হান্নান মোল্লা
কৃষক আন্দোলন সম্বন্ধে চারটে জরুরি কথা বলার আছে। প্রথম কথা যেটা বলার, আন্দোলন কিন্তু থামেনি। বলা যেতে পারে একটা প্রাথমিক সাফল্য এসেছে। জয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এমন কিছু হয়নি যা থেকে আন্দোলন তোলার কথা ভাবা যেতে পারে। স্পষ্ট কথা স্পষ্ট করে বলাই ভালো, কৃষকরা প্রধানমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করেন না। করার কোনও কারণও নেই। এতদিন ধরে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার যা করেছে, যে সব তকমা দিয়েছে, যতরকমভাবে আন্দোলন ভাঙতে চেয়েছে, তারপর সরকারকে বিশ্বাস করা যায় না। তাই সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে তিনটি কৃষি আইন রদ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এর সঙ্গে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য না এমএসপি সংক্রান্ত দাবিদাওয়াও সরকারকে মানতে হবে। তার আগে অবধি কৃষকরা রাস্তা ছাড়বেন না। এই বিষয়ে সবকটি সংগঠনই একমত। শনিবার আরও একবার বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দ্বিতীয়ত, এই আন্দোলন আমরা একা করিনি। কৃষক সভা বা বামপন্থীরা একা করেনি। এটা মনে রাখতে হবে। পাঁচশোটি সংগঠন মিলে লড়াই চলছে। ভারতের বুকে এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। নানা মত, নানা পথের কৃষকরা একটি সাধারণ দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। আমরা বামপন্থীরা, কৃষক সভা এই ঐক্য গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছি। বড় কৃষকদের পাশাপাশি মাঝারি ও ছোট কৃষকদেরও শামিল করেছি আন্দোলনে। কিন্তু এটা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। শ্রেণির লড়াই। এই ঐক্যকে না বুঝলে এই আন্দোলনকেও বোঝা যাবে না।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী মাথা নত করলেন। অথচ এর আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী, খালিস্তানি — কত কিছুই না বলা হয়েছিল। সেখান থেকে পিছোতে হল সরকারকে। এটা একটা বিরাট জয়। কেবল কৃষকদেরই নয়, গোটা দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইকে এই জয় আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। এইরকম দানবিক স্বৈরতন্ত্রকেও যে পিছু হটানো যায়, এবং রাস্তার আন্দোলনের মাধ্যমেই যায়, সেটা প্রমাণ হল। এটা একটা বড় ব্যাপার। ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এর মূল্য বিরাট। নির্বাচনে কী হবে বা হবে না, সেই হিসাব কষতে আমি যাব না। আমি দেখব গণআন্দোলনের শক্তি বাড়ছে কিনা। আমার মনে হয় সেটা বাড়বে, অনেক বাড়বে। বিজেপি সরকার কড়া প্রতিরোধের সামনে পড়বে।
চতুর্থত, নির্দিষ্টভাবে পশ্চিমবঙ্গের কথা কিছু বলব না। এটা তার সময়ও নয়। তবে কৃষক আন্দোলন প্রমাণ করল, লেগে থেকে লড়াই করলে সাফল্য আসে। এর আগে আমরা বিভিন্ন রাজ্যে আন্দোলন করতে করতে সাফল্য পেয়েছি। কখনো সেই সাফল্য ভোটে প্রভাব ফেলেছে, কখনো ফেলেনি। কিন্তু আন্দোলনের ফলে কৃষকদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, রাজনৈতিক ভারসাম্য, সামাজিক ভারসাম্য বদলেছে। এটা জরুরি। এবং সব জায়গার জন্যই জরুরি।
~ এক বছরের উপর চলা কৃষক আন্দোলনের চাপে বাধ্য হয়ে কৃষি বিল প্রত্যাহারের ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আন্দোলনের সব থেকে বড় সাফল্যের দিনে নাগরিক ডট নেটকে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানালেন সর্বভারতীয় কৃষকসভার সাধারণ সম্পাদক , সিপিআইএমের পলিটব্যুরোর সদস্য ও কৃষক আন্দোলনের যৌথ নেতৃত্বর অন্যতম অংশ হান্নান মোল্লা।
– অনুলিখন অর্ক।
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।