল্যবোধ যদি নিজেও পিতৃতান্ত্রিক হয়ে ওঠে, তাহলে মেয়েদের প্রতি সম্মান বাড়ার বদলে লিঙ্গসাম্যের অপমানই ঘটে।
দুঃখের কথা, অনতি অতীত ঘাঁটলে যা পাওয়া যায় তা খুব আশাব্যঞ্জক নয়। বিভিন্ন সময়ে পাঠক্রমকে লিঙ্গসাম্যের ধারণার অনুবর্তী করতে এন সি ই আর টি চেষ্টা করেছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা শুধু খাতায় কলমে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। তাই পিনারাই বিজয়নের টুইট খুবই সদর্থক হলেও আশঙ্কা থেকেই যায়। কেরালার শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন যে, মেয়েদের প্রতি অবমাননাকর যে সব রীতি, যেমন পণপ্রথা, সেগুলিকেও মহিমান্বিত করা কোনোমতেই চলবে না। জেন্ডার ইনক্লুসিভ পাঠক্রম গড়ে তোলা হবে (এবং আমরা আশা করব যে এক্ষেত্রে কেরালা সরকার দুটি মাত্র লিঙ্গের দ্বিমূল জগতের বদলে অন্যান্য লিঙ্গগুলিকেও স্বীকৃতি দেবে)। তাই এই মুহূর্তে দেশের শিক্ষা তথা সমাজকর্মীরা অনেকেই কেরালা সরকারের এই নীতির প্রতি প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছেন। আশা করা যায় বিজয়ন, যিনি আদালতের রায় মেনে শবরীমালার দরজা মেয়েদের জন্য খুলে দিয়েছিলেন, আমাদের আশাহত করবেন না।
পিনারাই বিজয়ন: ছবি উইকিপিডিয়া ও টুইটার থেকে।বিস্ময়া ও কিরণকুমার – ছবি হিন্দুস্থান টাইমস সংবাদপত্রের ওয়েবসাইট থেকে।
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।