কর্পোরেট, থুড়ি আদানিদের সঙ্গে দোস্তির আড়ালে

আমাদের দেশে পুঁজিবাদের অগ্রগতি কতদূর হয়েছে তা নিয়ে কথা বলতে গেলেই যা চলে আসে তাকে বলতে হয় ধান্দাবাজি। জওহরলাল নেহরু পর্যন্ত তা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। স্বাধীনতার ঠিক পরেই দেশীয় পুঁজিকে সাহায্য করতে অর্থনীতি প্রসঙ্গে জাতীয় পরিকল্পনার অনেকটা গৃহীত হয়। তৎকালীন পরিকল্পনাকারীরা মনে করেছিলেন বিবিধ বুনিয়াদি ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়বরাদ্দ বেসরকারি পুঁজিকে উৎসাহ দেবে, তারা হইহই করে ময়দানে নেমে পড়বে এবং সরকারি প্রকল্পের পরিসর সমাজে যেখানে পৌঁছতে পারবে না, সেখানে তারাই কামাল করে দেবে, ফলে দেশ এগোবে। কিন্তু দেখা গেল, ভারতে বেসরকারি পুঁজির এক বিরাট অংশ চটজলদি মুনাফায় যতটা উৎসাহী, বিরাট আকারের উৎপাদন ক্ষেত্র তৈরি করতে ততটাই নিমরাজি। এমন মনোভাবের পিছনে দেশীয় পুঁজির শিকড়ে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা রাজা-সামন্ত-জমিদারি শোষণের প্রভাব আছে। বিনিয়োগ থেকে মুনাফা অবধি অর্থ সঞ্চালনের চক্রে ঘুরে এসে দ্রুত সিন্দুকে ঢুকে পড়াই এই পুঁজির লক্ষ্য। ইদানীং আবার হস্তান্তরযোগ্য ফাইন্যানশিয়াল অ্যাসেটে রূপান্তরিত হওয়ার ফ্যাশন হয়েছে। ভারতে দেশীয় পুঁজির মেজাজ কখনো (দু-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া) বড় উৎপাদনমুখী ছিল না। গৌতম আদানির ব্যবসা (বা তাঁর ব্যবসা বলে যা জানা যায়) সেই মেজাজেরই চরম নিদর্শন ছাড়া কিছু নয়।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

১৯৮৮ সালে আদানি পণ্য কেনাবেচার ব্যবসা (কমোডিটি ট্রেডিং) শুরু করেছিলেন। খেয়াল রাখবেন, এই কর্মকাণ্ড পণ্য আদানপ্রদানের (আমদানি-রপ্তানি নির্ভর) — উৎপাদনের নয়। পরে আদানি গ্রুপ কয়লায় বিনিয়োগ করে এবং আরও কিছুদিন পরে বিদেশী উইলমার কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ হিসাবে ভোজ্য তেল পরিশোধন করে বিক্রি করতে শুরু করে। মুন্দ্রায় এদের নিজস্ব পণ্য আদানপ্রদানকারী বন্দর ছিল। ভারতে সবচেয়ে বেশি কয়লা আমদানি করত এরাই। কোম্পানি চালু হয়েছিল পাঁচ লক্ষ টাকা মূলধন নিয়ে। সেই ব্যবসার বৃদ্ধির হার ৮৯১% শুনে চমকে যেতে হচ্ছে, কারণ যে সময়ে গৌতমের এমন লক্ষ্মীশ্রী (এটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনও প্রকল্প নয়), ঠিক তখনই ভারতের শ্রমজীবী মানুষ অভূতপূর্ব দারিদ্র্যে ডুবে আছেন। দেশীয় বাজারে পণ্যের চাহিদায় বিপুল ঘাটতি, নোট বাতিল এবং জিএসটির ধাক্কায় এমএসএমই (ক্ষুদ্রশিল্প, কুটিরশিল্প ও মাঝারি উদ্যোগসমূহ) জিনিসটা আজকের ভারতে শুধুমাত্র অর্থনীতির বইতেই টিকে রয়েছে। বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। তার উপর করোনা সংক্রমণের মোকাবিলায় আচমকা লকডাউন ঘোষণার ফলে কাজের বাজারে হাহাকার তৈরি হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এক সময় ‘ক্যাশলেস ইকোনমি’ গোছের একটা কিছুর কথা খুব জোরে জোরে বলতেন। আজকের ভারত দেখিয়ে দিয়েছে হাতে পয়সা না থেকেও মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকতে পারে। খাদ্যপণ্যের দাম আগুন, উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ নেই, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগটুকুও হাতে ডিজিটাল ডিভাইস থাকলে তবেই মিলবে এবং দেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে রেশনের চাহিদা যত বাড়ছে, মোদী সরকার ঠিক সেই অনুপাতেই সরকারি ব্যয়বরাদ্দ কমাচ্ছে। ভারতে এখন সবচেয়ে গতিশীল বস্তু দুটো – আদানির ব্যবসায় অর্থ লাভ (কিংবা লোকসান) আর বন্দে ভারত ট্রেন। বাকি সবকিছু কার্যত হয় থমকে রয়েছে, নয় যেটুকু ছিল তাও ক্ষয়ে যাচ্ছে।

এই যখন অবস্থা, তখন একটা নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক সংস্থার হাতেই বিপুল সম্পত্তি সমাগম হচ্ছে কী করে? এখানেই অর্থনীতি (ম্যাক্রো) ও শেয়ার বাজারের আন্তঃসম্পর্কের ভূমিকা। শেয়ার বাজারের ওঠানামা, ভালমন্দের উপরে ভিত্তি করে যতই দেশের শ্রীবৃদ্ধির গল্প শোনানো হোক, আসল কথাটা একই আছে – যাদের অনেক আছে তাদের হাতের তালু গলে চুঁইয়ে কিছুই নামে না। সবটুকু তারা নিজেরাই আত্মসাৎ করে নেয়। উল্টে প্রয়োজনে সরকারের কাছ থেকে বেল ইন এবং বেল আউটের মত সুবিধা নেওয়ার ফলে ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসার ক্ষতিটুকু সর্বজনীন দায়ে পর্যবসিত হয়। মানে বাবু ব্যবসা করবেন শখ হয়েছে। নামলেন, কিছুটা লাফালেন এবং লক্ষ্মী-গণেশ সমেত উল্টে গেলেন। যতক্ষণ ব্যবসায় লাভের সুযোগ ছিল, মানে বাবু লাফাচ্ছিলেন, ততক্ষণ মুনাফাটি ছিল ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষার পবিত্র অধিকারের বিষয়। যেই বাবু হড়কালেন, তখনই তাঁর মনে পড়ে গেল, রাষ্ট্র বলে তো একটা ব্যাপার আছে। সে কেন দায় নেবে না? অতএব বাবুর চোখের জল মুছে দিতে সরকারি অর্থভাণ্ডার থেকে ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া হল। সুতরাং মুনাফা হল ব্যক্তিগত আর ক্ষতি হল সকলের – এমন বন্দোবস্তেরই কেতাবি নাম ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট।

তবু এ প্রশ্ন থেকেই যায়, যে ওরা এত টাকা পেল কোথা থেকে? বাজারে যখন চাহিদার ঘাটতি, তখন যদি পণ্য বিক্রিই না হয়ে থাকে তাহলে নির্দিষ্ট একটা কোম্পানিতে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে কেন? হিন্ডেনবার্গ সংস্থার প্রতিবেদনের গুরুত্ব এখানেই। পয়সা জোটাতে (ভাল কথায় যাকে ক্যাপিটাল জেনারেশন বলে) আদানি যা করেছেন হিন্ডেনবার্গ তাকেই ধাপ্পা বলছে। কারণ তাঁর অসামান্য কীর্তিতে আচ্ছন্ন হয়ে আদৌ বিদেশ থেকে কেউ বিনিয়োগ করেনি। বিদেশে নিজের লোক (বেশকিছু ক্ষেত্রে একেবারে পরিবারের লোক) বসিয়ে রেখে অন্য নামে কোম্পানি খুলে নিজেরই শেয়ার বারবার কেনাবেচা করা হয়েছে বলে হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ। অথচ বাজারে মোট শেয়ারের পরিমাণ একই থেকেছে। কিন্তু শেয়ারের দাম বেড়েছে, কারণ দেখানো হয়েছে চাহিদা বাড়ছে। শেয়ার কেনাবেচার নিয়ামক সংস্থা সেবির (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া) আইন অনুযায়ী এইভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে কোনো কোম্পানি যদি বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করে তবে তা জালিয়াতি। অবশ্য বাজারের অবস্থা যখন একেবারেই ভাল নয়, অথচ পরের নির্বাচনে সরকারি দলের প্রচার তহবিলের জন্য বিরাট মূল্যের নির্বাচনী বন্ড কিনতে হবে, তখন একটি বহুজাতিক বিলিওনেয়ার সংস্থা আর কী-ই বা করবে? মোদী সরকার অবশ্য নিজেদের দিক থেকে যথাসাধ্য করেছে। তারা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে (স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, এলআইসি ইত্যাদি) আদানিদের শেয়ার কিনতে বাধ্য করেছে। এখন যদি আদানির ব্যবসায় ধস নামে, তবে তাদের শেয়ার কিনে বিনিয়োগ করেছে এমন সমস্ত সংস্থারই ‘ক্যাপিটাল লস’ হবে।

কেউ বলতে পারেন ভারতে কতজন শেয়ার বাজারের ওঠানামায় প্রভাবিত হন? এই প্রশ্নের গোড়ায় গলদ। পৃথিবীর কোনো দেশেই জাতীয় অর্থনীতি স্বতন্ত্র বিষয় নয়, কেন্দ্রীয় রাজনীতির সাথে তার ঘনিষ্ঠতম যোগ রয়েছে। আমরা তাই বিষয়টাকে ইকোনমি বলি না, বলি পলিটিকাল ইকোনমি। ক্যাপিটাল জেনারেশনের জন্য শেয়ার বাজারকে ব্যবহার করতেই হয়। প্রথমে ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (আইপিও), পরে ফলো অন পাবলিক অফারিং (এফপিও) করে সকলকেই নিজেদের ব্যালান্স শীটের হাল ফেরাতে হয়। কিন্তু এসবে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, সেবির মত সংস্থার কাজই হল এসব ক্ষেত্রে বেআইনি কাজের হদিশ রাখা। হর্ষদ মেহতার সময়ে তারা সেই ভুমিকা পালন করেছিল। কিন্তু তখনো আমাদের দেশে নয়া উদারনীতি সেভাবে জাঁকিয়ে বসেনি। হর্ষদকে দেশীয় আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করতে হয়েছিল। বাইরে থেকে বিনিয়োগ আসছে দেখানোর সুযোগ ছিল আদানিদের। তারা সেই সুযোগকে ব্যবহার করেছে ষোল আনার উপরে আঠেরো আনা। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট তারই বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনের মূল প্রতিপাদ্য চারটে।

আরো পড়ুন আদানির ব্যাপারে হিন্ডেনবার্গের খোঁজ: অশনি সংকেত

প্রথমত, আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের বাজার মূল্য যা দেখানো হয়েছে তা ঝুটা। নিজেরাই নিজেদের শেয়ার কেনাবেচা করে বাজারে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে এখন বিনিয়োগ করলে পরে বেশি দাম মিলবে এই প্রলোভনে অন্যরাও শেয়ার কিনে বিনিয়োগ করে। এ কাজ চুরির সামিল।

দ্বিতীয়ত, গোটা ব্যবসায় ‘পাবলিক’ ও ‘প্রাইভেট’ মালিকানার যে শর্ত আইনানুগ তাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিরাট বিরাট অঙ্কের একাধিক ঋণ নিয়েছে আদানি গ্রুপ। এ ধরনের আর্থিক লেনদেনে কারেন্ট রেশিও হিসাব করেই ঋণ গ্রাহ্য হয়। কারেন্ট রেশিও মানে কারেন্ট অ্যাসেট ও কারেন্ট লায়াবিলিটির অনুপাত। স্কুলপড়ুয়া শিশুও জানে, যে কোনো অনুপাতের মান একের চাইতে কম হওয়া মানে ভগ্নাংশের লব হরের চাইতে কম। সুতরাং কারেন্ট রেশিও একের কম। অর্থাৎ কোম্পানির সম্পত্তি (অ্যাসেট) তার দায়ের (লায়াবিলিটি) চাইতে কম। এমন হলে অনেকসময়েই ঋণ (বিশেষত ব্যবসায়িক স্বল্পমেয়াদি ঋণ) পাওয়া যাবে না, কারণ ঋণ শোধে ঝুঁকি থাকবে। কিন্তু আদানিরা ঋণ পেয়েছেন নিজেদের শেয়ারের দাম বাড়িয়ে নেওয়ার ফলে অনেক সম্পত্তি রয়েছে এমন প্রমাণ দাখিল করে। সে প্রমাণ মিথ্যা। এমনিতেই তাদের কোম্পানির মাথাদের কারোর কারোর ঋণ নিয়ে শোধ না করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ারও ইতিহাস রয়েছে।

তৃতীয়ত, বিদেশ থেকে যে সমস্ত কোম্পানি আদানিদের শেয়ারে বিপুল বিনিয়োগ করেছে সেইসব সংস্থার মালিকানা ঘুরপথে তাদেরই হাতে রয়েছে। এইসব কোম্পানির মধ্যে বেশিরভাগই অন্য কোথাও বিনিয়োগ করেনি, শুধু আদানির শেয়ারেই তাদের রুচি। হিন্ডেনবার্গ দেখিয়েছে কোন কোন বিদেশী বিনিয়োগকারী কোম্পানি কার্যত আদানিদেরই হাতে।

চতুর্থত, বিনিয়োগ টেনে আনার এই গোটা প্রক্রিয়ায় আদানিদের পক্ষ থেকে যে সমস্ত নথি প্রকাশ করে হয়েছে তার বেশিরভাগই স্রেফ ভুয়ো।

এরপরেও কেউ বলতে পারেন, আদানির উন্নতিতে ভারতের শ্রীবৃদ্ধি সম্ভব?

লুটেরা পুঁজির স্বার্থরক্ষা ছাড়া আর যা ঘটছে

দেশজুড়ে গোরক্ষাবাহিনীর (এবং আরও নানা বর্বর বাহিনী) তাণ্ডবে মৃতদের প্রসঙ্গ হোক বা আদানিদের কাণ্ডকারখানা – প্রায় কোনোকিছু নিয়েই মোদী মুখ খোলেন না। তাঁরা যে অন্য কাউকেও এসব বলতে দিতে চাইছেন না সেকথা এবার সংসদে যা ঘটল তাতেই পরিষ্কার। হিন্ডেনবার্গ বলেছে, আদানিদের ব্যবসা আসলে মিথ্যার বেসাতি। আমরা বলছি এসব জানা কথা। ফাইন্যান্স পুঁজি দেশের সীমার এদিক ওদিক করতে বাধাহীন ক্ষমতা দাবি করেছিল এই কারণেই। যতক্ষণ মুনাফা ততক্ষণই পুঁজি একটা নির্দিষ্ট দেশের বাজারে থাকবে। এতটুকু বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিলেই সে তুরন্ত অন্যত্র চলে যাবে – এটাই আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে অসভ্য বন্দোবস্তের সার কথা। এই লক্ষ্যেই বিকাশের ঢাকঢোল, এই উদ্দেশ্যেই ডিজিটাল ইন্ডিয়া, ক্যাশলেস ইকোনমি। বাকি সব ছাইপাঁশ।

রইল পড়ে হাজার কোটি টাকার সেন্ট্রাল ভিস্তা, বিচারক নিয়োগে কলেজিয়াম পদ্ধতির অবলুপ্তি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতির উষ্মা প্রকাশ এবং জি-২০ সম্মেলনের আয়োজন করতে পেরেছে বলে জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন কার – এইসব।

দেশের মানুষের পেটে খাবার জুটল কি না জুটল, কর্মসংস্থান হল কি না হল, পুঁজির তা দেখার দায় নেই। পুঁজি নিজের স্বার্থরক্ষা সুনিশ্চিত করতে আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সমর্থন দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছাড়া তাদের আর কিছুই দেওয়ার নেই। তারাও আর কোথাও ঠাঁই না পেয়ে লুটেরা পুঁজির ধামাধরা হয়েছে।

রামলীলা ময়দানের সমাবেশ আসলে কী?

শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুরদের সম্মিলিত সচেতন রাজনৈতিক সংগ্রামই কর্পোরেট রাজের নামে লুটেরা পুঁজির চক্র ভেঙ্গে ফেলতে পারে। একইসঙ্গে এই সংগ্রাম দূর করে দেয় সেইসব পরিচিতির বাধা, যা মানুষকে মানুষের পাশাপাশি দাঁড়াতে দেয় না। যেমন ভাষার ব্যবধান, খাদ্য ও পোশাকের বিভিন্নতা, রুচি-সংস্কৃতির ফারাক এবং শেষ অবধি ধর্মীয় আস্থার প্রাচীর – সবই কার্যত ফুৎকারে উড়ে যায় যদি সর্বহারা শ্রমজীবীরা একবার বুঝে নেন তাঁদের একটাই পরিচয় – গতর খাটিয়ের দল।

দিল্লির রামলীলা ময়দানে যা ঘটেছে তাকে লড়াইয়ের মহড়া বলা যায়। এরপর দ্বিবিধ আক্রমণ আসতে চলেছে। এক পক্ষ বলবে, এসব করে কিছু হবে না। আরেক পক্ষ নির্বিবাদী দালালের ভূমিকায় চুপ থাকবে। দ্বিতীয় পক্ষে ভারতের বড় বড় সংবাদমাধ্যমের ভিড়। এরা আসলে ‘কন্সপিরেসি অফ সাইলেন্স’-এর কারিগর। যদিও তারা জানে, এমন সমাবেশের মুখোমুখি দাঁড়িয়েই প্রবল ক্ষমতাধর রাজার মনে আসে “Friends, Romans, countrymen, lend me your ears.”

মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

1 মন্তব্য

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.